২২২২ ২5৫0. 1965 ূ লারায়ণ গঙ্গা প৭7ায় ব্রেঙ্গল পাবনিশাজ ১৪, বঙ্কিম চাটুজ্জে স্ত্রী, কলিকাতা--১২ প্রথম সংস্করণ চৈত্র, ১৩৫৩ প্রকাশক--শচীক্রনাথ মুখোপাধ্যায় বেঙ্গল পাবলিশাস” ১৪, বস্কিম চাটুজ্জে স্ত্রী মুত্রাকর--শ্ত দত্ত দি প্রিষ্টিং হাউস *০, আপার সাকু 'লার রোভ কলিকাতা প্রচ্ছদ-পট পরিকল্পন। আশু বন্দ্যোপাধ্যায় রক ও প্রচ্ছদ-পট মুদ্রণ ভাব্রত ফোটোটাইপ ষ্ট,ডিও বাধাই-_বেঙ্গল বাইগাস- সাড়ে তিন টাকা গোপাল ও গোবিন্দ সান্যাল স্েহাস্পদেষু ১৩৫৪-র “শারদীয়। স্বরাজে” এই উপন্যাসের প্রাথমিক কাঠাযোটি প্রকাশিত হয়েছিল। ভ্রত লেখনের জন্যে তখন যে ফাঁক এবং ক্রুটি গুলে' ছিল সেগুলোকে পূরণ ও সংশোধন করতে গিয়ে গ্রন্থকে অনেকখানি বাড়াতে হয়েছে, অনেক নতুন জিনিস যোজনা করতে হয়েছে । এই বইয়ে উত্তর বঙ্গের কথ্যভাষার বিশিষ্ট রীতিটাকেই আমি গ্রহণ করেছি--কোনে নিদিষ্ট অঞ্চলের নয় । তবে এর একটা মূল ভিত্তি আছে-- সেটা হল দিনাজপুরের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল । আর একটি কথা । বইয়ের ঘটনাকাল ১৯৩৪ সাল। যখন বাংলায় বিপ্লব আন্দোলনের সমাধ্ি-যুগ আর গণ-আন্দৌলন আসবার পূর্বাভাস ॥ কলকাতা ফান্তন, ১৩৫৩ - লেখক টি ্যাড়া মাঠটায় ইতন্তত ছোপ ধরেছে সোনালি-সবুজের, ফলেছে শখে, কলাই, ছোলা, মটর । শীতের বিষণ্ন শৃন্ততায় এতবড় শ্রীহীন মাঠখানার দীনতা তাতে ঢাঁকেনি, বরং আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে মনে হয়। ভাডাটুবে। গাল, মাটির ছোট বড়ে। চাঙাড্, . বিবর্ণ ঘাস, মর! মর| কর্টিকারী আর টুকরো টিকবে! গোরুর হাড়ে বিস্তীর্ণ হয়ে আছে শ্বশানের ইর্সিত। উত্তর বাঙলার আদিগন্ত এক ফসলের মাঠ । এলোমেলে। এই রূবিশশ্ডের টুকরো গুলোর পেছনেও কোনো সজাগ চেষ্টান ইতিভাপ নেই । খেরাল-খুশিমতো ছড়িয়ে বেখেছে, গোরু-ছাগলে খাবে, সকালে-বিকেলে আগুন জেলে শাকশুদ্ধ ছোল। পুড়িয়ে খাবে রাখালেরা | পথ-চলতি মান্গধ কখনে। যদি দু-এক মুঠে। কড়াই- শুটি ছিড়ে নেয়, তাতেও লাঠি ভাত্তে ভাড়া করে আসবে ন! কেউ। মাটির ভাপগ্ডার থেকে বিনা আরাসে ঘতট€ু পাণ্ডর। ঘাঁয় তাই লাভ। আগে টিপ-সহি গত, এখন কাচা কাচা অক্ষরে লেখে প্রানহিন্দর রুইদাল। প্রাইমারী ইস্কুলের গ%টেনিং পাশ মাষ্টার বংশী পরামাণিক নাম দশ্তখত করতে শিখিয়েছে ।. অনেক বুঝিয়েছিল বংশী, মহিন্দর কারে নাম হয় না, ওট| হবে মহেন্জ। শুনে চটে গিরেছিল মহিন্দর। বলেছিল, তুমি ইটা কী কহিছেন ভে মাষ্টার? বাপ বিটা নাম দিলে, ওইটা ব্দলামু কেমন করি? হামি মহিন্দর আছি, মহিন্বরই থাকিনা চাভি। বাপের নাম ছাডিবা কহিছ! কেন মাঈবখান। হে তুমি ? বৈতালিক---১ অতএব বংশী পরামাণিক আর কথ। বাড়ারনি। বলেছিল, আচ্ছা, আচ্ছা তবে মহিন্দরই লেখ । -ইহ-ই-আজ্ুগ্রত্যরের সুরে মহিন্দন বলেছিল, হামীক তেমন মানুষ পাও নাই । ওইটা চালাকি হামার ভালে। লাগে না। বংশী বলেছিল, ঠিক, আমারই ভুল হয়েছিল । __কেমন, ঠিক কহিছি কিন। ?_-মভিন্দর উপদেশ বণ করেছিল এইবার £ বুঝিল। হে মাষ্টার, তুমি তো৷ ঢের নিগিছ ( লেখাপড়া শিখেছ ), কিন্তু ইটা ভালো কথা কহ নাই । বাপের চাইত বড় আর কেহ নাই, বাঁপক না মানিলে নরকত, যাবা লাগে । বশী নিরুত্তরে শুধু ঘাড় নেড়েছিল এবাৰে। সেই থেকে সগৌরবে 'মহিন্দর রুইদাস তার পৈত্রিক নাম স্বাক্ষর করে আপসছে। একটা মান্তগণা লোক-প্রায় আট বিঘে জমি সেরাখে। নানা কারণে মাঝে মাঝে তাকে সই করতে হয়, হাতের মুঠোয় কলমটাকে চেপে ধরে জোর দিয়ে লেখে শ্রীনহিন্দর। দাঁপ পথন্ত পৌছুবার আগেই কলমের নিব চিরে বকের হাঁকর1 ঠোটের রূপ ধারণ করে। মহিন্দর তাতেই আন্তরিক গবিত। এতকাল অন্তের পারে জুতে। যুগিয়েছে নিজের কখনে। পর্বার সাধ হয়নি । কিন্তু যেদিন থেকে নাম্সই করতে শিখেছে, সেদিনই নিজের হাতে এক জোড়া মোট] কাঁচ! চামড়ার জুতো! তৈরী কৰেছে। ব্ধার সময় ভিজে দুর্গন্ধ হয়_-বেরুতে ।থাকে আদি এবং অকৃত্রিম সৌরভ, অনেক কষ্ঠে রক্ষা করতে হয় কুকুরের লোলুপতার হাত থেকে ; একবার একটা নেড়ী কুকুর ওর একপাটি মুখে করে পালিয়েছিল, প্রায় দেড় মাইল রাস্তা তাকে তাড়া করে সেটা উদ্ধার করে মহিন্দর। দেই থেকে জুতো সম্পকে তার পশতকতার শেষ নেই | | এহেন শিক্ষা-গবিত সম্মানিত শ্রীমহিন্দর রুইদাপ তার অতিঘত্বের জুতে। জোড়া হাছে করে আছিল আদ্পপ দিগে | জতোটা এখন পায়ে দেবে না, দেবে একেবারে বৌনাই পাড়ীর সামনে গিয়ে, বাস্তার ডোবায় পা ধুয়ে। প্রথমত জো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, দ্বিতীঘুত বেশিক্ষণ পায়ে বাখলে ছাল চামাছ। ₹ একেবারে বক্গাপিক্তি বাপার | স্তরাৎ ভাতে করে নেওয়াটাই নিরাপদ তথ! নিঝক্কাট | নাড়া মাঠটার এখানে এখানে সোনালি-সবুজের ছোপ। ভাঙাঢ়রো আল্পথ বেয়ে চলেছে মতিন্দর, কাঁচা চামড়ার ফাটা ফাটা জুতোজোড়া ঝুলিয়ে নিয়েছে আউলের ভগায়। ভারী প্রসন্ন আছে মন। একবার আল্‌ থেকে নেমে ছিড়ে নিলে এক ত্রাটি ছোলার শাক, দুটে! একটা করে খেতে খেতে এগোতে লাগল । মাটিভরা ঝলমলে ঠাণ্ডা শীতের রোদ, এদিকে ওদিকে উড়ে উড়ে পড়ছে ছোটি ছোট চড় ইয়ের মতে। কারি" পাখির ঝাণক। মন্থর রাঁশভারী গতিতে গ! ছুলিয়ে ছুলিয়ে চলে যাচ্ছে একটা সোনালী গো-সাপ, লিকৃলিকে জিভটা বার করে মাঝে মাঝে সন্দিগ্চভাবে তাকিয়ে দেখছে মহিন্দরের দ্রিকে। হ্ঠাৎ চামডাটার ওপর ভারী লোভ হুল মহিন্দরের । কিন্ক থানা থেকে ঢোল পিটিয়ে গো-সাপ মানা বন্ধ করে দেওয়া ভয়েছে, কেউ মাপুলে তাঁর জরিমানা হবে। থানাকে বড় ভয় কনে মহিন্দর | কিন্ত ভারী ভালো লাগছে শীতের ঝলমলে রোদে এমনি করে এই মাঠের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে । অকারণ একটা খুশি চন্মন্‌ করে ওঠে রক্তের মধ্যে । প্রথম যৌবনের কথা মনে হয়, মনে হয় অন্ধধার সেই বাঁদাম গাছটার কথা-_বেখানে রাত্রে তারিণীর ছোট বৌনটা চুপি চপি আসত তার কাছে। ভয় ছিল, কিন্তু ভাবনা ছিল ন1; রক্ত ঘন হয়ে উঠত, নিঃশ্বাস পড়ত দ্রুত তালে, কী আশ্চর্য নেশীয় আচ্ছন্ন ছিল সে-নব দিন! এই মস্তবড় মাঠটার দিকে তাকিয়ে মনে হয়-কেন কে জানে মনে হয়। সেই আশ্চর্য দিনগুলে। আবার রক্তের মধ্যে তাঁর কথা কয়ে উঠছে । একটার পর একট! ছোলার দানা মুখে দিতে দিতে এগিয়ে চলল মভিন্দর। ৩ আদ্গ কত ছটিল হয়ে গেছে জীবন। আজ সে মান্াগণা লোক-.দখজনের একজন। লোকে ভাকে খাতির করে, আপদে-ব্পিদে, মামলা মোকদ্দমা শলা-পরামর্শ নিতে আসে তার কাছ থেকে । সবচাইতে বড় পরিবর্তন ঘেট] ঘটেছে--সেটাঁকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না ম্হিন্দর। তারিণীর সেই ,ছেো'টি বোন সরলার ছেলেদের সঙ্গেই আজ তাঁর দেড় কাঠা জমি নিয়ে দেওয়ানী মোকদমা চলছে । একটা নিঃশ্বাস ফেলল মভিন্দন। যে কারণে মনটা খুশিতে তাঁর ভরে উঠেছিল, ঠিক সেই কারণেই কেমন বিশ্বাদ আর ক্লীস্ত লাগল নিজেকে । বয়স বাড়লে পেছনের দিকে তাকিয়ে যে অহেতৃক একটা তৃপ্তি তীক্ষভাবে পীড়ন করতে থাকে, সেই অস্বস্থিটা যেন আকম্সিকভাবে পাক খেয়ে উঠল। এর চাউতে সেই কি ভালে! ছিল? আজকের এই নাম দস্তখত করতে- জানা মাননীয় শ্রীমহিন্দর রুইদাস নয় _সেই দুরন্ত চঞ্চল মহিন্দরের বে-হিসেবী জীবন? মাথায় বাকড়া ঝাঁকড়া চুলে সেই যখন সে অল্প অল্প সি'খি কাটত, মুখে ছিল নতুন গৌঁফের রেখা, যখন রাতের পর রাত আল্কাঁপ আর গন্ভীরার গান গেয়ে তার গল! ভাঙত না? আর যখন সেই গানের নেশায় মাতাল হয়ে সরলা__ সরলা । আজ আর কেউ নয়। তাকে ভূলে গেছে, তার গান ভূলে গেছে, ভূলে গেছে বাদাম গাছটার তলায় সে রাত্রির কথা; ঝিরঝিরে হাওয়ায় মাথার ওপরে ঘন পাতার রাশি শব্দ করছে, যেন কথা কইছে চুপি চুপি আঁবছায়! গলাতে ; একট! ঘুম-ভাঁঙা পাখি পাখা ঝাপটালো, বুকের ভেতরে আরো ঘন হয়ে সরে এল সরলা । -__ভয় কি, ভয় কি?. --কে ফ্যান আসোছে। --ক্যাহো না, শিয়াল যাছে। _ হামার বড় "ছল লাগে। ভাই জানমিলে হাসাক আগি সেলিলে। সাল গা! পি মুই আর আসিম না। কিন্থ পরের দিন৪ আসতো! সরলা | ভার পরের দিন তার€ পরের দিন। ভারপর কবে একদিন স্বাভাবিক নিয়মেই সরলার আসা বঙ্গ ত্য গেল, সেকথা আজ আন মনেই পড়ে না মতিন্দরের | কিন্ত সে দিনগ্রলো!! আছে রক্তের মপো- এমনি একটা মাঠের ভেতর- এই রকম একল! পথ চলত চলতে স্বপ্ধের মত বাদামগাছটা মাথা তুলে ওঠে। সরলা ত্ুলোছ, সিস্ 'সরলান কি কখানা মনে পর্ডে না! এমনি কোন একটা মুতর্ড, একটা নিঞ্জনতাল ঝলমলে রোদের ভেতনে ? হয়তো পড়ে, হয়তে। পড়ে না। ৯ তবু তার ছেলেদের সঙ্গে মামলা চলেছে | সরলা হয়তো তার খুগুপাত না করে জলগ্রহণ করে না আজকে 1 মহিন্দরই কি আজ খুশি হবে সরলা সামনে এসে দাড়ালে? চিন্তার জাল ছি'ড়ে গেল, দীড়িয়ে পড়ল মহিন্ধর | খট খট খট। একট! দ্রুত শব্দ। মাটির চাঙীড় গুঁড়ে৷ হয়ে ধুল। উড়ছে ধোয়ার রেখার মতো । আর সেই রেখ! টেনে শাদা কালে। মেশানো একটা বড় ঘোড়! ছুটে আসছে এদিকে । আর কেউ নয়_স্বয়* ভাঁব্বিগপ্জ থানার বড় দারোগা । মহিন্দর স্থির দৃষ্টিতে তাকিঘ্ে রইল। দারোগা সাঙ্ছেন আসছেন । চমৎকার চেহারা মানুষটার | ফসণ রও, নধর শরীর, মুখে কালে। চাপদাড়ি। থানার পোষাক নেই, একটা শাদা পা-জামীর ওপরে পরেছেন একটা খাকী শার্ট, ঘোড়া দাবড়াচ্ছেন মাঠের ভেতর দিয়ে । অর্থাৎ দাগীর খোজে বাচ্ছেন না, বেড়াতে বেরিয়েছেন। মহিন্নর শ্রদ্ধা করে দারোগা সাহেবকে | ভাবী চমুখকার লোক-- চাপদাড়ির ভেতনে শাদ। দাত সব সময়েই হাসিতে আলে! হনে থাকে । এত ১৫ মিটি করে কগা ললেন মে, শুনলে কে পিশ্বাপ করনে, দানোগা পাজেন সরকারের লোক-_দেশশ্ুদ্ধ মানষের দপ্তমুণ্ডের কর্তা? অথচ আগে ধিনি ছিলেন, তার ঈাতও বেবিয়ে থাকত, কিন্ক সে থাকত খিচিয়ে। স্যর বিশ্বাস ছিল, পৃথিবীশ্রদ্দ লোক চোর আর বদমায়েস, তীদের সকলকে তিনি সন্দেহ করতেন, তার চোখ দেখলে মনে ভত, ভাতের কাছে যাকে পাবেন তাকেই ঠ্যাঙ্গাতে পারলে তবে তিনি খুশি হবেন? একটা গোরু চবির মামলায় একটু হলেই তিনি মহিন্দরকে ফাসিয়েছিলেন আর কি। কিন্ত এ দারোগা সাতেব ভালো লোক_-লোকে বলে মাটির মানষ । অযথা হয়রাণ করেন না কাউকে, গালমন্দও না । ঢুর্টো ডিম কিংবা একটা মুবগী কেউ ভেট দিতে গেলে দাম নেবার জন্যে ঝুলোঝুলি করেন । বলেন, তোরা গরীব মানিষ, বিনি পয়সায় তোদের জিনিষ নিতে যাব কেন? লোকে রূতার্থ ভরে বার | বলে, না, না হুজুর, মোরা খশি হই দিন, আপনার ঠাইয়ত, পাইসা লিবা পারিমু না। | দারোগা হাসেন £ তোরা যখবুুালোবেসে দিয়েছিস, তখন না নিলে তোদের কষ্ট হবে। কিন্ত আর দিসনি। এ টৈআইগি*শএ আমাদের নিতে নেই |. বেআইনি! লোকগুলো হা করে থাকে। এতকাল তো এইটেকেই ওরা আইন বুল জেনেছে যে, ঘরে পাটা মুরগী, হাঁস থাকলে, পুকুরে রুইমাছ থাকলে তা দারোগাকে নরেন না করে উুঞ্ম নেই । ইচ্ছে করে না দিলে জোর করে নেবে। অশ্রা টিলা ব, ব্যাটার যে একেবারে লাট সাহেব হয়ে গেলি_ ভ্যান নয়ে ছুদিন ভাজতে রেখে দেব, তারপর সদরে চালান করে দেব, টেযীীব কত ধানে কত চাল । এ দারোগা সাহেব কিন্তু একদম আলাদা-_একেবারে দৈত্যকুলে প্রহনাদ। খট খট খট । ঘোড়াটা এগিয়ে আসছে । পাশ কেটেই বেরিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ দ্রারোগা সাহেবের চৌখ পড়ল মহিন্দরের ওপর । ঘোড়াটাকে এদিকে ঙ ঘোরালেন তিনি, খামিয়ে দিলেন জোর বাশ টেনে। তিন পা পিছিয়ে গেল ঘোড়া, আকাশের দিকে তুলে দিলে বিদ্রোহী ঘাড়, কড়মড় করে চিনুলে মুখের লাগামটা। ঘোড়ার ঘাম আর ধুলোর গন্ধের একটা ঝলক মহিন্দবের নাকে ভেসে এল । হাতের রা কপালের ঘাম আর ধুলোর পাতলা আস্তরট। মুছে ফেললেন দারোগা সাহেব। তার: হাঁনলেন তার স্বভাবপিদ্ধ মপুর হালি । _ভালো আছ মহিন্দ7? এসি ভঞ্তিভবে মহিন্দর সেলাম গিলে £ আপনাণা যেমন ধাখিছেন । _আম্র। আর রাখবার কে?-দীরোগার গলায় ফ্কির্সুলভ ব্র।গ ফুটে বেরুল £ খোদারতালাই রাখছেন নবাহকে । ভারহ দোরা মবু। _-জী হুঞ্ছুর। --তারপর-চলেছ কোখায় ? কুটুম বাড়ী যাছি ₹জু? | ওঃ সনাতনপুবের ভূৰণ মুচির বাড়ীতে ? হুজুর তো সকলই জানোছেন। দারোগা হাসলেন । আর একবার হাতের পিঠে তেমূনি করে কপালের ঘাম মুছলেন, দাড়ি আচড়ে নিলেন আঙল দিয়ে । --ওহো» ভালে। কথা । তোমাদের গায়ে সেই বংশী মাগ্ভার আছে এখনো।? _-আছে তো। | _ইন্কুলে পড়ায় ? সি তো পড়ার । _হু।-দারোগার ভাসিমুখ ক্রমশ দাড়ির আড়ালে অদৃশ্ঠ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলেন, পড়ানো! ছাড় আর কিছু করে? মহিন্বর নিজেকে হঠাৎ বিপন্ন বোধ করতে লাগল £ পড়ানো ছাড়া আর কী করিবে? করে, করে। চাঁষাদের বাড়ী বাড়ী খুব যায়, না? _-ী, সি তো] যাঁয়। _সভা করে? জমারেৎ ? --আউজ্ঞ| ?--মহিন্দর ক্রমে উঠতে লাগল শঙ্কিত হয়ে। দারোগ'র হাঁস মিলিয়ে গেছে, একট। নিশ্চিত নিষ্ঠুর কঠিনতা দেখা দিয়েছে কোথাও £ আইজ্ঞ! ? ' _বলছি, লোকজন ডেকে জমায়েৎ করে ? _সি তো শুনি নাই। দারোগ। এবারে নীচের ঠোটটাকে একবার কামড়ালেন, চোথ ছুটে! কুঁচকে কেমন একটা বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকালেন মতিন্দরের দিকে £ কথাবাতা কী নলে? ম্হিন্দর এবারে ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল £ ইট তে। জী হামি জানি না। হামি কামের মানুষ, উসব শুনি ভামার কি হেবে? _কিছু শোনোনি কারু কাছে ? মহিন্দরের অসহা লাগছে এতঙ্গণে, মনের ভেহনে কোথায় যেন টের পেয়েছে, এই প্রশ্নগুলোর আড়ালে এমন একটা কিছু লুকিয়ে আছে, যা নিতান্তই নিরদদৌধ কৌতহল নয় । একটু বধিরক্তভাবেই জবাব দিলে । _হাঁমি শুনিব ফের কার ঠাই? কী আর কহিবে? মাষ্টার ঢের নিখিছে, ভালোই কহে নাগে। _হু', ভালোই বলে। দারোগা! এতক্ষণে আবার হাঁসলেন। ঘোড়াটা চঞ্চল ভয়ে পা ঠকছে; আল্গ। করে একটা জুতোর ঠোক্ষর দ্রিলেন সেটার পাঁজরে। ঘোড়া চলতে শুরু করল । দ্রারৌগ। বললেন, আচ্ছা, যাও তুঘি। জী সেলাম। তড়বড় তড়বড় করে আবার ছুটে চলল ঘোড়াট।-_মৃহিন্দর তাকিয়ে বুইল। ৮ সত্যিই চমংকার চেহারাখান! দারোগ। সাঁহেব্র-ঘোড়ার পিঠে তীকে খাসা মানায় । এমন নইলে আর দারোগা! কপাল কুঁচকে মহিন্দর ভাবতে লাগল, মাষ্টার সঙ্গন্ধে হঠাৎ এমন করে সন্ধান নেবার মানেকী! কোনে। মতলব আছে নাকি? কিন্ত তাই বা কেমন করে হবে? দারোগা সাহেব একেবারে মাটির মানুষ, তিনি তে। কারে। গতি করতে চান না। তার নাম করতেও লোকে যে আদ্ধা্ধ গতিভূত হয়ে যায় । মরুক গে, ওপব ভেবে লাভ নেই মহিন্বরের | আদার ব্যাপারী হয়ে করবে সে জাহাচলর খবর দিয়ে? তার চাইতে এখন তাড়াতাড়ি এগিয়ে ঘাওরাই ভালো । বেলা দ্রুত বেড়ে উঠছে, গ্রিছাকর্মের ন্যাপার বোনাই বাড়িতে, বেশি দেরী করলে মান থাকবে না। মাঠের ভেতর দিয়ে একটা ছোট নদী বেরিরে গেছে, তার নাম কাঞ্চন। ব্ধায় ভরে ওঠে ঢল লামায় ছুদিকের নিশ্নাবনে ছাওয়। ঢালু জমিতে । তখন কূল থাকে না, কিনারা না। এখন সে নদী পড়ে আছে নিজ্ীব একটা সাপের খোলসের মতে] । ফালি ফালি বালির ডাঙ্গ। উঠেছে জেগে, তাবু ভেতর দিরে তিন চারটে ধারার ধেরিরে বাচ্ছে বালি-মেশানো। চিকচিকে জল । হাটুর ওপরে একটুখানি কাপড় তু লেই নদীট! পার হয়ে এল মৃহিন্দর | নদীর পরে বিশ্নার-ভরা মাঠ, বেটে সেটে হিজল গাছ, তারপবেই লাল নাটির উচু পাঁড়ি। পাড়ির ওপরে আমবাগান, খাড়া মাটির এখানে-গথানে আমগাছের শিকড় ঝুলছে । এই উঁচু পাড়ির ওপর সনাতনপুরের মুচিপাড়া, আঁম্গাছের ছারায় একখান। গ্রাম । গোরুর গাড়ির প্রাস্তা গ্রামের ভেতর দিয়ে কেটে কেটে বেরিয়ে গেছে । তিন চার হাত উঠতে বাড়ী, নীচে বাস্থা। শুকনোর গোরুর গাড়ির পথ--বধায় নৌকে। চলবাঁর খাল। মহিন্ববের বৌনাই ভূষণ কুইদাসও অবস্থাপন্ধ লৌক। আগে জবতে। নি বৈভালিক--১১ তৈরী করত, হাটবার দিন লাঠির মাথায় ছুতো ঝুলিয়ে বেরুত ভীবিকার সন্ধানে । কিন্তু এখন আর ওসব উগ্বুতি নেই ভূষণের । কিছু চীষের জমি নিয়েছে, রেখেছে চার জোউ| বলদ আর দুখানা মোষের গাড়ি। জমি থেকে বছরের ধান পায়, আবাদের সমর বলদ ভাড়া দেয় আধিয়ারদের, মোষের গাড়ি বেড়ার নোয়ারী টেনে-দাল নিয়ে বার রেল ষ্টেশনে, এদিক ওদিকের বন্দরে, গঞ্জে । | তারই ছেলের বিনে এব" মাজ কু?ম খাওয়ানোর দিন | বলা বালা, প্রচুর সাড়া পড়ে গেছে চারদিকে | ভূষণ কার্পণ্য করেনি, তা ছাড়া এমনিতে সে দিল-দবিয়া লোক। গ্রামের মুখে পা দিতেই উতকর্ণ হয়ে উঠল মভিন্দব, কানে এল গানের স্কর। উৎসব শুরু হয়েছে মুচিপাড়ায় । মহিন্দর থেমে দ্রীড়াল. একবার তাকালো হাতের জুতা জোড়ার দিকে । সময় হয়েছে । পাশেই একটা কাদায় ঘোল। ডোব। আঁকীর্ণ হরে আছে পিঙ্গাড়। আর শাপলার লতীয়, ফুল ঝরে-বাওর়া গোটা কয়েক ন্যাড়া পাদ্মের ডাটা শুকোজ্ছে শীতেণ রোদে । তারই কাঠ-কেলা ঘাটে মহিন্দর পা। ধুয়ে পরে নিলে জুতো জো । এখন নিছেকে বেশ সমৃদ্ধ আর সন্তবাত্ত বলে সন্দেহ হচ্ছে | অবশ্য পারে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই জুতো কামড় বসিয়েছে মনে হচ্ছে, একটী আল যেন কেটে বেরিয়ে যাবে। তবুও গুতো পায়ে দিলে কেমন মচমচ করে শব হয়, এই খালি-পায়ের দেশে লোক গুলে। বুঝতে পারে, উল্লেখযোগ্য কেউ একজন আসছে এগিয়ে । দুধারে চামড়।-ধোয়া পচ! জলের উৎকট গন্ধ, এদিকে ওদিকে কাঠি দিবে আট! টান করা চাখড়! শুকোচ্ছে রোদে, দরজার গোড়ায় ঝুলছে সমাপ্ত অসমাপ্ধ জুতোর দাশ, ছুটে! একটা ঢাঁক পড়ে আছে এদিকে ওদিকে । একটা! পাঁটার ঠ্যাং নিয়ে শুক্ষ হয়েছে তিন চারটে কুকুরের কলহ। কিন্তু বাড়ীগুলো সব ফাকা কোথাও লোকজন দেখা ঘাচ্ছে না। ওদিক থেকে আসছে প্রচণ্ড ১৩ গানের শব-এনিশ্চয় হম বান্ডিছে । সারাটা গ্রাম বোধ হয় জড়ে। হয়েছে এখানে গিয়েই | অনুমান মিথো নয় মৃহিন্দরের | একেবারে আলো হয়ে গেছে সূষণের দাও; গড়াগড়ি যাচ্ছে দশবারোটা তিরিশের বোতল, পচাইয়ের ভাড়গুলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে | একজন করতাল পিটছে ঝর ঝমর করে, একজন বাজাচ্ছে হারমোনিয়াম, আর তবলার অভাবে একটা ঢাকের উপর কাঠি দ্রিয় ডাল রাখছে তৃতীয় জন। আর অতি প্রচণ্ড নেশা করেছে সকলে । চোখগুলো টকটকে লাল, ইচ্ছে করে মাথ! নাড়ছে, না নেশার ভাবে মাথাগুলো আপনা-আপনিই ঢুলে ঢুলে পড়ছে, ঠিক পোঝা যাচ্ছে না। সকলের মাঝখাদেন উঠে দাড়িয়েছে বাস্থব । বেশ মোটা দোটা ভারিক্কী চেহারার লোক, কম.কথা বলে আর যা বলে তা দস্তরমতো। ওজন করে । এ হেন বাস্থকে এখন আর চিনতে পারা যাচ্ছে না। ধুতির খানিকটা পরেছে ঘাগবা করে, খানিকটা তুলে দিয়েছে মাথার ওপর ঘোঁমটাঁর ধরণে-_তারপর বাইজীর ধরণে কোমর দোলাবার চেষ্টা করছে। শাবশ্ট তাতে কোমর ছুলছে না, দোল খাচ্ছে ভুঁড়িটাই | শআাঁর সেই নাচের সঙ্গে গানও ধরোছে হারহ্ধারে ২ “শাগর ভইটা তুমার কেমুন কাজ, লিয়ে করে মোহন বাঁশি, কুল-মান দিল্যা নাশি, পরানে পঢ়াইল্যে ফ্লাস. কুন্ঠে বা মৃই রাখিম্‌ লাঁজ হে, ইটা তুম্হার কেমুন কাজ”__ _-হে ইটা তুম্হার কেমুন কাজ- তারম্বরে কোলাহল উঠল চারদিকে । প্রত্যেকটা মানুষ সপ্তমে চড়িয়েছে মাতালের জড়ানো গলা, গ্রতিদবন্দিতা করছে পরস্পরের সঙ্গে । গান হচ্ছে না দাঙ্গা চলছে, ব্যাপারটা বাইরের লোকের ৯১ পে, তে পক্ষে বৌঝা শক্ত | নাস্তর নাচের উতসাভীগ ভ্রমশ ছিঙ্গিয়ে চলে যাচ্ছে ভব্যতাঁর মাত্রা । মহিন্দর বললে, সাঁবাঁস হে, খুব জগাছ 1 _আইস হে বড় কুটম, আইস-- সাঁড়া পড়ে গেল মহিন্দরের আবির্ভাবে। টলতে টলতে উঠে দাড়াল তিন চারজন, টেনে একেবারে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাল তাকে । রাস্থ এগিয়ে এল, ছুহাঁতে মহিন্দরকে জাপটে ধরলে একেবারে £ আইস হে নাগর, আইস । তুম্ভার জন্যেই তো কাদি কীদি চোখ আন্হার করি ফেলিছু। হাসির রৌল উঠল । বাস্থ বলে চলল, তামার নাগর আমিলে, তুম্রা উলু দাও কেন্তরন। পা ধুবার পানি লিয়ে আইস, পিঁঢা দাঁও। সমবেত উলুধ্বনির মাঝখানে আসন নিলে মহিন্দর। কিছুটা অপ্রতিভ, কিছুটা লঙ্জিত। সভায় ভষণ উপস্থিত ছিল না, মহিন্দরের আসবার খবরে ভেতর থেকে ছুটে এল সে। -আাতে দেরী করিল! দাঁদা ? _+ঢের ঘাটা ( পথ ) ভাঁডি আইন, তাই দেরী হৈল্‌। --তে| আনাম করে বৈস। হামি উধাঁর যাছি-__ রাস্থ বললে, ই, ই, ভুমি যাওনা কেনে । ভামাদের কুটম লিয়ে হার ফুরতি করি। _-তো কর, কে মানা করোছে? মৃদু হেসে ভূষণ চলে গেল। তাঁর অনেক.কাজ। মাংস রান্না হচ্ছে, তার তদারক করতে হবে, কলাঁপাতার যোগাড় হয়নি এখনো, সেটা দেখতে হবে । তাছাড়া লোক বা জড়ো হয়েছে তাতে অন্তত আরো ছুহীড়ি ভাতের যোগাড় না করলেই নয়। যাওয়ার সময় ভূষণ বললে, মাতালের হাতে পটিলা, বেশী নেশা-ভাঙ করিয়ো না দাদা । ৯ তুমি কেনে বাগড়া দি ? যেইসে যাছ, যা? না? তারপর কয়েক রা মপোই পাল হয়ে এল মভিনলের ও চোখ, আহার গানের সুরে তারও ঘোর লাগতে লাগল। কোমর দুলিয়ে নাচের সঙ্গে সা রাস্ত্ব কটাক্ষ বর্মণ করে চলল মভিন্দরের দিকে £ “ধৈবন ভাঙান্ক তে সথা লীল যমুনায়" নেশা! লাগছে, তবু কোথায় যেন ফাকা ফীকা লাগন্ছ মভিন্দরের - কিসেন একটা ছোয়া গেলে ফিকে হয়ে যাচ্ছে সমস্ত | টকরো ট্রকবো ববিশল্গো ভরা মন্ত মাঠখ[না । নভুদিন পার মনের মশো খ্রন খুন কনে এট! সরলার শ্বতি | দারোগা সাহেব খোজ নিচ্ছেন বংশী সাইার সঙগন্ধে | কেমন লোক, কী কৰে, কী বলে গ্রামের চাষা-ভুগোদের, কী বোঝা চেষ্টা কলে ? কোন সম্পর্ক নেই এই বিচ্ছিন্ন চিন্তাগ্তালার মধ, তবু কোথায় যেন সম্পর্ক আছে একট]। ঠিক ব্ঝতে পারছেনা মহিন্দর- অথচ কিছু একটা খঁজে বেড়াচ্ছে তার মন -কিছুর একটা আভাস পেয়েছে ৷ অন্ধকানে শিকারী কুকুরের মতে। চকিত হয়ে উঠেছে তার ইন্দিয় | _ চন্দ্রীবলীর ভাবন নাঁগিলে নাঁকি হে নাগর ? বাস্তু জিজ্ঞাসা করলে । মতিন্দর উত্তরে মু হাসল । কী যেন হায়েছে তার। কিছুতেই ঠিক খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না, কোথায় একটা দোল! 'লেগেছে, নাড়া খেয়ে উঠেছে সমস্ত । মাঝে মাঝে এরকম ভয় । ঠিক কারণটা খুঁজে পাওয়া যায় না অথচ একট! বিষ নিশ্বাদ, একট! নিরাসক্তি এসে আচ্ন্ন করে। মনে হয়, কে ষেন আসবে, কী যেন ঘটবে। নতুন, আঅপ্রতাশিত বিন্ময়কর | সরল1? নিস্তন্ধ অন্ধকারে সেই উচ্ছল রক্তের মাতামাতি ? সেই শাশ্চ্ দিনগুলি? আখবা ঘোড়ার পিঠে দারোগ। সাহেবের সেই আবিভীব? অথবা কিছুই না? শুধু একট] আদিগন্ত মাঠ, ডাঙীচুরো আল-পথ, গোরুর হাড়ের কতগুলো টুকরো আর এলোমেলো হরিত-হিরণ্যের ছাপ ? ৬] এ ঘোর ঘোর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে ইল মহিন্দর । চোখে পড়ল ভেভবের উঠ্টোনেও একটা চোটি আসর ললেছে | পেগীনে খবিশির ভাগই মেয়ে_ ঢচারটে মদের বোৌভিল গড়াচ্ছে সেখানেও | এখানকার আসবের সঙ্গে এখানকার একট পার্থকা আঁছে | ফসখ ক্ বিশ বাউ* “বরের একটি ছেলে এখাণকার সভা একেবারে আমলা কারে বসেছে । দিব চেহারা! ছেলেটির, গায়ে 'একটা ফস কাখিজ, কাঁনেন গপর দিয়ে সৌখীন বীকা সিথি। ছেলেটি হাসছে, বোঁপ হর বসিকভা করন -আঁর মেয়েলা হাঁসির পমাকে একেবারে গডিয়ে গড়িয়ে পড়ছে । জমেছে বেশ | কপাঁলটা কৌঁচকাঁলো মভিন্দর 1 ছেলেটাকে চেনা চেল! মান হচ্ছে অথচ টিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। কগল্না দেখেনি, অথচ মুখের গড়নে কোথায় 'একটা পরিষ্কার পরিচয়ের আদল আসে | আর যেটা সন চাইতে উল্লেখষযোগা সেটা হচ্ছে এই যে, ছেলেটি এখানকাঁর সব চেয়ে সন্মানিত তিথি-_-গনন্তাপন্থ, লেখাপন্ডা জানা সন্ত্াস্ত বাক্তি শ্রীমহিন্দর রুউটদানসর চাইতেও ! তাই অন্দরে মেয়েদের মধো নিযে তাঁকে বসানো তায়াছে, স্বয়ং ভষণ এসে তত্বাববান করে তার । হঠীৎ কেমন বিশ্রী বৌধ হল মতিন্দবের, কেমন অপমানিত বোঁধ হল নিজেকে এ খ্ামেবঅন্বত এ বাড়ীতে তার চেয়ে মর্ধাদাবান কে? ভুষণ তাঁকে বসিয়ে রেখে নিজের কর্তব্য শেষ হয়েছে মনে করে চলে গেল, অথচ কেন ঘুবে ফিরে এই ছেলেটির তত্বতালাস করে যাচ্ছে সে? ব্যাপারটা কী? ছেলেটি সমানে হাসছে, মেয়েরা ভেঙে ভেঙে পড়ছে হাসিতে । বেশ জমিয়েছে ওরা, একট! আলাদা জগৎ সৃষ্টি করে নিয়েছে ওখানে । মহিন্দবের ফ্েমন যেন মনে হতে লাগল, ছেলেটা তাকে তার আসন থেকে "বঞ্চিত করেছে, ভাগ বলিয়েছে তার ন্যায়সঙ্গত এবং চিরন্তন মর্ধাদায়। কিন্ত কেও? ৬৪ স্ন্দর চেহারা, স্বাস্থ্যে, যৌবনে ঝলমল কমছে । আসর আলো করে বলবার মতো চেহারাই বটে। আর সেই জন্যেই কি ডালো লাগছে না মহিন্নরের, সেই জন্যেই কি অসহা অনধিকাঁরী বলে বোদ হচ্ছে নিজেকে ৮ গকে দেখে কি নিজের হারানো সেই উজ্জ্বল দিনগ্তলোর কথা মনে প্ঁডছে_ননে পড়ছে রক্তের মধ্যে সেই মাদকতার দিন্গুলোকে 7? একদা ত্রিশ বছর আগে যেগৌরবে জোয়ান মহন্দর গ্রামের পের! মেদে সরলার চিত্ত জর করতে পেরেছিল, সেই গৌরবের নতুন উত্তরাবিকারীকে কি সহ করতে পারছে ন। এহিন্দর? আজে সব মেয়ে কৈশোর যৌবনের মাঝখানটিতে একটির পর একটি পাপড়ি খুলছে ফুলের মতো, তারা মতিন্দরের কাছে আলেয়ার মে মিথো হয়ে গেলেও ওই ছেলেটি আজ তাদের পৃথিবীতে 'একচ্ছ ত্র % মভিন্দরের কপাল আরো বেশি করে কুঞ্চিত হয়ে এপ | কান পেতে শোনবার চেগ্া করতে লাগল গুদের আলাপ, ওদের চটটুলত।। কিন্ধ কিছু পোনা বাচ্ছে না বোঝা যাচ্ছে না। ঢাকের বাজনা, করতালের শব্দ আর গানের মাতীমাতিতে শোনবার উপবয় নেই একটি বর্ণ ও | ইতিমধ্যে নাচতে নাচতে বেদম হয়ে পড়েছে বাস্তু | পাশে এসে বসেছে মহিন্দরের | দুহাতে তাকে জাপটে রবে বলছে, তোমার কী হৈল্‌ হে নাগর? বাধিকার উপর থান্কি মন কি সি গিছে » তাই তে। মনে নাগোছে | ভায় হায়রে, হামার নাগরকে কেবা এমন করি ভুপাইলে- ধাক| দিয়ে হগাৎ নাস্থকে সরিয়ে দিয়ে রঢ গলার মৃহিন্দর বললে, থামে। ভে, অত মাতামাতি করিয়ে না। বুট হইছ _সিট। খেয়াল নাই? ছোঘ। পোয়ার সামনত, অমন রে করিলে কি মান থাকে ? | বাস্্ স্তম্ভিত হয়ে গেল। কথাটা একেবারে অবিশ্বাস্ত এবং অপ্রত্যাশিত | এরকম ক্ষেত্রে এবং এমন একট! উপলক্ষে এ জাতীয় বর্ম কথা যে কেউ শোনাতে পারে, এটা কল্পনারও অতীত ছিল। এতক্ষণ সশীনৃত্য করে আাপাতত রাঙ্গ শ্বীভাবে ভাবিত। কথাটা শুনে ৫ সে একবার জিভ, কাটলে, মাখার পেছনে হাত দিনে ঘোষটা টানার চেষ্ট। করলে একটা, কিছুক্ষণ নিজের চিবুকটা! আউ লেন মাথায় ধরে মেয়েলি ভঙ্গিতে তাকিরে রইল, তারপর বললে, ভাররে বাপ, হগাৎ ইটা কী হইল্‌ হে ? খুব নানী হই গিল। নাগোচছে ? --ত নাগিবে না তে কী? বয়েসগানা তো ফের কম হয় নাই । এখন উপ্নস চাড়া করিবে, নাচিবে, কুঁদিবে যিট। উর়াদের ভালো নাগে সিটাই কৰিবে। তুমর| উসব ছাড়ি দেন। দেখিতেও ভালো নাগে না” ফের কোনরে অস (বাত) ধরিলে বিছানাত, পড়ি থাক] নাগিবে। মহেন্দের স্বরে এবাণে তিক্ত নৈরাশ্ঠ ফুটে বেরুল । কথাট। সে কি নীস্ুকে বলেছে, না বলেছে নিজেকে 9? শুধু রান্তকেই সতর্ক কবে দিচ্ছে তা, না বোঝাপড়া করে নিচ্ছে নিজের মনের সঙ্গেও? এটা আজ আর বুঝতে বাকী নেই যে, তারা মা ক্রমশ জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে__-সবে যাচ্ছে আনন আন যৌবনের অধিকার থেকে । আজ কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষণে যাদের দেভ-ম্ন পন্মের মতে। বিকসিত হয়ে উঠছে, তারা আর ওদের কেউ নয়। কুড়ি বাইশ বছরের ওই ফস ছেলেটি সেখানে নিজের সগৌরৰ মঘাদ| প্রতিষ্টা করে বসে আছে - ঈধ্যাতিক্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাঁকা ছাড়া মহিন্দরদের আর গতান্তর নেই । কিন্ত রানুর এবার আর বাকম্ফৃতি হলন।। কয়েক মিনিট তাকিয়ে রইল অপলক দৃষ্টি মেলে । তারপর খললে, তোমার কী হৈল্‌ হে আইজ! --কী আবার হেবে ? বয়েস হইছে, সিটাই মনে পঢ়াই দি! এখন নিজের মান রাখি চলিবা নাগে-বুঝিলা ? বুঝি রাস্ু গম্ভীর হছে গেল । তারপর মভেন্দের দৃষ্টি অন্থদর্ণ করতে তারও চোখ চলে গেল ভেতরে ওই ছোট আসরটির দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই কিছু একট। বুঝল রান্ন--বেটা অস্পষ্ট ছিল দেটা প্রতাক্ষোঙ্জন হয়ে উঠল। এক ১৬ ূর্তে মহেন্দ্র মনটা যেন ধরা পড়ে গেল তার কাছে এবং একই সঙ্গে একই সময়ে, একই প্রশ্ন আর একই উত্তর বেরিয়ে এল £ --ওই ছোড়াটা কে হে? -কে জানেবা! _-কখনো দেখিছ ? --ঠাহর পাছি না। --উয়াক কোথা থাকি আনিলে ভষণ ? _কে কহিবে? ভিন্‌ গায়ের কুনো কুটুম হবা পারে । _সিটাই নাগোছে।। এই সময় ভ্ষণ এসে হাজির। পেছনে পেছনে কলাপাতার রাশি, ন[টির গেলাস। খাবার তৈরী | বসি যান ,বপি যান সব। একটা কলরব উঠল । নেশায় বিহ্বল মানব গুলো এতক্ষণে উঠেছে সজাগ হয়ে। ফুটন্ত ভাতের গন্ধ আসছে, আসছে মাংসের মনমাতানো গন্ধ। ক্ষিদেটা এতক্ষণ চাপা পড়েছিল হাঁড়িয়া আর দেশী মদের নীচে, মাংসের এই পাগল-কব গন্ধে এবার সেটা আত্মপ্রকাশ করলে উদ্দগ্রভাবে। -_-কই লিয়ে আইস, লিয়ে আইল । _আইজ তোমার হাড়ি ফাক করি দিমু হে ভূষণ । কয় মণ মাংস পীাধিছ? --আচ্ছা, আচ্ছা, দেখিমু--কে কেমুন জোয়ান আছ, কত খাবা পার পাতা পড়ল, পড়ল গেলাস। ভূষণ সবিনযজে এসে দাড়াল সকলের সামনে _-বিশেষ করে মৃহিন্দরের |--পেট ভরি খাইও হে কুটুম, ব্দনাম করিয়ো ন]। কেমন বিরক্ত দৃষ্টিতে মহিন্দর ভূষণের দিকে তাকালে।। একবার বলতে ইচ্ছে করল, আমাকে আর অভার্থন1 করা কেন, ওই ছোঁকরাটাকেই করো! গে। কিন্তু বলতে ইচ্ছে করলেই বলা যায় না, মৃহিন্দর নিজেকে সামলে নিলে । শুধু সংক্ষেপে জবাব দিলে, £। ১৭ বৈতালিক --২ একটুখানি সন্দিপ্ধ হয়ে উঠল ভূষণ । "তোমার কী হইছে কুটুম? অন্ুখ কপিছে নাকি ? _অন্থুখ আর কী করিবে? ভামরা এখন বুঢ়া হই গেম্স_অস্থখ তে। হামাদের নীগিই রহিছে। __বুঢ়া !--ভূষণ রসিকতার চেষ্টা করলে £ তুমি তে] চিরকালই জোয়ান রহিছ কুটুম-তুমি ফের কবে বুঢ়া হইল ? একট অকারণ রাগে ব্রন্গরদ্ধ, পন্ত জলে উঠল মহিন্দরের। কেন কে জানে, একট। চড় বসিয়ে দেবার ইচ্ছে জাগছে ভূষণকে । ভূষণের হাসিট। অন্বাভাবিক রকমের কদব মনে হচ্ছে, বেন দীত বার করে সে ঠাট্টা করছে মহিন্দরকে | অনেক কষ্টে এবার নিজেকে সামলে নিলে মহিন্বর | শুধু বললে, ই। কয়েক মুহুর্ত বিস্মিতভাঁবে কুটুমকে পধবেক্ষণ করে ভূষণ সরে গেল সেখান থেকে । কিছু বুঝতে পারেনি -বোঝবার সময়ও নেই তার। গুধু সম্মানিত কুটুমই নয়, নিমন্ত্রিত যেপব অভ্যাগত আছে, তাদের সম্পর্কেও করণীয় আছে তার, আছে দাগিত্ব। শুধু কুটুমকে আপ্যায়ন করলেই চলবে না__জাত- ভাইদেরও খুশি করা দকার | মহেন্দ্র বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল | ঝুডি বোঝাই করে এল লাল চালের ভাঁত- গরম ভাতের ধোঁয়ায় ভরে গেল জায়গাট। ৷ কলার পাতায় পুরো এক এক সের চালের ভাত পড়তে লাগল । কিন্ত কী যে হয়েছে মহিন্দরের কে জানে । নেই ন্যাড়া মস্ত মাঠটা, সেই সরলার স্থতি--মেই ঘোড়ার পিঠে দারোগা সাহেব, না এই বিশ বাইশ বছরের স্বদর্শন ছেলেট।? কিছু পরিষ্ণার ধর। যাচ্ছে না। অথচ থেকে থেকে বিরক্তিতে ভরে উঠছে মন | শুধু খেতে ইচ্ছে করছে না তা নয়, এখান থেকে উঠে চলে যেতে ইচ্ছে করছে--গিয়ে দাড়াতে ইচ্ছে করছে কোনো একটা ১০৮ নির্জনতায়- যেখানে মনটাকে স্পষ্ট করে যাচাই করে নেওয়া চলে, যেখানে খোলা আকাশের নী৮, এঙ্গল আপগাগ বাতাসে তীর বিরত শগাযুগ্ুলো আশ্বাস পায়। - মাস_ মাংস লিয়ে আইস_ লুদ্ধ কলরব উঠেছে ৷ যাদের তর সয়নি তারা ইতিমধোই শুধু ভাত মুঠো মুঠো কৰে খেতে শুরু করে দিয়েছে । আসরটার ওপর দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে মহেন্দ্র, একবার মনে হল-চারদিকের লোকগুলো শত্যস্ত লোভী, অতান্থ ইতর, এদের মাঝখানে সে বেমানান, এখানে আসাটা তাঁর উচিত হয়নি । --নাঁগর) খাও কেনে 7 _ই, খাছি_অন্তম্নক্কভাবে ভাত নাড়াচাড়া করতে লাগল মহিন্দর | ইতিমধ্যে মাংসের পাত্র এসে ৫পীছেছে । একশো জোড়া সলোভ দৃষ্টি গিয়ে পড়েছে মাংসের ভাগের ওপর-- স্ফীত নীসারন্ধ গুলো সাগ্রহে শুকছে তার উগ্র উত্তেজক গন্ধ । ভাঁতের ওপর এক ভাতা মাংস পড়তেই চমকে উঠল মহিন্দর। সেই ছেলেটি মাংস পরিবেশন করছে । কিন্তু সেই মুহর্তেই কী একটা জিনিষ বিদ্যুতের মতো প্রবাহিত হয়ে গেল মনের ভেতরে । কে এই ছেলেটি, কার ছেলে? কার আদল এর মুখে ? হঠাৎ মহিন্দর প্রশ্ন করে বসল, তুম্হাক তো কখুনে! দেখি নাই । তুমার বাড়ি কুন্ঠে হে বাপু? সলজ্জ স্বরে ছেলেটি বললে, মীরপাড়া। মীরপাড়া! মহিন্দরের বুকের তেতর ধক্‌ করে উঠল, থেমে দাড়াতে লাগল হৎম্পন্দন | --তুমার বাপের নাম কী? --€ক্ট রইদাস। হিংস্রভাবে দাঁতে দীত চাপলো যহিন্দর £ তুমি সরলার ব্যাটা? মায়ের নাম শুনে ছেলেটি আশর্য হয়ে গেল। বললে, £। আযাঙ মাকে আপনি চিনেন? | কিন্ত ততক্ষণে পাতা ফেলে তীরের মতো মহিন্দর উঠে দীড়িয়েছে। চীৎকার করে ডাক দিয়েছে, ভূষণ ? ভূষণ শশব্যন্তে ছুটে এল। ত্রস্তম্বরে বললে, কী হৈল্‌ কুটুম, অমন কবি পাতা ছাড়ি উঠিল! ক্যান? বজকণে মহিন্দর বললে, হামা কি অপমান করিবার জন্য এইঠে ডাকি আনিছ? অপমান? অপযান কেনে? সমব্ত বৈঠক বিস্ময়ে ভয়ে তটস্থ হয়ে উঠল । সবে মাংটেব মন-মাতানো গন্ধাটা বান্ব কপ পারণ করে সম্মুখে এসে পৌছেছে । এমন সময় একি বিশ্ব! _-কী হৈল্‌ কুটুম, হৈল্‌ কী! মচেন্্র রুদ্রম্বরে বললে, কী হৈল্‌ না, সেইটাই হামাক কহ। সরলার ব্যাটা হামার সাথ মামলা করে, হামাক হাজতে পাঠাবা চাহে । তাক দিয়! হামাক খিলাবাঁর চাহিছ, হামার অপমান হয় না? ভূষণ বললে, ইটা তুমি কী কহিছ কুটুম! মামলা হছে--সিতো আদালতের কাঝবার। এইঠে খানাপিনা হেবে, জাত-গোন্তর সব এক সাথ মিলিবে, এইঠে উসব ঝামেলা ক্যানে উঠাছ? _ক্যানে উঠামু না? হামীর মান নাই? উয়াদের ডাকি আনি আযতে যে খাতির নাগাছ, সিট হামীকে বে-ইজ্জত হয় না? হামি টইন-_ কখার সঙ্গে সঙ্দে আর অপেক্ষা করল না মহিন্দর। কাঁচা চামড়ার জুতোট1 আঙলেষ মাথায় তুলে নিয়ে বললে, যাছি। আর ,কুনোদিন আসিমু না । রাু বললে, আবে নাঁগর--বৈস বৈস | তুমায় কি মাথ! খায়াপ হৈল্‌? ও ই, হৈল্‌। খারাপ হবার হৈলে আপনি হয়-_কাঁউক কহিধাঁর নাগ না। জমিযাছু। ভূষণ বললে, কুটম, কাগ্ুটা কী করোছ একবাহ ভাবি দেখ । --দেখিছু-_ _হামি হাতজোড করি কহছি-_- এক ঝাপটায় ভষণের হাত সন্গিয়ে দিয়ে তিক্রম্বরে মহিন্দর বললে, খন তিচছে | নতুন কুট্রমগ্ডলাক খাতির কর--উসবে ভামাদের কাম নাই | মুহুর্তে আনন্দিত ভোজের আয়োজনে একটা বিপর্ময় কাণ্ড ঘটিয়ে পয়ে বেগে বেরিয়ে গেল মহিন্দর- নেমে গেল কীচা বাস্তায়। উত্তেজনার বশে জূতোটা পায়ে দেওয়ার কথ! পধন্থ খেয়াল রইল না তান। সমস্ত বৈঠকট| নির্বাক । সবলার ছেলে পাণগু রক্তহীন মুখে একটা প্রতিমার মতে। ঈান্িয়ে রইল সেইখানেই | নখ ৯ _ুই রা সেই মাঠটার ভেতর দিয়েই যখন মহিন্দর ফিরে চলল, তখন কেমন হালকা! হয়ে গেছে তার মন। নিজের প্রতি অপমানের একট! মিথ্যে ছুতো করে অপমান করতে পেরেছে সরলার ছেলেকে, সেই সরলা, যৌবনে যে মহিন্দরের রক্তের ভেতরে বিষ বিস্তার করেছিল নাগিনীর মতো-আর আজও যে তেমনি নাগিনীর মতে ছোবল মাববার চেষ্টা করছে তাঁকে । কিন্ত-_ কিন্তু এতটণ কি করলার দরকার ছিল? সরলার ছেলে তাকে পরিবেশন করতে এসেছে এটা কী এমন মারাত্মক অপরাধ, যাঁর জন্তে ওভাবে পংক্তি- ভোজন নষ্ট করে বেরিয়ে আসতে হবে? অথবা শুধুই হিংসা__ওই জোয়ান ছেলেটার সমৃদ্ধ যৌবনের এশ্বর্ধকে মহিন্দর সহা করতে পারল না? কারণ যাই থাক, এটা ঠিক যে তার ভালো লাগছে না। .আর এই ভালো না লাগাট। সঞ্চারিত হয়েছে সেই নির্জন মাঠের ভেতরে-_-সেই শীতের ঘুমস্ত রোদে । হঠাৎ মনে হল যেন সে অস্থুস্থ হয়ে পড়েছে--নিজের ভেতরে কোথাও কিছু একটা বিশৃঙ্খল! ঘটেছে তাঁর । সেই বিরক্ত বিশ্বাদ দীর্ঘপথ পেরিয়ে যখন সবে নিজের গ্রামে এসে পা দিয়েছে এবং যখন পর্যস্ত ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কী ঘটল, এমন সময় ডাক শুনতে পেল পেছন থেকে । --মহিন্দর, মহিন্দর ? ৮৬ ডাক দিয়েছে বংশী মাষ্ঠার। সঙ্গে সঙ্গে দারোগা সাহেবের চাপ-দাড়ির আড়ালে হিংস্র হাতির ছটাটা মনে পড়ে গেল মহিন্দরের। ঠিক সহজ মানুষ নয় বংশী পরামাণিক, অন্ত এতদিন যে দৃষ্টিতে মহিন্দর তাঁকে দেখেঞ্এসেছে, সেটা বংশী মাস্টারের আসল পরিচয় নয়। তার ভেতরে আরো একটা কিছু আছে-যেটাকে দারোগা সাহেব আবিষ্ক7 করে ফেলেছেন। এবং মহিন্দঃরর মন বলছে, লক্ষণটা শুভ নয়, একট। ঝোড়ো মেঘের সংকেত শিখায়িত হয়ে উঠেছে সেখানে | বংশী মাস্টার একটা খুবপি হাতে করে বাগান খুঁড়ছিল। একট। পাঁতল। গেঞ্জী গায়ে, এই শীতের বিকেলে পরিশ্রমে সে ঘেমে উঠেছে । একটা বিলিতি বেগুন গাছের গোড়৷ পরিষ্কার করতে করতে বংশী ডাক দিচ্ছে, শোনো, শোনো মহিন্দর- মহিন্দর দাড়িয়ে গেল অনিশ্চিতভাবে । মনের ভেতর কেমন এলোমেলো লাগছে, ভালে! লাগছে না এখন আর কথা বলতে । তবু বংশী মান্টারকে উপেক্ষা করা চলে না, তার কাছে নান। দিক থেকে কৃতজ্ঞ আছে মহিন্দর। তাই অনিচ্ছ। সত্তেও বললে, কেন ডাকোছেন। --একবার এলোন। এদিকে । মহিন্দর ফিরল __গিয়ে দাড়ালে। মাস্টারের বাগানের সামনে । প্রাইমারী স্কুলের লাগ।৪ একখানা আটচালা খন্ডের ঘরে বংশী মাস্টার বাস করে। বাইরে থেকে এসেছে এখানে-_বিদেশী মাষ। থাকে একাঁই-পধিবার- পরিজন আছে বলে কেউ জানে না । তবু বেশ উৎসাহী করিংকর্ম। লোক। চুপচাপ বসে থাকতে পারে না কখনে। | ঘরের সামনে একটুকরো ফালতু জমি, যা পেয়েছে দিব্যি বাগান গড়ে তুলেছে তাতে । লাগিয়েছে কপি, মূলো, বেগুন, বিলিতি বেগুন, কড়াইস্ুঁটি। নিজে এক! ভাতেই সব করেছে মাষ্টার। মাটি কুপিয়েছে, ৬৮২৩ ইন্কলের পাতকুয়ে। থেকে বাগান বাবর খুড়ে এনেছে জলের নালা, নিজের হাতে সক্জা লাগিয়েছে, নিজেই তত্বাবধান কবেছে তাব। ফলে এখন প্রসন্ন সবুজের দীপ্তিতে সারা বাগানটা উদ্ভাসিত হয়ে আছে। টুকটুকে লাল হয়ে পেকে ধছেছে বিলিতি বেগুন, উজ্জল সবুঙ্গ হয়ে উঠেছে মুলোর শাক, গাট নীল রঙের পুরু পুরু পরিপুষ্ট পাতাগুলো জড়িদ্ধে পরে আছে ছুধের মতো সাদা নিষ্ষলঙ্ক কপির ফুল। সার বাগানটায় ষেন লক্ষ্মী তার আচল বিছিয়ে দিয়েছেন --হাঁতের গুণ আছে মাষ্টারের | অনিচ্ছুক পায়ে এসেও মহিন্দর মুগ্ধ দৃষ্টিতে মুহুতের জন্তে তাকালো ব।গান্টার দিকে । বললে, সাবাস তে মাষ্ঠার, খাস। বাগানখান করিছেন হে তুঘার। মাষ্টার তৃপ্তির হাসি হাসল । _সেই জন্যেই তো ডাকছিলাম তোমাকে--বড় একটা ড্রামহেড, বাধাকপির গায়ে সন্গেহ হাত বুলোতে বুলোতে মাষ্টার বললে, তোমরা এসব ভালে জানো, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম । কপিগ্তলো তো এখনে। আট বাধল না, বেধে দেব? | | মা্ীর অনেক “নিখলেও' এমন অনেক কিছুই জানে না য। মহিন্ধর জানে । সুতরাং মহিন্দরের তিক্ত বিষ্বাদ মনটা আপনা থেকেই খানিকটা পুলকিত আর সহজ হয়ে এল। প্রাজ্ঞতার ভঙ্গিতে নহিন্দর বললে, না, না, এখন বাধিবেন না। ভালো জাইতের জিনিষ, আপনি ধরি যিবে। আর পাতাতেও পোকা লাগছে। --কপির পাতা থেকে একটা সবুজ কীট বার করে আনলে বংশী : সব খেয়ে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে । -_তো! হু'কার জল ছিটাই দাঁও-_-পালাই যিবে। -হু'কার জল ?-.বংশী আবার হাল ; হু'কো তো খাই না, জল পাব কোথায় ? সন্সেহ মু ভঙ্গিতে মহিন্দর ভৎস'না করলে মাষ্টারকে £ কেমন মাষ্টার হে ৪ তুমি? বিড়ি খাও না, তামাকু খাও ন। তে। ছাত্র পড়াও কেমন করি? আচ্ছা, হামি তোমাকে হু'কার জল দিমু। কথা হচ্ছিল ধ্াড়িয়ে দাড়িয়ে । হাতের খুরপিটাকে নামিয়ে রেখে বংশী বললে, একটু বসবে মহিন্দর ? খুব তাড়া নেই তো? একটু আগেই খুব তাড়। ছিল মহিন্দরের--কোথাও দাড়াতে ইচ্ছে ছিল ন। স্পৃহ। হিল ন। কাবে। সর্দে কথা বলণীর। ভাবছিল, বাড়ী কিরে যাবে। ভূষণের ওখানে গিরে একটা অর্থহীন দুর্বোধ্য উত্তেজনায় যে কেলেঙ্কাবীটা করে এসেছে, নিজের ভেতরে দেখবে সেটাকে বিচার করে, একটা হিসাৰ শেবে তার । একবার খিতিয়ে নিয়ে বুঝতে চাইবে, যা করে এসেছে তার অ.সল তৎপধ কী, তাঁর মূল কোথায়। কিন্তু এখন ননে হল, একটু অগ্ঠমনগ্ক হওয়া দরকার, দরকার ছুটো চারটে কখা বলা! সেহ অপ্রির, অবাঞ্চিত প্রতিক্রিয়াটাকে অন্তত কিছুক্ষ-ণর জন্যে দূরে লবিয়ে রাখতে পাবে। __না, তাড়া নাই। তবে একটু বোসো । তোমার সঙ্গে কথা আছে। কথা! তার সঙ্গে কী কথা থাকতে পারে বংশী পরামাণিকের 1? বসতে সে পারে, খোন গল্প করতে পারে খানিকক্ষণ, শাকসজী কী উপায়ে ভালে। কঞ্। যায়, বাঁডীনো চলে দ্রত গতিতে, সে সম্বদ্ধেও উপদেশ দিতে পারে মহিন্দর | কিন্তু কথা! শুনলেই কেমন একটা খটক] লাগে, লাগে একটা অপ্রত্যাশিত চমক । দারোগা সাহেবের সেই ভিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে এর কোনো রকম সম্পর্ক নেই তো? কেজানে! --কী কহিবা চহোছেন ? --এসো, বোসে৷ এই দাওয়ায়। মহিন্দর দাওয়ায়. বসল এসে । এদিক থেকেও একট। বিশেষত্ব আছে বংশী পরামাণিকের--ধা আগেকার কৈবর্ত পণ্ডিতের ছিলনা । এট| যে মুচিদের গ্রাম এবং এরা যে জুতে। সেলাই করে অবসর সময়ে জমিতে চাষ দিয়ে ২৫ বৈতালিক --২।১ - কালাতিপাত করে থাকে, একথাটাকে কৈবর্ত পণ্ডিত কখনো ভুলতে পারতনা। চামারদের প্রতি অন্থুকম্পার সীমা ছিলনা তাঁর এবং সেজন্য সবসময়েই তার নাক খাঁড়। হয়ে থাকত আকাশের দিকে | এক কথায় সে মুচিদের ঘ্বণ| করত _-চলত নিজের দূরত্ব বাচিয়ে। গলায় একগাছা পেতে ঝুলিয়ে নিয়েছিল বামুনদের অনুকরণে, বুড়ো-আঙ লের ডগায় সেটাকে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সগর্বে বলত, হুঁ, হু, আমরা জাত কৈবর্ত, তোদের মতো! ছোট লোক ন্ই। বংশী পরামাঁণিক তার দলের নন্ব। ীনজে জলচল নাপিতের ছেলে হয়েও মুচিদের সে করুণার চোখে দেখেনা, ওসব বালাই নেই তার। সবঘত্বে এবং সপমাদরে সকলকেই সে দাএয়ায় এনে বসায়, গল্পগুজব করে । জাত-বিচার নেই, ছোওয়া-ছুঁয়িও নেই । বেলা পড়ে এসেছে, অল্প অল্প উঠেছে শীতের হিমেল্‌ হাওয়া। কোৌচার খুটট। গায়ে জড়িয়ে বংশী বললে, তুমি তে। গায়ের সব চাইতে বিচ্ণ লোক মহিন্দর, তোমাকেই জিজ্ঞাসা করি। এবারে আমাদের ইন্ুলে সরম্বতী পৃঁজে করলে কেমন হয়? নিজের কানকে যেন বিশ্বান করতে পারল না মহিন্দর ঃ কী পুজ। করিঝ। কহিছ? | | -মরপ্ধতী পৃজ। ! হায়রে বাপ! ইসব খেয়াল তুম্হার কেনে হৈল্‌ মাষ্টার? - কেন, দোষট1 কী? ইস্কুল বিদ্যার জায়গা, আর সরম্বতী হলেন গিয়ে তোমার বিদ্যার দেবী--এটা তো জানো? -ই, সি তো জানি। --তা হলে যেখানে বিদ্যা হয়, সেখাণে বিদ্ার দেবীর তো পুজা কর! উচিত? ঠ্ -ছ) সিতো। উচিত । ১৬, -তবে পূজার ব্যবস্থা করি। _থামো হে মাইার-বংশীকে বাধা দিলে মহিন্দর২ তুমি ঢের নিখিচ, ঘিট। কহিবা সিট! তো! হেবে | কিন্ পূজ। কে করিবে? _কেন-পুজো যে করে? _কে বাম্হন্‌?--মহিন্দর আ্ানভাবে হাসল £ ইবারে হামাক তুমি হাসাইলেন হে মাষ্টার। বাম্হনকে চিন নাই। উয়ারা মুচির পূজা করিবা আসবে- এমন মানুষ নহ। কহিবা গেলে গালি দ্রি তাঁড়াই দিবে। _তবে তোমরা পূজো করো কী করে ?-বংশীর মুখে বেদনার ছায়া পড়ল তোমাদের পূজো করে কে? _হামরা উসবের মধ্যে নাই । তো কালীপুজা হয়--ভিন্‌ গায়ের সপকার মশাইয়ের নামত, সংকল্প করিব| নাগে । ওই হামাদের পূজা-বাস। ফের যে পূজা করি সিতো৷ মদ আর হল। হয়, বাম্হন আর বী কামে নাগিবে। বংশী চুপ করে রইল। নীচের ঠোটটাকে চিবিয়ে চলেছে মাঝে মাঝে, কা একট| কথা ভাবছে। মৃহিন্দর আবার বললে, তাই কহিছু, যেমন চলছে পই পুকমটাই চলিবা দাও। নাহক ঝামেলা বাড়াই কি ফায়দা হেবে। বংশী মুখ তূলে বললে, না পূজে| হবেই । _কে করিবে? --তোমরাই। হাম্বা 1-মহিন্দর হা করে রইল। অনেক লেখাপড়া শিখলে এই রকম হয় নাকি মানুষের । মাথার ঠিক খাকে না? বংশী মাষ্টার প্রলাপ বকছে নাকি? কী কহিছ তুমি? _-ব| বলছি, ঠিকই বলছি। কিছু বুঝতে পারছে না মহিন্র । অবাক বিস্ময়ে একবার মাথাটা ঝাকুনি দিয়ে নিলে। যেন নিজের মন্তিফ্ষের ভেতরের ধোয়াটে আচ্ছন্নতা আর ২৭ বিভ্রাস্তিকে নিতে চাইল পরিচ্ছন্প করে। বললে, তুমি যে কী কহিছ, হাঁমি কিছু বুঝিবা পাইন, না। এতে না বোঝবার কী আছে ?_মিষ্টি করে বংশী হাসল £ তোঁমণাই পূজো করবে। _হামরা? হামরা কেমন করি করিমু? হামরা কি বাম্হন, না হামাদের মন্তর-তন্তর আছে ? __কিচ্ছু লাগবে না, পূজো! করলেই হবে। আর সন্দেহ নেই যে মাষ্টারের মাথা খারাপ। মহিন্দর উঠে ছড়িয়ে বললে, উনব মতলব ছাড়ি দাও মাষ্টার। দেবতাঁক লিয়ে উসব চালাকি করিলে মুস্কিল হেবে। _বোসো কোসো, অত চটে যেয়োনা ।-_ব্ংশী বললে, আমি তো! অনেক লেখাপড়া শিখেছি । কোন দোষ হবে না । --দোঁষ হেবে না? তুমাক্‌কে কহিলে? -_-বইতে লেখা আছে--ছাপার বইতে। হা! এবার আর কথাটাকে মহিন্দর অবজ্ঞীভরে উড়িয়ে দিতে পাঞল ন1। এইখানেই ছূর্বলতা আছে তাঁ--বন্ধন আছে । ছাপার বইফের সে] পিশ্বাস্ত এবং নির্ভরযোগ্য আর কিছুই নেই তাঁর কাছে। _হ্যা? চোখ ঝড় বড় করে মহিন্দর বললে, বইয়ত্‌ নিখিচে ? হ্যা _লিখেছে। _-তো তোমার যিট] খুসি হয়, সেটাই করেন। হাঁমি আর কী কহিব। মহিন্দর জবাব দিলে আস্তে আস্তে । মাষ্টার যে যুক্তি দ্িফেছে, তার প্রতিবাদ করবার ক্ষমত] নেই তাঁর--অথচ সেটা মেনে নেওয়াও শক্ত । তাই অধ: সংকুচিতভাবে মহিন্দর বলে গেল, হামরা তো নিখি নাই । হাদাদের ফেএ পুছি কী হেবে? বংশী বুঝল হার মেনেছে মহিম্দর, কিন্তু তার মন মানেনি এখনও । (. তা ৬৪ নাই মান্থুক, তাঁর জন্যে আর উৎসাহ নষ্ট করা চাল না। বংশী বললে, বেশ আই হবে। কিন্তু পূজো করতে হলে খরচ-খরছা আছে, কিছু টাদা তো চাই। চাদ? আচ্ছা, দিমু চাদা। _শুধু তাই নয়। গাঁয়ের সকলের কাছ থেকেও কিছু কিছু আদায় করে দিতে হবে। _হাঁ_সিটাও পারা ধিবে। কিন্তু তুমি হামাক ভাবনাত, ফেলিলেন মাষ্টার । _-কিছু ভাঁবতে হবে না, ঠিক হয়ে যাবে সমস্ত | বেলা পড়ে এল, গ্রামের বাঁশবনের ওপারে অস্তে নামল স্য । দেখতে দেখতে ঘনালো শীতের ঠাণ্ডা সন্ধ্যা । মাষ্টাপের সক্জী বাগান থেকে মুলোর ফুলের একটা বুনো গন্ধ সঞ্চািত হতে লাগল বাতাসে । মহিন্দরের শীত করতে লাগল, বংশী মাষ্টার আরো ভালে করে গায়ে জড়িয়ে নিলে কাপড়ের খুটখানা। কথা শেষ হরে গেছেঠিক নতুন করে কৌনখানে আবস্ত বরা যাবে সেটা এখনও কিছু স্থির ধরতে পারছে না কেউ । আর সেই কয়েক ম্হূর্তের শীরবতার মধ্যে মহিন্দরের সামগ্িকভাবে আত্মবিস্বত মন আবার [করে গেল সেই ফসপহীণ ন্তা্ঞ। মাঠটার বৌদ্র-ঝল্সিত পটভভূমিকায়। মনে পড়ল, দারোগ। সাহেবের সেই অশ্বীবোহী মৃতি। চাপদাড়ির ভেতরে বাতাস চিরে চিরে খেল। করে যাচ্ছে একটা মিশ্রিত বিচিত্র গন্ধ - ঘোড়ার দামের আর ধুলোর । ইতস্তত করে মহিন্দর বললে, আক্ষা মাষ্টার । _-কী বলছিলে ?--অনীসক্ত কৌতুহলে জিজ্ঞাস। করল বং । দহিনধর আবার ইতন্তত করল। একবার ভেবে নিতে চেষ্ঠা করল প্রশ্নটা মোজাস্থজি জিজ্ঞাসা করে নেওয়াটা সঙ্গত হবে কিনা । কেমন যেন সন্দেহ হয়েছে দারোগা সাহেবের সন্ধান নেওয়ার পেছনে শুধুমাত্র নির্দোষ কৌতৃহলই প্রচ্ছন্ন নেই | ৯ _-কহিতেছিন্--গলাট। একবার পরিষ্কার করে নিয়ে মহিন্দর বললে, কহিতেছিন, ই গায়ের মানুষ গুলাক কেমন দেখিছ ? বংশী হাসল ; হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করছ কেন? _না এমনি শুধাইভ। এইঠে_এই চলার গায়ে তুমার ভালো নাগে? বংশী তেমনি হাসিমুখে জবাব দিলে, ভালো লাগে বলেই তো এখানে আছি। | -_-ই, তুমার ঠাই পটি ছোঁক্রাগুলান মানষ হবা পাঁরে নাঁগিছে। চাষার ছোয়া নাম সহি কনিবা পাবিলেই কাম হই যিবে। -শুধু নামসই করবে কেন? অনেক লেখাপড়া শিখবে, শহরে পড়তে যাবে। _ হায় হায়-_কপাঁলে হাত চাপডাঁলে মহিন্দবর £ অমন বরাতখানা! করি কি আর আসিছে! বলদ তাঁড়াবা আর জুতা সিল্াবা পাবিলেই প্যাঁটের ভাত করি লিবে। উসব ছাড়ি দাও। প্রতিবাদ করবার ইচ্ছা! থাকলেও বংশী করল না। মহিন্দরের কথায় বাধ! দিয়ে কোনো লাভ হয় না, বব তাকে আরো বেশি উত্তেজিত করে তোল! হয়_-এ অভিজ্ঞতা! তাঁর আগেই হয়েছে । বংশী চুপ করে রইল। উসখুন করতে লাগল মহিন্দর, তারপর বলে ফেলল, আচ্ছা মাষ্টার, দারোগ। সাহেবকে তুমি দেখিছেন ? বংশী চকিত হয়ে উঠল £ কেমি দারোগ! সাহেব? --হাঁবিবগঞ্জ থানার বড় দারোগা? - না, কেন? - এমনি কহিতেছিন্--মহিন্দর হঠাৎ উঠে পড়ল £ তবে এখন হামি চলি। তোমার হু'কার জল পাঠাই দিমু। মাষ্টারকে আর কোন কথা ব্লবার সুযোগ না দিয়ে ভ্রুত চলে গেল ৩৩ মহিন্দর । সবজী বাগানের পাশ দিয়ে নেমে গেল গায়ের অন্ধকারে আচ্ছন্ন কাচা বাস্তাটায়। সে দিকে তীকিয়ে একবার ভ্রকুঞ্চিত করলে বংশী। শেষ প্রশ্নটার ভেতরে সন্দেহের অবকাশ আছে। অত্যন্ত অকারণে এবং নিতান্ত অদংলগ্র ভাবে ও কথাট] চট করে জিজ্ঞাসা করবা? অর্থ কী হতে পাবে? এবং পৃথিবীতে এত লোক থাকতে হাবি্বিগঞ্জ থানার ৭ঢ দারোগার সঙ্গে তার পরিচয় আছে কিন। এই কথাট। বিশেষভাবে জিজ্ঞ।না করবার তা্পধ কী? বংশী বুঝতে পারল এক ফাঁলি মেঘ দেখা দিয়েছে আকাশের প্রান্তে। কালে। মেঘ--সে মেঘে অনাগত ছুযোগের সংকেত । হয়তো! এখানে ও থাক চলবে ন], যেখান থেকে যে শোতে সে এসেহিল, সেই ম্তোতের টান আবার তাকে ডাক দিয়েছে । অন্তত মৃহেন্দ্রের কথার মধ্যে তার স্ুুম্পষ্ট আভাস পাওয়৷ গেল। অন্ধকার দাওয়ায় চুপ করে বসে থাকতে থাকতে বংশী মাষ্টারের পিছনের জীবনটা চোখের সামনে দেখা দিলে কতগুলো ছেড়া ছেড়া ছবির ট্রকরোর মতো । কী হতে চেয়েছিল, কী হল শেষ পর্যন্ত । নিষ্ুর কঠিন ঘ। লেগে বিপধন্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল সমস্ত-_-একটা ভঙ্গুর ধাতুপাত্রের মতো চুণ চূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে গেল এদিকে ওদিকে । আজকের বংশী মাষ্টার তাই একটা সম্পূর্ণ জিনিষ নয়-_নিদিষ্ট কোনে! আকার নেই তার। নিজের কিচুর্ণ সত্তার একট! খণ্ড মাত্র__নিজেরই একট ভগ্নাংশ । শুধু কি একাই বংশী মাষ্টার? অথবা তার মতে! আরো অনেকে- আরো অসংখ্য গণনাতীত মান্ষ-_যারা মধ্যবিত্তের সন্তান। -তাদের চাইতে ঢের ভালো এই মুচিরা, যাদের আশা! নেই, ভখিষ্তং নেই, কোনো মোহের অন্তিত্বমাত্রও নেই নিজেদের সম্পর্কে। কোনো মতে নামসই করতে পারলেই শিক্ষার এতবড় বিপুল বিস্তীর্ণ জগতের ওপর থেকে সরে যায় তাদের দাবী। ক্ষেতে হাল দিতে পারলে কিংবা চামড়ায় শক্ত করে সেলাই দিতে জানলেই তার! পরিতৃপ্ত--তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত। ৩৯ কিন্ত-_ কিন্তু আশ্চঘ জটিল মধ্যবিত্তের জীবন, তার পরিকল্পনা ।' সঞ্চয় অল্প, কিন্তু শেষ নেই আকাজ্ফার, সীমা নেই দুধাশার ব্যাপ্তির। তাই মন যত ছুটে বেরিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে ততই টান পড়ে পেছনের লোহার শেকলে। অসহায় আক্রোশে নিজেদের ক্রমাগত আঘাত করে যায়, তারপরে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে চরম পরাজয়ের গ্রানিকে মেনে নেয় অপ একটা জানোয়াৰের মতে । শীতট। বড় বেশি কৰে ধরেছে, মাঠের পার থেকে আসনে কনকনে উত্তরে বাতীল। আর দাঁওয়ায় বসে থাকা চলেনা । একটা ক্লান্ত নিশ্বাস ফেলে উঠে পড়ল বংশী গাষ্টার, ঘরে এসে ঢুকল, জালালো৷ ল্টনট । ময়ল! লন, চিম্নিতে পৌছার লাল আস্তর। তবু তারি আলোতে স্তব্ধ শীতল অন্ধকারট1 বিদীর্ণ হয়ে গেল। ঠাণ্ডায় ভিজে ভিজে দেওয়াল থেকে মাটির গন্ধ উঠছে, মেজে থেকে উঠছে কন্কনে ঠাণ্ডা । সবটা ভ্ালে। করে আলো! হয়নি, টুকিটাকি জিনিসপত্রের ছাড়াল আবভীলে যেন কত গুলো ছায়ামৃতি গুড়ি মেরে আছে। হঠাৎ উতকর্ণ হয়ে উঠল বকুশী যাষ্টার_-যেন নিশ্বাস বন্ধ করে শুনতে চাইল কাদের অতি সতর্ক নিঃশব্দ সঞ্চার । তারপর আলোটা আরো একটু তেজ করে দিয়ে উঠে বসল ঠাণ্ড। শক্ত বিছানাটার ওপবে। বসবার সঙ্গে সঙ্গে বিছানাটা মচ ঘট করে উঠল .-আর একবার চমকে উঠল বংশী। নিজের ছেলেমান্ুধী ভয়ে নিজেরই হাসি পেল। তবু সাবধান হওয়া ভালো । বংশী একবার মাথা ঝুঁকিয়ে তাকিয়ে দেখল বিছানাটার নীচে অহ্থজ্জল ছায়ার ভেতরে । বিছ্বানাট! খাটের নয়, বাশের মাচার। খাটের রেওয়াজ এদেশে বড় নেই-_মাচাতেই শোয়ার ব্যবস্থা । পাতলা কম্বলের নীচে বাশগুলো৷ প্রথম প্রথম পিঠে লাগত, লাল হয়ে দাগ ধরে যেত সকালে, হাত লাগলে চিনচিন করত। এখন আর ওসব হয়না--অভ্যন্ত হয়ে গেছে সমন্ত। ৩২ মাঁচার সবটাই শিহান। নন, তার একদিকে দেওয়াল ঘেষে রাখ! হয়েছে গোটা ছুই টিনের তোবড়ানে। স্থাটকেদ্‌। একটা স্থাটকেস্‌ ছোট--আর একটা বেশ প্রমাণসই চেহানার | এপ্াই মাষ্টারের সম্পত্তি। ছোট ক্লাউকেস্ট। এককালে পৌণীন ছিল, ওপরে গোট। কয়েক গোলাপফুল আ্বাকা হিল তার। ছেলেমান্গঘি খেয়ালে ওই গোলাপদ্ুল গুলোর ওপরে ভারী একট] মোহ ছিল মাষ্টারের | কিন্তু সেগুলিকে রাখা | যায়নি, রঙ চট গিয়ে বসচন্তর দাগের মৃতা কতগুলো দুঙের ছিটে ছড়িয়ে আছে শুধু। ময়ল! চাদরট। গাঁয়ে জড়িরে বসতে মাষ্ঠারের নতুন করে যেন চোখ পড়ল ই বান্সটার ওপরে, ভাসি এল শুধু দই বাক্সটার ওপরে আকা গোলাপ বুদ ুলোই নয়, সমস্ত জীবনেই আজ ক্ষতচিহেদ মতো বিস্তীণ হয়ে আছে চটে যাওয়। রঙের ছিটে । অুনক স্থৃতি আছে এই বাক্সটার সঙ্দে । ওটা! নে কিনেছিল তার নাম ছিল অতুল মজুমদার, তখন কাটিহারের *একট।| হিন্দুস্থানি হোটেলে একট অন্ধকার খুপর্থরতে সে পড়ে থাকতৃ) খেত পুরী আর অড়হরের ডাল। তারপর বাক্সটার অধিকাণা হল ভরুদ্িন তালুকদার, গায়ে মস্ত শেরওদ়ানি আর এক মুখ চাপদাড়ি শিয়ে সে আমিন গা প্যাসেঞ্তারে চড়ে চলে গেল। তারও পরে আরো অনেকে ওটাকে ভোগ করেছে মালিকান। স্বত্বে, "হরেন চৌধুরী, শিবনাথ সাহা, ইক্রাভিম দফাদার--পবগুলো নাম মনেও পড়ে না। এখন ওর মাপিক বশী পরামাণিক-কে জানে আরো। কত হাত বদলাবে 1 [কন --- কিন্তু হঠাৎ দারোগা! সাহেবের কথাট! কেন বলল মহিন্দর? কেমন খটকা লাগছে । লক্ষণ ভালো নয়। কাল একবার ভালো করে খবরটা নিতে হবে। তবু আদ ক্লান্তি বোন ইন্ছে। মনে হচ্ছে এর যেন শেষ নেই । নিজের সম্পর্কে এই অতি প্রথর সতর্কতা, এই যাধাবরবুত্তি। আর নয়--আর সহ্য ৩৩ বৈতালিক--৩ হয় না) চিরদিন এই ক্লান্তিকর চলার চাইতে কোথাও এসে ঢের ভালে। থেমে দাড়ানো, হোক সে পাথরের প্রাচীরে ঢাক। একট। শ্বাসরোধী অবক্ষয়, তার সামনে থাঁক কঠিন লোহার গরাদে। তবু সে একরকমের বিশ্রীস্তি,. একটা নিশ্চিত প্রশান্তির প্রতিশ্রচ্ভি। শিবনাথ সাহা একবার প্রায় নিরুপায় হয়ে নিজের বুকে রিভলভার ঠেক্ষিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, খুব কি ভুল করেছিল সে? হঠাৎ বংশী মাষ্টীরের মনে পড়ল একটি মেয়ের কথা । পিভব| চুল ছিল, আর ভারী মিষ্টি ছুটি ডাগর ডাগর চোখ। শ্ঠামবর্ণ ছোটখাটো! একটি মেয়ে, হালক1 পাতলা ঠোট ছুটি দেখলে কিছুতেই বিশ্বাস করা যেতনা এত ক্ষুরধার তার রসন|। অতুল মজুমদারের সঙ্গে কলহের তার আর বিরাম ছিলনা । দ্রেখা হইলেই ঠোকাঠুকি বাধত। তর্ক মে করবেই, যুক্তি নাই থাকুক, ছেলেমান্ুষের মতো! মাথা ছুলিয়ে ছুলিয়ে বলবে, না, না, তামার কথা কিছুতেই আমি মানব ন1! | মানেওনি শেষ পধন্ত। আশ্চর্চ এমন একটা উল্লেখযোগ্য মানি অতুল মজুমদার, বেশ সম্মানিত একটি ছোটখাটে। নেতা, এত কাজ, এত দায়িত্ব । তবু সে দায়িত্বের ভিড়ের ভেতরেও অতুল মজুমদার তুলতে পারেনি যে একটি অতি দুর্বল অথচ অতি প্রবল প্রতিদন্দী আছে তার-_যাকে তর্কে না হোক, জীবন দিয়ে জয় না করা পযন্ত তার-স্বস্তি নেই। আজ পর্যন্ত সংকল্প সিদ্ধ হয়নি। আজ কোথায় অতুল মজুমদার একবিন্দু জলের মতে যেন মুছে গেল মাটির বুক থেকে, ঝরে গেল ঘাল্লের শিসের একটুকরো শিশিরের মতো। যারা তাকে মনে রেখেছে তাদের আকর্ধণটা প্রেমের নয়। সেই ছোট মেয়েটি-নাম বোধ হয় ছিল শান্তি তার তো ভুলে যাওয়া আরো বেশি স্বাভাবিক। কিন্তু অতুল মজুমদার যদি কোথাও বেঁচে থাকে, তার ভোলা চলবে না। তাকে মনে বাখতে হবে.- ৩৪ স্থতরাং বশী পরামাণিক তঠাৎ সঙ্গাগ হয়ে উঠল । সব যেন গল্পের মতো মনে হয়, মনে হর উপন্যাসের ছেঁড়া পাগুলিপির পাতা এলোমেলো ভাবেঞ্চ পড়ে চলেছে সে। কী লাভ এতে, কতটুকু দাম এর | শুধু এইটেই সতা 'র থাঃলে চলবে না, এখনো থামবার সময় হয়নি |" পাথরের শক্ত প্রাচীর ন্সার লোহার গরাদের অন্তরালে যে বিশ্রাম, তা অপমৃতা, তা আত্মহত্যা সেদিনকার ছেটি মেয়েটিকে দেওয়। সেই প্রতিশ্রুতির চূড়ান্ত অমর্যাদা ! কিন্তু আর বসে থাকা ঠিক নয়, রান্না করতে হবে। এবারের কাঠগুলো ভিজে, সহজে জলতে চায়না । অনেকখানি উত্সাহ আর, উদ্যম অপব্যয় করতে হয় তার পেছনে । সুতরাং এখন থেকেই অবহিত হওয়া দরকাঁর। মাচার বিচ্ভানা থেকে মাটিতে একবাঁর পা ঠেকিয়েই বংশী মাষ্টার আবার জড়ো-সড়ো হয়ে বসল। বিশ্রীঠাণ্ড পড়েছে আজ--এই সন্ধ্যে বেলাতে যেন আড়ষ্ট আর অসাড় করে দিতে চাইছে শরীরটাকে । শুধু উন্ধন ধরানো নয়, জল ঘাঁটাঘখটির কল্পনীতেও মন বিদ্রোহ করে বসল। থাক, আজ আর ঝামেল! বাড়িয়ে কাজ নেই । কিছু মুড়ি চি'ড়ে সঞ্চিত আছে, সন্ধান করলে একখান। তালের পাটালিও মিলতে পারে, ওতে করেই আপাতত কুলিয়ে ঘাবে একরকম | টিনের ছোট স্থ্যটকেস্ট। খুলে একখান বই বার করলে মাষ্টার, তাঁরপর লগনট। কাছে এগিয়ে এনে পড়তে শুরু করলে। সারা! গায়ে মাটি লেগে আছে, পাঁ একবার ধুয়ে নিলে ভালো! হত। কিন্তু বড্ড শীত ধরেছে আর ভারী আরাম লাগছে মোট! চাদরটার উষ্ণমধুর স্েহাশ্রয়। মাষ্টার পড়ায় মনোনিবেশ করলে । বাইরে অদ্ভুত প্রশান্ত হয়ে গেছে রাত্রি। ইস্কুলটা! একটু নিরালায়-_-একটা ছোট ঘাসে ভরা মাঠ, তারপর একটুখানি বাগান, সেইটে ছাড্টিয়ে গ্রাম শুরু। ওখানকার মাছষের কলক এখানে এসে পৌছোয় না, তা ছাড়া এমনিতেই তো সন্ধ্যা হতে না হতে গ্রামের লোক কোনো রকমে ছুমুঠো গিলে ছেঁড়া কাথা ৬৩৫ আর জীর্ণ পাতল! লেপের তলায় আশ্রয় নেবার চেষ্টা করে। পড়তে পড়তে মাষ্টার বার কয়েক মাথা তৃলল, কান পেতে যেন কিছু একট খোনবার চেষ্টা কবুল কিন্ত কোথাও কোনো সাড়া শখ নেই । শুধু অনেকদুরে একসঙ্গে গোটাকয়েক শেয়াল আর্তনাদ করে উঠল, প্রতাত্তরে খেকিয়ে উঠল গ্রামের গোটা কয়েক কুকুর । বাত ধাড়তে লাগল, পড়ে চলল মাষ্টান। সময় কাটতে লাগল। বাইনে অন্ধক।রের ভেভরে ফিকে জ্যোতন্সা পড়েছে, শীতের ঘোলাটে জ্যোৎস্সা। অন্ন অল্প কুয়াশ। ভেসে যাচ্ছে ধোয়ার মতো । সেই ধোয়াটে ধুসরতার মধ্যে ছোট ছোট কতকপ্তলি কালো ছায়া অতি দ্রুতগতিতে ভাওয়ার | ওপরে নাচতে নাচতে চলে গেল--একদল চামচিকে | সামনের সবজী বাগানে দুধের মতো শাদ] টাটক1 কপির ফুলে চিকমিক করছে জ্যোতসার গুঁড়ে। ঠা! ভাঁওয়ার সঞ্চারিত হচ্ছে ভিজে ঘান আর মূলোর ফলের বুনো গন্ধ | ঘরের বাইরে ঠকৃ-ক্কো-ঠক্‌-ক্কো? করে একটা ট।ন। স্থরেলা আওয়াজ উঠল। তক্ষক ডাকছে, এ ঘরের দাওয়াতেই কোঁথাঁ 9 বাসা করে আছে। মাথার ওপরে ঘরের চাঁলে কুব্‌ কুবু কুট কুট করে একটা ক্ষীণ অনিচ্ছিন্ন শব--বইয়ের ওপর ছড়িয়ে পড়ল খানিকটা মিহি হলদে 'গ্রঁড়ো, আডাঁর বাশ কাটছে ঘুণে। মাষ্ীরের মনোষোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বই বদ্ধ করে বংশী পরামাণিক একবার তাকালো আকাশের দিকে, দৃষ্টি মেলে দিল মীন জ্যোংস্বা আর লঘু কুয়াশায় বিবর্ণ নক্ষত্রপুষ্জের শূন্যতায় | আঁকাঁশের শোভ1] দেখবার জন্য নয়, রাত কত হয়েছে সেইটেই যেন অনুমান করতে চাইছে। তারপর মস্ত একট! হাই তুলে সমস্ত শরীরের আচ্ছন্নতা যেন কাটিয়ে নিলে একবার, আড়মোড়া ভেঙে সরিদ্ধে দ্রিলে এতক্ষণের শীতার্ত জড়তার প্রভাব। আর দেরী করা চলে না, এই রাঁত্রেই তার অনেকগুলো কাজ সেরে নিতে হবে। মাষ্টার খাট থেকে নামল । ঘরের কোণ! থেকে বার করে আনলে একটা ০ ছোট মেটে হাড়ি, কানা উচু একটা কীসার থালা। হথাড়ির ভেতরে চিড়ে শয ছুই ছিল, বসে বসে তাই কীচা অবস্থায় কড়মন্ড করে চিবিঘে নিলে খানিকট1। এইতেই বেশ কেটে যাবে রাতটা । অতুল মজ্মদারেন কথা মনে পড়লে এখনও কষ্ট হয় তাঁর । কী বিলাসী ছিল লোকটা, খাণ্যা-দা ওয়ার কতরকম বাছ-বিচার ছিল তার। আশ্চ্ণ, সে লোকটা খেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে! যে-কোনো রকম খাওয়া তার অভান্ত হয়ে গেছে, তবু বেশিক্ষণ চিড়ে চিবুতে কষ্ট হয়, আটকফ্কে আসে চোয়াল, পেটের মপ্য থেকে কেমন বিশ্রী একটা শীতলত]| নাড়ি বেয়ে শিউরে শিউরে উঠে আসে, ঝাকুনি লাগে মাথার ভেতরে । চিন্ডেখাওয়া বন্ধ করে মাষ্টার টক ঢক করে ঘটিখানেক জল ঢেলে দিলে গলায় । কনকনে ঠাণ্ডা জল-__দীতগুলে একসঙ্গে যেন ঝনঝন করে নড়ে উঠল তাঁর। পেটের থেকে উদগত সেই"শিহরণটা মাথার ভেতরে যেন আরও জোরে জোরে ধাক্ষ। মারছে । বংশী মাষ্টার উঠে পড়ল দেওয়ালের কোণে দড়িতে বোলানে। ময়লা ছিটের কোটট] চড়িয়ে নিলে গায়ে, পরলে ছাত্রদের উপঙৃত শক্ত বেঢপ জুতোঁজোড়া। আর একবার সন্দিপ্ধ শক্ষিত চোখে তাকালো বাইরের ব্ষপ্ন জ্যোল্সায়-ভরা ঘাসের মাগটার দিকে, আকাশে পাঙুর টাদ আর বিবর্ণ নক্ষত্রের সভার দিকে । তারপর মোটা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ল্গনটা যতদূর সম্ভব ক্ষীণ করে দিয়ে বেরিয়ে এল বাইবে। টেনে দিলে দরজার শিকল, পবিরে দিলে ছোট একট। পেতলের তাল|। ন), কোথাও কেউ নেই-নিঃসাড় শান্তিতে তেমনি করেই ঘৃমুচ্ে পৃথিবী । চাদের ঘোলাটে চোখে পৌয়ার মতে] উড়ন্ত কুয়াশা-ছুদের মতে সাদা! নতুন ফলক পিতে জ্যোতসার গুড়ো । মুলো শাকের পাতা কীপছে, হাওয়ায় ঈয়ে ঈর়ে পড়ছে ফরস্ত বিলিতি বেগুনের ঝাড়। গ্রামে কুকুর কেঁদে |উঠল-_ অস্বাভাবিক অন্বস্তিকর স্রে। তারপরেই কেউ করে একট! কাতর আর্তনাদ _কেউ বিরক্ত হয়ে একটা টিল ছু'ড়েছে অথবা বসিয়ে দিয়েছে এক ঘা লাঠি। | দাওয়ার ওপর কয়েক মুহূর্ত দাড়িয়ে কী ভাবল মাইার, একবার কামড়ে নিলে একট! কড়ে আঙ লের নখ, তারপর সতর্ক পায়ে নীচের মাঠে নেমে গেল। তারও পরে জ্যোত্সায় তার দীর্ঘ দেহ আর দীর্ঘাকার কালো ছাঁয়াটা ক্রমশ একাকার হয়ে ভাবিয়ে গেল ধূসর শুভ্রতার মব্যে ৩৮ _ তিন__ বড় ভাই স্থরেন বাড়িতে নেই, মেজ ভাই হারাণও্ড না। স্থুরেন গেছে শ্বশুঘুবাড়ী, তার শাশুড়ীর যায় যায় অবস্থ1, খবর দিয়ে গেছে পথ-চলতি লোক । স্থরেনের যাওয়ার অবশ্য খুব বেশি ইচ্ছে ছিল না, রোগ! খিটখিটে হাঁড়- কিগ্পন শাশুড়ী সম্পর্কে কোনরকম মোহ নেই তার। খবরটা যখন আসে তখন সে মন দিরে বড় একটা ঢাঁকে ছাউনি দিচ্ছিল। শুনে মুখ বীকিয়ে বলেছিল, মরিবে তো মরুক। বুঢ়ী হই একটা শকুনের মতো! বাচি থাকিলে কিবা লাভ হেবে মিটা কহ। পথ-চলতি মানুষটি বলেছিল, তভেো তো শাশুড়ী, তুমার একবার যাওয়। নাগে দাদা । _হামি যাব! নি পারিসু-আঙুল দিয়ে ঢাকের কোণাগুলো ঠকে ঠৃকে স্থবরেন বলেছিল, হামরা কামের মানুষ না? বুটী মবিলেই মঙ্গল। বাপ, যখের মত টাকা আগল[ছে বসি বসি। শ্বশুরর ঠাই একটা ভালে! পিরহান চাহি তে! ফের হামীক খ্যাক খ্যাক করি শিয়ালের মতে কামড়াবা চাহোলে। হামিও কহিন্ু, তুই তোর পাইস। লিয়ে ধুই ধুই খা_হামি যদি কেষ্ট মুচির ব্যাটা হই তো৷ তোর বাড়ীত, ফের না৷ আসিম্‌। _ষিটা হইছে_-ওইটাঁক যাবা দাও কেনে। | _ক্যামন করি যাব! দিমু হে? বুটীর যেমন শিয়ালের মতো মুখ, উয়াক অমূনি করি শিয়ালে খিবে, ইটা তোমাকে সাফা বাত. কহি দিন্ছ-_-বুঝিলা ? ৩৪৯ স্থরেন মান্টষট! ওই রকম। এমপি মনা খুব থারাপট নয় তার, কিন্ত একবার চটে গেলে আর তার পাত্র।পাত্র জ্ঞান গাকে ন! | একটা জামা চেয়ে ন| পাওয়াতে শাশ্রড়ীব্র পরে সেই যে বিরূপ ভয়ে আছে, এ পধন্ত সে বিরূপতা তাঁর কাটেনি । স্থুতরাং লোকটি তাকে যতই সছুপদেশ দিক, সে জক্ষেপ করল ন।, নিবিষ্ট চিন্তে ঢাকে ছাউনি দিয়ে চলল । প্রতিজ্ঞ শে পবন্ত হয়তে? বা অটল থেকে ধেত জুরেন, কিন্তু বিদ্ধ ঘটে গেল । খবর পেয়ে স্থরেনের স্ত্রী হাউ মাউ করে কানা শুরু করলে। এমন প্রচণ্ড চীৎকার ধরে দিলে যে, বহুক্ষণ চুভাত দিরে কান চেপে রইল সজুরেন। তারপর বাধ্য হয়ে তাকে বলতে হল, থাম বাপ, আর চিল্পছিস্‌ ক্যান । হামার খুব আক্চেল হইছে-_ চল্‌ চল্‌, কুন্ঠে মরিব। বাবু সেইঠেই চল্‌। অতএব হ্থরেনকে শ্বশুরবাডী যেতে হয়েছে । আজ বাত্রেই যদি শাশুড়ী মরে, ত| হলে কালই তাকে পুডিয়ে কিছু মদ আর মাস খেয়ে সন্ধা নাগাদ ফিরে আসবে, আর যি মরতে দেবী কৰে তবে ফিতে ও ছু চারদিন দেবী হতে পারে । অবশ্য স্থরেন আশা করে বে, গিয়ে দেখবে, যাওয়ার আগেই বুড়ীর হয়ে গেছে । হারাণও বাড়ী শেই। কৌোখার বিয়ে বান্ডীতে একট গোলের বায়ন! নিয়ে গেছে, সেখানে বাজিয়ে ফ্রিতে পরশুব আগে নয়। ৷ ছাড়। আর একট1 জিনিযও অনিশ্চিত হারাণের সম্পর্কে । মদটা একটু বেশিমীত্রার খায় এবং খেয়ে বরদাস্ত করতে পরে না। স্থরেনও মদ খার বটে, কিন্তু ওজন কবে, কখনো! মাতাল হয় না। হারাণের ঠিক উলটে।। মাত্র ঠিক রাখতে পাবে না, ছুচারদিন নেশার বেহুস হয়ে যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে পারে। সংসারের দায়িত্বটা! একান্তই স্থুরেনের-হারাণকে বাড়ীর সকলে একরকম খরচ লিখে রেখেছে । বিয়ে একটা করেছিল, কিন্তু এমন প্রচণ্ড উত্স!হে বৌকে ঠ্যাঙ্গাত বে, রাতারাতি বৌ বাপের বাড়ীতে পালিয়ে বেচেছে। আনতে গেলে নথ নাড়। দিয়ে বলেছিল, বাপ, ডাকাইতের ঘরে হামি ফের নি বামু। হামাক মাবি ফেলিবে। ৪০ সেই থেকে আরো উচ্ছ.ঙ্খল হয়েছে হারান। চরিত্রটাও ভালো নয় । হাঁড়ীপাড়া থেকে ছুদ্দিন মার খেয়ে এসেছে, তবু লঙ্জা হয়নি । এখনো এপাড়। ওপাড়ায় খুর খুর করে। স্থরেন চটে গিয়ে সাংসারিক সম্পর্কট। ভূলে গাল দিয়ে বলেছে, উশালাক একদিন কাঁটি গাঙে ভানাই পিমুঃ তবে হামি কেষ্ট মুচির ব্যাট । কিন্ত হারাণের সংশোধন হয়নি । আর বাকী আছে যোগেন। বাড়ীর ছোট ছেলে__সেই জন্যই দাঁদাদের চাইতে একটু ব্যতিক্রম । লেখাপড়ার দিকে একটু ঝে'ক ছিল তার, তাই উচ্চ প্রাইমারীতে বার ছুই ফেল করলেও এ গ্রামে সেই সবচাইতে শিক্ষিত ব্ক্তি। চেহারা আর চালচলন দেখলে তাকে কেষ্ট মুচির ছেলে বলে মনে হদ্ম ন।। হাটের বারে চার পয়স| দামের রঙীন সাবান কিনে আনে, অনেকক্ষণ পরে সেইটে গায়ে ঘষে ঘষে নিজের বর্ণগৌব্ব বাড়াবার চেষ্ট। করে। অন্বীকার করবার উপায় নেই, তাঁতে করে বেশ মাজা! রং হয়েছে যোগেনের | মাথায় টেরী কাটতে শিখেছে, জামা-কাপড় একটু ময়ল। হলে সেগুলোকে ক্ষার দিয়ে কেচে না নেওয়। পর্ধন্ত তার স্বস্তি নেই । মদ একটু আপটু হয়ত খায়, কিন্তু ঝোকট! সস্তা সিগারেটের দিকে | অবশ্য সেটাও যে খুব ভালে। লাগে স্থবেনের তা নয়। মাঝে মাঝে ঠাট্ট। করে বলে, বড় ভুল হই গিছে হে। লাট সাহেবের ব্যাটা হই তুমি চামারের ঘরে আসিল! ক্যানে ? মৃছু হেসে যোগেন টেরীর দিকে মনোনিবেশ করে । তবু গজর গঙ্গর থামে না স্থরেনের । চামড়া কাটতে কাটতে বিতৃষ্ণা-ক্ষু্ স্বরে বলে, সকলে বদি গায়ে ফু' দিই বেড়ার, তো হাঁমি চালামু কেমন করি? যাঁর ধিট। লিয়ে সে ভাগ হই যাঁও, হামাক মাপ কর কেনে। কিন্তু মুখে যা বলে মনে মনে তা৷ ভাবেন! স্থরেন। তাই হারাণ নিশ্চিন্তে বেড়ায় স্বেক্ছাভোজন করে, তাই টেরী বাগানোতে কখনও বিদ্ত ঘটে না 4 ঠা ৃ বৈতালিক--৩।১ সপ) খোগেনেছধ। জমি-জমা মামলা-মোকদ্বম। সব কিছু ভাবেন দেখাশশোনা। করে, বাকী দুভাই তাই ধেন পাহাড়ের আড়ালে বাদ করছে। যোগেনের শুধু বাইরের পরিচ্ছন্নতাউ;ই একম"ত্র লক্ষ্যপীঘ বিশেদ নয, শুধু যে সে গ্রামের সবচাইতে বিদ্বান ব্যক্তি তাও নয়, আরো! অনেক গুলো গুণ আছে তার । যেন স্থাস্থ্য-ঝপমল হ্থন্বর ১চহাত্বা, তেমনি তার গানের গল । মাঝখানে কিছুদিন গ্রাম ছেড়ে সহবে চলে গিয়েছিল, যোগ দিয়েছিল ওখানকার ছোট একট। যাত্রার দলে । গান গেয়ে নাম করেছিল, জায়গা টাদির মেদেনও পেরেছিল একখানা কি্ত কেন কে জানে গপানকার আবহ ৪য়াটা তার ভালে! লাগোন-মনের সঙ্গে সুর মে লনি যাত্রার দলে জীবনযাত্রার । দর্শক হিসেব বে জগব্টাকে স্বপ্রপুরী বলে তার ভ্রম হয়েছিল, সান্নিধ্যে যেতেই পে নম্গতক তাপ মোহভঙ্গ ঘটল । একটা বরগচট। অবিকানী, কখায় কথার হুকে। নিবে মারতে আসে । গীজাখোর ভীমের সপে মংতাল শ্ররষ্ণের চুলোচু।ল শেগই আছে | রোজ রাত্রে আদবের পাওনা-গণ্ডা নিগ্ে অধিকাখীর সর্দে কুশ্রী কলহ, কদথ খাওয়ার খাবস্ছ।। অবশ্য যোগেন চাঁধী চামারের ছেনে, বাড়ীতে যে নশো পঞ্চাণ রকমের খাও ভাগ এছ, গ নে কিন্তু সে খাওয়ায় চপ্তি জাছে, পেটভপ1! ভাতের ব্যবস্থ। আছে । কা পর রাত জেগে গোক্র জিতের মত মোট। রঙ চালের আবধপেট! ভত, জলের মত |বউ(পির খেপারীপ্ন ডাল আর শুকনো ভাটার নর্গে গইপাত। এবং কুমড়োর চচ্চড়ি, এটা বরদাস্ত করা শক্ত | একদিন অ.সরে যখন 'নাবিত্রী সত্যবান্য নাটক খুব জমে এসেছে, তথন সত্যবান্বেশী ফোগেন অধিকারীকে অথই দগিরার ভ।সিয়ে দিয়ে রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে_কিবে এসেছে গ্রামে । রর কিন্তু যাত্রার দলের মৌহ কাটলেও যাত্রার নেশ। কাটেশি। জমজমাট আসর, ঝাঁড়লঠনের আলো আর ঘন ঘন হাততালি মাদক স্বপ্নের যতো ঘণ হয়ে আছে তার রক্তের মধো। আরো! অনেকটা দূরে সরে এমে আজ মেই ৪২ আলোকোস্ভাসিত আসরটা একটা মাগগাময় রূপ পরিগ্রহ করেছে কল্পনায় নেপথ্যলোকে । যোগেম ভাবছে, এবার নিজই একটা বাজার দল খুলাবে-- £মন দল গড়বে যে, অন্যান্য দলগুলোর এতদিনের সঞ্চিত সমস্ত গর্-গৌরবকে [এ করে দেবে একেবারে । - কিছুদিন থেকে সে চেষ্টাই সে করে আসছে। কিন্তু মুস্কিল এই, ভালো পালা পাওয়া যার কোথায়? যে সব পুরোণো পালা এতদিন ধবে চলে আসছে, সেগুলোকে নিয়ে বাহাছুরী দেখানো শক্ত । মাশপানের নানা দল এক একটা বই নিয়ে এমন খ্যাতি জমিয়ে বসেছে ছে, “স্থানে দাতি বসানো সম্ভব নয়। হারাধন অপেরা পার্টির মতো "বাম বনবাস' কেউ করতে পারে না, শশী অপিকারীর দলের মো এ্রহল'্দ-চনিত্র করা সম্ভব নয় কারুর পক্ষে, দাস কোম্পানীর মতো! পাগুব-বিজয়? আল মহিষমদদিনী' কেউ জমাতে পারবে না। মোটামুটি সব ভালো পালাগুলো! সম্পর্কেই এই এক অবস্থা--ওদের কোনো একটা নিয়ে আসরে নামলই ভাঙ্গার ভালো হলে এখ বাকাবে লেকে, বলবে, দূর দূর, রাম অধিকারীর দল না হলে এ পাঁল। কি কেউ করতে পারে ? কাছেই মুক্কিলের কথা। দলকে নাম কিনতে হলে ভালো বই চাই, £ নতুন বই । খুব ভালো না হোক মাঝামাঝি ভলেও চলবে, কিন্ত যেন বরে হোক, নতুন বইয়েঞ দরকার | সে বই কোথায় পাওয়া মার» নাত-পাচ ভেবে দিশেহারা যোগেন ঠিক করলে, একটা আলঙ্গাপের দল দিয়েই আরম্ভ 'কন্পা যাক। আলকাপের পাল! বীধ! শন্ড নর, খানিকট। রমিকতা দার প্রচুব গান থাকলেই দলের নাঁম হছে মাঁবে। আশেপাশে দল নেই বললেই চলে, অথচ চাহিদা আছে প্রচর। কাঁজেই এদিক থেকে প্রায় একচ্ছত্র হতে পান্নবে যোগেন ৷ তাছাড়া আরো একটা দিক9 আছে। গোড়াতেই যাভার দল গড়ে বসতে গেলে বিস্তর থন্চ”র, সান্ি-বাভন! কিনতে হবে, পোষাক কিনতে, হবে, কিনতে হবে টিনের খাড়া তলোয়ার | তা মানে বেশ কয়েকশো টাকার ধাক্কা । গোডাতেই সে ধান্ধা সামলানো ৪৩ দ্বরুম্ত শন । তাঁর চাইছে আলকাপের দল গড়ে যদি কিছু টাকা পয়সা কামিয়ে নেওয়া যায় তবে ভাই দিয়ে পরে বেশ ভালে! রকম একটা যাত্রার দল তৈরী করতে নিশেষ বেগ পেতে হবে ন!। স্থৃতরাঁৎ অনেক বিচার বিব্চেন| করে যোৌগেন ঝোঁক দিয়েছে আলকাপের দলের দিকেই | প্রথমটা স্থরেন চটে উঠেছিল £ নাচি কুঁদি বেড়াউলেই খালি চলিবে, ঘর বাঁড়ীট। দেখিব|] হয়ন1? সংক্ষেপে জবাব দিয়েছে যৌগেন £ তুমি দেখিবে। _ভাঁমি দেখিমু 1 -ক্ষেপে গিয়ে স্থুরেন বলেছে £ ত তোরা সব আছেন কোন্‌ কামে? - অনাব্শ্যক বোধে দাদার কথার জবাব দেয়নি যোগেন । _-ভাঁমি পারিমুনা_ ই কথাটা সাফ সাফ কতি দিন্ট। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই সাফ সাফ জবাব দিয়ে এ পর্যন্থ আত্মরক্গ/! করতে পারেনি স্থরেন। আজ পারল না। যোগেনের গান শুনে প্রথম প্রথম বিরক্তিতে কুঞ্চিত হয়ে উঠেছে তাবু মুখ, তারপর আস্তে আস্তে মেঘ কেটে গেছে সে মুখ থেকে, দেখ। দিঞেছে প্রদন্নতার দীপ্তি । আগে কানে হাত দিত, এখন যোগেনের গানের সর ভেসে এলেই কান খাড়া করে স্থরেন । সত্যি ভালে! গায় যে।গেন, নিজের ভাই বলে নয়, এমন মিষ্টি গল! সচরাচর শুনতে পাওয়া যায় ন|। আজকাল ভাইয়ের জন্য গর্ব বোধ হয় স্থুরেনের । আগে যাঁদের কাছে, অনেক নিখিরাও হামার ভাইটা মান্য নি হৈল্‌, বলে আক্ষেপ করত, 'এখন তাদের কাঁছে গিয়ে সগৌরবে ঘোষণ! করে £ বড় মিঠা গলা হামাদের যোগেনের | ভাঁমাদের ভাই তিনটার মধ্যে ওই একটাই বা মানুষ হৈল্‌। তাই বাড়ীতে এখন অবাণ প্রশ্রয় যৌগেনের। শুধু টেকিতে চিড়ে কুটতৈ কুটতে মাঝে মাঝে বকাবকি করে যোগেনের মা। ৪86 রে, তুই এমন করিই সারাট। জীব্ন কাটাবু নাকি? _সিটাইঈ তো ভাবিছু_ঢুষ্টামিভরা ভাসিতে উত্তর দের যোগেন। _উসব ক্ষ্যাপা রাখি দে কেনে। স্থরেনকেতে। কহি চাত্ডাটার বিভ| দে_ এত ব়ট। হৈল্‌, পাখির মতন উড়ি উড়ি এইগে ওইঠে বেড়াছে। বিহা দিলে ঘরত্‌ মন নাগিবে, সংসারের ছুইট| চাইরট! কামও তো করিবে। _হাঁমি বিহা নি করুম । _বিহা নি করিবু তো কি করিবু? গান করিমু। আলকাপের দল করিমু--গাভি বেড়াঁমু। নিহা করিলেই তে! ঘরত বসি বৌয়ের খোঁট। শুনিবা নাগিবে। _-ত যেইঠে খুশি যাবিরন্ত হয়ে মা জবাব দেয়। মনে মনে খুশিও হয়। ছেলেদের বিষে দিয়ে খব সুখী হয় নি ঘোগেনের মা । বৌয়েরা ঘরে এসেই নিজেদের নির্দিষ্ট অপিকারকে চিনে নিয়েছে, প্রতিষ্ঠা করতে শিখে নিয়েছে তাদের দাবী । বিশেষ করে বড় বৌ যেমন মুখরা, তেমনি প্রচণ্ডা । তার ক্ষরধার বসনার সামনে দাড়াতে ভয় করে। নাক নাড়। দিয়ে বলে, হামি ক্যাহোকে ডব খাই না। কাহারো! খাছি, ন। পরোছি ? যোগেনের মা কোণঠেসা য়ে যায়। মাঝে মাঝে ঝগড়। করতে চেষ্টা বলে না তা নয়, কিন্ত এটা বেশ বোঝে যে, একট। দুর্বল ভিভ্তির ওপরে সে দাড়িয়ে আছে, যে কোনো মুহুর্তে তা পায়ের নীচে থেকে ধ্বসে পড়তে পারে। এখন কৌদের যুগ। তাদের ছেনে চললেই মান থাকবে, নইলে নয়। ছেলেরা মুখে যতই মাতৃভক্ত হোক, মনে মনে সব বৌয়ের আচলের তলায় চাঁপা পড়ে আছে; নালিশ করলে বৌকে ছুটে! চারটে ধমক হয়তে] দেবে চক্ষুলজ্জার খাতিরে, কিন্তু মনে মনে একবিন্দুও খুশি হবে না। এবং পাল্টা মাকেও ভয়তো৷ উপদেশ দিয়ে বলবে, তুমরাই ফের আযাতে গজর গজর করোছ ক্যানে? একটু চুপ মারি থাকিলে তো হয়! ৪৫ তাই যতদিন যোগেন একান্ত করে নিজের আছে, ততদিন ভালো । বস বাড়ছে, বিয়ে9 করবে, কিন্তু যোগেলের মা আশা করে ততদিন পরত সে বাচবে না । সে মরে গেলে বউয়েরা এসে য্খুশি ঝগড়া করুক, কুট- কচাল করুক, সংপান ভাগাভাগি করুক্গ। তাছে 7": এতটুকু ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, একটা কথাও সে কইতে আসবে না। [জ সন্ধ্যায় বাড়িটা ক্ীকা। আরেন গেছে বৌ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে, ভাঁরাণ কোথায় গেছে ঢাকের বায়না নিয়ে। ঘোগেন রক্ষা করতে গেছে নিমন্ত্রণ । ঘরে ঘরে সন্ধা প্রদীপ জালিয়, তুলসীমঞ্টায় প্রদীপ দিয়ে ঘোগেনের মা খন দাওয়ার উঠে এল খন ঠাপ্ডাত্ে ভাঁত-পা কালিয়ে উঠেছে তার। আজ বড় বেশি শীত পড়েছে-মাদের বাতাসে দাত বেরিয়েছে যেন । তাছাড়া বয়েস হয়েছে যেগেনের মার । আগের মতো জোর নেই শরীরে, রক্ত নেই আর শৌবনের সে উত্তপ্ত চঞ্চলতা। এখন একটু খাটলেই কেমন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়, কেমন বিদ্ী কমের শীত ধরে । একট! মাটির মালসায় আগ্তন নিয়ে এসে বসল যোগেনের মা। কা? কয়লার বেশ গনগনে আগুন উঠেছে, আড়ষ্ট আঙ্লগুলো তাতে সেকে নিতে লাগল । সত্যিই বয়েস হয়েছে এখন, ছুবল আর অশক্ত হয়ে পড়েছে শরীর । সসরের জন্যে আর খাটতে ইচ্ছে করে না, ভালোও লাগে না। সমস্ত শরীর মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে সেবার জন্যে_ নিশ্চিন্ত একটা বিআমের আকাজ্ছায়। ভালোই হয় যোগেনের বউ এলে । হয়তো বড় বউয়ের মত মুখর হবে না, কথায় কথায় নাক নেড়ে ঝগড়া বাঁধাবে না তার সঙ্গে । অথবা হাঁরাঁণের বউয়ের মতো সামান্য ছুতৌ করে পালিয়ে যাবে না বাপের বাড়িতে । গায়ের একটি মেয়ের ওপরে নজরও আছে তার-কিস্ত হতভাগ! ছেলেটার যেরকম ক্্যাপাটে যেঙ্জাজ, যদি ঘাঁড় বাকিয়ে বসে তাহলে সহজে তাকে আর বশে আনা যাবে না। ছেলের কথাটা মনে পড়তেই ন্মেহের একটা! ০ থেন প্লাবিত হয়ে গেল সমত্ত অন্ভৃতিটা। চমংকার গানের গল! হদ্েছে বযোগেনের । এত মিষ্টি--এমন দবাজ! ওর বাপের গলার আওয়াজে কাক চিল উড়ে যেত, ভয় পেয়ে পালিয়ে যেত কুকুর, কিন্তু এমন অপূর্ব মাতাল-কর! গলা কোথায় পেল যোগেন? হঠাঁৎ চমকে উঠল যোগে:দর না) ঠা হিম হয়েআসা রক্তের ভেতরে কী একট! শিউরে শিউরে বরে গেল তার। বিয়ে হওয়ার পরেও নিজেদের নপ্যে কী একট। সামাজিক গণ্ডগোলে অনেকদিন তাকে ঘরে নেয়ণি যোগেনের বাপ । আর সেই সময়__সেই সব দিনে--। এমনি ক১-এমনি গান, এমনি বূপ। সে গানে সে মাতাল হয়ে গিয়েছিন, সে রূপে সে জলে গিয়েখিল। কত নিজন রাত্রিতে কত নিংশব দেথ' রা কত ভালোবাসা । মে ভালোবাসার আন্বাদ মে কণামাত্রও শ্বাশীর কাছ থেকে, আন হয়েছে তার স্বামী যেন পরপুরুষ, তার ছোয়ার শরীর শিউরে শিউরে উঠেছে তার। স্বামীর বুকেধ ভেতবেই মুখ লুকিয়ে চল অন্পীম ভিক্ততার দে চোখের জল ফেলেছে রাতঙর পর রাতি। স্বাী কিছু বুঝতে পারেনি, সন্দেহ করেনি । মোট। বুদ্ধির চোয়াড়ে লোক, ভেবেছে এ কান। বাপ মাকে ফেলে আমবার জন্ত এবং তার সাধামতে। ৫ ১৫৫ সান্নাও দিতে চেষ্ঠ। করেছে দে। সে মানুবকে ভুলতে পারেনি তবু-তাকে হোলা কি কখনো সম্ভব? সেলুকিঘে ছিল তার ভাবনার, সে ঘুরে ঘুরে দেখ| দিয়েছে তার ন্বপ্পে। ভাই হরতো যোগেন হয়েছে তারি প্রতিনৃত্তি- অবিকল তারি ছবি হয়ে জন্ম নিয়েছে ছোগেন-সেই নাক, সেই মুখ, সেই গানের গলা । জলন্ত মালসাটার ওপরে যোগেনের মার অস্থিদার আঙলগুলো! কাপতে লাগল। কাঠ করলার রক্তাক্ত টুকরোগুলে! থেকে একটা লাল আলোর প্রতিফলন এসে পড়েছে আঙলগুলোতে- নিজের হাতটাকে যেন চিনতে ৪৭ পার) যায় ন|। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যোগেনের মার ঘোর লাগতে লাগশ। যেদিন প্রথম যৌবন এসেছিল তার-_-সেদিন আঁঙলের রং শুধু আগুনের প্রতিফলক ছিপ না, তাতে সত্যি সত্যিই ছিল গোলাপী আমেজ। কত দিন এই হাত ছুটিকে সেটেনে নিয়ে নিজের ঠাণ্ডা বুকের ভেতরে চেপে ধরেছে, বলেছে_ ক্যাচ করে একটা শব্ধ হল, তার পরেই আর একটা শব্ধ উঠল ঝনাৎ। সদবের টিনের ঝাপটা খুলে কেউ ভেতরে আসছে । শিজের সর্বার্দে যেন জোর করে একটা ঝাকি দিয়ে সজাগ হয়ে উঠে বসল যোগেনের ম]। উঠোনট। পার হয়ে কে আসছে ঘরের দিকে । ওই পারের শব্দট। চেনা_- যোৌগেন ফিরল । -আটইলু রে বাপ? _-ই, আইন | সংক্ষেপে জবাব দিয়ে যোগেন এগিয়ে এল দাওয়ার দিকে। তাকিয়ে দেখল, মালসার সামনে বসে তার ম| হাত সেকছে। _-উঃ) বড বেয়াড়। ভাড়া নামিলে আজ । যোগেন বনে পড়ল মায়ের পাশে, নিজেরও হাত ছুটে। আগুনের ওপরে বাড়িয়ে দিয়ে বললে, মাঠের ভিতর দি অ।সিব! সমর মনে নাগিল কি শরীরখান। মোর কাটি ছুখান হই ধিবে। _ই, ইবারে জাড়াটা। বেশী নাগোছে_যোগেনের মা! বললে, এইঠে বলি একটু গরম হই লে বাপ। মালপার ওপরে হাত বাড়িয়ে নিরুত্তরে বসে রইল যোগেন। মায়ের মন থেকে এখনো! স্বৃতির রেশ কাটেনি- সহজভাবে ছেলের সঙ্গে কথা বলবার মতো! মনের অবস্থ। তার ফিরে আসেনি এখনো । আর যোগেন কী ভাবছে কে জানে, তার উতদাহ-উজ্জল মুখ কালিমাড়া। শুধু কয়েক মিনিট পরে মা-ই প্রথম কথ! বললে । _-গেইলছিলু কুটুম বাড়ী? « ৪৮ ইউ --ভাঁলে। খিলাইলে ? -ই |--তেম্নি সংক্ষেপে উত্তর দিলে যোগগেন _-কী কী খিলাইলে রে? __ভাত, মাংস, মিঠাইও আছিল্‌। _পেট ভরি খালু তে৷ রে? এবার বিরক্ত স্বরে জবাব দিলে যোগেন। অপ্রত্যাশিতভাবে মাতৃত্সেহের নিতান্ত নির্দোষ প্রশ্নটাকে আঘাত দিয়ে বসল, বোকার মতে! কথা শুধাইছ ক্যানে? ঝুটুম বাড়ী গেন্ধ তো ফের ন। খাই চলি আসি? সন্ধিপ্ধভাবে মা তাকালে! ছেলের দিকে । আগুনের আচ অল্প অল্প মুখে পড়েছে বটে, কিন্ত তাতে ছেলের মুখের অবস্থাটা ঠিক বুঝতে পারা যাচ্ছে ন। কিন্ত কেমন যেন খটক লাগছে, সন্দেহ হচ্ছে, একট গোলমাল জড়িয়ে আছে কোথা --কী হৈল্‌ তোর রে? _-কিছু হয় নাই। কিছু নি হইছে তো অমন করোছিস্‌ ক্যানে ? _কী করোছি? বাজে কথাগুলান ক্যানে কহিছ্, চুপ মারি থাকো ক্যানে। যোগেন আর ব্সল না, বিরক্তভাঁবে উঠে চলে গেল সামনে থেকে | যে।গেনের ম| কিছু বুঝতে পারল না, ইচ্ছে করেই কোনে। কথা বললও না যোগেন। বলে কোনো! লাভ নেই--অকারণে একটা লোক তাকে অপমান করেছে, অথচ সে অপমান তাঁকে নীরবে পরিপাক করে যেতে হল, এটাকে স্বীকার করতে নিজেরই লঙ্জা! হচ্ছে তার। দোষ তার নয়, তার মায়েরও নয়। তবু খামোকা লোকটা কতগুলে। কটুকথ শুনিয়ে গেল__-বেরিয়ে গেল মেজীজ দেখিয়ে । অবশ্ত তার জন্তে কেউ তাঁকে ভীলে! বলেনি, ছি ছি করেছে সকলেই ৷ ভূষণ তো গালাগালি করেছে ৪৯ বৈতালিক--$৪ অশ্রাব্য ভাষায় । যোগেনের কাছে এনে জোড়হাতে বলেছে, তুদি হা মাপ করো বাবাজী । তৃষণকে সে ক্ষমা করেছে বইকি, কিন্তু ভাপা একট। আফশোৰ রয়ে গেছে নিজের মধ্যে । সে কেন কিছু করতে পারল না, দিতে পারুল না একটা মুখেদ মতো জবাব? একহাতে বুড়োর গলাট। চেপে ধরে আর একহাতে প্রচণ্ড একট। চড় বসিয়ে দ্রিল না তার গালে? শক্তি ভার নিশ্চয়ই ছিল, সাহসেরও অভাব ছিল না, কিন্তু কোথার যেন আটকে গেল সমণ্ত। আক্রমণের অপ্রত্যাশিত আকম্মিকতার ঘোরটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেখল, কোথা অপৃশ্ঠ হয়ে গেছে লৌকটা ! আচ্ছ।, ভবিষ্তের জগ্তে তোলা পইল। দাতের ওপঞ্ দাত চাপিয়ে একট কঠিন নিষ্ুর সংকল গ্রহণ করলে যোগেন। | রাঁত বাড়তে লাগল । বোগেন নিখগ্রণ রক্ষা কৰে এসেছে, খেরে এসেছে অবেলায় তাই রাত্রে সেআর ক্ছু খাবে নাঁ। যোগেনের মা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন শুতে গেল, তখন একবার উকি মেরে দেখলে ছেলের ঘরের ভেতরে । লন জেলে নিয়ে একট। কাগজে সে নিবিষ্ট মনে কী যেন লিখে চলেছে। _বেশি রাইত জাগিস্‌ ন। ঝাপ। _ তুমার কিছু ভাবিবা হেবে না, তুমি শুতি যায়েন। ম! চলে গেল। মনটাকে সংযত করে নিয়ে যোগেন বসল হাট থেকে কেনা চার পয়সা দামের একট] এক্সারসাইজ বুক আর কাগজ-কলম টেনে । কয়েকট| গান লিখতে হবে । আলকাপের পালা তৈরী হচ্ছে, তারই গান। লেখবার আগে গুন্‌ গুন্‌ করে সর ভাজতে লাগল । স্থর এলে তারপরে আসবে কথা, মনের ভেতনে অসংলগ্র ভাবনার নীহারিকা পুগ্জ একটা সুনিশ্চিত রূপ ধারণ করবে আস্তে আন্ত । যোগেনের সুরের সঙ্গে সঙ্গে কথা সঞ্চাৰিত হতে লাগল ; / [ টি তাঁর হায় কছিপ কাণ্ড -কিনে চযৎকার- ক্র পরনে ছ্ষিড কাপড় বৌয়ের গলাত বত্বহার-.. বাঃ-মন শোনাচ্ছেন)! বেশ নতুন ভ্রিনিন দীড়াচ্ছে,। লোকে খুশি হল । কাগজে কলম চলতে লাগল ঃ আপন ভাইয়ক পর করিয়া, ফুর্তি করে শালাক লিয়1_ শৃখখুক বাপ বুলিয়া বাপক্‌ কহে নফর তার-_ ভাগ্স গো কলির কাণ্ড দাদা-কিবে চমৎকার। সতিই চমৎকার । নিজের রচনায় যোগেন মুগ্ধ হয়ে গেল। এইরকম গোট! কতক জমাট গান বাধতে পারলেই দলের নামডাক পড়ে যাবে, সাবাস সাবাস করবে সকলে । ঝাড়-লঠনের আলোয় ভপগা-আসরে গলায় চাদর গড়িয়ে যোগেন খন গান গাইতে উঠে দাড়াবে, তখন ঘন ঘন হাততালি পন্দরতে থাকবে, চিকের আড়ালে ছল ছল করে উঠবে তরুণীদের বুকের রক্ত । পণ দিয়ে যখন যাবে তখন লোকে আওল বাড়িয়ে দেখিয়ে বলবে, এই ষাচছে মাগেন আলকাপওয়ালা। ওই যাছে ফোগেন আলকাপওয়ালা ! ূ তারপর--তারপরে সামনে আরো! উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, আরো উজ্জ্বল সম্ভাবনা । শ্ষে পরিণতি শুধু আলকাপের দলই নয়। চোখের নামনে দেখা যাচ্ছে একটা যাত্রার আসর ।. কালীয়দমন না অনস্তব্রত? লল্ষ্রণ-বর্জন না সীতার পাতাল প্রবেশ? ষোগেন হঠাৎ চকিত হয়ে উঠল । মনে পড়ল বংশী পবামাণিকের কথা । লোকটার সঙ্গে হঠাৎ পরিচয় ঘটে গিয়েছিল তার। হাটের-মধ্যে পরিচয় করে দিয়েছিল জগবন্ধু সাহা! । তাঁর কাটাকাপডডের - ৫৯ দোকানে বসে ছিল বংশী মাষ্টার_কফাপড কিনছিল। যোগেন গিয়েছিল একখানা গামছার সন্ধানে । জগবন্ধু বলেছিল, ইয়াক চিনেন মাষ্টার? বাষ্টার ঘাড় নেড়েছিল। তারপর আশ্র্য ঝকঝকে ছুটি চোখের দৃষ্টি প্রসারিত করে দিংয়িছিল যোগেনের দিকে । কেমন অস্বস্তি বোধ করেছিল যোগেন, কেমন মনে হয়েছিল মাষ্টারের দৃষ্টিটা বড় বেশি তীক্ষ, বড় বেশি জলন্ত। অমন অদ্ুতভাঁবে কাউকে কখনো কাদে! দিকে সে তাকা'ত দেখেনি জগবন্ধু বলেছিল, খুব ভালো গান করে, আলকাপ। _-আলকাপ! আলকাঁপ কী? এবারে মাষ্টারের প্রশ্নে জনেই হেসে উঠেছিল। জগবন্ধু বলেছিল আলকাপ? আল্কাপ জানেন না? রসের গান, দেস্ডার গান। মাষ্টার তবু প্রশ্ন করেছিল, সে সী রকম? তখন তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ঈগধন্ধু। পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করে দিয়েছিল জিনিসট। । সমাজের যেসব গলদ আব ক্রুট-বিচ্যুতি আছে, রসিকতার অঙ্গে বিদ্রপে কড়া চাবুক মিশিয়ে সেগুলোকে পারবেশন করা হয়। দরকার হলে বাস্তব নরনারী পর্যন্ত বাদ পড়ে না-৩। সে যতই ক্ষমতাশালী হৌক _সমাজে ব খুশি প্রতিপত্তিই তাঁর থাকুক। তবে শুধু আক্রমণই নয়--শঘু কৌতুষ হাঁলক হাসি ও কাহিনীর আকারে নাচে এবং গানে শুনিয়ে দেওয়া হয় । বর্ণনা শেষ করে উচ্ছুসিত ভাষ।য় জগবন্ধু বলেছিল, ভারী চমত্কার গিনি; মাষ্টার মশাই, ভারী চমত্কার। একবার শুনিলেই বুঝিবেন | হা হে ষোগেন মাষ্টার'বাবু তো৷ এদেশে লৌতুন আসিছেন, উয়াক একদিন গান শুনাই দাও ল কেনে । -নশ্চয়, নিশ্চয় শুনামু তো-সাগ্রহে ফোগেন জবাব দিয়েহিল। মাষ্টার তেমনি তাঁকিয়েছিল তার দিকে-_-তেমনি জ্যোতির্ময় তীক্ষদৃষ্টিতে কেমন উসখুস করছিল যৌগেন--একট1 লোক অমন নির্মম বিশ্লেষণভরা চো ১৪ তাকিয়ে থাকলে ভালে লাগে না। গামছা কেনবাঁর গ্রয়োজনের কাট! ভুলে গিয়েই উঠে গিয়েছিল জগবন্ধুর দোকান থেকে । কিন্তু মাষ্টারকে এড়াতে চাইলেও এড়ানো গেল না। হাউ থেকে যখন সে ফিরছিল, তখন আকাশে চাদ দেখ! দিয়েছে-শুক্লা চতুর্ঘশীর টাদ। গায়ের মেটে রাস্তায় আমের জামের ছায়া, বাতাসে সে ছাত্মা দুলছে--তার ভেতরে জ্যোত্নার টুকবোগুলে| যেন মন্ত একটা কালো জালের ভেতর এক ঝাঁক উজ্জ্বল ঠাদা মাছের মতো দোল খাচ্ছে । মনস। কীঁটাগ্তলো জ্যোতন্সায় মদ্ছুত দেখাচ্ছে_-মনে হচ্ছে রাত্রি রোমাঞ্চিত হবে উঠেছে । বন-গোলাপের সঙ্গে মিশেছে ধুতরোর গন্ধ--একটা বূডীন নেশায় আচ্ছন্ন আর আবিষ্ট করে তুলেছে সন্ধ্যাকে। পায়ের নীচে বালি মেশানো মেটে রাস্তা, জ্যোতন্ার ট্রকরো গুলো যখন তার ওপরে পিছলে পিহুলে যাচ্ছে তখন সেখানেও যেন কী সব উঠছে টিকমিক করে! বালির ভেতরে কী মিশে আছে ওগুলো ? সোনার কণা ন। রূপোর বিন্দু? আজকের রাঁতটাই যেন সোনার বাঁত-ক্মাজ আকাশ খেকে যেন দ্ূপা গলে গলে পড়ছিল । গান পেয়েছিল যোগেনের- বেশ চড়া সুরে সে ধরে দিয়েছিল £ বধুর লাগি মাখায় নিলাম কলক্ষেরি ডালা, সেই কলঙ্ক ফুল হল মোর হল গলার্‌ মাল।?-- আগে আগে একটা লোক চলেছিল, জ্যোতন্গায় মাঝে মাঝে তাঁকে চোখে পড়ছিল বটে, কিন্ত যোগেন লক্ষ্য করেনি । ভেবেছিল, হাট-ফেরৎ সাধারণ মানুষ, মনোযোগ দেবার মতো কোন কারণ আছে বলে মলে হয়নি । কিন্তু ঘোগেনের গান কানে যেতেই লোকটা দাড়িয়ে পড়ল। সোণায় ভরা রাত্রিজ্যোতনাঘ রূপোর কণা ঝরে পড়ছে। ধুতরো আর ৭ন-গোশাপের গন্ধ নেশার মতে। ঝিকমিক করছিল স্বাযুতে । দেখেও দেখেনি বোগেন। আধ-বোজা চোখে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চলেছিল ঃ ৫৩ কলঙ্কিনীর মরণ ভালে! ্বকায়নি নদী-- পথের পাশে একটুখানি পরে একেবারে নয়ানজ্লীর পাশ ঘে'সে ছায়ার ভেতবে দীডিয়েছিল লৌকট। | যোগেন কাছে এসে পড়তেই বললে, বাঃ_- থাসা গলা তো তোমার। চমকে থেমে গেল যোগেন। বংশী মাষ্টার । বংশী মাষ্টার বললে, গান থামাঁলে কেন? দিব্যি লাগছিল। লঞ্জিতভাঁবে যোগেন জবাব দিয়েছিল, ইসব গান আপনাকে শুনাইতে সলম নাগে। বংশী মাষ্টার লঘুস্বরে বললে, কেন, আমাকে এত বেরসিক ভাবছ কেন? রুথাটার অর্থ ধোগেন বৃঝেছিল। তেমনি লঙ্জিতভাবে শুধু যাথা নেড়েছিল, জবাব দেয়নি । ূ ততক্ষণে দুজন একলঙ্গে পথ চলন্ছ শ্রু করেছে । যোগেনের পাশাপাশি চলেছে বংশী মাঙগার -অকারণেই নিজেকে অত্যন্ত সংকুচিত বোধ করছে যোগেন। তার মনের ভেতর একট। ব্যক্তিত্বের সুনিশ্চিত ছায়া পড়েছে _ অন্ধকারে৪ কি তেমনি জল জল করছে বংশী মাষ্টাংব্র চোখ ? কয়েক মুহুর্ত শুধু শোনা গেল ধূলোয় ভরা পথের ওপর প্রায় নিঃশব দুজোডা পায়ের শব্ধ । তারপর বংশীই কথা কইল । _তুমি কতদুরে যাবে যোগেন ? _মীরপাড়া। --ঃ, তাহলে একসঙ্গেই অনেকটা যাওয়! যাবে। ভালোই হল।_ বংশী মাষ্টার আবার হাসল £ তোমাদের দেশটা এখনও আমার ভালো করে চেনা হয়নি । বামুনঘাটের চৌমাথায় এশে মাঝে মাঝে আমার পথ ভূল হয়ে যায়--ঠিক ঠাহর করতে পারি না । একবার তো ভুল করে কাঞ্চন নদীর ঘাট পর্যস্ত চলে গিয়েছিলাম 1 যোগেন এবারে সহজভাবে কথা বলতে পারল। বললে, ভুল হেবে ক্যানে? পুবদিকের ঘাটাটা ধরিলেই সিধ। চামারহাটা চলি যাবেন। মাষ্টার এবার শব্ধ করে হেসে উঠল ওই তো মুক্িল। এখনে! পুব পশ্চিমই ঠাহর করতে পারলাম ন। এদেশে । 'মাবার স্তব্ধতা। . আবার মেটে রাস্তার ওপরে প্রার ক পদসঞ্চবে এগিয়ে চলেছে ছুজনে | হঠাৎ মাথার উপরে একটা দোয়েল শিন্‌ দিয়ে উঠল । যেন চমক ভেঙে গেল দুজনের । মাষ্টার বললে, একট। কথা ব্লব যোগেন ? _-কী কহোছেন ? _-তোমাদের আলকাপ গানের কথা শুনলাম । বড় ভালো জিনিস, বড় ভালো লাগল । বিনয়ে মাথা নত করলে যোগেন। যারা মন্দ লোক, যারা অন্যার করে-_মাষ্াারের গলা কেমন ভাবী ভারী হয়ে উঠল £ তাদের পরিচর লোককে জানিয়ে দেওয়ার মতো! বড় কাজ সত্যিই কিছু নেই। এদিক থেকে তোমরা দেশের কাজ করছ যোগেন, সত্যিই দেশের কাজ করছ । এবার আশ্চষ হয়ে গেল যোগেন। দেশের কাজ--মে আবার কী? জিজ্ঞাস্থ চোখ মেলে সে তাকিয়ে রইল মা্টারের দিকে, অন্যমনস্কভাবে চলতে গিয়ে হোঁচট খেল একট] । মাষ্টার বললে, কিন্তু এর চাইতেও তো বড় কাছ আছে যোগেন। সে বাজ কেন করোনা? _কী করিব। কহছেন ? মাষ্টার ধেন উত্তেজিত হয়ে উঠল £ কতই তো। করবার আছে। অন্যায় কি শুধু একদিকেই ? ছোট জাত--সবাই তোথাদের ছোট করে দেখে। তোমরা লেখাপড়া জানে। না, জা্মদীর চলিশ টাক নিয়ে চেক লিখে দেয় পনেরো! টাকার, তাতে তৌমর। টিপ সই করে দাও, তারপর তিনমান পরেই ৫৫ আসে উচ্ছেদের নোটিশ । মহাজনের কাছ থেকে সাতিটাক] ধার করলে স্থদে বাড়তে বাড়তে হয় স(ভাত্তর টাকা-ঘটি-বাটি বাধা দিয়ে দেনা শোধ ভয় না| কেন এর প্রতিবাদ করতে পারো না যৌগেন, কেন একে গানে রূপ দিতে পারো ন।? পা থেকে মাথা পর্বস্ত খিউরে উঠল যোগেনের | মাষ্টার বলে কী! _ জমিদারের নামে গান বাধিমু? _বীাধবে বই কি? --মহাজনকে গালি দিমু? --হা)১তাও দেবে। _হাররে বাপ !__ভীত কে যোগেন জবাব দিলে, উয়ার| ক্যাসাঁদ করি দিবে যে। মাষ্টার শাস্তস্বরে বললে, দিতে পারে। _তবে ?-যোগেন আড়চোখে মাষ্টারের মুখের দিকে তাকালো, যেন ট জটিল কঠিন সমস্যার সমাধান দাবী করলে । তেমনি ঠাণ্ড। গলায় বংশী মাষ্টার বললে, আচ্ছা যোগেন ? --ই, কহেন। _-তুমি তো! খানিকট! লেগাপড়! শিখেছ"? তি, ব্খ/ _চারণ কাকে বলে জানো ? | এতক্সণে ছুপাশের আমের জামের ছায়। সবে গেছে । চতুদশী চাদের আলো! উজাড় হয়ে পড়েছে পথের ওপর--সম্মুখে মেটেবাস্তার ওপরে প্রসারিত ছুটি দীর্ঘ ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই কোথাও । ছুর্দিকে চন্দ্রোজ্জল মাঠ। বাতাসে এখন আর সেই মাঁদক গন্ধটা নেই। শুধু ধুলোর একটা সৌরভ উঠছে। রর বংশী মাষ্টারের চোখ কি সত্যিই জলছে, নাজ্যোত্্নায় চকচক করছে ওই €৬ রকম? পে চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দোগেন দ্বিধাঙ্জডিতভাবে বললে, কী কথ কহিলেন ? _-চার্ণ? -_না, সিট। কখনো পরি নাই। _শোনে। আগে বখন শক্র আমাদের দেশ আক্রমণ করত-_মাষ্টার ব্লতে শুরু করুল, তার মনের ভেতর খেকে কোথাম্ব যেন একট। পাথর চাঁপ! সরে গেছে, সবে গেছে একট। অবরোধের আবরণ । অনেক দ্রিন পরে অতুল মজুমদার কণ। কষে উঠল, সাঁড়। দিয়ে উঠল কোনে। একট! গভীর বিস্বৃতির স্বপ্তিলোক থেকে । বহুব্হর আচগ বে লোকট। ঘাসের বুকে শিশিরের বিন্দুর নতো হাবিরে গেছে বিম্মরণের নেপথ্যে, সে যেন বৃতী পথানাণিকের সামনে এসে দাড়াল । অতুন মঞ্তুবদাের কথাগুলো! বলে যেতে ল।গল চানার্হাটের প্রাইমারী ইন্কুলের ষোলো টাক। মাইনের মাষ্টার বনী পরামাণিক | কাকে বলছে খেয়াল রইল না, যাকে বলছে, সে কতটুকু বুঝতে পারছে লক্ষ্য করল না। এই নোনার রাত্রিতে -রূপো-ঝরা জ্যোতন্নার মনের ভেতরে হঠাৎ যেন খুলে গেল বহুদিনের মরচে-ধরা,কঠিন একট। লোহার কবাট। যেন নিজের সঙ্গেই কথা বলতে লাগল বংশী মাষ্টার | ইতিহাসের,কথ।১* চারণদের গল্প । সেই তাদের কথা, যারা নিজেদের য। কিছু ক যা কিছু হ্বর_-সমস্তই দ্রেশের জন্য নিব্দেন করে দিয়েছিল। অত্যাচারী শক্র যখন পঙ্গপালের মতো এসে হান! দিয়ে পড়ত দেশের ওপর, তখন তাঁরাই সকলের আগে বীণ। ভাতে বেরিয়ে আসত। দেশের প্রান্তে প্রান্তে তারা ঘুরে বেডাঁত-_তাদের গানে গানে ঝরে পড়ত দেশপ্রেমের আগুন _ দেশের গৌরব রক্ষা! করবার নির্মম কঠিন সংকল্প । যার! ভীরু -_-সে ডাক শুনে ফুটে উঠত তাদের হিমরক্ত--যার। কাপুরুষ, তার। খোল৷ তলোয়ার হাতে নিয়ে অসহকোচে ঝাল দিয়ে পড়ত মৃত্যুর মখ্যে। ঘুমন্ত দেশকে জাগিয়ে ৫৭ বৈতা(লিক--৪8।১ | দিত তাঁর, নিজীবতার মধ্যে সঞ্চার করত প্রাণের সাড়া । আপার যখন অত্যাচারী রাজা নিজের খ|মখেয়ালে মাগ্ষের জীবনকে ছুধিষহ করে তুলত, তখন তারাই সকলকে উদ্দীপ্ত করে তুলত এই অন্ঠায়ের প্রতীকার করবার জন্যে, এই অবিচারের সমাপ্তি ঘটাবার জন্য । বাজার অস্ত্র তাদের শাসন করতে পারত না, তাদের ক্রোধ করতে পারত না কোনো অত্যাচারীর নিষ্ুর মুষ্টি । তাদের আগুন-ঝরা সুর লাঞ্চিত, অপমানিত দেশে দাবানল জালিয়ে দিত-_ সেই আগুনে রাজার সিংহাসন পুড়ে ছাই হয়ে েত--ভম্মসীৎ হয়ে যেত তার অস্ত্রের আর শক্তির অহঙ্কার কিছুটা বুঝল, অনেকটাই বুঝল না যে।গেন। শুধু শুনতে লাগল মন্তরমুঞ্ধের মতো। মাগার কি পাগল? হয়তে। পাগল, হয়তো বা পাগল নয়। কিন্তু আশ্চর্য তাঁর কথ! বলবার ভর্সি_শুনলে মাথার ভেতরে শিরাগুলো দপ দপ করতে থাঁকে--শরীর শিউরে শিউরে উঠতে থাকে । যোগেনের মনের সামনে বন্ছদুরের একট। শহরের কতগুলো এলোমেলো আলোর মত কী যেন ঝলমল করতে লাগল । তাকে ঠিক বোঝ যায় না, অখচ কী একট; ছুর্বোধ্য সংকেত আছে তার; তাকে জানা যায় না, অথচ অশীম একট! কৌতুহল সমস্ত অন্ুভৃতিগুলোকে প্রথর আর উতৎকর্ণ করে তৌলে। আকাশভরা জ্যোতস্া যেন জলে উঠেছে । সোনাঝর! ঘুমভর। রাত্রিটায় যেন কোথা দেকে আগুনের একট উত্তাপ লেগেছে এসে । মাঠের মিষ্টি বাতাসেও শরীর ঘেমে উঠতে লাগল যোগেনের ৷ বুকের ভেতর থেকে শুনতে পেল হৃৎপিণ্ডে একটা চঞ্চল আলোড়নের শব্দ । মাষ্ট,র বললে, সে চারণেরা আজ নেই, কিন্তু তাদের প্রয়োজন তো ফুবোয়নি। অন্তার আজ চরমে উঠেছে। বিদেশী রাজা কেড়ে নিচ্ছে দেশের মানুষের মুখের ভাত | যে পত্যি কথা বলতে চায় তার টু'টি টিপে ধরছে-_ তাঁকে পাঠাচ্ছে আন্দামীনে, তাকে ঝুলিয়ে দিচ্ছে ফামিতে । কেন এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না, কেন তোমার গানের সুরে এই দতাকে ধরে দেবে না ৫৮ কলের সাঁহনে ? চারণর$ আজ নেই, কিন্ত তাদের কাঁজ তোমব! তুলে নাও, গ্রামের মানুষ গুলোকে মাথা তুলে ঈাড়াবার শিক্ষা দাও । যোগেন শুধু বলতে পারল, ই। এডমণ চমক ভেঙ্গে গেল বংশী মাষ্টারের। বড বেশি বলে ফেলেছে অতুল মজুমণার, বড় বেশি পরিমাণে আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছে । এ স্থান নয়, কালও নয় । কিন্তু বন্ুদিন পরে মনের ভেতবের লোহার কবাটট! খুলে যেতে সে নিজেকে সংমত করতে পারেনি, কথাগুলো নেরিয়ে এসেছে অবারিত অনর্গল পারায় । যোগেন একটা উপলক্ষ মাত্র_-আসলে সবগুলোই স্বগতোক্তি -সবটাই আত্ম প্রকাশের একটা অহেতুক উচ্ছলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর তা ছাড়া_-এই কি যৌগগনকে বোঝাবার ভাষা? সে ভাষা অতুল মজুঘদার শেখে, বিপ্রবী যুগর নেতা যাদের ভেতরে তার কর্মক্ষত্র বেছে নিয়েছিল তারা যোগেন নয়। তাদের পৃথিনীর কথা যোগেনদের কাছে হুর্বোধা, তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন এদের বাছে একট] রূপকথার চাইতে বেশি বাস্তব নয়। “দেশমাতার পায়ে আঙ্জ শঙ্খলের বন্ধন-তার সবাঙ্গে আজ অত্যাচারীর কশাঘাতের রক্তধারা”_এ জাতীয় ভালো ভালো কথা৷ তাদের কাছে অর্থহীন প্রলাপ । পৃথিবীর জাতিসংঘে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই, সমুদ্রের ওপাঁরে কালে। জাতির ঘ্বণা আর করুণার বস্ত, স্বায়ত্তশাসনের নামে আমাদের যা কিছু দেওয়! হয়েছে তা একটা! বিরাট কৌতৃক ছাঁড়া আর কিছুই নয়-_ এসব কথা এদের কাছে পাগলের মতো শোনাবে । চোখ বড়বড় করে শুনে যাবে, মাঝে মাঝে হা করে থাকবে, তারপর যখন জিজ্ঞাসা করা হবে, দেশের এই অবস্থা শুনে তাদের প্রাণ কাদে কিনা তখন তারা পরিষার জবাব দেবে £ বাঃ বেশ কথা কহিছেন। খালি খালি কাদিমু ক্যানে? দেশের জন্যে তোমাঁদের কষ্ট হয় না? _উসব কথা ক্যানে কহিছেন বাবু? হামরা খাবার পাছি নাকেমন করি ছুট! ভাত ডাইল জুটিবে, সিট কহিবা পাবেন তো কহেন, না তো ঘেঠি ৫৭৯ থাকি আঁসোছেন ওইঠিই চলি যান। উসব চালাকির কথা ভালো লাগে না। ঠিক, ওদের কাছে এসব চাঁলাঁকির কথা ছাড়া আর কিছু নয়। বড় ব্ড় বুলির সার্থকত] কিছুমাত্র ওর! বুঝতে চায়ও না । খেতে দাও আমাদের, চাঁল দাঁও, জমি চাষ করে যাতে ঘরের খোরাক ঘরে রাখতে পারি তার ব্যবস্থা করে দাও, মহাজনের জালে সর্বন্থাস্ত না হই তাঁর উপায় করে দাও, রক্ষা করো দারোগার উপদ্রবের হাত থেকে । 'এই ওদের কাঁছে সব চেয়ে বড় জিনিষ-_ সব চাইতে বড় সত্য । এর অতিরিক্ত স্বাধীনতা বলে যদি কোনে জিনিষ থাকে, তার কাণ! কড়িরও মুল্য নেই ওদের কাছে। দেশমাতার শৃঙ্খল সত্যিই মুক্ত হল কি না এক জাঁলাময়ী বক্তত। দিয়ে কারাকুণ করে কোনে। দেশনেতা তার ক্ষত-বিক্গত দেহে মলম ম।লিশ করে দিলেন কিনা এটা না জানলেও কোঁনে। ক্ষতি ভবে না ওদের, কোনে ব্যাঘাত হবে না ওদের বাৰ্তির স্থনিদ্রায়। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে এতগুলে! কথা হেসে চলে গেল বংশী পবাঁমাণিকের মনের সম্মুখ দিয়ে । এগুলো অতুল মজম্দরীরের অভিজ্ঞতা পরীক্ষিত নিতৃল সত্য। যে ভুলের জন্তে অতুল মজমদার ব্যর্থ হয়ে গেছে সে ভুল সে করবে না। ওপর থেকে ফু দিয়ে সেআগুন ধরাতে পারেনি, সে জানতনা নীচে থেকে বাতাস দিলে আপনা থেকেই শিখাগুলো জলে উঠবে লক্লক্‌ করে। এতক্ষণে চৌমাঁথাট! এসে পড়েছে । অগ্রতিভ ভাবে হাসল বংশী মাষ্টার £ তোমার সঙ্গে আলাপ করে বড় আনন্দ হল, আর একদিন গল্প করা যাবে। তারপর বিস্মিত বোগেনকে আর কৌনে কা বলবার স্থষোগ না দিছে চলে গিয়েছিল পৃবদিকের বান্তাট। দিয়ে, সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলেছিল তাঁর ছায়াটা। পরিচয়ট1 ওইখানেই শেষ হয়নি। তারও পরে হাঁটে দেখা হয়েছে অনেকবার--হাট থেকে এক সঙ্গেই দুজনে ফিরেছে বামুনঘাটের চৌমাথাট! শখ পর্বস্ত। যে কথা প্রথম দিন একট অপরিচিত রহস্তলোকের মতৌ মনে হয়েছিল, তা রূপ ধরেছে ক্রমশ, নিচ্ছে একটা স্পষ্ট প্রত্যক্ষ আকার 2 যোগেনের চটক1 ভাঙল । অনেক রাঁত হয়ে গেছে। পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে আলকাপের গান লেখা কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে টেবই. পায়নি । আরো মনে পড়ল একট! অশ্ফ্ট বিরক্তি মু একটা তিক্ত স্বাদের মতে] চেতনায় ছড়িয়ে আছে তাঁর--আজ অত্যন্ত অকারণে একটা লোক কুশ্রী কট ভাষায় অপমান করেছে তাকে । অন্যাঁয়_-অবিচার ! চোরের মতে। মাথা পেতে নিয়েছে যোৌগেন, সহা করেছে নিরবোবের মতো এতিবাদ কর! উচিত ছিল. শক্ত হাঁতে গলাট! টিপে পর! উচিত ছিল লোকটার । তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়। উচিত. ছিল-- র্যা বিরক্তভাঁবে যোগেন আবার দোয়াতে কলম ডুবোতে যাঁবে, এমন সময় ঘরের বাইরে কার পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া গেল। দরজার কড়াট? নড়ে উঠল এট খট করে । ১৬১ টি চার টি প্রায় অবরুদ্ধ স্ববে যৌগেন চেচিয়ে উঠল £ কে? -আমি। -আমি কে? _-বংশী। কাগজ কলম সরি দিয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠল যোগেন। খুলে দিলে দরজা-এক ঝলক শী;তর বাতাস ছুরন্ত ভাবে ঘরের ভেতরে এসে আছডে পড়ল। বাইরের পৃথিবীর একটা মাকস্মিক আঘাতে লগ্ঠনের শিখাট। মিট. মিট করে উঠল বার করেক। বংশী মাষ্টার ঘরে ঢুকল । মাষ্টার বাবু? এই রাইত করি যে? _বড় দরকার। সব বলছি, তাঁর আগে দরজাটা বন্ধ করে দাও- শীতে সমস্ত শরীর কালিয়ে গেছে আমার । _হই ঠাণ্ডাটা বড় জোর পড়িছে আই জ-_ দরজাটা শক্ত করে হুড়কো এটে দিলে যোৌগেন। কিন্ত্ত তখনো বংশী মাষ্টার থর্‌ থবু করে কাপছে, ময়লা ছেঁড়া কোট আর স্থতির চাদরে উন্তর বাংলার এই ছুরস্ত শীত পে।ষ মানেনি-_হাঁড়ে হাড়ে ঝণীকানি ধরিয়ে দিয়েছে একেবারে । জুতোর যে অংশটুকু অনাবুত ছিল একট অসহা যন্ত্রণা বোধ হচ্ছে সেখানে, মনে হচ্ছে নিষ্ঠুর হাতে কেউ ছুরির পৌচ দিচ্ছে তার ওপরে । ঠোট ৬২ হুটো থবু থবু কৰে কীপছে। কথক মিনিট ভালো করে কথাই কইতে পারলন। মাষ্টার । _শীত জোর ধর্ধিছে। একটু আগুন আনি দিমু? কাপা গলায় মাষ্টার বললে, থাক । _-থাকিবে কেন, লিআসোছি হামি। একট। মাঁলস| জোগাড় করে তাতে কাই কয়লার আগুন দিয়ে নিয়ে আত্ধতে খুব বেশি সময় লাগল না যোগেনের । এসে দেখল মাষ্টার তখনো শীতে কাপছে বটে, কিন্তু সেদিকে তার বিশেষ ভ্রান্ষেপ নেই । অত্যন্ত ঘন দিয়ে ঝুঁকে পড়ে সে পড়ছে যোগেনের লেখা আলকাপের সেই গানগুলে।। লজ্জিত যোগেন মাষ্টারকে অন্যমনস্ক করবার জন্যে সাড়া দিলে £ এই লেন রি, মালসা লিরা আসিন্ু। হাত পাও সেঁকি লেন। মাষ্টার চোখ না তুলেই বললে, নিচ্ছি। যোগেন বিব্রতভাবে বললে, উগলাক্‌ না দেখেন! মাষ্টার হাসিমুখে বললে কেন? হামার লাজ নাগে। এবার বংশী মাষ্টারের হাসিট। আরো একটু বিস্তীর্ণ হয়ে পড়ল £ কেন, এতে লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আসরে তে। গাইতেই হবে। _সি যখন হেবে তখন হেবে। এখন রাখি দেন । --আঁচ্ছা, আচ্ছা । যৌগেনের আরক্ত দুখের দিকে তাকিয়ে মাষ্টারের করুণ। হল। বললে, তবে তাই হবে, আসরেই গান শুনব তোমার । কিন্তু বেশ.গান লেখা হয়েছে যোগেন, ভালো হয়েছে । _ভালো হইছে ?--চরিতার্থতায় যোগেনের মুখ আলো হয়ে উঠল। হ্যা) চমৎকার হয়েছে। এবার যোগেনের আর কথা ব্রেল না। সাফল্যের ছেলেমাগধি আনন্দে ৬৩ আর বিনয়ে মাথা নীচু করে বসে রইল সে। আর আগুনের মালসার ওপরে হাতট। তুলে দিয়ে আরামে মাষ্টারের গল! দিয়ে বেরিয়ে এল- আঃ! ্‌ এখন অনেক বাত। বাইরের আকাশে ফিকে চাদ অস্ত গেছে, অন্ধকারে এখন জমাট বাধছে হলদে কুয়াসা। চীচের বেড়ার গায়ে মাটি লেপা-_ ধেখানে যেখানে মাটির আন্তর থসে বেড়ার ফাঁক বেরিয়ে পড়েছে, সে সব জারগা দিয়ে সরু সরু ধোয়ার রেখার মতো কুয়াসা ঢুকছে ঘরে। কাল সকালে স্য উঠবে অনেক দেরীতে--ব্ছক্ষণ পযন্ত গভীর কুয়াশার তলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে পৃথিবী । ৃ রাত অনেক হয়েছে- কোথা থেকে ঘেন বিচিত্র একটা শব্দ বাজছে-- ঝিম ঝিম। আর সব চাঁপা পড়েছে নীরবতীয়! পাশের ঘরে যোগেনের মা ঘুমের ঘোরে কথা কয়ে উঠল। বংশী মাষ্টার আগুনের উপর হাত সেকছে। মাঝে মাঝে চট্চটু করে এক একটা শব্ধ শোনা যাচ্ছে মালসাটার ভেতরে, চট! খসে পড়ছে । আর মাষ্টারের নিশ্বাসের আওয়াজ মাঝে মাঝে কানে আসছে অত্যন্ত জোরে। সব্র্দ সঙ্কুচিত করে মালসার ওপরে ঝুঁকে রয়েছে সে। চাপ পড়েছে বুকে, তাই একটা জোর নিশ্বাস টেনে সে চাপটাকে হালক1 করতে চাইছে । | কয়েক মুহূর্ত ধোগেন তাকিয়ে রইল মাষ্টারের দিকে । চোখ দুটোকে, এখন আর দে রকম জ্যোতিম্মান্‌ বলে মনে হচ্ছে" না__কেমন একটা ক্লান্ত' আবামে যেন নিপ্রভ হয়ে আছে। এঙদিন পরে আবে। বোঝা গেল, বেশ বয়েস হয়েছে মাষ্টারের, তার চোখে মুখে দীর্ঘ ক্লাস্তিকর অভিজ্ঞতার চিহ্ন আকা । কপালে কতগুলে! কালো কালো দাগ স্থায়ী হয়ে বাস! বেঁধেছে, চোখের কোণায় কালির পৌঁচড়া রয়েছে সজাগ হয়ে । রাতে কি ঘুমোয় না মাষ্টার, কখনো কি বিশ্রাম করে না? আর এত ভাবেই বাকী? এই প্রার ছনাস ধরে পরিচয়, তবু যেন ধোগেন সম্পূর্ণ করে জানতে পারলনা মাষ্টারকে, তার সত্যিকারের পরিচন্ন পেলন]। শ্তধু বুঝতে পারা! যায় বতটুকু ৬৪ দেখেছে মৃষ্টীরকে তার চাইতে অনেক ব্যাঞ্চ, অনেক গভীর । মাষ্টার বা__ ত। এখনো তাঁর অজ্জেয় এবং রহস্তনিবিড় | যোগেন বললে, ত কহেন, এত রাতে এইঠে আদিবার কি কামটা পড়িল? -আঁমি একটা ইস্কুলের মাষ্টার_সে তো জানো ? _-ই, সিট] জানি । _ সেখানে সরস্বতী পুজা হবে। বিস্কারিত চোখে যোগেন তাকিয়ে রইল ঃ কী পৃজ৷ হেবে কহিলেন ? _-সরম্বতী। _ইটা ফের কেমন কথা? চামারের গায়ে পূজ। ? --কেন চামার৪ তো মাচ্ষ | যোগেন বললে, মান্গষ হবা পারে, কিন্তু বাম্হন কায়থ ত নহে। হামর! ধাম্হন কায়থের জুতার তলা । _এখন আর কেউ কারো! জুতোর তলা নয্ব। _নহে? _-না। .. যোগেন দাত দিয়ে নীচের ঠোঁটটাকে টিপে চুপ করে রইল খানিকক্ষণ । ত্রান্মণ-কায়স্থের কথা মে আপাতত ভাবছে না, কিন্তু আজ দুপুরের সে বিশ্রী অপমানটার কথাও সে ভুলতে পারেনি । নিতীন্তই জাতি- গোত্রের ব্যাপার, কারণটাও একান্তই ব্যক্তিগত, মাষ্টারের ঝড় বড় কথার সঙ্গে কোনে সম্পর্কও তার নেই। তবু একখা ঠিক, যোগেন তার প্রতিবাদ করতে পারেনি, প্রতীকারও করতে পারেনি । শুধু কি একটা বিশ্রী গণ্ডগোল এড়াবার জন্যেই মে তখন মুখ বুঁজে সব সহ! করে গিয়েছিল? অথবা ভয় করেছিল লোকটার প্রভাব-প্রতি পত্তিকে, তার ক্ষমতাকে ? জমির ব্যাপার নিয়ে তার সঙ্গে মামলা করছে হরেন, করুক। তার মীমাংসা! হবে ৬৫ বৈভালিক--« আদালতে । কিন্তু কেমন করে এমন একটা স্পর্ধা পেল লৌকটা যে এই সামান্য ছুঁতো নিয়ে ভাঁকে যা খুশি তাই অপমান করে গেল? যোগেন বললে, ই, বুঝিন্ু। মাষ্টার মৃদু হেসে বললে, কী বুঝলে ? _আর কাহারো কাছে নীচু হই থাকিমু না। _না, কারো কাছেই না। -__বাম্হন, কায়থ বড়লোক-_কাহারো! কাছেই না । ্প্না। ও যোৌগেন আবার কামড়ে ধরলে নীচের ঠোটটাকে £ ত হামাঁকে কী করিবা কহিছেন? বলছিলাম মাঁনাদে; স্কুলে সরস্বতী পুজা হবে। _-বেশ তো, কর। মাষ্টার বললে, সেই জন্যেই তোমার কাছে এলাম । -_হামি কী করিব তা ক । _ সেদিন তোমাকে গান করতে হবে | যোগেন আশ্চর্য হয়ে বললে, হামি ! _হ্যা, তুমি । যোৌগেনের তবু বিস্ময় কাটছে না £ হাঁমাঁকে গান গাহিবা হেবে । সেই কথাই তো বলতে এলাম। নতুন গান শোনীতে হবে যোগেন, শোনাতে হবে নতুন্‌ কথা । তোমরা যে আর ছোট নও, একথা এবার বলে দেওয়ার সময় হয়েছে । যোঁগেন অভিভূতভাবে বললে, কী গান লিখিমু? স্পলিখবে অন্যায়ের কথা, অবিচারের কথা । বলবে বামুন-কায়েতেরা কেমন করে তোমাদের ছোট করছে, কেমন করে জমিদার-মহাজন অন্যায় চালিয়ে যাচ্ছে তোমাদের ওপরে । নূতন করে চামারপাড়ায় আমরা সরব্বতী: ৬৬ পূজো করছ--তাই নতৃন করে তোমাকে গানও লিখতে হবে যোগেন | পারবে না? উক্ষ তীব্র দৃষ্টিতে যোগেনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইল বংশী মাষ্টার। অন্ুনি হত একটা! প্রখর জালার্‌ মত ভার চোখে জলতে লাগল, তার দৃষ্টি যেন আচ্ছন্ন কবে আনতে লাগল যোগেনকে । বাইরে শীতের রাত। টাচের বেড়ার ফাক দিয়ে হলদে কুয়াশা! ধোয়ার সরু সরু সাপের মত ঘরের ভেতরে ঢুকে কুগুলী পাঁকীতে লাগল । খড়ের চালের ওপর টুপ ট্রপ করে শিশির পড়বার শব্ব--মালপার গন্গনে আগুনটার ওপবে অল্প অল্প ছাইয়ের আভাপ। যোগেন চুপ করে রইল। ঠিক কী উত্তর দেবে, বুঝতে পারছে না। সরস্বতী পূজো হবে, বেশ নতুন রকমের জিনিস। সেখানে আল্কাপের গান গাইতে হবে-সেটাও ভালো কথা, খুশি হওয়ার মতোই প্রস্তাবটা । কিন্ত নতুন স্বরে গান রচনা করতে হবে-নতুন কথা বলতে হবে । সে কথা বলবার মত কি সাহস আছে যোগেনের, সে জোরট। আছে নিজের ভেতরে ? _পারবেনা যোগেন? যোগেন কেমন অভিভূতভাবে তাকিয়ে রুইল। বাতির নেশা ধরেছে, চেতনার মধ্যে সাবিত হয়েছে এই অপ্রত্যাশিত পরিবেশের বিচিত্র কুহক জাল। বাইরের হলদে কুয়াশার মত মনের মধ্যেও একট] কুহেলিকা পড়েছে বিকীর্ণ হয়ে। | মাস্টারের প্রশ্নটা! যেন শুনতে পেলনা সে। ঠিক যেন বুঝতেও পারছে না। বহু দুরের কোন্‌ একটা শহরের আলোর মত কী যেন ঝলমল করছে চোখের সামনে, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না অথচ দুর্বোধ্য রহস্তের মত কিছু একটা ঘনিয়ে আসছে ভাবনার ওপরে । অথবা শোন] যাচ্ছে কেমন একট পূরাগত গর্জনের মতো শব্দ,__বর্ষার সময় যখন কাঞ্চন-নদীর কুল-ছাঁপানে। জল থর কল্লোলে বয়ে যায় আর দূর থেকে সে কল্লোল যেমন মনের মধ্যে আতঙ্ক-ভরা কৌতৃহুলকে সজাগ করে তোলে--ঠিক সেই রকম । ৬৭ - পারবে না যোগেন 5 _. ততীয়বার প্রশ্ন করল মাষ্টার । তাঁর চোখে যেন আগুনের বিন্দু চিকমিক করছে। ওই আগুনের স্পর্শ লাগল কি যোগেনের মনেও ? _পারিমু। _নতুন গান, নতুন কথা? _পারিমু। মাষ্টার বললে, কিন্তু তাঁর দায় আছে, অস্থবিধেও আছে । যোগেন চুপ করে রইল । --গণগ্ডগোল হতে পাবে। যোগেন জবাব দিল না । একটা ছোট কাঠি দিয়ে অন্যমনক্কভাবে মালপার আগুনটাঁকে খোঁচা দিচ্ছিল মাষ্টার । হঠাৎ যে আগুনট1 জোরালো হয়ে উঠল-_ঝেড়ে ফেলে দিলে ছ'ইয়ের হালকা আস্তরণট1। মাষ্টারের হাতের কাঠিট। জলে উঠল দপ করে। মাষ্টার বললে, যদি ভয় পাও, তবে বলব না। কিন্তু যোগেন, তোমার গাঁয়ের মীন্থুষদের ভেতরে তুমিই খানিকটা লেখাপড়া শিখেছ, এই অন্ধদের ভেতরে তোমারই চোখ খুলেছে । এ কাজ তুমি না করলে কে করবে? তুমি না নিলে কে নেবে এই ভার? কিন্তু মালসার আগুনটার মত যোগেনের মনের ওপর থেকেও ছাই সরে গেছে, কী একটা! সেখানে ধক করে জলে উঠেছে মাষ্টারের হাতের ওই কাঠিটার মত। মহিন্দরের কাছ থেকে পাওয়া সেই অপমানের যন্ত্রণীবৌধট। প্রসারিত হয়েছে একটা অর্থহীন প্রতিবাদে, একট বু বিন্তীর্ণ অপমীনবোধে । সহসা যোগেনের মনে হল, একাজ সত্যিই তাঁর- এ কাজের দায়িত্ব একমাত্র সেই-ই নিতে পাবে। | ৬৮ ॥ যোগেন বললে, আমি কীউক ডরাই না। কিন্তু কী গান লিখিমু, তুমি হামাক কহি দেন। _বেশ আমিই বলে দেব। মাষ্টার উঠে দাড়ালো £ রাত খুব বেশি হয়ে গেছে, অনেকটা রাস্তা আমাকে ফিরে যেতে হবে। তোমারও ঘুমোনো দরকার । আমি আজ চলি যোগেন। | --অখনি যাছেন? ষ্ঠ, এখনি যাঁব। _কিন্ত ই কথাট1 কহিবার জন্য ক্যানে এত আইতে আসিলেন ? নিদ্রা রিগ আছ +ঞ্সে কারণ পরে তোমায় বলব। শুধু একটা কথ নলি যোৌগেন। এ শুধু শু _-এ শেষ নয়। তোমাকে দিয়ে অনেক কাঁজ করাতে চাই আমি, অনেক বড় কাজ। আর সে কাজ তুমিই পারবে । তুমি গুণী, তুমি শিল্পী। আমাদের কথা লোকের কানে পৌছোয়। কিন্কু মনকে ছুঁতে পাবে না। সে ভার যদি তুমি নাও--আমাদের দায়িত্বের বোঝা! অনেক হালকা! হয়ে যাবে । বলেই আবার লজ্জিত হয়ে পড়ল বংশী মাষ্টার । বড় বেশি বলছে, বড় সাজিয়ে বলছে। এর প্রয়োজন নেই, কথার মূল্য কত নিরর্থক, অতুল মন্কুমদারের জীবনেই তা নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত আর প্রমাণিত হয়ে গেছে। তবু খারাপ হয়ে গেছে অভ্যাঁস। মাষ্টারীর দৌঁষই এই--বড় বেশি পরিমাণে বকিয়ে মারে । মাষ্টার দরজার ঝ'ঁপট] খুলে বললে, আচ্ছা, চললুম আঁজ। _কিন্তু কী লিখিব সিট! তো কহি গেলেন না? - কাল পরশ আসব। কিন্তু মনে রেখো যোগেন, অনেক বড় কাঁজ তোমায় করতে হবে-অনেক বড় কাঁজ। | মাষ্টার বেরিয়ে গেল, বাইরে থেকে দরজাটা ঠেলে ব্্ধ কবে দিলে । এক ক ঝলক শীতের হাওয়া এসে ফোগেনের লেখার থাতার পাতাগুলোকে উড়িয়ে দয়ে গেল । আর অন্ধকারে এগিয়ে চলল বংশী পরামাণিক-ফিরে চলল শুন্য মাঠের কন্কনে উগ্র বাতাসের মধা দিয়ে। চাদ ডুবে গেছে কুয়াশায় আকাশের তারাগুলো বিচিত্রভাবে ঝাপসা হয়ে আছে। স্তব্ধতায় আচ্ছন্ন রাত্রি-শুধু বহুদূর থেকে একটা ক্ষীণ কান্না ষেন ভেসে আসছে। মড়াকান্না নিশ্চয়__ওর একটা অন্বস্তিক্র ধরণ আছে, ওর সুরের ভেতর আছে অবাঞ্চিত অনিবার্ধতার চিরন্তন-সংকেত । শীতের বাতীস সর্বাঙ্গে দাত বসিয়ে দিতে চাইছে) ঠাণ্ডায় যেন ছি'ড়ে যেতে চ।ইছে কান ছুটে! । তবু মনের মধ্যে যেন পথ হাটতে লাগল মাষ্টার । সেখানে শীতার্ত রাত্রির আডুষ্টতা নেই, আচ্ছন্নতাও নেই । একটা তীব্র উত্তীপ, অসহনীয় একটা আগ্নের জালা । এই নির্জন মাঠের ভেতর শুধু বাংল! দেশের কছেকটি বিচ্ছিন্ন জনপদই রূপ ধরেনি, মেখানে প্রতিফলিত হয়েছে সমগ্র ভারতদ্ম। এই মড়াকান্নীর শব্দ তারই বুকের কান্না ওই সি শিশিরে তারই চোঁখের জল ঝরে পড়ছে ফোটায় ফৌটায়। তবু নির্জন পথ। তবুও নিঃসঙ্গ রাত্রি। উপায় নেই, ডাক শুনে তো! কেউ এল না, তাই একলা চলরে'। আজ প্রায় পাচ বছর ধরে একা পথ চলেছে অতুল মজুমার, তাঁর জন্যে সহানুভূতি হয় বংশী মাষ্টারের। আর অতুল মজুমর্দারও তো মানব । তারও একটা মন আছে, একট! অতি ছুর্বল জায়গা আছে, যেখানে সে স্পর্শীতুর-_-যেখানে ছোঁয়া লাগলে আজও টনটন করে ওঠে । আচ্ছা ভাজ কোথায় সে, সেই ছোট মেয়েটি? নাম বোধ হয় শাস্তি। ময়লা রঙ, ছোটখাটো মেয়ে। বয়স যতটা বেড়েছে মন তাঁর অর্ধেকও বাড়েনি । কপালে উজ্জ্বল একটি সবুজ টিপ। কথায় কথায় সে এত বেশি তর্ক করে যে সামলানো মুস্কিল । অতুল যুমদারের ৩ মত একটা! মূল্যবান ভারিক্কি মানুষকে পর্বস্ত তুলত নাস্তানাবুদ করে। আর তার সেই হাসি। বাধভাঙা ঝর্ণার জলের মত উৎসারিত হয়ে পড়ত-- অকারণে যে কত খুশি হয়ে হাসতে পারে মানুষ, শাস্তিকে না দেখলে তা বুঝতে পারা বায় না। | আজ কোথায় শাস্তি, কত্দূরে? সে সব খেলাঘরের দিনগুলো কি এখনো মনে আছে তার? এই রাতর_এই মুহর্তে হয়তো তীর ঘরে একটি নীল রঙের ইলেক্টি.ক বাতি জলছে, হয়ত উষ্ণ লেপের ভেতরে কারো উষ্ণ বুকের আশ্রয়ে তার দুচোখে অপরূপ স্বপ্লভর! ঘুম জড়িয়ে আছে । কিংবা_ | কিংবা নিদ্রিত চোখের কোণ বেয়ে এক ফোটা চোখের জল পড়ছে অসতর্ক স্বপ্নের অবকাশে। হয়ত একটা মানুষ একদিন তার জীবনে এসেছিল, স্বপ্রের মধ্যে মৃহু বেদনার মত সেদিনের স্থৃতিট। সাড়া পেয়েছে তার চেতনায়? প্যেং! মাষ্টার নিজেকেই একটা ধমক দিলে । বাজে রোমান্টিসিজম্‌। কন্কনে ঠাণ্ডা আর শন্শনে শীতের বাতাস । টাদ ডুবে যাওয়া কুয়াশায় মেশীনো ঘোলাটে অন্ধকার। দূরে মড়াকান্গীর আকুতি । এই সত্য--এই তো পথ | “একলা চলো, একলা চলো, একলা চলোরে, সঙ্গী? ন্বপ্রবিলাস। ভালবাসা? বিপ্লবীর পাথেয় নয়, বন্ধন । মাষ্টার জোরে জোরে হাটতে শুরু করল। রাত শেষ হওয়ার আগেই পৌছুতে হবে তাঁকে । অনেক কাঁজ, অনেক কাজ বাঁকী। ৭৯ পাচ বেল। বেশ চড়েছে, ঘরের মধ্যে তখনো! আঘারে ঘুমুচ্ছিল বংশী মাগ্নার। জানালাটা দিয়ে রোদ পড়েছে মাচার বিছানায়, শীতের সকাঁলের সোনালি পোঁদ এসে ছড়িয়েছে মাষ্টারের বাত্রি-জাগরণক্লান্ত চোখে-মুখে । বাইবের সবজী বাগান থেকে ঘরের মধ্যে শিশির ক্সিপ্ধ বাতাসে ভেসে আসছে কপির পাতার গন্ধ, মূলে! ফুলের গন্ধ । ময়লা লেপটাঁকে শরীবের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ট করে নিয়ে নিবিড় নিদ্রায় নিমগ্ন আছে মাষ্টার । এমন সময় মহিন্দর এসে ডাকাডাকি শুর করে দিলে । -_-ওহে মাষ্টার, মাষ্টার তে? ঘুমের মধ্যে মাষ্টার শুনতে পেল অম্প্ ডাকট।। কিন্তু তখনো জাগবার অবস্থা! নয়, বিরক্তভাবে কী একটা বিড় বিড় করে সে পাশ ফিরে শুল। পিঠের নীচে মড়মড় করে উঠল মাচাটা । _-শুনিছেন হে মাষ্টার, আর কত ঘুষাচেন। এইবার টকটকে লাল ছুটে! চোখ খুলল মাষ্টাব, শূন্তৃষ্টিতে একবার তাকাল ওপরের দিকে -যেখানে ঘরের চালে কালো ঝুলের ওপরে সর্ষের আলে। এসে পিছলে পড়েছে । অধচেতন মনের কাছে সমস্ত পরিবেশট। কেমন নতুন আর খাপছাড়া বলে মনে হল.। _মাষ্টার উঠিছেন 7 মহিন্দর অধৈর্য হয়ে উঠেছে । এবার এসে নাক গলিয়েছে খোলা জানলায়, ডাক দিচ্ছে £ উঠো হে উঠো। ঢের বেলা চট়ি গিছে। ৭২ মুখ ধিক্ৃত করে মাষ্টার বললে, আঃতারপর গভীর বিতৃষ্ণার সঙ্গে লেপট। সরিয়ে উঠে বসল। একটা হাই তুলে বললে, আ% এই সকাল বেলায় কেন ডাকাডাকি শুরু করলে? | _সকাশ তুমি ঝুগ্ে দেখিলা মাষ্টার । বেলা পহর চড়ি গেইছে। _ন1% তোমাদের জালায় আর ঘুমে।নো যাঁবে ন।। বিছানার দিকে একবার করুণ চোখে তাকিয়ে মাষ্টার মা! থেকে নেমে পড়ল। মরল। চাদরট। গায়ে জাউয়ে দরজ। খুলে দিলে, বেরিয়ে এল দাওয়ার । বললে, কী খবর ? _তুমার হকার জল পি আগ । গাছগুপাত, ছিটাই দাও, পোক। পালাই ঘিবে। -_তা তো যিবে।-মহিন্দরের হাতের ভাড়ট।র দিকে ভাকিয়ে মাষ্টার বললে, এত জল পেলে কোখা য়? _গামু ফের কুন্ঠে! বাড়িত যত মান্য মাইন্দার দিনরাইত বড়র বড়র করি হু'ক1 টানোছে, পানির অভাব হেবে ক্যানে? _-যাক্‌, ভালোই করেছ । ভশড়টা পেখে মহিন্দর বললে, শুধু ওইট1 কামের জন্যই হামি আসি নাই। --তবে আরো কী কাজ আছে? _সিটাই কহিতে তো আলিন্ু। নায়েক আলছে, তোমার সাথ, দেখা করিব চাহোলে। _ নায়েব 1--বংশী বিস্মিত হয়ে বললে, কোন নায়েব? মহিন্দর অন্থকম্পাভরে বললে, অনেক “নিখিলে' কী হেবে, তুমি বড় বোকা আছেন মাষ্টার! নায়েব ফের নায়েব-কৌোন নায়েব হেবে আবার! -_-ও$, বুঝেছি । তোনাদেন্ জমিদারের নায়েব । _-ইবারে ঠিক ধরিলে-_মহিন্দর বললে, হামাদের জমিদার বড়াল বাবুর নায়েব। ৭৩ বৈতালিক--৫।১ _কোথায় উঠেছেন নায়েব যশাই ? তুমি কেমন লোক আছেন হে মাষ্টার? মহিন্দর এবার বিরাক্ত হয়ে জবাব দিলে, হাস কান্দরের উপরে টিনের চালীখান দেখেন নাই ? ওইটাই তে? কাচারী। নায়েব আসিলে উখানে উঠে, তিল করে। হামাদের সবজনার ব্যাগার দিতে হয়। --তা আমাকেও ব্যাগার দিতে হবে নাকি ? তীর পা ধোয়ার জল দিতে হবে, রান্নার কাঠ কেটে দিতে হবে, নয়তো পা টিপে দিতে হবে? মাষ্টার হাসল । মহিন্দর সিভ্‌ কাঁটল £ ছিঃ ছিঃ ইগলান কী কহিছ। তুমি হামাদের মাষ্টার, ঢের নিখিছ, তুমার মান নাই? উগলা ছোটলোকের কাম--উগলা তোমাকে ক্যানে করিবা হেবে 2 হাঁষরা আছি না? আর হামাদের নায়েব মশাই সিরকম মানুষ নহ, মানীর মান বাখিব! জানে । -তাই নাকি ? মাস্টারের মুখে কৌতুকের রেখ। দেখ। দিলে মহিন্দর বললে, ই ই! একবার নায়েব হামাক কছু আনিবা কহিলে। তো কছুর সমর নহে, কুন্‌.এ কছু পামুহামি? ঢের খিল, না মিলিল্‌। আপি কহিতেই, হায়রে বাপ, আগি (রাগি) একদম রাগুন (আগুন) হই গেল্‌ কহিলে, শালা, কছু নাইতো জাল মাছ (চিংড়ি) খামু কেমন করি ! বগি মারিলে এক লাখি, হামি পড়ি গে । মাষ্টার রুদ্ধস্বরে বললে, লাথি মারলে? -মাদিলে তে।। বাম্হনের ছোঁয়া একটা] লাখি মারিলে তো কী হৈল্‌? তো? লাথি খাই ভাণী রাগ হই গেল্‌ মোর, হামি চলি আনু বাড়িত। এক ঘড়ি বাদ পেয়াদ পাঠ।ইপে। হামি ভাবিজু, বাপ, ইবার জুত| মারি হামার পিঠ উড়াই দিবে । --উডিয়ে দেয়নি ? --স্₹$১ কী যে কহিছেন মাষ্টার । তেমম মাঞ্জষখান পাও নাই উয়াক। ৪, হামি ধাইতেই ছুঃখ করি কহিলে, মহিনদর,। আগ (রাগ) করি তুমাক যাবি হাম'ল মন বড় খেদ করোছে ।* তুমি মানী লোক--কামট। হামার ভূল হই গিইছে। তো! আগ করিওন।--ই টাকাটা লিই যাও, তোমার চ্যাংড়াগুলাক্‌ মিঠাই খাবা দিও । --যাঁক_ মাষ্টাবের মুখে একটা! বিকৃত হাপির রেখা ফুটে উঠল £ তা হলে সত্তা মানীর মান রাখতে জানে দেখছি | নাতো কী? তুমাক ঝুটাই কহিন্চ? - ভা, বুঝলাম । মাষ্টার বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাম ফেলল, তা হঠাৎ মামার সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইছেন কেন? --হামি কতিন্ধ না? কহিন্থু, মাষ্টার বড় পণ্ডিত লোৌক--ভিনদেশী মানুষ । গ্ামাদের বড় উপকার করে, ঘর ঘর যাই খোঁজ খবর লেয়। শুনি কহিলে, হামার ঠাই মাষ্টারক ভেজি দিও মহিন্দর, হামি আলাপ করিমু। মাষ্টার হাসল £ আচ্ছা যাব। বিকেলে দেখা করব। _-না, না। এবার মহিন্দর শঙ্কিত স্বরে বললে, সকালেই যাইও । কহিছে যখন তখন মাঁনী লোকটার কথাটা তে! বাখিবা হয়। _আল্ফা বেশ, একটু পরেই যাচ্ছি। ও _ঠ--ঙ জলদি যাইও । মহিন্দর বললে, হামার ফের তাড়া আছে, গোরুর দুধ যোগাড় করিব! হেবে, খাসি আনিবা নাগিবে। হামাকেই ফের বরাত দিলে কিনা । তুমি কিজ্ঞ যাইও হে মাষ্টার-ভূলেন না । -না ভুলব না। দ্রুত চলে গেল মহিন্দর, অত্যন্ত তাঁস্থ আর বিব্রত মুখের চেহীর] | নায়েব মহাশয়ের অভ্যর্থনার দায়িত্ব লাভ করে অত্যন্ত চরিতার্থ হয়েছে বুঝতে পারা যায়। গ্রামে এত লোক থাকতে এসব ব্যাপারে নায়েব তাঁকেই অনুগ্রহ করে থাকেন, এই গর্ববোধটা বেশ প্রত্যক্ষ আর উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে মহিন্বরের সর্থাজে। ৭৫ মাঈন সাবোৌতুবে ভীপল, মানীন মান নক্ষার আমল তবৎপরধ্ধী। বুঝা পাছা যাচ্ছে। নায়েব চালাক লোক, গোরু মেরেন্জুতো! দানের বিছ্যাট। আয়ত্ত আছে তার। কিন্ধ ভঠাৎ তাকে ডেকে পাঠানোর অর্থটা কী? সংশয়ে মাষ্টারের চোখমুখ কুঞ্চিত ভয়ে উঠল। শুধুই পরিচয়, শুধুই খাঁনিকটা আলাপ এবং অন্তগ্রহ বিতরণ? অথবা? মাষ্টার বড় করে একট! হাই তুলল, তারপর হুঁকোর জলের ভীড়টা নিয়ে নেমে গেল সবজী বাগানে । মুলোর পাতা তাঁর সর্বাঙ্গে স্রেহের ছোয়া বূলিয়ে দিলে, বিলিতী বেগুন গাছ থেকে টপটপ করে কয়েক ফৌটা অবশিষ্ট শিশির ঝরে পড়ল তার পায়ের ওপর, তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছুর্বশুত্র কপি ফুল যেন আনন্দে হাসতে লাগল । কাদরের সামনে উড ডাঙার ওপরে কাছারী বাড়ী। । একখানি টিনের চালা একফালি বারান্দা। সেইখানেই দিব্যি জকিয়ে বসেছে নায়েব দীনেশ চট্টরাঁজ। পাকানো শরীর, শকুনের মতো ধারালো চোখ । দেখলেই ঝোঁঝা যায়, নায়েবী করে করে নিজেকে একেবারে তৈরী করে নিয়েছে । কেউ যখন আমে তখন সম্পূর্ণভাবে তাঁর দিকে তাকাঁর না । একটা চোখ বন্ধ করে আর একট। সংকুচিত করে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে কেমন বিচিত্র ভঙ্গিতে | অর্থাৎ মানুষকেই শুধু দেখে না,তাঁর ভেতরে যেন আরো একট] কিছুকে সে আবিষ্কার করতে চায় । আপাতত সকালের রোদে তৈলাভ্যঙ্গ চলছে তর । সারারাত গোরুর গাঁড়ির ঝণকুনি খেয়ে এসেছে, এই তৈল মর্দনের সাহায্যে গায়ের ব্যথা দূর করবার বন্দোবস্ত । বসেছে একখানা জলচৌকির ওপরে। খানি গা, ঠেঁটি কাপড় পরণে | ; কাঁলো কুচকুচে হাড় বের কর! শরীর সম্পূর্ণ অনাবৃত ; গলায় ক্ষাবে কাঁচ! টৈতেট। মালার মতে! করে জড়ানে৷ | মাথার মোট! টিকিটার় এমন কায়দা কবে গিঁট দেওয়া হয়েছে যে সেটা নেতিয়ে পড়েশি, বেশ & আত্মমর্ধাদায় একট! রেফের আকারে আকাশকে সংক্ষেত করছে । . এ ৮ দলাযণের আগেই বশী মাইন একপলবে লিশিঘটা নিনদ ভান অন্গারন করবার চেষ্টা কদলে । সত্যিই? দেখবার এসং পুলকিত হওয়ার মৃতো। দুজন লোক যে বুকম ঘর্মান্ত দেভে €ই ক্গীণ দেভযষ্টাটিকে দলাই মূলাই করছে, ঘোড়া কিনা তেজালে! মহিষ না হলে তা বরদাস্ত কর] শক্ত । কীলো শরীবটি থেকে যেন আলো পিছলে পড়ছে, অন্থত মেরখানিক তেল খরচ হয়ে গেছে তাঁতে সংশমমাত্র নেই । কিন্ ওই প্রচণ্ড মর্দন ব্যাপারেও চট্টরাজ সম্পূর্ণ অনাসক্ত | তৈল-সিঞ্চনে ুটির-অভান্ত নায়েবের ওতে আর ক্তিবদ্ধি য় না। হাতের হুকোটা থেকে নিয়মিত ধুমপান করছেন এব, সেই সঙ্গে কথামুত বর্ষণগ চলছে সমানভাবে । বেশিক্ষণ নীরবে দেবদর্শনের সৌভাগ্য হল না শাষ্টারের | চট্টরাজ তাঁকে দেখতে পেলেন । নীঘেবের হিসেবী চোখ, প্রণম দৃষ্টিতেই চিনতে হুল হল না। _এই যে, নমস্কার। আনুন আঙ্গুন। প্রতিনমস্কার করে মাষ্টার এগিয়ে এল । _-আঁপনি এখানকার স্কুলের মাষ্টার নয়? বংশী মৃছু হেসে বললে, আজ্ঞে হী, কিন্তু আপনি চিনলেন কী কবে? -আরে এই বয়সেও মুখ দেখে মানুষ ঠাহর করতে পারব না? আপনি হরসালেন মাষ্টার মশাই। আন্থন, বসন এখানে । একটা জ্লচৌকির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন চট্টরাজ। বংশী ব্মল। এতক্ষণ লক্ষ্য করেনি, একটা পাখা নিয়ে পিছনে মাটিতে বসে বাতাঁস কৰুছে মহিন্দর। এইবারে কথ! বলবার সুযোগ পেল সেঃ হাঘাদের ষ্টার খুব পণ্ডিত, ঢের নিখিছে, ছাপার হরফে কথা কহিবা পারে নায়েক এই | _-তাঁই নাকি 1--অপত্য শবেহের মত একটা কোমল হাসি হাসলেন ৭4 স্টররা্ত £ বেশ, বেশ। কিন্ত পণ্ডিত হলেও ততো ব্যাটাদের লাভ কিরে? তোদের বিছ্যে তো ওই জুতো সেলাই পর্যস্ত । তোদের পক্ষে পুত মাষ্টার য--একটা গৌরুও তো তাই । কী বলিস রে? নিজের রসিকতায় নায়েব মশাই হাসলেন মহিন্দর হানল। যারা পা টিপছিল তারাও হাসল । কিন্তু চট্টব্রাজ আডচোগে তাকিয়ে দেখলেন, বংশী মাষ্টার হাসল না। জছটোকে একটু কুঞ্চিত করলেন সন্দিপ্কভাবে, তারপর ভকোয় একট] লহ্ব। টান দ্রিলেন। -_-কতদুর পড়েছেন আপনি ? _-এই সামান্য সামান্য | --ইস্কুলে পড়েছেন ? --হা, তাও পড়েছি | হু'কোটা মুখের সামনে খাড়া রেখে খানিকক্ষণ চোখ মিট মিট করলেন চট্টরাজ £ নর্ম্যাল পাশ করেছেন ? -না, তা করিনি | ' --৩$, নর্মাল পাশ করেননি !-__নায়েবের গলার স্বরে যেন স্বস্তির আভাস পাওয়া গেল £ আমিও গোড়ার দিকে পঞ্ডিত্ীী করেছিলুম কিনা । নর্ম্যাল পাশ. করেই সুরু করি। আর তখন পচ্ডেছিলুম "মেঘনাদ বধ কাবা'__মাহা, তার কী ভাব! | চট্টরাজ হঠাৎ যেন অঙিভূত হয়ে গেলেন । মেঘনাদ বধের স্থৃতিতে চোখ বুজে এল, ক হয়ে উঠল আবেগবিহ্বল। হু'কোশুদ্ধ হাতথানা একদিকে: আর একখানা আরেকদিকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিলেন যেন কাউকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছেন তিনি । তারপর বিশ্রীভাবে শুরু করে দিলেন : “হা পুত্র, হা বীরবাছ, বীর চুড়ামপি কী পাপে হারাছছ আমি ভৌমা ছেন ধনে! প্লে হায়রে কেমনে সহি এ যাতনা! আমি? কে আর রাখিবে এ বিপুল কুল-মান এ কাল-সমরে ?” যন্ত্রণা যে অসহৃই হচ্ছে তাঁর মুখ দেখলে সে সম্পর্কে আর ভুল করবার কারণ থাকে না। এবারে বংশী এ্টারের সত্যিই হাসি এল-কিন্তু এ অবস্থায় আর যাই হোক হাসা চলে ন|। চট্টরাজ হাপিয়ে গিয়েছিলেন । তীর কণ্ঠ এবং বাহু-তীড়নায় ইতিমধ্যেই অঙ্গসেবাট। বন্ধ হয়ে গেছে, থেমে গেছে মহিন্দরের হাতের পাখা । হা করে সব তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে । সবার ওপর দিয়ে গহিত দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে চট্টরাঞ্জ বললেন, কী বলেন মাষ্টার মশাই, ঠিক হয়নি ? --আজ্ে চমত্কার হয়েছে । _তবুতো বয়েস নেই -চট্টরাজ বললেন, এককালে যাত্রাও করেছিলুম । কিন্তু কী আর করুধ মশাই, পেটের তাগিদে রস-কষ কিছু কি আর রইল? কাব্যটাব্য আর নেই এখন, এখন শু বাকী-বকেয়া, আদায় তশীল, লাটের কিস্তি আর দেওয়ানীর ভাঙ্গীম! | __ আজ্ঞে সে তো বটেই 1 বিনীত ভাত্রের মতো মাথা নাড়ল মাষ্টার | _যাঁক্‌, আপনার সঙ্গে আলাপ কর্ধে ভারী আনন্দ হল। তা এখানে আপনার ছাজ্জের। পড়ে কেমন? --গালোই পড়ে । _-ভঁ, ভালই পড়ে! চট্রগা মুগ বিকৃত করলেন 2 এরাও পড়বে, উচ্চিংড়েও হবে শিকরে বাজ । ছেলাধোর্ড ইঞ্চুল করে দিয়েছে-এইভ, দিচ্ছে। আপনার মতে। একটি ভদ্র সন্তান ছুটি করে খাচ্ছেন--এই যথেষ্ট । কী বলেন, ঝ্্যা?. নায়েব হ্যা হ্যা করে হাসতে লাগলেন, মুখটা একবার কৌচার খু দিয়ে মুছে নিলে বংশী মাষ্টার। কথার সঙ্গে সঙ্গে গুড়ো গুড়ো ল৪ বৃষ্টি মতে। থুথু গড়ে টট্টবাজের। মাষ্টার অবাধ দিলে না, অগ্ন একট হাসল মাত্র । --আপনার দেশ কোখায় মাষ্টাধ মশাই ? _ফুগবাড়ী। কোন ফুলবাড়ী 1 নায়েব কৌতৃহলী হরে উঠলেন । _ধিনাজপুরু | _-ও$, হিলির পরে সেই ফুলবাড়ী? বেশ বেণ। ত] ফুলবাড়ীর কোথায় আপনার বাড়ি? বংশী একবার কপালটাকে নুছে নিলে £ ওই স্টেশনের কাছেই । _-ষ্রেশনের কাছেই? কোন্‌ বাড়ি বলুন তো? বশী এক্ট। ঢেক গিলল, পরাঁমাণিক বাড়ি । _পরামীণিক বাড়ি !--চট্টগাজ বললেন, ঠিক চিনলাম না তো। ওখানেই আমার মামার বাড়ি কিন।। কোন্‌ পরাঘাণিক ? বশীর কান ঝ1 ঝা করতে লাগল £ জলধর পবামাণিক। _অঃ1-চট্টরাজ বললেন, তা হলে নতুন পত্তন। আমি যখন আগে গেছি তগন দেখিনি সে বাড়ি । অকুলে যেন কুল পেল বংশা$ ই! হাঁ, নতভুণ পত্তন! মাত্র সামান্য কিছুদিন__ _অঃ-চট্টরাজ এবার চুপ করে গেলেন তারপর হু'কোয় আর একট। টান দিলেন। কিন্তু বুকের ভিতরে তখনও ছুরুদ্ুরু করছে মাষ্টারের | যদি ওইথানেই চট্টরাজ না খামেন, যদি আরো আগেকার খবর জানবার জন্যেও তার কৌতুহল প্রথর হয়ে ওঠে তবে সে অবস্থাট। সুখের হবে না। ফবরিয়া হয়ে যা খুশি একট! বলে দেবে-_কয়েস্বাটুর কুয়ালালামপুর কিন্বা৷ কামস্কাটকা | কিন্ত চট্টরাজ আর প্রশ্ন করলেন ন| | একটু চুপ করে থেকে দ্রিজ্ঞাসা করলেন, শুনলুম, আপনি নাকি এখানকার ইঞ্চুলে সরঘ্বতী পুর্জো কর্পতে চাইছেন । ৮০৩ কহ _হ্যা, তাই ঠিক করেছি। মাঝখানে কথায় আবার একটা ফোড়ন দিলে মহিন্দর £ ইহ, মোরা ঠিক ্ন। চট্টরাজ ধম্ক দিলেন: তুই চুপ কর দেখি। সব কথায় তোদের কথা $ইতে আমা কেন? যাকে ভিজ্ঞেন করছি সেই জবাব দেবে। ই, সিটা তো! বটে ।_মানী লোক মহিন্দর নিপ্্রভ হয়ে গেল। চট্টগাজ আবার বংশীর দিকে তাকালেন £ পূজো তো! করবেন কিন্তু কেমন করেকরবেন? পিজি পাতি _ যেমন করে পূজে হয়। _-তা। তো হবে না ।--চট্টরজ গভীরভাবে মাথ। নাডলেন £ পুরুত তো পাবেন না। কোনো বামুন রাজী হবে ন1 চানারের পুজো করতে। _-তা হরতো হবেনা । _-তা হলে? _আমরাই পূজো! করব। _-আপনারা !_-জলচৌকির ওপরে প্রায় সোজা হয়ে উঠে বসপেন ১ট্রাজ £ তার অর্থটা তে| ঠিক বুঝতে পারছি না। মন্ত্র পড়বে কে? বংশী মৃদু হাসল £ দঝ্কার হলে আমিই পড়বো । --আপনি !--চট্টরাজ প্রার আর্তনাদ করে উঠলেন £ আপনি কী জাত? --পরামাণিক । _-পরামাণিক? নাপিত? _-ইা, তাই ।--বংশী শান্ত স্বরে জবাব দিলে । --আপনার কি মাথা খারাপ? _ না, মাথা আমার ঠিকই আছে। ৰ _অঃ1--চট্টরাজ্জ আশ্চর্ভাবে সংযত হয়ে গেলেন । তারপর মাষ্টাবের ৮১ বৈতালিক--৬ দ্রিকে শাণিত দৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নাপিতও আজক!ল বামুন হন উঠেছে নাকি ? _--দোঁষ কী! _হু'?-চট্টরাজ তেমনি সংযত স্বরে বললেন, পুজো করা ছেলেখেল। নর, ত৷ জানেন ? _জানি। __হিন্দুধর্ম হেলাফেলার জিনিষ নয়, সেট! জানেন? _ হ্যা, তাও জানি । হুকোর আগুনট1 নিবে গিয়েছিল, কলকেটাকে এবারে মাটিতে ঝেটে ফেললেন চট্টরাঁজ ঃ তবুও আপনি পূজো করবেন ঠিক করেছেন ? | _-তাই তো ভাবছি । - আচ্ছা, করুন। মন্দকী। কলিকাল--এই চামার ব্যাটারাও কবে পৈতে গলায় দিয়ে চাটুষ্যে বীড়য্যে হয়ে উঠবে বোধ হয় । কিন্তু এট! জানেন তো, জমিদার এই গ্রামের মালিক ? দেশট] একেবারে অরাজক নর ? -তা জানি ।-- বংশী চাপা ঠোঁটে বললে, ইস্কুলট1 কিন্তু জেল! বোডের, জমিদারের সম্পত্তি নয়। . _ হাঁ, আপনি অনেক কিছুই জানেন দেখছি । যাক-_আপনার সগ্ে আলাপ করে বড় আনন্দ হল। পরে আসবেন এক সময়_চট্টরাজ হাত তুললেন। নমস্কার ।-_-সম্ভাষণ জানিয়ে বংশী বিদায় নিলে । ৮২ সকালে পৌছেই খুব হাকাহাকি সুরু করেছে স্থরেন, যেন কোথা থেকে মন্ত একট দিগ্বিজয় সেরে এসেছে । বাড়ির দরজা তখনে! খোলেনি, চড়া গলায় স্থরেন ট্যাচাঁতে লাগল £ একটা মানুষও যে সাড়া দেয় না হে, সব মরি গেইল্‌ নাকি? যোগেনের মা বেরিয়ে এল বিরক্ত হয়েই অমন চিল্লাছিস ক্যানে ? হৈল্‌ কী? _-হৈল্‌ কী ?-স্থরেন ক্ষেপে উঠল £ চউখ নাই, দেখিবা! পাঁও না? সত্যিই দ্রষ্টব্য । স্ুরেন. বউ আনেনি, কোথেকে একটি মেয়েকে এনেছে জোগাড় করে। চোদ্দপনেরো বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে-কপালে উল্কির দাগ। ভীরু চোখ মেলে অবাক বিস্ময়ে নতুন পরিবেশটাকে অন্ুপাবন করতে চাইছে । | ওমা !- যোগেনের মা চোখ কপালে তুলে আনলে £ ই কাক নি আলু? _ফের কাক? হামার শালী । _আইপ মা, আইস।__যৌগেনের মা আপ্যায়ন করলে £ তা ইয়াক তো লিয়ে আইলি, বউক্‌ কুন্ঠে রাখি আলি? _-মা মরি গেইছে, বউ কাঁদোছে। হামাক্‌ কহিলে, কয়দিন বাপের ঠাঁই থাকিমু তুমি বহিনটাক্‌ লিয়ে যাও । উয্লাক তো এখন দেখিবার কেহ নাই । বড় হইছে, বাড়িত, দেখিবার মানুষ নাই--কয়টা দিন থাকি আম্মক। ৮৩ যোগেনের যা বললে, তো বেশ । তৃমার নাথ কী ম1? মেয়েটি নির্জীব গলায় বললে, স্থুমীলা ৷ -সৃগীল1? আইস] মা, বাড়ির ভিতর আইসো। হশীলা নীরবে সসংকোচে অগ্রসর হল। যোৌগেনের ম! এক পলকে তাকিয়ে দেখল, তাঁর চোখ ছুটে। লাল-মুখখাঁনা ফোল! ফোৌঁল।। বোঝ" গেল সারারাত কেঁদেছে মেয়েটা, মায়ের শোকেই চোখের জল ফেলেছে: কেমন একটা করুখার ফোগেনের মার মন ভরে গেল, মনে হল সত্যিষ্ট বড ভালো মেয়েটি--বপিক চামাদের মেয়ের চাইতে অনেক ভালো! । যোগেন কোথায় বেরিয়েছিল । ফিরল বেশ বেলা করে। বাড়ির সামনে পৌছুতে দেখে বাইরের দাওয়ায় বসে চামড়া কাটছে সুরেন। যৌগেনকে দেখে মুখ বিকৃত করল । _'এই যে লবাব-পুত্ত,র, হাঁওয়া খাই ফিরিলা ? যৌগেন জবাব না দিয়ে পাঁশ কাটিয়ে চলে যাঁচ্ছিল, সথবরেন আবার জিজ্ঞাস। করলে, হারাণ এখনো ফিবেনি বাড়িত ? _না। --কুন্ঠে গেইছে হারামজাদা? _-হামি কহিবা পারি না। -সিটা পারিবা ক্যানে? খাছ, দাছ, গায় ফুঁ দিই বেড়াছ। হাদি খাটি খাটি মরি গেইজ। তুমাদের ভাবনা-চিত্তা তো কিছু নাই। বারে উ শালা আসিলে জুতা মারি বাহির করি দিমু বাড়ির থাকি। -তো দিয়ো । খালি খালি হামার উপর চিল্লাছ ক্যানে? -চিল্লামু না?-চটে গিয়ে অশ্রাব্য গালাগালি শুরু করলে স্ুরেন। ৮৪ ঠিক চটে গিয়েও নয়, এটাই অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে স্ুবেনের | খুন থানিকট। বকাবকি করতে না পারলে স্বস্তি বোধ হয় না, কাজে মন বসতে চায় না। সকাল থেকে সন্ধে পর্বস্ত এই পর্বই চলতে থাকবে নিরবচ্ছিন্ন ধারায়। অত্তএব যোগেন আর ফীড়ালো লা, সোজা! বাঁড়িব ভেতরে এসে ঢুকল। মার সেই মৃহর্তেই দৃষ্টি থমকে গেল যোগেনের ৷ উঠোনে শীতের নরম বরৌদ্রে বসে চালের খুদ ঝাড়ছিল একটি কিশোরী মেয়ে । চমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ধোগন। প্রথম হূর্ধের আলোয় ঝলমল করেওঠা কিশোর কোমল মখগানি ভারী চমতকাঁর লাগল, বড স্রন্দর লাগল শাস্থ দ্রটি চোখের চকিত দষ্টি। পিঠেব ওপর বাশি বাশি কৌঁকড়া চল ভেঙে পড়েছে, সবটা মিলিয়ে যেন অপর্ব একখানা ছবির মতো বোধ তল যোগেনের । তারপরেই এল বিল্মপ্। কে এ, কোথেকে এল? গ্রামের কেউ নয়, এমন ঢল্চলে মুখ নেই গ্রামের কোনো মেয়ের সকলকেই সে চেনে । আকন্মিকভাবে তাদের বাড়িতে এমন একটি মেয়ের আবিগ্গব ঘটল কী করে? পাশের ভোবাটী থেকে বাসন মেজে খিড়কি দিয়ে ঘরে ঢুকছিল যৌগেনের মা। একবার তাঁকালো ছেলের দিকে, একবার তাকালো! নতমুখিনী মেষেটির প্রতি । তাঁর পরে মুছু হাসল । -_-উ স্থরেনের শালী-স্থশীলা । অর মা মরি গিইছে, তাই কট! দিনের সন্ত এইঠে বেড়াবা আগিছে। বড় ভালো মেইয়া সুশীল! । --ও£-যৌগেন ঘরের ভেতর চলে গেল। অনেকগুলে। নতুন গান মনে এসেছে, তাই লিখতে বসবার ইচ্ছে ছিল যোগেনের | কিন্ত কাগজ-কলম নিয়ে বসেও কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল । পথে চলতে চলতে যেগুলো নীহারিকার মতো আকারহীনভাবে মনের মধ্যে খুবতে ঘুরতে একটা স্থস্পষ্ট রূপ নেবার চেষ্টা করছিল, যে গানের কলি গুন্‌ গুন করে ভেসে আসছিল বারবার--হঠাৎ তাদের সবগুলি যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে । একটা নতুন কিছুর সঞ্চার হয়েছে সেখানে, ৬ এতক্ষণের গুছিয়ে-আন। স্ুত্রগ্ুলিকে আর যেন খুঁজে পাওয়৷ যাচ্ছে না। কিন্তু এ আকস্মিক বাদাটা চেতনাকে বিস্বাদ করে দেয়নি-বরং ভালোই লাগছে । একটা অর্থহীন ভালো লাগ! ঘুবে ঘুরে পাঁক খাচ্ছে বুকের ভেতরে । বেশ মেয়েটি । ফুলের মতো! ঢলঢলে মুখ । নামটিও -ন্দরষ্ট7হৃশীলা | যোগেন ছাত্রবৃত্তি পর্যন্ত পড়েছে, স্তশীলা কথাটা! সে জানে, 'শীর্ঘওপুবা বা। চেহারার সঙ্গে নামটির কোথার বেশ চমৎকার সাদৃশ্য আছে বলে 8 যোগেনের | ভারী শিষ্টি করে নত চোখে মেয়েটি তাকিয়ে ছিল তার দি্ছে। সোনালি রোদে কালো চোখ ছুটি তার জলজল করে উঠেছিল লজ্জায় আর কৌতুহলে । কালিতে কলম ডুবিয়ে যোগেন তআচড় কাটতে লাগল এক্সারসাইজ. বুকের রুল কর] পাঁতীর ওপরে । হঠাৎ মনে হল, ভারী চমৎকার আজকের সকালটা । কাঁচা চামড়া, জুতোর কালি আর বাড়ীর পেছনের স্ত পাকার পচা গোবরের গন্ধকে ছাপিয়েও একট] মিষ্টি গন্ধ মাসছে | কিসের গন্ধ, ঠিক বোঝা যায়না । ঘাসেত্, না শিশির-ভেজা মাটিব, না! অচেন। একটা ফুল ফুটেছে কোনোখানে? ভাবী ভালো লাগতে লাগল । মাষ্টার যে গানগুলো শিখিয়েছে, তারা যেন কয়েক মুহুর্তের জন্যে এই নতুন অন্ুভূতিটিকে প্রসন্নমুখে পথ ছেড়ে দিলে। আরো খানিকক্ষণ কাগজে আচ কাটলে যোগেন, কলমট। কামড়ালো বার কয়েক,” আব্বাদন করে নিলে মনের এই লঘু চঞ্চলতাঁকে, সকালের এই মাদকতাঁকে, বাইরের এই বিল্ময়বিচিত্র অপরিচিত গন্ধটাকে। কান পেতে শুনল, মেয়েটি মাঝে মাঝে তার মায়ের সঙ্গে কথা কইছে । কী বলছে ঠ্িক' বোঝ। গেল না, কিন্তু কথার স্থুরটা বহুদূর থেকে ভেসেআসা একটা গানের বেশের মতো যোগেনের কানে বাজতে লাগল । তারপরেই লিখতে শুরু করলে যোগেন। খানিকক্ষণ লিখেই সে চকিত হয়ে উঠল। আরে, আরে-_-এ কী হচ্ছে! ৮৬ এ তো আলকাপের পাল! নয়, রসের গানও নয়। এ যে সম্পূণ নতুন জিনিস ! নিজের লেখাটার দিকে যোগেন তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ঃ তোমারে দেখিলাম হে সুন্দরি, মরি মরি ! কালো ছুটি নয়ন যেন ভ্রমর উড়ি যায়, ফুনের মতন বদন যেন সুগন্ধ বিলায়_ পলকে দ্রেখাইয়ে ও রূপ পরাণ লিলে হবি-_ মি মরি! রাজার কইন্যা কেশবতী, মেঘের মতন চুল, দেখাইয়া সকল হিয়া করিলা আকুল তোমার রূপে মন মজিল-_ কি করি, সুন্দরি ! একার রূপ? একার বন্দনা? যোগেন স্তব্ধ হরে ধসে রইল। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, সন্ধ্যা বেলাতেই যোগেনের য। কথাট। পাঁড়ল স্থরেনের কাছে । বড় বড় গ্রাসে স্থরেন মুখে মোটা মোটা লাল চালের ভাত তুলছিল কড়াইয়ে ডাল মেখে । মায়ের কথায় সে চোখ বিক্ফারিত করলে । --কী কহিল]? _কহিন্ধ তে! ভালোই । _-ভাঁলোই কহিল! ?--স্রেন এবার চোথ পাকালো দস্তরমতো £ ইটাক্‌ ভালে। কথা কহিছ তুমি! ইটা কেমন ভালো! কথা? _ক্যানে, ছেইল্যা খারাপ নাকি হামার? _ছেইল্যা তো তুমার লবাব পুন্ত,র, উয়াক খারাপ কহিবে, এমন মাথা আছে কার ঘাড়ত,? কিন্ত উসব ছাড়ি দাও এখন। ৮৭ _ক্যানে, ছাড়িমু ক্যানে ?-মার এবারে রাগ হল। সুরেন চড়া গলায় বললে, ক্যানে ছাড়িবা ন।? তুমার ছেইলা তুমি নি চিন! দিনরাত এইঠে ওইঠে ঘুরি বেড়াছে, ঘরের আধখান1 কামে ও নাগে না। উয়ার সাখ বিহা দিলে মেইয়াটার দুঃখের শেষ রৃহিবে না। _ হু, তোক্‌ কহিছে !--ম। রাগ করে বললে, ছোয়াপোয়া কবে সংসার লিয়ে বুঢার মতন বসিবা পারে? বিহার আগে তোমহাক্‌ হামি দেখি নাই? বাপ ষদ্দিন আছিল্‌, খাঁটি খাটি নইচ্ছে বুট, তুমিও তে; লবাবী করি ঘুবি বেড়াছ। তুমার বিহ! আটক থাকে নাই তো, উর বিহা ক্যানে থাকিবে? সত্যটা অনস্বীকাধ। আজকের বৈষয়িক এবং বিচক্ষণ স্ুরেন চিরদিনই এমন পাকা হিসেবী ছিল না, তারও পেছনে আছে ছেলেবেলার অনেক কুকীত্তির ইতিহাস। তাড়ি খেয়ে মাতাল হয়ে জড়িয়ে পড়েছিল একটা ধাহাজানির মামলায়, অনেক খেসারত দিনে বাপ তাকে উদ্ধার করে আনে সে যাত্রা। স্থরেন আজকে অবশ্য সাধু মহাত্মা সেজে বসেছে, কিন্তু মাকে বেশি ঘাটাতে গেলে এমন বনু ব্যাপার বেগিয়ে পড়বে যার তুলনায় স্থতরাং প্রসঙ্গটার মোড ঘুরিয়ে দিলে স্ুুরেন । _-একটার বিহা দিরা তো দেখিল।। ওই হারামজাদ| হারাণ-- মার মুখ বেদনার্ত ভয়ে উঠল £₹ উদার কখা ছাঠি দ্রেক্যানে বাপ। উটা ভামার ব্যাটা নহ, শয়তানের ছাও। বহুত পাপ কণিছিনু, তাই হামার প্যাটে আপি জুটিলে। তো! হামার যোগেন অমন হয় নাই-_তুমর। দেখিবেন, ওই ব্যাটাটাই হামার মান রাখিবে, তোদের নাম রাখিবে। স্থবেন মুখ বিকৃত কনর বললে, রাখি দাও, রাখি দাও । ওই যে কহ্‌ছে না? | হাঁথী ঘোড়৷ ভহ ন! জানি, ব্যাং কহে ক্যাতে পানি ! এ যোগেনের ম| বললে, তু থাম্‌ না কেনে? হামি দ্বেখিমু। -_ত দ্রেখিয়ো ৷ স্থশীলার বাপক্‌ কহ, যদি বিহ দিবা চাহে, তবে না? _তাই কৃহিমু। মেইফ্াটাক্‌ বড় ভালো নাগিছে হামার। _ভা'ঁ!-স্থরেন আর কথা বাড়ালে না, অতিকায় একটা ভাতের গ্রাস পুরে দিলে মুখের মধ্যে, গলা পর্যন্ত আটকে গেল। তার এসব বাজে কথা নিয়ে বেশি সমর নষ্ট করবার মতো উত্সাহ নেই । কিন্তু কথাট| চাপা রইল না। শেষ পর্যন্ত কানে এলে৷ ধোগেনেরও | প্রেম কাকে বলে, অন্ত নারীর রহন্ত সম্পর্কে যৌগেন এখনও যে একেবারে নাবালক তাঁও নর । শহরে থাকতেই এ ব্যাপারে প্রথম দীক্ষ।'লাঁভ হয়েছিল তার। একটা বখাটে সঙ্গী জুটিয়েছিল, সেই তাঁকে চাপা গলায় ফিল ফিন করে মাদকতা ভরা একটা মায়ালে!কের সন্ধান দিয়েছিল। প্রথম প্রথম আপত্তি করেছিল যোগেন । বলেছিল, ন1, ন।, হামার ডর নাগে। বন্ধু বলেছিল, পুরুষ মানুষ ন1 তুই? তারপর সেই অন্ধকার সন্ধ্য|। প্যাচ পেঁচে গলির ভেতরে সারি সারি খোলার বাড়ি। মঞফচম্বল সহরের মিটমিটে আলোয় কান। গলিটা যেন ভূতুড়ে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। প্রত্যেক বাড়ির দরজায় ছুটি একটি মেয়ে, অল্প অল্প আলোর তাঁদের ভালে। করে চেনা যায় না। খোপায় এক এক ছড়। করে ফুলের মাল! জড়িয়ে নিবেছে, বিডি টানছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে । একটু দুরে দেশী মদের দোকান, প্রচণ্ড হল। উঠছে সেখান থেকে । তাদেরই একজনের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিল দুজনে । জিজ্ঞাসা করেছিল, কত? মেরেটি অনালক্তভাঁবে বিড়ি ট।(নতে টানতে বলেছিল, কতক্ষণ ? _-এক ঘণ্ট। | --এক এক টাকা করে লাগবে দুজনের । --আট আন। করে হবে? ৮৯ বৈতালিক--৬।১ মেয়েটি কটু ভাষায় গাল দিয়ে বলেছিল, ওদিকের ওষ্ট বুড়ির কাছে"বাও, ছুআনার রা হয়ে যাবে। তারপর বারো আন করে দাম ঠিক হয়েছিল। বিয়ের ছুআনা, পান খাওয়ার এক আনা। মেরেটির হাত ধরে ভেতরে ঢুকেছিল সঙ্গী- পেছনে পেছনে যোগেন। ঘরের মেঝেতে ময়লা বরাজশধ্য!। ছোট ছোট তাকিয়।। ভারঘোনিরম, তখলা-ডুগি। কিন্তু একঘণ্টা সময়ের মেয়াদ মেয়েটি তাড়াতাড়িই শেষ কনে দিতে চেষ্টছিল। তাঁরপর-_ তারপরের কণ। মনে পড়লে এখনে যোগেন্র শরীর শিউরে ওঠে চো বন্ধ হয়ে আসে। নিলভ্ত কুশ/৬1গ চুড়ান্ত রূপ দ্রেখেহিল যেগেন, দেখেছি কত অব্লীলাব্রমে ঘরভর। আলোতেও মে বীভৎসতীর লীলা । যোগেন থাকতে পারেনি, ছুটে পালিরে এসেছিল, বাড়িতে ফিরে সেই রাত্রে কু থেকে ঘটি ঘটি জল তুলে স্নান করেছিল । আর সেই থেকেই মনটা অদ্ভুতভাংব বিমুখ আর বিভৃষ্ণ হয়ে গেছে নারী-দেহের সম্পর্কে_চোখের সামনে পে কদধতার ছবি এখনে। জল জ্বল করছে তার । গ্রামে যখন ফিরে এল তখন তার মনট| ও সম্পর্কে বিচিত্রভাবে স্থির আর নিরুদ্ধিগ্ন হয়ে গেছে । মেয়েদের দেখে, ভালো লাগে তাদের হাসি-গল্পের গুঞ্জন, কিন্তু তার অতিরিক্ত কিছুই সে কল্পনা করতে পাবে না। একটি মাত্র আঘাতেই একটা আশ্চধু নিস্পৃহৃত। সঞ্চারিত হয়েছে যোগেনের মবো,-- প্রথম যৌবনের সহজ মোহাচ্ছগ্্িতাট।্পা ্থরিত হয়েছে একটা শান্ত বিভৃষ্তান | বেশ ছিল এতদিন--কিন্তু এ কী ! মনের একটা একমুখী প্রবণতা গড়ে উঠেছিল, গড়ে উঠছিল জীবন সম্পর্কে একটা নিশ্চিন্ত দৃষ্টি। বংশী মাষ্টার। আপগ্তনের মতো জলঙ্গলে চোখ। গলার স্বরে মেঘমন্ত্র গন্ভীরতা। এ কাজ তুমিই করতে পারবে ধোগেন, এর ৯৩ গ্সিত্ধ একনাত্র তমিঃ নিতে পাবো | ভুমি কবি, তুমি শিল্পী, এর হার তুমি নিলে সার কেনেবে? গ| ছন ছম করে উঠেছিল, রক্ত চন চন করে উঠেছিল। কাঁজ করতে হবে আংনক বড়ো, অনেক কঠিন কাজ । জমিদারের অত্যাচার, মভাক্গনের শন্যায়। ব্রাক্ষণের। তাঁদের ছুঁতে চায় না, সুচির পূজৌয় পৌবোহিত্য করতে “জী হয় না তারা । গ্রতীকার চাই এর, প্রতিবিধান চাই ! কথা দিয়ে যা বল] যাঁয় ন। তাকে গান দিয়ে বলতে হবে; কাঁনের কাছে মা শুধু বার্থ আঘাত নিয়ে যায়, তাকে প্রতি! করতে হবে মনের ভেতরে-_সঞ্চারিত করে দিতে হবে বুকের বক্তধারায়। চাঁরণেরা! পথে পথে বীণা বাজিয়ে বেড়ায়, ডাঁক দেয় মাছষকে, জাগিয়ে ভোলে তাদের, হাঁতে এগিয়ে দেয় খোলা তলোয়ার। যোগেন কি হতে পারে না তাদের মতো ?. ন" শুধু তাদের মতোই নয়_- তাঁদের চাইতে বড়, ঢের বড়! | কথাগুলো বলেছে বংশী মাষ্টার । গলার স্বরে ষেন মেঘ ডাকে । চোখে যেন খর নিছ্যুৎ চমক দিয়ে যায়। বর্ষার সময় দুকুল ভরে ওঠা কাঞ্চন নদীর কুব্ধ গর্জদের মতো একটা উগ্র ভয়ঙ্কর কলধ্বনি কাঁনে এসে লাগে, একটা অঙ্গানা ভয়ে, একটা অনিশ্চিত সংশয়ে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে-স্তন্ধ মধ্যরাত্রে ওই শব্দট! শুনে শুনে চোখে ঘুম আসছে চায় না। কিছু একটা নতুন করতে যাচ্ছে যোগেন। পা! বাঁড়িয়েছে সংশয়াকীর্ণ ভয়ঙ্করের পথে । যাঁর ভবিধাৎ অজানা-যার পরিণতি ছুর্বোপ্য । লড়াই? কপুতে হবে-- লড়াই করবার উত্সাহ দিয়ে জাগিরে দিতে হবে এই চাষা- চামারদের। যারা সকলের পায়ের তলায়, সকলের পাফের জুতো যোগানো ছাঁড়া বাচবার আর কোনো অর্থই নেই যাদের কাছে। মাষ্টারের নির্দেশ মতো! এই গানটা লিখেছিল সে £ হায় হায় দেশের একি হাল, যাঁরা ক্ষেতে যোগায় ফসল, নগ তার ঘরত ই নাইরে চাল। মুখের গরাস লিলে কাড়ি, লিলে জমি, লিলে বাড়ি, বড লোকের জুলুমবাজী সহিমু আর কতকাল, হায়রে কহ, দেশের ইটা কেমন হাঁল। এই তে। সত্যিকারের গান, এই তো মানুষকে জাগিয়ে তোলার সুর। এই স্থরেই এবারে গান বীধবে যোৌগেন। আলকাপের গান নিয়ে আর সে শুধু তামাসা তৈরী করবে না, দেখিয়ে দেবে জীবনের সত্যিকারের স্বামাসাটা কোন্ধানে। তারা জানবে, তাঁরা বুঝবে, তার! বাচতে শিখবে এআর. আর শিখবে এর প্রতিবিধাঁন করতে ।: _-স্ুশীলা, স্থশীলা ! যোগেন উতৎকর্ণ হয়ে উঠল। ম। ডাকছে । সুশীলা। দিব্যি নাম গানের মতো মিষ্টি । কাঁন পেতেই রইল ষোগেন। ম! ডাকছে_ স্থশীলা ? মিষ্টি গলার সাভা! পাওয়া গেল, কী কইছেন? ৃ -উঠানে ধান দিদি চঢ়াইছি | উটাক একটু লাণ্ড দে মা, ধরি দিবা পারে নাগোছে। _যাছি হামি। বেশি কথা বলে, নন): স্থশীল॥ প্রারই চুপ করে থাকে । লক্ষা করেছে যোগেন, শান্ত অনাসস্ত তএতবসে থাকে দাওয়া, ষ্টি মেলে দিয়ে রাখে আকাশের দিকে । ঝি. চোখ, অপূর্ব একটা করুণতায়/ভরা। ওই তে। এতটুকু মেয়ে, তবু] চচলিতা, নেই, ছটফটানি নেই । কী একটা পেয়েছে মনের মধ্যে, পেয়েছে একটা স্থিরতা। 'সব. সময়েই ভাবে, কী ভাবে কে জানে। নতুন জায়গায়: এসে প্রঁড়বার দংকোচ:?' অপরিচিত মীহুষের ভেতরে, এসে একটা স্বাভাবিক মন্বস্তি?. হয়তো তাই, হয়তো তা নয়। যোগেন মাঝে মহ মাঝে ফেলেছে চোরা-চাহনি, মাঝে থাঝে ইচ্ছে করেছে গর পিঠ-ভাঁঙ। রাশি রাশি কালো চুল একবার হাতে তুলে নেয়, ধু মুখখান। তুলে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে বোবা ভাবনায় আচ্ছন্ন ছুটি কালো চোখের অতলে । মেয়েদের একটা রূপ সে দেখেছে সে সেই মহকুমা সহবে | সেই প্যাচপেচে বিশ্রী গলিতে, সেই লগ্চনের আলোয় উদ্ভাসিত খোলার ঘরের ময়লা বিছ্বানায়। কিন্তু এতো তা নয়। এ নতুন-_-এ নিচিত্র। সেদিন বুকের ভেতবরট! শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল, আজ বুকের ভেতরে কী একট] টেউয়ের মতো৷ দোলা ২খয়ে খেয়ে উঠছে । সেদিন দেহের ভেতরে, দুঃস্বপ্ন দেখেছিল, আজ সেই দেহই রূপ পরেছে অপূর্ব একটা ইন্দ্রজালের নতো। সশীলা- সুশীল! জমিদারের অত্যাচার সত্য, মহিন্দরের অপমানটা সত্য, বংশী মাষ্টারের কথাগুলো নিভূলি সত্য । কিন্তু এও তো] সত্য । নিজের ভেতরে এই' দোলাটাও তো! আজ কোনো দ্রিক থেকেই এক বিন্দু মিথ্যে নয় যোগেনের কাছে। কিছুক্ষণের জন্যে যেন দে আত্মবিস্বৃত হয়ে গেল, সুর দিয়ে যেতে লাগল নিজের লেখ! সেই গানটিতেই £ বাজার কইন্তা কেশবতী, মেঘের মতন চুল দেখাইয়া সকল পরাণ করিল! আকুল “ তোমার বূপত, মন মজিলে-কি করি, হে স্বন্দরি! হারে, ও যোঁগেন। ক্বপ্র কেটে. গেল। বাজখাই কট্‌কিটে.. গালা । স্ুবেন ডাকছে। ঘোগেনের অত্যন্ত বিরক্তি বোধ হল-আঁর ডাঁক্বার সময় পেল না নাকি নরেন? হরে যোগেন, মইল্পু নাকি? নিশ্চয় তাঁড়ি' খেয়েছে, গলীর স্বরে বোঝ! যায়, বেশ চড়া হয়ে আছে সথরেনের মেজাজ । এখন সাড়া না দিলে তারস্বরে চীৎকার শুরু করে দেবে। 8৩ বলম ফেলে যোগেন উঠে এল £ কী, কনো কী? _-কী আর কৃহিমু, হামার মুওড কহোছি।-স্থধেন মুখভ্দি কপলে 2 খুমের ব্যাঘাত, ভৈল্‌ নাঁকি লবাবের ছোয়ার ? খালি খালি ক্যান্‌ গলি দিবা নাগিলে ? _নাগিমু না? হামি খাটি খাটি সাড়া হই গেন, হামার ভাই আলকাপ অলা হই টেবৃঠি নাগাই বাগাই বেড়াছে। হামি আর পারিম্‌ না সাঁফ কহি দিন _ হাঁ! যোগেন বিতৃষ্ণ স্ররে বললে, তো কী করিনা ভেবে, সিটাই আগে সাফ করি কহ না? _ তাইতো কহিনা চাঙোছি। আলকাঁপঅলাক্‌ সংসারের কামও তো করিবা নাগে। একবার আজই চামার্ভাট। যিনা হেবে তোকে । _ক্যানে, চামারহাট। ক্যানে ? ৰ _-ওইঠে আদ নায়েব আসোছে | উষ্কার সাথ, দেখা করিবা নাগিবে। যোগেনের সমস্ত মন ভবে গেল -অপ্রসন্গতার £ নায়েবের সাথ দেখ। করি হাঁমি কী কামট1 করিমু? ্‌ -. --বাঁঃ, শালা মহিন্দরের সাথ, মাম্লা ভছে না? নায়েবের সাথ কথা কহিবা হেবে। বিরক্তি এবং ক্রোধে, আর সেই সঙ্গে সেদ্দিনকাঁর সেই অপমানের স্থৃতিতে সর্বাঙ্গ যেন শক্ত হয়ে উঠল যোগেনের £ হামি নি পারুম | স্থবেন চেচিয়ে বললে, ক্যানে ? _ ক্যানে ফের কী? সব শালাই সমান হচ্ছে, যেমন মহিন্দর, তেমন নায়েব। কাউক ত্যাল্‌ মাখাই কোনে! কাঁম হেবে না। ওই ছুই শালার মাথায় ডাং মা।র মগজ ফাক করি দিবা নাগে। নি _ হায়রে বাপ, ইট। কী কহিলুরে? বিন্ময় বিস্ফারিত চোখে স্থরেন তাকিয়ে বইল £ নায়েবক ডাং মারিবা চাহোছিস্‌, খুব তো বুকের পাট! হছে তোর। ৯৪ -সিট। হছে__ আর অপেক্ষা না করে যোগেন চলে গেল সামনে থেকে । _-পারবু না তুই? _কহিছিই তো-_ যোগেন অনৃশ্ঠ হয়ে গেল, তাড়ি খাওয়া গলায় সমানে চীৎকার চালিয়ে চলল স্থরেন। আর সেইদি'ঠ সব ী ত উল্লেখযে।গ্য ঘটনা ঘটল যোগেনের জীবনে । | | সবে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এই সময় বাড়ি ফিরল যোগেন। এটা ব্যতিক্রম--এমন সাধারণত হয় ন। এদিক গুাঁদিক ঘুরে ফিরতে একটু বেশি ন।তই হর তার। কিন্তু কী যেন হয়েছে আজ-_মনট। থেন ত্রমাগত বাড়ির দিকে ঘুরে ঘুরে আসছে । আজ বাড়ি শুধু ধাড়িহ নয়, একটা নতুন রূপ খুলেছে তার_ একট] নতুন বৈশিষ্ট বিকসিত হয়ে উঠেছে। স্থবেনের গ[লাগাপি, কাচা চাখড়ার গন্গ, বাড়িব পেছনে গোবরের সপ-পব মিলিয়ে এর ঘে একটা অঙ্রীতিকর রূপ ছিল, আজ যেন কী একটা 'অপরূপ মন্ত্রে ত। সম্পূর্ণ বদলে গেছে। কেমন মোহান্ছন্নতা ধঝেছে যোগেনের | মৃদু জরের মতো আড় শিথিল অপপতা, বুকের ভেতরে অহেতুক আলোড়ন। লঘু পায়ে কে বেন আসছে, কে থেন সতর্ক পা ফেলে হেঁটে হেঁটে বেড়াচ্ছে । সকালের রোদে কিশোরীর একথানা কচি কোমল মুখ, সুরের আলোয় বলমলে ছুটি চোখে বি্ময়ের অতলতা | ্‌ সুরেন বাড়িতে নেই, যোগেনকে শ্রাণপণে গালিগ।লাজ করে চলে গেছে টামারহাটিতে, নায়েবের সঙ্গে দেখা করাটা একান্তই দরকার। গেছে বিকেলের দিকেই, তার মানে ফিরতে অনেক বাত হবে। ভালোই হুল, যোগেনকে দেখলেই চ্যাঁচাতে শুরু করত । বাড়িতে পা দিযে ডাকল, মা? একটা প্রদীপ হাতে করে গোরালের দিক থেকে আসছিল হ্ুশীলা। যোগেনের ডাকে সে থমকে দাড়িয়ে গেল। ভীরুম্বরে বললে, মাউই বাড়িত, নাই। বুকের মধ্যে ঘে।গেনের ধক্‌ রে উঠল চকিতের মধ্যে । -বাড়িত নাই? কুন্ঠে গেইছে? হাতে প্রদীপটা ধরে নত মস্তকে দাড়িয়ে ছিল সুশীল] | প্রদীপের উধ্ব মুখী শিখা থেকে তাঁর মুখে শান্ত নরম আলো ছড়িরে পড়েছে, ঘনপক্ষম গভীর চোখ দুটি জল জল করে উঠেছে কমনীয় সৌন্দ্ধে। যোগেনের গলায় যেন আপনা থেকেই গান ভেসে আনতে চাইল £ কালো ছুটি নয়ন যেন ভ্রমর উড়ি যাঁ-_- বুক কাঁপতে লাগল যোগেনের, গলা কাপতে লাগল । _কুন্ঠে গেইছে মা? _হাঁজারুর বাডিত | উর্ার ধোটার ছাঁওয়াল হেবে, ব্যথা উঠিছে, তাই ডাকি পিগেইল্‌। সংকুচিত মৃছু স্বরে সুশীলা জবাব দিলে । এত আন্তে- ষেন বাতাসের সঙ্গে তার কথা ভেদে এল, অত্যান্ত উত্কর্ণ এবং সঙ্জাগ ন৷ থাকলে ত। শুনতে পাওয়। যায় না। প্কাগ্েন ঘামতে লাগল। একদিন যে নারীর সান্নিধ্য একটা কুৎসিত হুঃক্বপ্নের মতে| ভাবনার নেপথ্যে সঞ্চারিত ভয়ে ছিল, তাই ধরল একটা অপরূপ যাছুমন্থ্ের কুহক। রক্তে রক্তে জোয়ারের জলের মতো! কী একটা উচ্ছৃসিত আবেগে ভেঙে ভেঙে পড়তে লাগল তার। শিল্পীর মনের ভিতরে ফুঁসে উঠল অন্ধ আবেগের আকুতি, নিষেধ মানতে চাইল না, বাঁধাও না। . আত্মবিস্বত যোগেন এগিয়ে এল । প্রায় নিঃশব্দ আর গভীর অপূর্ব কোমল গলায় ডাকল, সুশীলা ? সুশীল। মূতির মতো দাড়িয়ে রইল, সাড়া দিলেন । যোগেন আরো এগিয়ে এল £ জুশীলা ?' এবারে একবার চোখ তুলেই স্থশীলা আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিলে। কিন্ত ন্৬. সে দৃষ্টির চকিত কটাক্ষ যেন মুহূর্তে চকিত করে দিলে ধোগেনকে ॥ মেয়েটিকে সেষত ছোট ভেবেছিল তা নয় । কিশোরীর মন অনেক আগেই জেগেছে, অনেক আগেই সে বুঝতে পেরেছে পুরুষের ওই ডাকের পেছনে কী লুকিয়ে আছে, আছে কিসের একট নিতু স্থনিশ্ঠরতা । যোগেন লক্ষ্য করল, একটু সরু হাদির রেখা ও ষেন স্থশীলার অধরে মুহুর্তের জন্যে খেলা করে গেল। আর সত্যিই তো, যোগেন লক্ষ্য করবে না! বলেই কি থেমে খাকবে পৃথিবীর মানুষ, খুমিয়ে থাকবে তাঁর মন, আচ্ছন্ন অচেতন হয়ে থাকৰে তাঁর ব্রঃসন্ষির বাসন্্বী-চেতন!? চোদ্দ-পুনেরো বছরের স্শীলা কি তার আশেপাশে দেখেনি যৌবনের উদ্দাম প্রণদলীলাকে, তার বিবাহিত। সথীদের কাছে শোনেনি পুরুষের সম্পর্কে নানা বিন্মঘ্কর অভিজ্ঞতার কথা? কতবার তো চোবাদৃষ্টির নামনে স্বামী-স্ত্রীর ছুটি একটি আবিষ্ট মুহুর্তের অপরূপ ছবি ধরা পড়ে গেছে। তা ছাড়া তাঁদের ছোট লোকের ঘর। মানুষের জিভ আলগা, বেনো আর পচাইয়ের “শশা একটু বেশি চড়ে উঠলে আচার-আচরণের "মাত্র। সব সময়ে যে সীমা মেনে চলে তাও নয়। কতবার নিজের অজ্ঞাতেই রক্ত ছলছলিয়ে উঠেছে স্বশীলার-বঝা1 ঝা করে উঠেছে কান, বুকের ভেতরে হ্ৃংপিগড করেছে মাতামাতি | আর যোগেন। সুন্দর, সুকগ%। লিজের বোনের মুখে কতবাব শুনেছে তার কথা৷ শুনেছে তাদের জাতের তডেতরে এমন ছেলে আরু হয় না। এখানে এসে দেখেছে তকে, লক্ষা করেছে তার মুগ্ধ হয়ে যাওয়া আশ্চর্য দৃষ্টি। তারপর শুনেছে যোগেনের মার মুখে বিয়ের সেই প্রস্তাবট।। যোগেনকেও দেখল--কল্পনার মানুষটর চাইতেও সুন্দর | ত্বাই মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিচয়ের ভেতর দিয়েও যেন কতগুলে! বহর এক সঙ্গে আবতিত হয়ে গেছে স্বশীলার--টতৈতরী হয়ে গেছে মন-_কে জানে প্রতীক্ষাও করে আছে কিন! । পা কাপতে লাগল যোগেনের- আরো কাছে এগিয়ে এল মে।. নেশা ধরেছে। হঠাংভালো-লাগার অপরূপ আবেগে শিল্পীর বুকে জেগেছে ৯৭ বৈতালিক--৭ চিরকালের জীবন-শিল্প। এগিয়ে চলল যোগেন | স্ুশীলার মুখে প্রদীপের আলো পড়ে একট! অপরূপ রঙে বাড়িয়ে তুলেছে তাকে । কয়েকটা মুহুতের মধ্যে ঘনীভূত হয়ে গেছে অসংখ্য দণ্ড, প্রহর, দিন, মাস, বংসর। যোগেন এগিয়ে এল । শীতের বাতাসে ঠাণ্ডা অথচ কোমল-কান্ত স্থশীলার একখাঁন। হাত টেনে নিলে মুঠৌর মধ্যে । ফিস্‌ ফিস করে বললে, স্ুুশীলা, সুশীল। ? _উ? _-তুমি বড় স্থন্দোর_ভারী হুন্দোর । _যাঁও কে বা আসি পড়িবে ! __না, কেহ আসিবে না। স্থশীল। তুমাক্‌ হামি ভালোবাসি । পুরোনো। কথা, পুরোনো প্রেম পুরোনো প্রকাশ, পুরোনো আবেগ । তারপর তেখনি পুরোনে। ধরণেই দ্প করে নিভে গেল প্রদীপট]। উঠোনের ঠাণ্ডা অন্ধকারে শুধু গরম রক্তের চঞ্চলতা বুকে বুকে কথা কইতে লাগল__যতঞ্ষণ না দরজার বাইরে শোনা গেল যোগেনের মার কথার শব্দ । নচ সাত ংশী মাষ্টার বুঝতে পারছিলনা' ব্যাপারটা ঠিক হল কিন]। চট্টরাজের ভঙ্গিটা ভালো নয়। চোখের দৃষ্টি সন্দেহজনক, মুখের কথায় বেশ পরিষ্কার একট হুসিয়ারীর ইঙ্গিত. আছে। তা৷ ছাড়া পরিচয়ের খ্যাপারে কেমন সন্দেহ করেছে মনে হয়, হঠাৎ চুপ করে গেল, আর কথা বাড়াল না। বেশ বোঝ যাচ্ছে, চামারের সরম্বতী পূজো করার উদ্দেশ্টটা ভালো! লাগেনি । ভালো ন! লাগার কথাঁও বটে। শাস্ত্রে আছে দ্েব্তাঁর৷ সব ব্রাহ্গণ, আর দেবীরা হলেন ব্রা্গণী | শুধু ব্রাহ্মণী নন, ছোয়াছ'য়ির ব্যাপারে তাঁর। এত বেশি সচেতন যে, অল্প একটুখানি ক্রটিব জন্যে অভিসম্পাত দিয়ে ভক্তকে নিবংশ করতে নাদের বিবেকে বাধে না । আর সরম্বতীর তো কথাই নেই__-তিনি একেবারে নিষ্পাপ বিশুদ্ধ জ্ঞানম্বরূপা,_-আর সে জ্ঞানের একচেটিয়া অধিকার ত্রান্ধণের | শূদ্র যদি একবার সে পথে পা বাড়িয়েছে তো সঙ্গে সঙ্গে রাম-রাজ্যে অশান্তি দেখ] দিয়েছে, দেখা দ্রিয়েছে মাঁরী-মড়ক-অন্নাভাব, বেদাধ্যায়ী ব্রাহ্মণের অকালে পুত্রনাশ হয়েছে । ফলে ধর্মপ্রাণ বাজা তৎক্ষণাৎ খোলা তলোয়ার হাতে এগিয়ে এসেছেন আর শুদ্রের মুণ্ডটি পত্রপাঠ এবং একান্তই বিনা নোটিশে খচাং করে নামিয়ে দিয়েছেন । বিদ্যার একচেটে মালিক ব্রাঙ্গণের গড়া শাস্ত্র চড়া গলীয় ঘোষণা! করেছে £ শূদ্র যদি বেদপাঠ করে, তবে তাহার জিব! চছদন করিবে, অতঃপর তাহার গাত্রচর্ম উৎপাটন করিয়া তাহাকে ঘ্বতে ভর্জন ৪৪ করিবে, তৎপর খণ্ড খণ্ড করিয়া নদী-জলে নিক্ষেপ করিবে এবং সেটা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে । কিন্তু কালট৷ কলি। দেশে শ্রেচ্ছ রাজা । তার না আছে ধর্মজ্ঞান, না আচে ব্রাঙ্গণে ভক্তি । হাঁড়ির ছেলে হাকিম হয়ে ত্রাঙ্ষণকে জেলে দিচ্ছে-__আশ্চর্স, তব এখনো মভাপ্রলয় হচ্ছে না, আকাশে দ্বাদশ সূর্ধঘ উদ্দিত হয়ে ভম্মীভত কনে দিচ্ছে না সংসাঁরকে । কুষ্ণবর্ণ কন্কি অবতার অগ্নিবর্ণ তরবারি হাতে গ্রেচ্ড আল কুকুরগুলোৌকে (বংশী আশ্চর্য হয়ে ভাবে কৃকুরের ওপরে হঠাৎ এ অহেতক অক্ুপ! কেন ।) পটাপট সাবা করে দিচ্ছেন না! তাই'দাঁয়ে পডে অনেক কিছুই হজম করে যেতে ভচ্ছে | চাঁটযো দাদা, বাঁড ফ্যে মামা, লাভিডী খুড়ো আর ভাচুন্ডী পিসের হাতের হু'কৌতে অভিমানে তামাক পুড়ে যাচ্ছে, চর্বাসার বংশধারের' কাল-মাহাত্মো ঢেশডা সাপের খোলস হয়ে বাঙের লাথি খাচ্ছে-নইলে চাঁমারদের গামে৭ কিনা প্রাইমারী ইস্কুল এবং এখনো তাতে বজ পড়েনি । চট্টরাজের উাদ্বলিত টিকির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এই বেদনাবোধটা ভব করছে বংশী পরামাণিক। আর সেই সঙ্গে এও বুঝতে পেরেছে যে, চটররাজ শুধু টেশড়া সাপের খেলসই নন, সাপত্ব তীর কিছু কিছু বিদ্যমান আছে এখনো । ছোবল তিনি মারতে পারেন এবং শেষ পর্ধস্ত মারবেন কিন, এখনো সেটাকে সঠিক বুঝতে পারা যাচ্ছে না। তবে এটা স্পষ্ট যে, স্ন্বতী পুজোন প্রস্তাবটা তীর পছন্দ হয়নি এবং ধর্মনিষ্ঠ জমিদার যে আনছে! প্রবল প্রতাঁপান্বিত, এট] জাঁনাতেও বিন্দুমাত্র ভূল করেননি তিনি । কিন্ত সব মিলিয়ে কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? উচিত হচ্ছে কি আকাশে ঘর্ষের এই নিবিড় নিকষকাঁলো ঝোড়ো মেঘকে দনিয়ে তোলা? সরস্বতী পুজো । অনধিকারী শুপ্রের অনধিকারী বিদ্যায়তনে বিদ্যার অরিষ্ঠাত্রীকে : আধাহন জানানো একটা ছোট গণ্তির ভেতরে মন্ত বড় উল্লেখযোগ্য ব্যাপার বটে, কিন্তু এর চাইতে বড় কি কিছু করবার নেই ? আছেই তো। সমস্ত দেশ সেই বড় কাজের মুখ চেয়ে আছে-গ্রতীক্গ ২ করে আছে ভারি জন্ত । শুধু আকাশে ঘনিয়ে তুলবে না অকাল বৈশাখীর নীচ, একফ'লি ঝড় টেনে আনবে লা মাত্র ছোট একখানি আ্রনপঙদ্ ওপতে। »মন্ত পৃথিবীর মাটিকে তা নাঢ়া দেবে, চিন পরিয়ে দেলে আকাশে, তিফানের মাতলামি জাগাবে ক্ষ্যাপ! সমুদ্রের বুকে । মাটির তলায় ঘুমস্থ মেই গণ-বাস্থকীকে ভাগিয়ে তোলাই তো আঙ্গকের কাজ মহাতল-রসাতল-সপ্ধতলের অতলে যেখানে মহানাগের সহম্ন ফণায় একগাছি মালার মত বিধৃত হয়ে আছে পৃথিবীর ভারকেন্ত্র, সেই অতলে, শনযাত্তের সকলের নীচেন লী য়, সেইখতনই পাক্কা! দিতে তবে সেই কেন্দে। এই ব্রতই তো ছিল । কিন্তু শভুল মজ্মদারের অন্ুবিধেটা। আছিকে বুঝতে পেরেছে বংশী পরামাণিক। £ কীঙ্গ করবার জন্যে যে মন চাই, যে প্রস্থতি চাই, যে ভাষা মায়ত্ত করা চাই -. সে ভাষা জ!না নেই তার, সে প্রস্ততি নেই, (স মন তো নইই। ভদ্রতা আর সণঙ্কার কি দিচ্ছে গতি মুহূর্তে, মাথা তুলছে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সহঞ্জ পথ চলার আরো মহজ সদাধান ! গেট] কয়েক রিভলভার, কিছু বোমা, কিছু আগুন ঝরানো সাহিত্য আর হাসিমুখে মণ্তে পারার শক্নান গৌরব, ফাসির দড়িকে মণিহারের মত কণ্ঠে জড়িয়ে নেওয়ার নেশাগ্রস্ত প্রলোভন । এর সীম অতুল মজুমদার অতিক্রম করতে পারেনি ঘাসের শিষে একফৌট] বাত্রিশেষের শিশিরের মত সে হারিয়ে গেছে সত্যি, মুছেও গেছে-_ 'কন্ত অতুল মজুমদারের আত্মা তো হারায়নি। 'বাঁসাংসি জীর্ণানি_ এই প্ববাক্য স্মরণে রেখে সে দেহ থেকে দেহাম্তর ঘটিয়েছে। কিন্তু অজরার মাত্স। যাবে কোথায়! চার বছরু ধরে নানাভাবে সে আত্মা দেখেছে এক নতুন দেশকে -জ।তির এক নতুন প্রাণকেন্দ্রকে ৷ বুঝেছে স্বাধীনতার এক নতুন মাশ্চর্দ অর্থ, অনুভব করেছে মুক্তির একট] অচিস্ত্যপূর্ব তাঁৎপর্যকে ! আর 4৪ জেনেছে-পথ এত সৌজ। নয়। মুরতে পারার চাইতে বাচবার_ এব" বুটবার কাজ অনেক বেশি কঠিন, অনেক বেশি দরকারী । পিপল শসীপিপাপিসিউ ২৯১ তবু জানলেই তো] হয় না। জ্ঞানাকে কাঁজে লাগলো চাই । আর সে কাজ কঠিনতর তার পঙ্গে। অতুল মজুমদারের প্রত্বিনিধি বংশী পরামাণিক মিশেছে চীফী-চামারদের সঙ্গে, তীদের সুখ-দুঃখের ভার নিয়ে দিতে চেয়েছে নিজের মন্ত্র কিন্তু বুথা হয়ে গেছে । এ হয় না, এ হবার নয়। আজ যেমন বুঝতে পেরেছে, এর জন্যে আসবে নতৃন মানুষ, নতুন কর্মীর দল। এ তারাই পারবে, অতুল মজমদার কিৎব! বংশী পরামাণিক নয়। তাই অন্বস্তি আর ম্স্থিরতা। মধো মসো মনটা যেন অসহা একট' মন্বণায় বিকল হয়ে ওঠে । পথ পেয়েছে কিন্ধ এগোতে পারছে না পাখেয নেই । থেমে দীড়িয়ে নিজের অকর্মণাতার জনে নিজের ভাঁত কামডাতে ইচ্ছে করছে । আর এই লকিয়ে গাকা, একটা জানোগারের মত শিকারীর প্রথর দৃষ্টি থেকে নিজেকে সন্তর্পণে বীচিয়ে চলা_-এ ষেন গ্ররুভার বলে মানে হয় এখন। দুবছর আগেই সকলের সঙ্গে যোগাযোগটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ছুঃদহ একাকিত্তে যেন মরুভূমির ভেতরে পথ চলবার মত বোধ হক্ষে মাঁজকাল। তাই আস্মহততা। করতে ইচ্ছে করে, নইলে মনে হয় লোভার গরাদের আড়ালে পাথরের পাঁচিলের যে ঠাণ্ডা অন্ধকার সেখানে আশ্রয় নেওয়াই ভালে । তারপরেই মনে হয় শান্তিকে। আজ যেখানেই থাকুক শান্তি, প্রতিশ্রতি তো ভুললে চলবে না । একমাত্র অতটুকু মেয়েটাই সেদিন প্রতিদ্বন্দ্িতা করেছে তার, চ্যালেঞ্জ দিয়েছে তাকে । যতটুকু হোক, যে ভাবেই হোক, সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে হবে। এই অতুল মজুমদারের শেষ কথা। বড় কাজ করতে না পারো, অন্তত ছোটর ভেতরেও যতটা পারা যায় তাই করো। নিজের কাছে নিজেরই ভার মান অসম্ভব। তাই__ তাই এই ভালো। ূ বংশী একবার অন্যমনস্কভাবে তাকাল নিজের সবজী বাগানটার দিকে । কেমন থচ. খচ, করে উঠল, কোথায় যেন লাগল কাটার খোঁচা! শীতের ১৩৭ ধ্সলে এইটুকু বাগানটা কী ট৯মংকার অধ্য সাঙয়েছে। মুলো, কপি টম্যাটো। উজ্জল, মন্থণ, সতেজ । দেশকে ভালোবেসেছে প্রাণ দিয়ে, দেশের মাটি দিয়েছে প্রতিদান-কখামাত্র কূপণতা করেনি তো। আর এই তো_এই তো সত্য । বশীর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। হ্ব্যা-সে তার পথ পেয়েছে বইকি। দেশ জুড়ে ফসল ফলাতে নাই ব| পারল সে, কিন্ত ক্ষতি কী যদি এইটুকু জমিতে .শ এমনি প্রাশবন্ত শশ্তকে জাগিয়ে দিতে পারে। সামান্ত সরম্বতী পূজো--কিন্তু তার ডেতরে অসামান্ততার সম্ভাবনাও যে প্রচ্ছন্ন আছে! শেষট] নাই বা দেখে যেতে পারল, কিন্তু শুরুর যে মুলা তাকে কে অস্বীকার করবে? শীতের স্জী-_মন্থণ, ঘন শ্যামল, প্রাণে আৰ স্বাস্থ্যে সমুদ্ভাসিত। দেশের মাটি তাঁকে ভালোবেসেছে। কেমন কণ্ঠ হতে লাগল । মায়া পড়ে গেছে, মনে হচ্ছে এ হলেও নেহা মন্দ ছিল না। এই নিতান্ত অন্লেখযোগা পাড়ার গোলের হট্টগোলের বাইবে ভাুমতীর কুহক-লাগ| আত্মবিস্থৃত চামারদের নগণ্য জনপদ | ক্ষতি কি ছিল এইখানে ভুলে থাকলে, দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি জুড়িয়ে নিলে এখানকার ঘন পাতার ছায়। চির পুরোণো অতিকার বংশী- বটের ছায়ায়! সরস্বতী পৃজোকে কেন্দ্র করে যে তুফান ওঠবার আশঙ্ক1, তাতে এই নোঙর থাকবে কিনা সন্দেহ। ত ছাড়া আরো একটু কথা আছে। মহিন্দর "হঠাৎ নতুন দাঁপাগ। সাহেবের কথাটাই বা অমন করে জিজ্ঞাসা করে বসল কেন? মায়া লাগছে নোৌউব ছি ৬তে, কষ্ট হচ্ছে এই মাটির ভালবাসাকে পেছনে ফেলে যেতে । কিন্তু উপায় নেই |. শান্তির সেই শাম্লা মুখখানা দুষ্টির সামনে ভাসছে। প্রতিজ্ঞ ভুললে চলবে না। আর--আর এই সক্জী ক্ষেতের অন্য একট! দ্িকও তো প্রত্যক্ষ হয়ে গেছে তার কাছে । ছোট দিয়ে শুরু করতে হবে, সারা যদি অনেক দূরে থাকে তো খাক না। যাঁরা আসবার তারা পেছনে আসবে, তার শুধু বীজ ছড়িয়ে যাওয়ার পাল]। ১০৩ তাই বড় ভালো লেগেছে যোগেনকে 1 বংশী দু হামল £ চার বছর পরে অতুল মজুমদারের প্রথম রিক্রুট। রিভলভারের পখে নয়, রোমাঞ্চ জাগানো রক্ত গরমকরা বই পড়িয়ে ক্ষিপ্ত করে তুলে নয়! মাটির মানুষের খাটির ভাষা অতুল মজুমপার জানত না, যোগেন জানে; তাদের প্রত্যন্দ বেদনার সঙ্গে অতুল মজুমদারের পরিচয় নেই, যোগেনের আছে তাদের প্রতিদিনের অপমান আর তুক্ছতার আঘাত অতুল মজুমদারের কাছে হয়তে! অনেকটাই দুর্বোধ কিন্তু যেগেনের কাছে তা অতিরিক্ত সুস্পষ্ট । সবই ছিল, কিন্তু বারুদে আগুন ধরিয়ে দেবার কেউ ছিল না। সেই কাজটুকুই করেছে বংশী, এবার আগুন নিজের তাগিদেই নিজের কাজ করে যাবে | _-মাষ্টার কি ফের বসি বসি ঘুমাব৷ নাগিলে? মহিন্দর | বংশী হাঁদল £ না খুমোইনি তা নি ঘুমাও । তোমার সাথে ফের কাজের কখ। আছে। বশী তেমনি হেসে মহিন্দরের কথার অন্তকপন করে বললে, তো কও । মহিন্দর গম্ভীর স্বরে বললে, ইটা হাসিবা্ধ মতো কথা নহো মাষ্টার, মন দিয়া শুনিব! হেবে, বুঝিবা হেবে, ভাবিবা নাগিবে। বংশী এবার ভালো করে তাকালে। মহিন্দরের দিকে | না, ঠিক অন্ুকূণ আবহাওয়াটা। একটা কিছুর ভারে মহিন্দরের মুখে খানিকটা থমথমে গান্ভীর্ধ জমে উঠেছে । এখন, অন্তত এই মুহর্তে মে নিছক মহিন্দর নয়। শ্রীমহিন্দর রুইদাস-_ গ্রামের গণ)মান্য ব্যক্তি | এখন যেন হাতে কলম পেলেই নিবটাকে ছুফাক করে একথান। রেপ কাগছে সে সই করে দেবে। তার মুখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তাকে লাখি মারলে নায়েব মশাই পযস্থ পার পান না, নগদ নগদ একটি টাকা বথশিদ দিয়ে তবে তাকে মানীর মান রক্ষা করতে হয়। মহিন্দরের ওই গম্ভীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকালে কেমন স্ুড়ন্তরডি ১৩৪ লাগে বশী মাষ্টারের। কাঁজট উচিত নয় ত। জানে, তবু হাপি চাপতে পারে না। মহিন্দর উপদেশ দিতে এসেছে । অত্যন্ত গন্ভতীর আর বিচক্ষণ চেহারা করে বলবে, বুঝিলা হে মাঞ্গার, তুমাদের ছোয়া ছেইল্যার উসব চালাকি দিরা কাম হেবে ন|- স্থতরাং বংশীকে ম্মিতমুখে টুপ করে থাকতে দেখে মহিন্দর উত্তেজন। বোধ করল । _-অমন হাঁসিহ ক্যানে মাষ্টার? __হাসব না? -ন। তে|। _তবে কি কাদতে হবে? _ল্যাও--ইটা কী কহিলে !_মহিন্দার অত্যন্ত বিরক্ত করে তুলল মুখের চেহার| £ ঝুটমুট কাদিবার কী হৈল্‌ হে তুমার? কাদিবে ক্যানে ? মহিন্দর চটলে চটাতে ভালে| লাগে । বংশী বললে, তবে কী করব? _হাঁমার কথাট। শুনিবে কি ন] শুনিবে সিটাই কহ। _-কেন শুনব না? তুমিই তে। সে কথা বলছ না, খালি এট। ওটা বকছ। য। ব্লনার স্পষ্ট করেই বলোন। বাপু। মহিন্দর বললে, হু'_তারপর দাওয়ার একপাশে বসে পড়ল । _-কী হল? মহিন্দর কেমন বেদনার্ত চোখ তুলে মাষ্টারের দিকে তাকালো £ হেবে না। _-কী হেবে না? আহত স্বরে মহিন্দর বললে, আমি তো! আগতে তুমাক্‌ কহিছিনু। তুমি ঢের নিখিছ, কিন্তু বুঢ়া মাইন্যের কখাট। মাইন্লেন না । এখন ফের তো অপমান হৈ গেল্‌ ! মানীলোক মহিন্দরের এমন একট অপমান চট কবে হয়ে গেল কী করে ১০৫ বৈতালিক--১ ঠিক বুঝতে পারল নাবংশী। অন্থমান যা করেছে সেটাকে নিশ্চিত কনে নেবার জন্যই সে নির্বাক চোখে মহিন্দরের দকে তাকিয়ে রইল। _ বুঝিল! মাষ্টার, দিবে না। -কী দেবে না ?--মাষ্টারের কণ্ঠে এবার অশৈষ প্রকাশ পেল। _-পৃজ। কনিবা। -- 8, বুঝতে পেরেছি-বংশী নিজের মনেই মাখা নাড়ল একবার । কথাট। আকনম্মিক তে। নয়ই, বরং এটা শোননার ওগ্ভঠেই যেন ভার মন নিভৃতে এতক্ষণ আশ করে বসেছিল। বংশী বললে, বাধ! দিচ্ছে কে! নায়েব মখাই ? --তে। কে 1-মভিন্দর ক্ষুদ্ধ স্বরে বললে, উ খাল। শয়তানের হাড়। তুমি তো খুব ভালো বলছিলে তথন। _কৃহিহিন্ট তো । _মহিন্দ। অকপট শ্বীকাবোক্তি ক্লে এবারে £ সাও করি কি আর কাঁহহি নাকি? শয়ভানকে উচ। পিগ দিবা নাগে ন।? এখন তো দেখিবা পা।হ শয়তানকে পিঢ়। দিয়া ব কী হেবেউ শাল। শীলাই থাকে চিরকাল। কথাট। নতুন কমের লাগল। ' পায়েবের প্রতি মহিন্দন্রের ভক্তিট। বিখ্যাত জিনিস, তার রাজপ্রীতি একবারে শাস্ীর পথ অন্ুনরণ করে চলে কিন্তু হঠাৎ এ ব্যতিঞ্রধ কেন? বংশী প্রশ্ন করলে, কী খললে নাগ্ষেব ? _-পষ্ট করি কিছু কহে নাই। তুমি আদপিবা পর খুব হাদিলে। কহিল কি, চামারক লাখি মারিলে গর্জাত্‌ নাহতে যি নাগে, যে চাষার পারের জুতা গঢ়ার, সি শাশার। সরস্বতী পৃজী কবিব। চাহে। তারপর হামা কহিলে, একট। ছেঁড়। জুতা লিমা পূজা কর--ওই জুত। সরস্তীই তুদের দানাপানি দিবে। ংশী চুপ করে রইল। একথা « শোনবার আশা করেছিল । ১০৬ মহিন্দরের গল! হঠাৎ কেপে উঠল উত্তেজনায় । _-মাষ্টার? বলো । টের সহিছি আমর] । অনেক । --কথাম্ব কগায় জ্ন্তা মারিলে হামাদের, হামাদের পাটের ভাত কাটি থালে, হামাদের বৌ-ঝিক আইভ্‌ (রাত) করি লিই গ্যালে কাছারিত _হামরা সঠি গেছ । এত করোছি খোছাছি, তোয়াজ করোছি, তায় তভূ হামাদের মান্ষ বলি মানিবা চাতে না! ক্যানে, আতে কী দোষ করোছি হামরা ? বংশীর চোখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তবে ভূল হয়নি। তার সবজীক্ষেতের ছোট ফসল বীজ ছড়াবার উপক্রম করেছে । মানী লোক মহিন্দবের মানে ঘা লেগেছে, একদিন-এমনি করে দেশের স্মস্ত মানুষের মানেই ঘা ল'গদ্ব নিঃসন্দেহ | সেদিন দূরে নয়, তা এগিয়ে আসছে । সরম্বতী পৃজোকে অবলম্বন করে উদ্বোনি হবে চামুগ্ডার -দিকে দিকে তাঁরই বক্তাক্ত সংকেন্ত। - তুমি কী করবে মহিন্দর? - কী করিমু? সিটাই তো তোমার ঠাই জানিবা আইনু | মহিন্দরের মুখের ওপর দিয়ে দ্রুত ভাঁববিবর্তন ঘটে গেছে একটা। প্রথমে এসেছিল উপদেশ দিতে, তখন সে মুখে ছিল আতঙ্কের ছায়া, ছিল শাবধানীর সতর্কতার গ্োতনা। কিন্তু চট্টরাজের কথাগুলো ম্মরণ করতে গিয়েই দপ করে শিখাগিত হয়ে উঠেছে মহিন্দর । হঠাৎ বুঝতে পেরেছে, শয়তানকে উচু পিঁড়ি দিয়ে আর লাভ নেই, তাতে তার খাই মেটে না, বরং লাফে লাফে সেট! বেড়েই চলতে থাকে । তাই হঠাৎ বিদ্রোহী হয়েছে সহিন্দর। জলো টেশড়া এতকাল দাপাদাপি করেছে নিশ্চিন্ত সুযোগে, এবার খোঁচা লেগেছে কাল্‌ কেউটের গায়ে । ১০৭ বংশী বললে, আমর কথ শুনবে ? _পিটাই শুনিবা আইনু | বংশী বললে, তবে পূজে৷ করতেই হলে । ই? _-ই], পূজা । -করিবা হেবে? _নিশ্চয় করতে হবে। তোমাদের এমন করে অপমান করে যাবে, তোমার মতে মানী লোককে যা মুখে আসে তাই বলবে, তব তুমি সয়ে ষাঁবে মহিন্দর ? মহিন্দর এবার চোখ তুলল । আগ্নেয় চোখ । না । _-তবে কী করবে? মহিন্দর কঠিন স্বরে বললে, পূজাই কনিমু। _যদি বাঁধা দেয়? :-_সিটা তখন দেখ! ধিবে। মারামারি করিবা জানি হামরাঁ।- মহিন্দর হঠাৎ উঠে পড়ল ঃ তুমি নাগি যাও মাষ্টার-টাকার জন্য ভাবেন না। ভাঁখি ঠিক করি দিমু। _-এইটেই পাঁকা কথা । --হাঁমার কথা নড়ে না। _-নাঁয়েবকে কী বলবে? _-কিছুই কহিমু না-কঠিন কণ্ঠে মহিন্দর বলে চলল, উ শালা তো কাইল চলি িবে। যদি জানিবা পারে, যদি বাধা দেয় তো হামরাও লাঠি ধরিবা শিখিছি । হাঁমরা ছোটলোক, হামরা মুচি, হামীদের লাখি মাইল্লে গঙ্গাত চান করিব! নাগে! হামাদের ছেঁড়া জুতা পুজা করিবা কহে! আচ্ছ। দেখিমু! মহিন্দর চাল গেল। যাণ্যার আগে শাল গেল, বিকালে ফের আলিম ছার । আকাশে প্রথম ঝোড়ো মেঘ । জলন্ক বিছ্বাতের কশীঘ[ত | বংশী মাষ্টাবের ংপিণ্ড আনন্দে যেন লাফাতে লাগল । স সং সং সং একটা গানের আড্ডা আছে যেগেনের, সেই আড্ডাতেই আলকাপের দল করে গড়ে তোলার কথা ভাবছে? মোটামুটি সবই আছে, অভাব শুধু একটা ক্লারিয়োনেটের ৷ ধাত্রার দলে থেকে বাছ্যবাজনী গুলো সম্পর্কে তার একট| ধারণা হয়েছে চলনসই রকমের, ক্লারিয়োনেট বশী না থাকলে আজকাল আর গান জমে না। কিন্তু নিতীস্তই চামারদের গ্রাম। ক্যারিয়োনেট বাজনাতে। দরের কথা, অনেকে তা চোখেও দেখেনি ! কিনে একটা আনা যাঁয় বটে, কিন্ধ অনেক দাম, গাঁট থেকে অত গুলো টাকা দেয়া «খন সম্ভব নয় যোগেনের । মার হাতে টাকা নেই আর স্রবরেনের ভাইয়ের গুধাকণ্ঠ সম্পর্কে যত অন্গরাগই থাকুক, অতগুপি টাকা চাইতে গেলে একেবারে খ্যাক খ্যাক করে তাড়া করে আসবে । স্থৃতরাং যখন খবর পাওয়। গেল দামডি পায়ের ধলাই মুচি আজকাল বিষে বাঁড়িতে বাজনার সঙ্গে সঙ্গে ক্লযারিয়োনেট বাজিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন উৎসাহিত হয়ে উঠল যোগেন। সকালে উঠেই গেল ামূড়িতে ৷ ধলাইকে পাওয়া গেল বটে, কিন্তু মেজাজ দেখে মাথা গম তুয়ে উঠল যোগেনের | দলাই বললে, হু", বাঁজাব। হামি পারি। কিন্ত কী রকম দলের সঙ্গে বাজাবা তেবে সিট। তো হামার জানিবা নাগে। --না দল ভালোই আছে। --ভাঁলো ?-অন্গকম্পার হাঁসি হাঁসল ধলাই £ সাহার আঁলকাপের দলে হামি বাজান, ফের বাঁজাইন্ু বদন মণ্ডলের যাত্রার দলে। সি সকলের চাইতেও তুমার দল'ভালো না, কি হে? ১০মি বলাইয়ের কথার ভঙ্গিতে যোগেন অপমানিত বোধ করল। কিন্ত গরজে; বালাই যখন তার, তখন খোচাটা হজম করে যেতেই হবে! শুষ হাসি হেসে যোগেন বললে, অত ভালো কি আর হেবে ভাঁমার দল? একটু কষ্ট করিই বাজাবা হেবে তৃমাক। সৌখিন সর গৌঁফে মিহি করে একটু তা দিলে ধলাই | বেশ বোঝা যায় একট ওপর থেকে, একটু বাকা করুণার দৃষ্টিতে যোগেনকে পর্ধবেক্ষণ করছে সে। অহঙ্কারে ফেটে পড়েছে লোকটা-_সাহ্ণানা গায়ের ভেতরে একটি মূলাবান ক্ল্যারিয়োনেটের মালিক সে। ধলাই বললে, গা.»ংব কে? _ভামি। -তালমান জানো হে? এটা চুড়ান্ত । যোগেন বিরক্ত হয়ে উঠে পড়তে যাচ্ছিল, হঠাৎ কী মনে করে ধলাই তার ভাত ধরে ফেলল, হেসে বললে, আরে, আরে চটি যাগ কানে? বইস, তামুক খাও, ছুটা একটা কাঁজ-কামের কথা কতো । গ্রণী মান্তষের কাছেই তো ফের গুণী মানতষ নিজের কথাটা কহিবা চাহে । অমন কস করি চটি গেল কি কাম হয়? এবার বোঝা গেল মুখে যেমন করুক ন' কেন, মনের দিক থেকে একট তাগিদ আছে ধলাইয়ের নিজেরও । একট। কোনো জায়গা তারও দরকার, ভারও প্রয়োজন কোনো একট। জায়গাতে নিজেকে প্রতি করে নেওয়া। ওটুকু অহমিকা শিল্পী-স্থলভ, ওটুকু না থাকলে পিজের ওপর যেন নিজেরই জোর থাকে না । শেষ পর্যন্ত কথা পাকা হবে গেল। লাভের চার আনা! একটু বেশিই হল, কিন্তু উপায় ছিল না তা ্াড়া। সত্যিই তো যোগেন ছাড়া এমন গুণী তাঁর দলে আর কে আছে! কথাবার্ত। শেষ করে যোগেন যখন বাড়ীর দিকে ফিরছিল তখন বেল! দুপুর। শীতের দিনেও এই খোলা মাঠের ভেতরে ধূলোর পথট। গরম হয়ে ১১৪ উঠেছে। পথের এপাশে আমগাইগুলোতে এরই মধো 'বউল' পড়েছে, সোনালি সৌন্দর্য আর ছুটি চারটি কচি কোমল পাতায় পুলকিত আত্মগ্রকাশে একটা নতুন এশ্বব ভাগার যেন বিকসিত হয়ে পড়েছে । পথ চলতে চলতে একটা মোহন মাদকতায় ৬রে গেছে মন। কাগ অনেক রাত পর্ন্ধ গান লিখেছে, অনেক রাত পধন্ত ছেগে অতঙ্্র ভাবনার মধ্যে শুনেছে সুরের আশ্চর্য সঞ্চা; 1 কোখার বেন এতধিন পধপ্ত বঙ্ধ দরজা [খল একট।, তার বাইরে মাখা কুটেছে যোগেনের সমস্ত চেষ্ট। কিন্তু ভেতগে ঢে।কবার পণ্টাকে খুজে পায়নি । কথনো। কখনে। সেই বন্ধ দরজার ফাকে কাকে এক একট! আলোর রশ্মির মতে এসেছে জা" « এক একট, বিম্ময় বিচত্র পুলক । যতটুঞ্ পেরেছে তা অনেকটা ন। পাওয়ার বাথাকেই তুপছে মঙ্জাগ আর স্ৃতাক্ষ করে। ঘযোগেচশর মনে হয়েছে, এনক কথা আহে তার, এনেক গান আছে -অখড ঠিক তাদের সে ধরতে পারছে না। অতৃপ্তি বোধ 5য়েছে, অভিমান জেগেছে নিছে এশরে। কিন্তু কী থে হল কাল--কেমন বে দেন সে দর্জাটা। নপ্পুণ খুন গিছে অপরূপ অপদাপ্ত আলো এনে তাকে ঘেন স্নান বরেয়ে দিয়ে গেল। কাল এক ধাত্রির মধ্যে আট দশচ। গান মে লিখে ফেলেছে, সুর পিয়েছ্ে তাতে: নিজের ভেতরে এমন যে স্থাষ্টর প্ঠরত। তার হিল, এ বোগেনের জীবনে একটা আকন্মিক আবিষ্কার । ফুলে দুলে আলে হয়ে প্রঠা শরতের একটা শেফালি গাছকে হঠাৎ নাড়। দিলে যেমন এক মুহুতে ঝুর ঝুর করে অভস্র ফুল ক্সিপ্ধ হাসির মতো ঝরে পণ, হারও ঠিক তেমনি হয়েছে । কথার শেষ নেই, গানের ন্যে নেই | কোনটা ছুড়ে কৌনট। পরব বুঝ পাক এ)! একট। গান লিখতে লিখতে আর একটা গান এনে পড়ে, একটা সুরের েভরে ঘটে আর একটা স্থুরের অনধিকারী সর্ধার | "বিস্মিত বিহ্বল হরে গেছে যোগেন, সহম্ত্র স্বরে মন তার গান গেয়ে ডঞ্তে চায় । কিন্তু কেন? ৮ শে ০ রক্তের ভেতরে মু কল্লোল শুনতে পাওয়৷ গেল ।* কী অদ্ভুত সন্ধ্যা! প্রদীপের আলোর ক্রশীলার মুখ সন্ধ্যাতারার মতো ঝলমল করছিল। আর একটি প্যাচপেচে গলির একটি খাস অন্ধকারের সঙ্গে এব কত' পার্থক্য । মেযেমানষের সম্পরকে একট। কুশ্ দ্বণার যোগেন বিতৃষ্ণ হয়েছিল এতকাল, হঠাৎ দেখতে পেল এর আর একট দিক আছে। মনকে কালে। করে দেয় না, বন্ধ দরজাট! ভাট করে দিয়ে সমন্ত আলো করে তোলে। | এই ভালোবাসা? এই পিবিতী ? এরই জন্ঠে মানুষ এমন করে আকুতি করেছে গানে গানে, এরই জন্য শ্রীনবাপ। যমুনার কালে! জলে ভাপিয়ে দিলেন তার যৌবন? আশ্চষ নয় কিছুই, অবিশ্বান্য নয় এতটুকুও। যোগেন বুঝতে পেরেছে এবার । বুঝেছে কেন বন্ধুর জন্যে কলঞ্ের ডালা অসংকোচে মাথায় তুলে নিতে বাঁধে না এক বিন্দু, কেন বারবার একথা মনে হয়, তোমার লাগির। কলস্কেরই হার গলায় পরিতে সুখ | খোগেন গুন গুন করতে লাগল £ আর কত কাল রহি ঘরে পাব1.৭ বু বধির, হার হার হায়, জনম গেল কাদির! তিলেক তুমায় না দেখিয়া, হে, পরাণ আমার যায় জলিয়! তভু তো মথুরা গেইল্য।, ওরে আমার ধরদিয়া- শরতের শিউলি ডালে ঝাকুনি লেগেছে । ফুল ঝরছে, বাশি রাশি ফুল। একটি ছোয়ায়, বুকে বুকে কয়েকটি মুহুতেবি মাতিলক্ষিমতে মাতাল করে তুলেছে সমস্ত জীবন। এবার সত্যিই বড় আলকাপগুলা হবে যোগেন, সত্যিকারের গাইয়ে হবে, দিকে দিকে নাঁম ছড়িয়ে যাবে তার, লোকে আঙুল দেখিয়ে বলবে ওই যাছে যোগেন আলকাপ গল! । | কিন্তু বংশী মাস্টার । হঠাৎ মনের প্রসন্নতার ওপরে লঘু মেঘ ভেসে গেল ১৯২ এক টুকরো। মাষ্টার যে মন্ত্র দিয়েছে সে মন্্রকি ফুল-ঝর| পখে চলার, না কোন দুর দুর্গমের অভিযাতআ্রার ? ফুল ন| কাট।? যেন যোগেনের বিদ্রোহ করে উঠতে ইচ্ছে করুল। কী লাও তার দমিদারকে আক্রমণ করে, মহাঁজনকে গাল পিয়ে? জমিধার থাকুক জমিদারের মতো, মহাজন থাঁক তার নিজের মঙ্জিমফিক | আরে তো লোক আছে দেশে, আরো তো! বহু মানুষ জর্জরিত হচ্ছে জমিদারের অত্যাচারে! কিন্ত কী দরকার তার--কী প্রয়োজন তারই একমাত্র প্রতিবাদ জানিয়ে? সকলের যেমন করে দিন কাটছে, তাঁর9 কাটুক। সকলে যেমন করে ঘর বাধে, এালোবাসে নিজের বউকে, ছেলেমেয়ে নিয়ে সংনার করে, তাইই করবে যোগেন, তাদের থেকে সে আলাদ। হতে চায় না, চলতে চায় ন কোন টুঃসাহসিক নতুনের ছুগমতায়। বংশী মাস্টারের ওপরে বাগ ভতে লাগল । অকারণে দুবুদ্ধি দিচ্ছে তাকে। ব্যস্ত করে তুলছে দিব্যি জলজ্য্ত সুস্থ শরীরটাকে | স্হ্িছাড়া লোকের স্থষ্টি- হাড়া বুদ্ধি, অনর্থক কতগুলো মানুষকে চটিয়ে দিয়ে ঝামেলা বাধিয়ে তুলতে টায়। আর তা] ছাড়া প্রতিপক্ষ নগণ্য নর । জমিদার, মহাজন, বাম্হন । সমাছের তিন তিনটে মাথা, যারা ইচ্ছে করলে চাষার যা কিছু ফোপফো সানি এক লহমায় সব' ইতি করে দিতে পাবে । চাঁষাদের সরস্বতী পূজো ! কী দরকার ওসব বাবুয়ানা করে! জুতে। সেলাই আর জমিতে লাঙল দিয়ে যাদের সাতপুরুষ কেটে গেল, কৌন মতে নামট। মই করতে পারলেই যারা সমাজ ঘাতব্বর হয়ে যায়, তাদের পর্ষে ও সব ব্দখেয়ালের কোনো মানে হয় না। এরই নাম গরীবের ঘোড়ারোগ, সবস্ুদ্ধ ডুব মরবার মতলব । তার চেয়ে দিব্যি নিঝপ্ধাট সুশীল | ফুলের মতে নরম । এত সুন্দর, এমন বুকভর|। যোগেন আর কিছু চায় না । বাশি রাশি কথা, রাশি বাশি গান। ঝুর ঝুর করে ফুল ঝরে পড়ছে সববাঙ্গে_ নিশ্চিন্ত আরামে, অপরূপ একটা আবেশে যেন ঝিম ধরে আসে, যেন ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। ১১৬ বৈতালিক--৮ কিন্ত মাঠের রোদটা হঠাৎ যেন অতিরিক্ত গরম বলে বোধ হল। হঠাং যেন মনে হল গায়ের চামড়াটায় একট] মৃছু উত্তাপ লাগছে, জামার ভেতরে ঘান গলে পড়ছে এই শীতের ছুপুরেও । বেলাটা কত চড়েছে সেটাই যেন বুঝবার জন্যে একবার আকাশের দিকে তাকালো যোগেন । আর তখনি তখনি চোখে পড়ল আকাশে জলন্ত স্ুয | জলন্ত সূর্য । ধক্‌ ধক্‌ করে আগুন ছড়াচ্ছে__জলছে-_হিংস্ত নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর একট] চোখের মতো | ছাঁয়! রাখবে না কোথাও, রাখবে না সিপ্ধতা, তার তাপে শরতের ঝরা শিউলি শুকিয়ে যাবে মুহুতের মধ্যে । পৃথিবীটা শুধু শরতের শিশিরে ভেজা সকালই নয়। সূর্যের দিকে চোখ কুঞ্চিত করে বিকৃত মুখে তাকালো যোগেন। যতই তীব্র হোক, অস্বীকার করবার যো নেই ওকে । আর ওই চোখ-_ ওই চোখ বংশী মাষ্টারের। আজ সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা করতেই হবে বংশীর সঙ্গে । উপায় নেই, স্থুশীলাকে নিয়ে আচ্ছন্ন আবিষ্ট হয়ে থাকলে চলবে না অপরূপ অন্ধকারের আড়ালে। ১১৪ আট ক্ষেতে ক্ষেতে শীতের সর্ধে ফুল ফোটা প্রায় শেষ হয়ে গেল। মাঠের ওপর শষরাত্রে আর তেমন করে শাঁদা রঙের কুয়াসা ঘন হয়ে নামে না আজকাল । আমের কচি মুকুল ধরেছে, সোনার মতো রঙ। পৃথিবী বদলাচ্ছে । বাঁসস্তা পূর্ণিমার দিন আসছে এগিয়ে-ফিকে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে গাছের পাতার চেহারা । বাসন্তী রঙের স্বপ্ন ছড়াচ্ছে চারদিকে | এর মধ্যে সময়্টাঁও এগিয়ে গেছে দ্রুত। মাগ্টীরের সবজী ক্ষেতে কপি- মুলে। প্রায় নিঃশেষ । একা মানুষ-_সামান্যই খেয়েছে, বাকীটা দিয়েছে ইচ্ছে মতো সকলকে বিতরণ করে। ছুটি চারটি যা বাকী আছে তা৷ সরস্বতী পূজোর সময় কাঁজে লাগবে। টম্যাটো৷ গাছের ঝাড়গুলো ক্রমশ শুকিয়ে আসছে, কল আর তেমন বড়ো হয় না__একটু বাঁড়তে না বাঁড়তেই কণ্টিকারী ফলের মতো হলদে হয়ে যায়, তারপর পড়ে যায় মাটিতে । মূলোর গাছ অবশিষ্ট দু একটা যা আছে, তাদের পাতাগুলো ঝাঝরা ঝাঝরা করে খেয়েছে সবুজ রঙের ছোট ছোট কীট--এক রকমের উড়ন্ত পৌঁকা। মহিন্দরের হুকোর জল দিয়ে তাঁদের ঠেকানো যায়নি । ইন্কুলের বারান্দায় সরম্তী তৈরী হচ্ছে। একটু দূরের গ্রাম থেকে এসেছে একজন বাঁজবংশী। কুমোর-টুমোর এদিকে নেই, একেবারে শহরের কাছাকাছি ন1! গেলে তাদের পাত্তা মেলে না । তাই চাষী রাজবংশী এই সবল বর্মণই তাদের ভরসা। একটু একটু মাটির কাঁজ নিজে নিজেই ১১৫ শিখেছিল, গ্রথম প্রথন তা দিয়ে খেয়াল-খুশি মাফিক শীতলা আর বিষতনী তৈরী বরত, এখন রোজগারের একট] নতৃন পথ পাওয়া গেছে দোখে দক্স মতো! এ নিযে ব্যবসা করে স্থবল। শীতল! বিষহরী তো! গড়েই, তা ছাড়া ফরমায়েস্‌ অন্তযায়ী সব কিছু গড়তে চেষ্টা করে। গত ছু বছর থেকে কালী বানিয়েছে খানকতক | পয়সার খাই নেই স্থবলের, ছু তিনটে টাকা পেলেই বেশ বড় গোছের মুতি তৈরী করে দিয়ে যাঁয়। ইস্কুলের বারান্দায় সে প্রতিমায় খড় বাধছে, একটু দৃরেই দাড়িয়ে আছে বশী। কবল বর্ণের সরন্বতী সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল নাঁ। যা একটি গড়তে যাচ্ছিল ত1 ছিন্নমন্তাও হতে পারে- গণেশ হওয়াও আশ্চর্য নয়) অন্ন তার খড় বাধার নমুনা দেখে এরকম এ একট। আঁশঙ্ক।ই জাগছিল । তাই ঠৈ চৈ করে এসে পড়েছিল বংশী মাষ্টার । নিজে দঈীড়িয়ে থেকে সব গর দিয়েছে _পৰিষ্ষার বুঝিষ্ধে দিয়েছে সে ঠিক কী চায়। শুনে মাথা নেড়ে সুবল বলেছে, ই-ই, ইবাঁবে বুঝিত | খানিকট। বিষভবীর মাফিক করিবা হেবে। _ঠিক ঠিক 1--বংশী উৎসাহ দিলে £ তবে একেবারে বিষহরীর মছে নয়। রউটা ধপ ধপে সাদা করে দিতে হবে। --মেম সাহিবগুলার মতন ? ংশী হেসে বললে, হ্যা, সরত্ঘতীর রঙ মেম সাহেবদের মতোই | -আর কী করিবা হেবে? -তাঁতে সাপ থাকবে না। _-তো কী থাকিবে? বীণা । -_বীণাটা ফের কেমন হৈল্‌ . বীণার আকার প্রকার গা গিয়ে বংশী দেখল পণগুআম। তাই কাঁজটাকে সহজ করবার জন্যে বললে, গাবগ্রবাগুব জীনো? সুবল ধাত বের করে বললে, হে, হে সিটা আর ক্যানে জানিমুনা? ১১৬ ঠিক সেই বকম। আর কী করিলা হোলে? __পায়ের কাছে একট! পা্ম আখ হাঁস দিতে হবে। হাস? কীহাস? পাতি? _না না, রাজহাপ। _-তো! ঠিক বুঝি--জনাব দিয়ে সুবল কাঁজে লেগে গেছে | কিন্ধু ঠিক বুঝেছে বলাতেও বংশী নিশ্চিন্ত হতে পারেনি, দীড়িয়ে দাড়িয়ে কাজ দে!খছে। তবু যতদূর মনে ভচ্জে, াসট। ঠিক হাঁস হবে না, ময়র ভার শকুনের মাঝামাঝি কিছু একটা রূপ নেবে। কিন্তু উপায় নেই--এর বেশী কাঁজ সুবল বর্ণের কাছ থেক আমা কলা সম্ভব নয় । খুব গম্ভীর মুখে কাজ করছে সুবল। ইস্কুলের পড়য়া আট দশটা আধ- নাংটে৷ ছেলে এসে কাছে জুটেছে, এই মহৎ কাজে কিছু একটা ফুট ফরমাস্‌ খাটতে পারলে একেবারে চরিতার্থ হয়ে যাবে। সবল নিজের উপযুক্ত পদ মর্ষাদা অনুযায়ী কাঁজ করিয়ে নিচ্ছে ছেলেগুলোকে দিয়ে ।, হাতের কাছে তাঁরা খড়ের যোগান দিচ্ছে, দড়ি দিচ্ছে এগিয়ে । একটু ভূল হলেই ধমক দিচ্ছে স্থুবল £ হেঃ দেখ দেখ, বোকাঁটা কি বাঁ করোছে ভে। এরই মধ্যে মহিন্দর এল । _-শুনিল! হে মাষ্টার? _-শুনছি, কী বলবে বলো। _ চল্লিশটা টাকা উঠিলে। আর ক্যাতে নাগিবে? বংশী বিস্মিত হয়ে বললে, চল্লিশ টাঁকা তুলেছ? তবে তে ঢের হয়েছে এর বেশি আর লাগবে না মহিন্দর । _নাঁগিবে না? ইতেই হই যাবে? _হ্যা। _-হামাদের পুজা হেবে -. হামরা ইঠে একটা গ।নের যোগাড় নি করুম? ১১৭ গানের যোগাড় ?-_ বংশী আত্মমগ্নভাবে অল্প একটু হভামল : সেজে তোমাদের ভাবতে হবে না। সেব্যবস্থা আমিঠ করব এখন। কোন ওযা নেই, গান হবেই | __কুন্ঠে থেকে গান আনিবা হে তৃমি 1. এবারে মহিন্দর আশ্চর্য হল। _-এখন বলব না। কিন্তু কিছু ভাবতে হবে না মতিন্দর, গান ঠিক এসে যাবে তোমাদের | মহিন্দর আর গীড়াগীড়ি করল না। অনেক নিখিছেণমাষ্টার, তাঁর সম্পর্কে অসীম শ্রদ্ধা মহিন্দরের । মাষ্টার যা খুশি তাঁই করতে পারে। সুতরাং এ ব্যাপারে সে নিশ্চিন্ত বোধ করল। তবুও এখনো অনেক সমশ্তা আছে সেগুলোর ভীলো৷ করে একট! নিষ্পত্তি না ভওয়৷ পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না মতিন্দরের মন। __হামাঁদের পুজা, আর সব গায়ের কুটম-কাটমগ্ডলাক তোঁ নেওতা (নিমন্ত্রণ) দিবা হয় | তা দিয়ো। সা, ওই সনাতনপুরের ভূষণকে কহিবা হেবে, বাস্তকও খবর দিবা নাগিবে। _ দিয়ো খবর__বংশী নিলিপ্তভাবে জবাব দিলে, সকলকে ডেকে এনে পেট ভরে মায়ের প্রসাদ খাইয়ে দিয়ো, খুশি হয়ে বাড়ি চলে যাবে । আনন্দে ঝলমল করে উঠল মহিন্দরের মুখ £ ই কথাটাই তো হাঁমি কহিবা চাহোছিনু ! পুজ। হেবে, জাত-কুটুমক ভাঁলো করি তো খিলাবা নাগে। না তো! ফের শালার ঘর বদনাম করি বেঢাবে । তো কয়ট। পাঠা লাগিবে? _ পাটা ?--বংশী আশ্্য হয়ে বললে, পাঁটা! কী হবে? _ক্যানে, বলি দিবা নাগিবে না? -_না, এ পুজৌয় পাটা বলি দিতে নেই। _-তে। ফের কিবা বলি দিব! হয়? ম্যাড়া? ৯১১ __না, ম্যাড়াও নয়। কিছুই বলি দিতে হবে না। _ হায়রে বাপ, বলি দিবা হয় না? মৃহিন্দরের আনন্দৌজ্জল মুখে আখাহত বিজ্ময় দেখা দিলে £ বলি না হয় তো ক্যামন পুজা? _এই নিয়ম । দেবী বোট্ুম কিনা, মাছমাংস খান ন|। __নি খান ?-মহিন্দর নিরাশাক্ষুন্ধ স্বরে বললে, তবে কী খিবে? __কুমূড়ো, কীঁচকলা, কপি, মূলে, আলু--সদরকম আন।জ। শুধু পেয়াজ নয়। 4 ই, বুঝিন্থ_খানিকক্ষণ মুখটাকে হাড়িপান। করে রইল মহিন্দর। পূজে। সম্পর্কে তার যা স্বাভাবিক ধারণ! সেট। স্পষ্ট। পাঁটা বলি হবে, মাংস রান্না হবে, চলবে মদের শ্রাদ্ধ। জ্ঞাতি-কুটুম নিয়ে বসা যাবে আসর জমিয়ে । কালীপুজো কিংবা ব্যিহরী উপলক্ষে এটাই চিরাচরিত রেওয়াজ। কিন্ত নিছক কচু কুমড়োর ঘণ্যাট খাওয়াতে চায়, এটা কেমন পূজোর ব্যবস্থা মাষ্টারের ! কুপন স্বরে মহিন্দর বললে, তো কুটুমগুলাক্‌ কি খিলামু? মাংস ন| থাকিলে-- মহিন্দরের মনের অবস্থা বুঝলে বংশী । হেসে বললে, তা আলাদ। করে তোমরা পাটা কেটে রান্না করতে পারো, খাওয়াতে পারো তোমার জাত- কুটুমদের । _ দোষ হেবে না? _ন]। | মহিন্দর প্রসন্ন হল। বললে, তো হামি খাসীর যোগাড় করি। _কর। | ূ চলে যাচ্ছিল মহিন্দর, মুখ ফিরিয়ে বললে, গানের কথাটা ভুলিয়ো না হে মাষ্টার । শান্ত স্বরে মাইর বললে, না, না, সে ঠিক আছে, ভুলব না। ১১৯ মহিন্দর চলে গেল। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রতিমার খড় বাধতে সুবল বমণ উতৎকর্ণ হয়ে উঠেছে । আগ্রহ ব্যাকুল স্বরে বললে, এইঠে কি গানও হেবে? _হাঁ, হবেই তে|। -কী গান? -আলকাপ। _-বড় ভালো গান ।- লুব্ধ কণ্ঠে সুবল বললে, শ্ুনিবা আসিমু। _নিশ্চয় আসবে । তোমাদের নিমন্ত্রণ রইল | অত্যন্ত খুসী হয়ে প্রতিমার কাঠামোতে খড় চ।পিয়ে চলল সুবল, দেবীর গ্রতি হঠাৎ একটা শ্রদ্ধ! আর অন্থরাগ জেগে উঠেছে তার মনে । আধ-ন্যাংটো ছেলে গুলো! দড়ি আর খড় এগিয়ে দেবার কথা ভুলে গিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচতে শুরু করেছে ২ এইঠে গান হেবে-গান হেবে-আলকাপের গান । বংশী শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিরে রইল দূর প্রান্তরের দ্রকে। একি অতুল মজুমদারের অপমৃত্যু, ন| বিচিত্র একট| নবজন্মের স্থচন1? আত্মহত্য। না আত্মবিকাশ ? পরিষ্কার জবাব নেই কিছু । শুধু মনের সামনে ভাসছে শান্তির মুখখান।। ুষ্টুমিভর কালে চোখে শান্তি তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে £ তুমি পারবে না তুমি পারবে না। প্রতিশ্রতিটাই পালন করতে হবে। কীপারা সম্ভব আর কী নয়_সে কথা ভেবে আর লাভ নেই। এই অন্ধকৃুপের শির্বাসন_এই সাপের মতে। লুকিয়ে লুকিয়ে আর নিজেকে বাচিয়ে বাচিয়ে চলবার চেষ্টা- এইখানেই ঘটুক এর চিরসমাপ্তি। হয়তে| নতুনের শুরু, নইলে শেষের পালা। ছেলেগুলে। তখনো খুবে ঘুরে নাচছে £ গান হেবে, গান । _গান তে। হেবে কিস্তুকৃ-- কথাট! আরস্ত করেই সন্দিপ্ধ ভাবে থেমে গেল ধলাই। ১২০ _-থামিলে ক্যানে? কী কহিবা চাহে! সাফ সাফ কহো। - কহিমু?-ধলাই আবার ইন্তস্তত করতে লাগল । কথাগুলো হচ্ছিল যোগেনের বাড়ির দাওয়াতে । এখন সন্ধ্য। হয়ে গেছে, অল্প অল্প জ্যোৎস্না পড়েছে, সামনের নিম গাছটার পাতাগুলোর ভেতর থেকে আলো-আ্বাধারি এসে দোল খাচ্ছে দাওয়াতে । কোথায় যেন ভাট ফুল ফুটতে শুরু করেছে, বাতাসে আসছে তার স্থগন্ধ। চাঁটাই পেতে বসেছে ওরা দুজন । অস্পষ্ট ছায়া মেশানো! জ্যোত্স্নায় ওদের ভালো করে দেখ! যাচ্ছে না, শুধু ওদের মুখের বিডির আগুনছুটে। ঝিকমিক করছে। সন্ধ্যার পরে স্থরেনের জুতো! ঠোকা বন্ধ হয়ে যায়, তখন এখানে গানের আসর বসায় যোগেন। প্রথম প্রথম তাঁদের টেচামেচিতে জেরবার হয়ে গিয়েছিল স্ুরেন, একদিন একট। ঠ্যাঞ্গ! হাতে করে তেড়েও এসেছিল । কিন্তু ক্রমশ বিতৃষ্ণাটা কেটে গেছে, এখন সে দস্তরমতো ভাইয়ের গুণ-মুগ্ধ। এমনকি এত খুশি হয়েছে যে, বলেছে হ ছু চাবিট। জায়গ।ত, যদি ভালো গাহিব৷ পারিস তে। হামি নিজে তোঁক্‌ একটা কলের বাশি (ক্ল্যারিয়োনেট ) কিনি দিমু। আর আড়ালে আড়ালে বসে শোনে যোগেনের মা, স্থক্ সুদর্শন ছেলের গর্বে -গৌরবে তার বুক ভরে থাকে । মাঝে মাঝে দরজা ফাক করে এসে চকিতের জন্যে উকি দেয় স্থশীলা, যেগেনের দৃষ্টি এড়ীয় না। রক্তের ভেতরে যেন চঞ্চলত| জেগে ওঠে, মধুব্ধী কঠে আরে! বেশি করে মধু ঢেলে দিয়ে যোগেন গান ধরে £ কইন্তা, ভ্রমর জিনি লয়ন তোমার উড়ি উড়িযায় হে, হামার বুকেরঃভিতর ফুল ফুটিলে তাঁহার মধু খায় হে-_ হায় হায়--! ১২১ বৈতালিক--৮।১ যোগেনের চোরা চাহনি একজনের চোখে ধরা পড়ে গেছে সে দলাই কোনো মন্তব্য করে না, মাঝে মাঝে মুচকে মুচকে হানে । আজকাল অবশ একটু কাজ বেড়েছে ভার, যোগেন বাড়িতে থাকবে না সিশ্িতভাবে জেনেও সে আমে যোগেনকে ডাকতে । বদি বাড়িতে ন। পায় তা হলে বেশ নিশ্চিন্ত ইয়ে বসে বাইরের দাওয়াতে, গামছা ঘুরিয়ে ঘুরিরে বলে, যে অউদ রোদ উঠিছে__ বাপরে বাপ | একটু পানি না খিলাইলে হামার চলিবার জোর নাই । শুধু পানি খায় না, পানও খায়। স্বশীলাই মাঝে সাঝে পান এনে ধের তাকে । কথাটা শুনে, বল! বাহুল্য, যোগেনের ভালে। লাগেনি । একবার ভেবেছে, ধলাইকে নিষেধ করে দেবে যখন তখন তার বাড়িতে আসতে, যাকে বলবে সময়ে অসময়ে ওকে পান বঝ| পানি কিছুই না দ্িতে। ধ্লাইয়ের অল্প অল্প গৌফের শীচে মিউমিটে হাদিটাকে কেমন সন্দেহ করে যোগেন, কমন একটা অনিশ্চিত আশঙ্কা জাগে। কিন্তু কিছুহ বলা যার শাঁ__ফেমন সংকোচে বাধে। স্থশীলাব বাশ বিয়ের প্রস্তাবে এখনো স্পষ্ট করে কাজী হয়নি, অনেকগুলো টাক। চেদ্ে বসে;ছ, এখনো গজর গজর করছে স্থরেন। কাজেই যোগেন এখনো দাঁবাটাকে প্রকাগ্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পরেনি স্থুণীলার ওপরে, যেট| চলেছে সেট। একেবাবেই আড়ালে আবডালে এবং অনেকখাণি সামাল্‌ দিয়ে। তা ছাড়া মাকেও কিছু বলা বায় না, যোগেনের বন্ধু বলে এব' ধলাইয়ের মুখ ভারী মিষ্টি বলে মাও তাঁকে একটু ন্নেহই করে আজকাঁল। বলাও যায় না কিছু ধল।ইকে, সওয়াও যায় না। আরো মুষ্চিল বে, ধলা গুণী লোক। ক্ল্যারিয়োনেট রীতিমতে। ভালোই বাজায়, বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই পে বিষয়ে। তাকে বাদ দিলে শিশ্চিতভাবে দলের ক্ষতি হবে নইলে যে কোনো! একটা ছুতো। নিয়ে অনেক আগেই লোকটাকে বিদাঁয় কর যেত। মনের বিতৃষ্তাট যাঝে মাঝে অনতর্ক মুহূর্তে প্রকট হয়ে পড়ে, এবারেও পড়ল। ধলাইয়ের কথার ধরণে বিরক্ত হয়ে ঘোগেন বললে, কী কহিছ, সাফ সাফ বলি দাও্‌।. ১২২ পালল। গৌঁফে রিবটিখানি তা দিনে প্লাই বললে ইগলান কী পাল। নাই ? _ক্য!নে, কী দোঁষ হেল? | _দোঁষ নি হৈল্‌?-_ধলাই কেমন একটা -দৃষ্টিতে যোগেনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ, তারপর ছিজ্ঞাসা করলে, তুমার মতলব্খানা কি ছে? _ কুন্‌ মতলব ?--উঞ্ণভাবে ষোগেন প্রশ্ন করল। _ই ক্যামন আলকাপের গান, ভামি বুঝিবা নি পাইন্স | কানে? _ক্যানে ?ধলাই গৌঁফে আবার তা দিলে ঃ আলকাপের গান হামরা ঘিটা জানি সিটা তো! কাপ। বং হেবে, তামাঁসা হেবে। মানুষ মজা করিবে, হাসিবে। কিন্তুক তুমার ই গান দেখি হামার ভর ধবোছে দাদা। . শডরিবার কী আছে? যিটা সীচ্চা ওইটা কহিমু না? যোগেন আরও উষ্ণ হয়ে উঠল | বয়েসে বড় এবং সংসারের ব্যাপারে আরো কিছু অভিজ্ঞ ধলাই হাসল করুণার হাসি | বললে, ছোয়াপোয়ার মতন মন লিয়ে কাম করিবা হয় না। যিটা সাচ্চা, ছুনিয়ায় ওইটাই কি কহিবার যে| আছে? হায়, হায়, সিট! হইলে তো] কাঁম একদম ফতে হই ধিত। ্ীচ্চাটাক্‌ ঝুট করিবা পারিলে--তেবে-_ছা'ঃ 1 | মস্ত একটা দমক দিয়ে ধলাই বক্তব্যটা শেষ করল। যোগেন বিদ্রোহীর মতো বললে, হাঁমি কাউক নি ডরাই | যিটাক সঁচ্চা বলি জানিমুং উটাই কহিমু, সঁচ্চাক মুই ঝুট! করিব। চাহি ন]। _-তো নি চাহে! তো নি চাহিবেন। কিন্তুক মুস্কিল হেবে। যোগেন ঘাড় বাঁকিয়ে বললে, মুস্কিল হেবে না। _হায় হায় দাদা ছুনিক্জাক চিন্হ নাই ।- ঘেন খুব ভালে! করেই চিনেছে এমনি ভঙ্গিতে ধলাই বলে চলল £ দেখিয়ে, শেষে ফাটক যিবা নাগিবে। ৯২৩ - ক্যাঁনে ফাটক? _ক্যানে ফাঁটক? দারোগাক গাইল দিবে, মহাজনক গাইল দিবে, আর উয়ার ছাঁড়ি কথা কহিবে তুমহাকে? জাত সাঁপের ল্যাজ ধরি কচলাব৷ চাঁহোৌছ, ফের কীদিবা হেবে কহি দিলু । যৌগেন চুপ করে রইল । ধলাইকে সে পছন্দ করে না, মনের কাছে অস্পষ্ট, অথচ অতি নিশ্চিত একট সন্দেহও তাঁর সম্পর্কে আছে যোৌগেনের । লোকটার গোঁফ পাকানো আর সেই সঙ্গে অবহেলাভরা মৃদু মুদছু হাঁসির ভঙ্গিতে তাঁর পিত্ত পর্যন্ত জালা করে ওঠে, এটাও ঠিক। তবু মানতেই হবে, তার বলার মধ্যে অন্তত খানিকট সত্য আছে। যেগান বংশী মাষ্টার তাঁকে দিয়ে লেখাচ্ছে তা লিখতে গিয়ে মাঝে মাঝে ভয়ে তাঁর নিজের আসশ্কলই আড় হয়ে যায়। এ কী লিখতে যাচ্ছে সে, ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে কোন্‌ ভয়ঙ্কর সর্বনাশের নিশ্চিত শিখাতে ! অথচ নিজের মন তার যে গান আজ লিখতে চায় সে গানের সঙ্গে এর তো? কোনে সম্পর্ক নেই । তাঁর সমস্ত ভাবনা, সমস্ত কল্পনা এখন কিশোরী স্ুশীলার চারদিকে একটা গন্ধমাতাঁল মৌমাছির মতে। ঘুরে ঘুরে পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে । এখন তার আকাশের দিকে তাকিয়ে সেটাকে আশ্চর্য রকমের ঘননীল আর স্থন্দর বলে মনে হয়, এখন চাদ উঠলে বুকের ভেতরে জোয়ার জাগে 1 দিনে রাত্রে ঘুমে জাগরণে সে যেন অপরূপ একটা স্বপ্নের গভীরে আচ্ছন্ন হয়ে আছে-_ ধলাইয়ের ক্লযারিয়োনেট বাশির মতো! কী একট। মিষ্টি সুর সারাক্ষণ তাঁর কাঁনে যেন ঝঙ্কার দিয়ে যায়। কখনে। আবছা আলোয়, কখনে। অন্ধকারের আড়ালে স্থশীলা! তার কাছে আসে, একান্ত হয়ে মিশে যাঁয় তার বুকের ভেতরে, তার চুলের রাশিতে আবিষ্ট মুখখানাকে ডুবিয়ে দেয় যোগেন- নিশি-পাঁওয়া অবশ মুহুত গুলো৷ যেন ঝড়ের পাখায় উড়ে যেতে থাকে । গান আসে, কত গান। শরতের শিউলি ডালে ঝাকুনি লেগেছে। ফুল ঝবে, রাশি বাশি ফুল। পরীরাজ্যের রাজকন্যা নেমে এসেছে তার ৯২৪ ঈ্গীবনে, তাঁকে নীচিয়েছে একটা বিকৃত সন্ধার বীভত্স স্মত্তিন গীচন থোকে । কশীলার কানে কানে তার প্রেমের কথা সুর হয়ে ঝরে পাড্ডোছে £ তুমি আমার পরাণ হে কইন্যা, সাঁপের মাথার মণি তুমারে আগুলি রাখি দিবস বজনী | দিনে তুমি দিনের আলেো।, রাইতে ঘুচাও রাইতের কালো, মবিব মরিব কনা তাঁম! হারাইঈমু যখনি কিন্ত বশী মাস্টার । জলন্ত সর্ষের মনো চোখ । শিশির উড়ে যায় ছায়া পুড়ে যায় মুতে মধ্যে | অনেকবার যোগেন ভেবেছে, বাঁজী হবে না তাঁর কথায়। চারণ হয়ে তার দরকাঁর নেই, দরকার নেই তাঁর সৈন্যদের ভাতে অস্ত্র তুলে দেবার দাক্রিত্ব নিয়ে। সে ছোঁটই আছে, ছোটই থাকবে, ছোট একট! ঘর বাধবে তার মনের মানষকে নিয়ে । কিন্ত- কিন্তু সুর্যের দিকে তাকালে দৃষ্টি যেমন জলে যেতে চায়, সে অবস্থা তারও হয়েছে । অনেক কথা বলতে চায়, বলতে পারে না। শুধু কানের কাছে বাজে ঃ তোমাকে কাজ করতে হবে যোগেন-টের বড় কাঁজ। আর এ কাজের দায়িত্ব তুমি-- একমাত্র তুমিই নিতে পারো] | আর কোন কথা সরে না যৌগেনের। ুঢ়ের মতো আবিষ্ট দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে । কাচপোকার আকর্ষণে ছেলাপোকা নাকি কাচপোঁকা হয়ে যেতে চায়, তেমনি একটা কিছু হতে চাইছে নাকি ফোৌগেনেরও ? আশ্চর্য, সময় বুঝেই কি মাষ্টার আসে! গভীর রাত্রে__পৃথিবী যখন অদ্ভুত নির্জনতায় বিম ঝিম করে, চারদিকের তন্দ্রা-গভীর পরিবে্টনী নিজের ভেতরে একট! .অপরূপ অনুভূতির সঞ্চার করে, যেন ভালোমন্দ বিচারের সময় থাকে না। যোগেনের মনে হয়, মাষ্টার তার ছুটে জালা-ভর। চোখ তার চোখের দিকে বিকীর্ণ করে ১৯২৫ পাহাড়ী অঙ্গগবের মতে তাঁকে ধেন আকর্পণ করছে পাকে । বোবা প্রতিব।দ গলার কাছে এসে অব্যক্ত অসশ্ায়তায় থেষে যায়। মাষ্ঠা বলে, “লেখো | লেখো! যোগেন, নতুন দিনের নতুন গান লেখে । তুমি কবি, তুমি শিল্পী, নতুন প্রভাতের বৈতালিক |” আর তখনি “এ দোগেন । কী লেখে? যোগেনের ভাবনার সঙ্গে আশ্চবভাবে সুর মিলিয়ে কথা কয়ে উঠল ধলাই তোমাকই হামি কহোছি । ইটা কেমন পারা গান হে তুমার? ধলাই গানট1 পড়তে লাগল £ | হায়রে ভায়, ভাশের একি ভা কুনবা পাপে এমন করি পুড়িলে কপাল । মহাজনে বক্তচোষ। জমিদার ফোস মনসা দারোগ] সে লাটের ছা য়াল-_ মোদের হৈল কাল প্যাটের জালায় মৈল মরদ বউয়ের গলাত দড়ি, চ্যাংড়া-প্যাংড়া বিকাঁয় হাটত দাঁমে কাঁনাকড়ি। বাঁচার নামে বিষম জালা, সকল হেল ঝালাপাল1 -- ওই তিনট] শাঁলাক মারি খ্যাদাও ঘুচুক এ জগ্জাল__ আর কতকাল সহিবা ভাই ছ্যাশের পোড়া হাঁল। ১২৬ গানট! পড়তে পড়তে চোখ কপালে উঠহিল ধলাইয়ের, পাগল হৈছ নাকি যেতুমি? যোগেন হয়তো কিছুই ব্লত না, হয়তো চুপ করে শুনে যেত, হয়তো বা সচেতন হওয়ার চেষ্টা করতো নিজের অপরাধের গুরুত্ব সম্পর্কে, হয়তে। বা এই ছুর্বল বিভৃষ্ণা ভরা মুহূর্তে ফস করে বলে বসত, হামার কুনো দোষ নাই । ওই মাষ্টারটা! হামাকে দিয়া ইসব নখাছে। হাখি নিখিব চাহিনা, কিন্তু কা।মন যাছু জানে মাষ্টার-হামাক য্যান বশ করি ফ্যালায়। কিন্তু স্বীকাবোক্তিট! করতে গিয়েও যোগেন চমকে উঠল । . হঠাঙ কেমন অন্যনক্ক হয়ে গেছে ধলাই । সরু গৌফের নীচে ঠোটের কোণায় একটুখানি হাসি দেখা দিয়েছে তার । হাসির রেখাট। স্থক্ম যে, খুব সজাগ চোখ না খাকলে রঃ করে নজবে পড়ত না । চোখের দৃষ্টি তার কেমন বুঞ্চিত হয়ে গেছে, চোখের তারা গুলো কোণের এ ঠেলে সরিয়ে এনে কী একটা চকিতের মধ্যে সে দেখে শিপে। ধরজার পিকে পিঠ করে বসেছিল তার মুখোদুখি । লগ্নে আলোয় ধ্লাইয়ের দৃষ্টির বিশেষত্ট। লক্ষ্য করেই পে সঙ্গে সর্দে তাকালো পলাইর়ের পিছন দিকে । আর দ্রেখল -- দেখল চট করে কে যেন ওখান থেকে সরে গেল ততক্ষণাৎ। একটা ছার মূতি মিলিয়ে গেল অন্ধকীধে। ঠিন ঠিন করে অস্পষ্ঠভাবে সাড়। দিয়ে গেল কাঁচের চুড়ি। ওই হায়, ওই চুড়ির শব যোগেনের একান্ত করেই চেন।। আছ বধোঝ। গেল, আজ যেন মনের কাছে এট। আগ চাপা রইল না যে, টাপাধ বরণী থে বন্যা, যার কালে। চোখ থেকে ভ্রমর উড়ে উড়ে পড়তে চায়, তার জীবনে যে সাপের মাথার ৪ সে একান্তভাবে তারই শুধু নর! সেখানে আজ প্রতিদন্দ্ীর ছায়াপাত হয়েছে । আজ যোগেনের গানের চাইতে ও আরো মাদক, আরো! বিভ্রম-জাগানো আকর্ষণ এসেছে স্থুশীলার কাছে__সে ধলাইয়ের ক্ল্যারিয়ৌনেট । দে বাশির স্ুর-_ধে সবে স্বয়ং শ্রাবাধিকাও তার কুলমান বমুনার কালো জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন ! ১২৭ যা বলবে ভেবেছিল, যোগেন বলগ ন1। বরং অত্যন্ত তীব্র কটুণ্ধরে বলে বসল £ হামার গান-হামি য! ভালো! মনে কইনু$ সিটাই নিখি্গ। _তো৷ নিখ। হারা তুমার সাথ বাজাব! পারিমু না । ঝুটামুটা ইসব করি ব্যানে জ্যাল্‌ খাটিবা বিবার কহো ? | _ন। পারিব। চলি চাঁও-_ হঠাৎ বিশ্রী গলায় চেঁচিয়ে উঠল যোগেন £ ক্যাহো তুমীক থাকিবা কহোছে না। খালি মেজাজ আর মেজাজ দেখাছ। খুব বাশি বাঁজাবা শিখিছ-_দেমীকে পা পড়োছে না মাটিত । যোগেনের উত্তেজনায় ধলাই যতটা আহত হল, তার চেয়ে বিস্ময় বো? করল বেশি। হঠাৎ এরকম চেঁচিয়ে ওঠার মানেটা ঠিক হৃদরর্থম করতে ন:. পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল । | যোগেন বললে, চলি যাঁও__আযাখনে চলি যাও । স্ুক্ম গৌঁফের নীচে সরু হাসির বেখাট] ফুটতে না ফুটতেই আবার নিঃশবে মিলিয়ে গেল ধলাইয়ের । _চলিযামু? _,চলি যাও । নীচের ঠোটটাকে দ্রাত দিয়ে চেপে বরে ধলাই বললে, ফের পাও ধরে পাধিলেও নি আসিমু। __তুমীর মতে। ছোটলোকের পাঁও ধরি সাপিতে হামার বহি গেইছে। _হামাক্‌ গালি দিলে? ধলাইয়ের স্বর হিংআ্র শোনাল;ঃ গালি দিলে, হামাক? --ই, দিনু তো। ধলাই বললে, ইটা পাঁক। কথা ? _ হই, পাকা কথা। -_আচ্ছ, হামি চইন্ন _- ১২৮ ক্যারিয়োনেট বাশিটাকে তুলে নিরে ধলাই উঠে পড়ল। চিবিয়ে চিবিয়ে বললে, নিজের পাত নিজে কুড়াল মাইল্লে। যা করিব যিছ, ছুদিন বাদ মাথায় হাত দিই কীঁদিবা হেবে-ইট1 কভিন্থ তুমহাক। _-তখন তুমহাক ডাকিমু না হামি-তীব্র তিক্ত স্বরে প্রত্যুত্তর পিলে যোগেন। ্‌ _পিটাই তেবে মনে বাখিও_ ধলাই দাওয়। থেকে নেমে পড়ল । এন বার বললে, বাড়িত. ডাকি আনি হামাক তুমি অপমান করিলেন । ইয়ার ব্দলা নিতে না পাপ্সি তে চামারের বাচ্ছা নহো! হামি। তারপরেই দ্রুত হাটতে সুরু করল। ঘোগেন রক্ত১চ্গে সেদিকে তাকিয়ে বুইল, ইচ্ছে করল ঘরের মধ্যে উঠে গিয়ে প্রাণপণে সথশীলার গলাটাই সে হাতের মুঠিতে নিশ্পিষ্ট করে দেয়। ১২৯ বৈতালিক--৯ নয় কিন্ত যোগেন সশীলার গলাটা টিপে ধরবে কি, যা ঘটবার তা ঘটে গেছে দিন কয়েক আগেই । এক্ট৷ ছোট দলের সঙ্গে মাইল বারো দূরে বাশি বাজাতে গিয়েছিল ধলাই । শেষকালে পাওনা-গগ্ু। নিযে গণ্ডগোল লেগে গেল দলের টাই ঢোলওলার সঙ্গে । ঢোঁলওলা বলেঃ ওই যা কহিচ্থ গাঁচসিক, অর বেশি একটা পাইসা বেশ না দিমু। -আর তুমি লিবেক্ ঠাই টাকা করি? _-ক্যানে লিমুনা? ভামার ঢোল, হামার দল। তুমি কুন্‌ তালুকদ1েএ ব্যাটাটা আইলেন হে? তুহাক পাচসিকা দিলে তো ওই বাশিঅলাক্‌* দিবার নাগে। --ত তুমি অক্‌ পাচ পাইসা দাও-_হামার বহি গেইছে। হামাক্‌ দু টাকা দিবার নাগিবে । _ক্যানে_ক্যানে ? আযাতে পথ ক্যানে তুমার ? -_ সখ হেবেনা ?-ধলাই চটে উঠল এতক্ষণে £ এমন বাশি দেখিছ কুণে, ঠে? দেখিছ বাপের বয়সে ? _- বাপ তুলিয়ো না কহি দিছ- হ্যা !--ষণ্ডা যোয়ান ঢোলওলা রুখে উঠল ; ত দাতগুলান্‌ বেবাক উড়াই দিমু। ওঃ ভারী বাশি গ্যাখাবা আসোছেন। অমন বাশি হামি__ | ১৩৩ তারপরে ঢোলওলা যা বললে সেটা অনুচ্চার্ধ। ধলাই খানিকক্ষণ বক্ত চোখে তাকিয়ে দেখল তার দিকে, দেখল তার শরীরের ভুমো ভূমো প্শীগুলোকে | বুকভরা কালো লোম লোকটার, নাকের নীচে পুরু গৌফ নানু ভার তলায় এক সাবি পীত-যেন একটা বুনো ভালুকের চেহারা । স্ম যুদ্ধ এখুনি হয়ে যেতে পারে, ও পক্ষ তৈরীও আছে বোঝা যায়, কিন্ত ছার পরিণাম থে কী হবে সেটাও কল্পনা করে নিতে খুব বেশি অস্থৃবিধে হলনা দলাই য়ের | ন্ববু সম্মান রাখবার জন্যে দূর্বল কষ্ঠে বললে, খুব যে তেজ দেখাছ ! মারিবা নাকি হে ? _-মারিমু তো । বেশি চ্যাটাং ফ্যাটাং করিবেন তো হাড়গুলান্‌ লিয়ে বড়িত, ঘুরি যাবা না নাগে- ইঃ! -হামি নি বাজামু তমার দলে। _-নি বাঙ্গাবু তো নি বাজাবু!__কালো গৌফের নীচে এবারে কোদালে কোদালে দ্াতগুলোকে একসার গাঞ্জরের মতো খিচোল ঢোলঅলা | হঠাৎ কতগুলো টাকা পয়সা ছুড়ে মারল ধলাইয়ের দিকে, নাকে হাত দিয়ে বসে পড়ল ধলাই | _লে, তোর ছুই দিনের পাওনা আঢ়াই টাকা । যা চলি যেইঠে তোর মন চাহে । তোর মত বাঁশিওলাক্‌--আবার একচোট অশ্রাব্য গাল। ধলাই আহত কুকুরের মতো! উঠে প্লাড়াল, সাপের মত ফোস ফৌোস করতে করতে কুড়িয়ে নিলে পয়সাগুলোকে, তারপর মনে মনে ঢোলঅলার চোদ পুরুষ উদ্ধার করতে করতে ফিরে চলল । ৰ ঝেৌঁকের মাথায় বেরিয়ে পড়েছিল শেষ বরাতে । এ দেশের 'মান্সিলা"র ( মান্ষগুলোর ) রাতে চলা ফেরা করবার অভ্যাস আছে, তাঁর ওপর শরীর গরম করে নিয়েছে এক পেট তাড়িতে, গো গৌ করে হেঁটে চলল ধলাই। ভগানক রকম বিগড়ে গেছে মেজাজ । দ্রেশ-গায়ের ওপর হাড়ে হাড়ে চটে ৯১৩২ যাচ্ছে পলাই | এ দেশের বোকা-ভাব| দেহাতী গুলে! না বোঝে তার কেরাম”, ন| বোঝে তর ধাশির বাহাছুণী | এই বিছ্িনা দেশের ( বরবেন়্মি-রা€ মাটি) 'বাবিন্দা" গুলোর চাঁল-চলনের কগা মনে পড়লেও পিত্তিশুদ্ধ বরী রী কলে জলে ওঠে তাঁর । তাল মানের বালাই নেই, ডুম্‌ ডূম্‌ করে ঢোল পেটে আলু টাণং ট্যাং শব্দে খালি বাজাতে পারে ফাটা-কাসর | শানাইতে এক “বুট হে, ক্যানে পিল! বাঁঘের ছাল? ছাঁড়া আর কোন স্ুরই ওঠে না! তাঁদের । মোটা! মোট চামড়ার জুতো তৈরী করা, পাঠা-ছাগল-মোধ যা পাঁয় নিধিচাবে ঘেৎ ঘেৎ করে খাওয়া আর গাঁক গাক কবে অশ্লীল ভাষায় ঝগড়া কর-- এই হল রুইদসদের, তার জ্ঞাত-গোত্তরদের একদাত্র উল্লেখষোগা পরিচয় । অথচ, কলকাতা । কত বড় শহর, কেমন স্ব ফিন্ফিনে মিঠি মান্য তালুকদার বাড়ির ছেটবাবুর সঙ্গে গিয়েছিল, কাটিয়ে এসেছিল পুরো একট মস। অতি উগ্র মদের তীব্র প্রভাবের মতে! তার রক্তের মধ্য কলকাতা উকি দ্রেয়, থেকে থেকে সঞ্চাবিত হয় বিভ্রস্থ বিজ্রন্ত চেতন্যের নেপথ্য থেকে। কেমন শির শির করে ওঠে শরীর, রক্ত লাফাতে থাকে বরগের মধ্যে। কলকাতা । | দিনের বেলা বাড়ি গাড়ি মান্ষ। রাত্রে ঝলমলে আলো । এত আলো! সমস্ত মনটাকে যেন আলো! করে দেয়। কলকাঁতীতেই চা খেতে শিখল ধলাই | যেখানে খুশি বসে যাও, ইচ্ছে মতো চা খাও এক ঠোডা তেলেভাজ; দিয়ে, গরম ফুলুরী, নরম আলুর চপ। তিন আনা দিলেই বায়োস্কোপ, আর আট আনা খরচ করলে-__ উস্স-শব্দ করে লাল-টানার মত একটা আওয়াজ উঠল ধলাইয়ের জিভে আর দাতে। যেন স্বর্গ থেকে ছিটকে পড়েছে গলা ভর্তি পচা পাকের মধ্ধো । এআর সহ্য হয়না! আলোয় ভরা কলকাতার পাশে পাশে ধুলোয় আর বন-বাদাড়ে ভরা এই রিন্দের তুলনাঁটা যখনি মনের মধ্যে এসে দেখা দেয় তখনি যেন দুঃসহ একটা যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠতে ইচ্ছে করে তাব। ২৩২. এ তার দেশ নয়। কোন মানুষেরই দেশ নয়। এখানকাদ বাবিন্দাদেল হাম বললে কপকাতীর লাগাম উট ছাকডা গাড়ির খোডা গুলো পন হে। তো ধরে হেসে উঠবে বলে মনে হয় তাঁর । এখানকার কট্টিকারী আর মবা ঘাঁসে ভরা মাঠের মধো চরে বেড়ায় মে গোর ছাঁগলগুলো, তাঁদের সঙ্গে কোনো। পার্থকাই নেই এদের । এই ঢোলঅলা লোকটাই তাঁর নমুনা । তবে ও লোকটাকে গোরু-ছাগল বললে কম বলা চয়__আসলে বলা উচ্তি ষাঁন়্। এক যোগেন কবিওলার মধ্যে একটু ভদ্রতা আছে । গান-বাজনা কিছু শিখেছে 9 মনে হয়। কিন্ত বুদ্ধিট। বড স্বনিপের নয় যৌগেনের। তাঁর মতপবটা এখনো ঠিক ধরতে পারেনি ধলাই | বদ্ধি-শুদ্ধি তে। যথেষ্ট আছে, লেগে? নিতীন্থ খারাপ নয়, কিন্ধ লেখে বী? বাজাশ্তদ্ধ লোককে গাল দিচ্ছে, গাঁল দিচ্ছে পুলিসকে, গাল দিচ্ছে জোত্দারুকে | কিন্ব এতো ঠিক হচ্ছেনা, অকারণে খোৌঁচ1 দে ওয় হচ্ছে ঘুম বাঘের গায়ে | একটা কেলেঙ্কারী হবে শেষ পযন্ত নাকের জালে চোখের জলে একাকার ইতে হনে ফোগেনকে। যোগেনের কথা মনে পড়তেই ধলাইয়ের চমক ভাঙল । চোখ তৃলে দেখে কালো আকাশে ফিকে হয়ে এসেছে রাত্রির নক্ষত্রগুলো, ছাই রঙ ধতেছে পব্দিকে । পাখির কিচির মিচির শুরু হয়েছে গাছে গাছে । পথ থেকে উঠেছে শিশির ভেজ। ধুলোর গন্ধ, পায়ের পাতায় জড়িয়ে ধরছে ভিজে ভিজে পলো । ভোর হয়ে এসেছে । শেষ শীতের ভোর। মাগের ওপর, গাছের দাথায় আবছা কুয়াশ।। তাড়ির নেশাটা1! মরে গেছে এখন, শীত ধরেছে শরীধে। টপ করে এক ফৌঁট। অত্যন্ত শীতল শিশির এসে পড়ল কপালে, ফোসক। পড়বার মত যন্ত্রণা বোধ হল একটা, কুঁকড়ে গেল গায়ের চামড়|। একটু গরম হওয়া দরকার । অস্থৃত এক ছিলিম তামাক। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে? থেমে দীড়াল ধলাই | রোদ নেই, তবু বরাবরের অভ্যাস মতো চোখের ওপর হাতট] তুলে ধরে তাকালো সামনের দিকে । চেনা যাচ্ছে সামনের ১৩৩ গা-টাকে | ওই তে] জোড়-টিলা, বাঁদিকের টিলাটার মাথার ওপর ভ্রিভজ ধরণে হেলে আছে বাজে পোড়া তালগাছটা | £1--টাই সনাতনপুর । আঃ-- অনেকদিন পরে ভুলে যাঁওয়। চায়ের হ'*ট। মনে পণ়্ল। কলকাতার স্ই মিষ্টিগরূম চা, পাঞ্জাবী দোকানে চায়ের মালাই । সেই রকম এক কাপ চা যদি পেত এই শীতের আড়ষ্ট, ক্লান্ত, মন্থর সকালটাতে । ক্লান্তি জুড়িয়ে যেতো, গরম হয়ে যেতো শীতের বাতাসের ছ্োাতে শরীরের মধ্যে জমাট বেধেআস! হিমবক্ত । এখানে অবশ্য সে চা জটবার আশা বুথা। তবু যোগেনের বাড়িতে ছিলিমখানেক তামাক যদি মেলে সেও মন্দ হবে না। বিডিতে আর শানাচ্ছে না তার, দরকার খানিকট। কড়া দ'-কাটা তামাক । চারদিকে শীতের কুয়াশা । তাই রাঙা আকাশ ফ্াকাশে শাদা হয়ে আসছে, চাদ্টাকে দেখাচ্ছে মড়াঁর খুলির একট1 ভাঙা চোক্লাঁর মতো । পায়ে পায়ে লেপটে ধরেছে শিশিরে ভেজা ধুলো । আবার হাড় কাপানো একবিন্দু শিশির এসে পড়ল ধলাইয়ের মুখে। কড়া তামাকের সম্ভাবনার গলাটা প্রলুব্ধ হয়ে উঠেছে, পথ কাটবাঁর উদ্যম বেড়েছে খানিকটা । জোরে পা চালিয়ে দিল ধলাঁই । কলকাতা । বহুদূর থেকে তার লক্ষ ল্ষ আলোক চোখের মায়াবী সঙ্কেতে ডাঁক দিচ্ছে ধলাইকে । ছোট জাত বড়জাত নিয়ে মাথা ঘামায়ন' কেউ, ধুতি পরলেই বাবু। অনায়াসেই ধলাই নিজের জায়গা করে নিতে পারে সেখানে । সে গুণী। ওখানে সমজ্দার মানত আছে, তার গুণের কদর করবে। জোড় টিলীর কাছাকাছি পৌছুতে আরো অনেকটা ফস হয়ে এল পৃথিবী । পাখির কিচিরমিচির বেড়ে উঠেছে চারদিকে । বাতাসে দূর থেকে মোরগের দরাজ গলা ভেসে এল । স্থবেনের বাঁডির পেছন দিয়ে বান্তাটা। রাস্তার লাগাও একটা ডোবা, ১৩৪ তার ধার দিয়ে পৌছুতে হয় বাড়ির সদরে । ডোবার পাড়ির সেই ফালি পথটুকুতে পা দিতেই মুচিপাড়ার দুতিনটে কুকুর হাঁক দিয়ে উঠল সমস্বরে, আম্মু ডোবার ঘাট থেকে যে মেয়েটি একটা মেটে-কলসী বগলে কনে উঠে আসছিল সে একেবারে থমকে দাড়িয়ে গেল ধলাইয়ের মুখোমুখি । বাঃ বাঃ খাসা। বড় ভালে জিনিস চোখে পড়ল সকালে, দিনট। কাটবে ভালো ! চৌদ্দ-পনেরে: বছরের দিব্যি ফুটফুটে মেয়েটি, ভোরের প্রথম ছোয়াতে মুখখানা ঢলঢণ করছে একেবারে । চোখ ছুটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, তবু চোখের ক্সিপ্ধ শঙ্কিত দৃষ্টিটাকে অন্থমান করে নেওয়া চলে। ধলাই বললে, মোক দেখি ডর খায়েন নাঁ। হামি চিন্হা মান্থষ__ধলাই । মেরেটি ঘাড় নাড়ল। বোঝা গেল ধলাই আগে তাকে না দেখলেও মে তাকে দেখেছে । মুছুত্ববে বললে, ধলাই বাশি ওয়াল ? ই, হ, বাশিওয়াপ।-পারি5র দিতে গিয়ে আম্মপ্রসাদ বোধ হল ধলাইয়ের। মনে হল এমন মিষ্টি করে নিজের নামটা! সে কোনোদিন শোনেনি । --এত ভোরে কুন্ঠে থাকি আহলেন %-আবার মৃছুন্বকে, প্রশ্ন এল | _-ভিন্‌ গাওত্‌ গেইছিন্ভ আরো কী বলতে যাচ্ছিল ধলাহ, কিন্তু মুখে আটকে গেপ কখাটা। তার চোখের দৃষ্টিট। ধক করে জলে উঠেছে তথন। কাথে জলভরা! কলসী নিয়ে একদিকে একটু কুজো হয়ে দাড়িয়েছে মেধেটি, গায়ের কাপড়ট। সবে গেছে । আর সেই অবসরে সম্পূর্ণ আত্মপ্রকাশ করে বসেছে চন্দনের ফোট। পরানো সোনার পাত্রের মতো প্রথম যৌবনের একটি অপুব পরিপূর্ণতা । দলাইরের দৃষ্টিটা লক্ষ্য করে মেয়েটি সন্ত্রস্ত হাতে কাপড়টা ঠিক করে নিলে, আড়্টম্বরে বললে, সরি যান । এতক্ষণে ধলাইয়ের খেয়াল হল সে পথ আটকে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ১৩৫ এর মধ্যেই শরীর গরম হয়ে উঠেছে তার, বিনা চা কিংনা ভামাকেই উন্তু ইয়ে উঠছে হিম্রন্ত় | ধলাই নেশাভর! গলার বললে, একটু খাড়াই থা ক্যানে। ছুইট। কখ। কহিশে ক্ষেতি কী হেবে কী নাম তুমার ? ন্ুশীল। | _স্থশীল।? বড মিঠা নাম। যোগেন কী হয় তুমার? _ক্যাহোনা, কুটুম । দলাই দু পা এগিয়ে এল £ হামার বাশি শুনিছ ? ই | _-কলিকাতার গেইছ কুনোদিন ? _না। ধলা বললে, তীজ্জব জাযগ। হে ই কলিকাত। | ক্যাতে মটর গাড়ি, ক্যাতে বাড়ি, ক্যাতে আলো । কলিকাত। যিতে তুম্হা মন চাহেনা ! সুশীল। বললে, চাহে তো । ফের যামু কার সাখ? -হামি লিবামু! যিবা? স্থশীলা বললে, ধ্যা্চ। ধ্লাই নেশাগ্রস্তের মতে| বললে, হামি পি যামু। বিহ| কগিমু তুম্হাক। শধ্যাৎ। হামার বিহা হেবে যোগেনের সাথে। ধলাই বললে, যোগেনের সাথ? উহাক্‌ বিহা করি কী ফায়দা হেবে তুমহার? উ তো ভাইর ঘাড়ত্‌ চটি বসি খাছে, খ্যাদাই দিলে কী হেবে দশাট।? হামার সাথে চল। শাড়ী দিমু, সোনা দিমু, পাকা বাঠ়িত থাকিব| দিমু এক মুত ধ্লাইয়ের দিকে তাকালো! সুশীলা। ভোরের আলোয় চমৎকার লাগছে লোকটাকে । আড়াল থেকে বাশিও শুনেছে তার। যোগেন সম্বন্ধে একটু মোহ আছে বটে, কিন্ত দূরের মানুষটিকে এই মুহূর্তে আরো আশ্চথ। ১৩৬ আরে রৃহন্তময় লাগছে। স্থশীলার মনের ভেতরে যেন কেমন ছলছলিয়ে উঠল। পুরুষের আলিঙ্গন পেয়ে যেমন যৌবন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে সমস্ত চেতনায়, তার সঙ্গে সঙ্গে সাড়। দিয়েছে মুচিদের সহজ উচ্ছৃঙ্খল রক্ত । বড় চেন! হয়ে গেছে যোগেন, বড় বেশি স্বাভাবিক হয়ে গেছে তার কাছে। আর তা ছাড়া তা ছাড়া অত্যন্ত সাবধানী, অত্যন্ত হিসেবী। সময় আর স্থুযোগমতো মাঝে মাঝে স্বশীলাকে বুকের মধ্যে টেনে নেয় বটে কিন্তু তাতে আশ মেটেনা স্ুশীলার। একটা তীব্র অন্বস্তিতে গায়ের মধ্যে যেন জালা ধরে যায় তাঁর-__ আরো! কিছু চায় সে, আরো! অনেকট। যেন প্রত্যাশা করে। প্রত্যাশ। করে শনীরের প্রতিটি রোমকুপে, প্রতিটি রক্ত-মাংসের কণায় কণায়। পিষে যেতে ইচ্ছে করে তার, ইচ্ছে করে যেন ভেঙেচুরে তচনচ হরে যেতে । কিন্ত তার সে প্রত্যাশ। পূর্ণ করেন! যোগেন। সে ভীরু, সে সাবধানী । আগুন জালাঁতে পারে, কিন্তু নেভাতে জানেন| । প্রেম আছে, কিন্ধ দাবী নেই তার। ধলাই আবার বললে, কী ভাব্ছি সৌনাধ ব্ধনী কন্যা, কথ! কহিছ না যে? _ধ্যাৎ। _ক্যানে ধ্যাত ধ্যাৎ করোছ ! তুম্হাক দেখি হামার মন মজি গেইছে কইচ্য। | হামার সাথ কলিকাতায় চল, রাঁজীর হালত, রাঁখিমু তুমহাক্‌-_-এই কহি দিলু । _-পথ ছাঁড়ি দেন। -দিমু। তার আগে কহ তুম্হার সাথ ফের দেখা হেবে? --হেবে। | _কাইল ? এতক্ষণে চোখের একট। ভর্দি করলে স্থশীলা, কথার চাইতেও সে দৃষ্টির ভেতরে ভার বক্তব্য ঢের বেশি স্পষ্ট হয়ে ফুটে বেরুল যেন। বললে, পথ ছাড়ি দ্েন। ১৩৭ বৈতালিক---৯।১ -দিমুং কিন্ত-_ তার আগেই ধলাইয়ের পাশ দিয়ে চট করে সরে গেল স্থশীলা। ইচ্ছের হোক আর অনিচ্ছেয় হোক একটুখানি স্পর্শ যেন দিয়ে গেল তাকে, পরক্ষণেই ঝাপ ঠেলে অদৃষ্ত হয়ে গেল বাড়ির মধ্যে একমুহুর্ত মূঢ়ের মতো দাড়িয়ে রইল ধলাই । চিকচিক করে উঠল বাঁসনা- লুব্ধ চৌখছুটো, মৃছু হাসি ফুটে উঠল সরু গৌফের নীচে বিচক্ষণ ঠোঁট ছুটোতে। তারপর গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে জোর গলায় হাক দিলে, হে যোগেন জাগিল! নাকি হে যোগেন ? পূবের আকাশটা তখন আস্তে আস্তে রাও! হয়ে উঠছে । কিন্ত উঠোনে বসে আর ধাঁনসেদ্ধ করতে মন চায়ন। স্বশীলার । খলাইয়ের কথাট! কানের কাছে ভাসছে ক্রমীগত ।--কলিকাতায় লি যাখু, রাণীর হালে রাঁখিমু-. কলকাতা! মে আশ্চর্য দেশটার কথা কতজনের মুখেই যে শুনেছে । শুনেছে সে কলকাতা না দেখলে জীবনটাই অর্থহীন হয়ে যায় মান্গষের। এক কলকাতায় যাওয়ার আকর্ষণই ঘর থেকে টেনে বার করে নিয়ে যেতে পারে লোককে । তাদের গীয়ের হীবালাল সেই যে কলকাতায় পালিয়ে গেল মা- বাপ-বৌকে ফেলে, আর ফিরলই না। আশ্চর্য দেশ কলকাতা তাকে ফিরতে দিল না। কিন্ত কারণট! কি শুধুই তাই? বীশের হাতা দিয়ে হাড়ির ধানগুলো৷ নাড়তে নাড়তে স্থশীলার বুকের ভেতরটা কেমন তোলাপাড়া করতে লাগল। কারণট! শুধু তাই নয়। পরিচয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধলাইয়ের চোখে সে যা দেখতে পেল যোগেনের ১৩৮ চোখে তা নেই কেন? শান্ত ভীক যোগেন। তার দুষ্টিতে কেমন ঘোর লাগাঁ। স্থুশীল!কে কাছে টেনে নিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে চায়, ধেন স্ে্ভরে দিতে চায় ঘুম পাড়িয়ে । কিন্তু ঘুমুতে কি চায় সুশীলা ? ন1। শরীরের রক্ত তার মাতাঁমাতি করতে থাকে । পা থেকে মাথা পর্ন্থ কী ছিটকে ছিটকে বেড়ায় আগুনের মতো । ছুবছর আগে একবার নিছেয় কাঁমড়েছিল তাকে, মনে হয় তার সেই তীব্র ভয়ঙ্কর জাঁলাটা1 যেন আবার ফিরে এসেছে এতদিন পরে। সজোরে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে শীলা । _ এক একদিন বাজে ঘুমুতে পারেনা । ছটফট করে শুয়ে শুয়ে, অস্থিরতায় কী করবে ভেবে পায়না যেন। তারপর যখন যোগেনের মার চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে ঘন হয়ে, ঘুমের মধ্যে তার কথা বলা শুরু হয়ে যাঁয়, তখন অসীম অস্ন্তিতি সে উঠে বসে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করে যোৌগেনের ঘরে, তার বুকের মধ্যে নিঃশেষে নিষ্পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আকাজ্ষা জাঁগে। _-হামি মরি গেলাম, হামি মরি গেলাম কিন্তু ছুটে যেমন যেতে পারেন! স্থশীলা, তেমনি বলতেও পারেনা । শুধু বুকের মধ্যে যেন কাঁঞ্চননদীর বান আসে, ধড়াস্‌ ধড়াস্‌ শব নিজের কানেই শুনতে পায় যেন। উঠে পড়ে বিছাঁন। ছেড়ে, পা টিপে টিপে এসে দীড়ায় যোগেনের ঘরের ব্ড়ৌর আড়ালে । রেড়ীর তেলের আলোয় উবু হয়ে বসে লিখছে যৌগেন । জ্লজল করছে তার চোখ, অদ্ভুত একটা দৃষ্টি সে চোখে। সে দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পারেনা স্থশীলা, বুঝতে পারেনা কিসের জন্যে এমন করে অতন্দ রাঁত কাটিয়ে যাচ্ছে যোৌগেন, কিসের পাগলামিতে সে কাগজের ওপর হরফের পর হরফের জাল বুনে চলেছে । মনে হয় একটা আলাদা মানুষ । এ মানুষ তার জান। নেই, তার চিন্তা দিয়ে একে ছোঁয়া যাবেনা । থস্‌ খস্‌ করে লিখে যাচ্ছে, কখনো বা দোয়াতে ১৩৯ কলমটাকে ডুবিয়ে রেখে হাতের াংলগুলোকে কামড়াচ্ছে হিংস্র আও ক্ষিপ্তভাবে। যেন নিজের মধ্যে অনবরত কী একটা ভাঙচুর করছে সে, কিছুতে তার স্বস্তি নেই, কৌনোমতেই যেন সে তৃপ্তি পাচ্ছে না। এ কোন্‌ মান্ষ? এ কোন্‌ জাতের? এক একটা নিভৃত অবপরে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে যে তার চুলে কপালে আঙুল বুলিয়ে দেয় এ সেও নয়। এর সঙ্গে স্থশীলার পরিচয় নেই-__-এও স্থশীলাকে চেনেনা। এর কাছে গিছলে সেকি বলতে পারে, আমি ঘুমোতে পারছি না, আমাকে তোমার বুকের ভেতরে আশ্রয় দাও? বাঁচাও আমাঁকে, রক্ষা করে] এই অসহা ছুর্বোধ মন্ত্রণা থেকে ? দরজাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছটফট করে স্থশীলা। চলে যেতে চীয়, চলে যেতে পারে না। কিসে যেন আকড়ে ধরেছে তাঁকে, তাঁর পা ছুটো মাটির ভেতরে ঢুকে গিয়ে শক্ত আর অনড় হয়ে গেছে। উঠে দাড়িয়েছে যৌগেন, পাঁয়চারী করছে ঘরম্য়। তারপর গুন গুন করে গান ধরেছে £ ক্ষ্যাতে ক্ষ্যাতে ফসল ভরা হামার সোনার মাঁটি, সেই ফসলের হতাশ লিয়ে মিছাই মরি খাটি! গায়ের লোহু হৈল পানি, ভূখার জ্বালায় যায় পরানি, আর ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলিয়। তুমি খাছ ক্ষীরের বাটি, হায়রে বরাত, হায়রে-_ | নড়ে সরে যেতে চায় সুশীল । হাতের চুড়িতে শব্ধ হয়, খস খস আওয়াজ ওঠে শাড়ীতে। তীব্র তীক্ষ স্বরে যোগেন বলে ওঠে £ কে? ৯৪৭ বুকের মধো হৃংপিঞ প্বক্‌ করে ও স্থশীলার ৷ নির্জন নিঃপন্দ বাত্রি। সমন্ত বাড়ি ঘৃমৃচ্ছে, কেউ জেগে নেই কোথাও । রাত্রির এই অবকাঁশে,অনেক কিছু ঘটে ধেতে পারে, আবির্ভাব ঘটতে পারে যে কোনে! একট! অপ্রত্যাশিত ঘটনার । যোগেনের মন কি উদ্বেল হয়ে উঠতে পারেনা মাত্র কয়েকটি মুহর্তের জন্যও ? *মাবার তীক্ষ স্বরে সাড়া আসে : কে? _ক্যাহো না, হামি। হামি সুশীল। | - স্ুুশীলা-_ওঃ 1--একট1 নিরুত্তীপ শান্তি ভেসে আসে যোৌগেনের স্বরে £ আযাতে 'আইতে? (রাইতে) জাগি জাগি কী করোছ? _যাঁও- ঘুমাও । যাঁও-ঘৃমাও ! স্ত্শীলার পাঁ থেকে মাথা পর্যন্ত জলে ওঠে একসঙ্গে । যেন পাথরের মতো! মানষ__শরীরে গরম রক্ত নেই একবিন্দও। অথচ এই রকম বাত্রি--এরকম নির্জনে ছুটি জোয়ান ছেলেমেয়ের দেখা, তার পরেকাঁর ব্হু আশ্চর্য মন মাতানো গল্পই তো] শুনেছে স্থশীলা' | শুনতে শুনতে মুখ চোখ দিয়ে ৭1 ঝণ] করে যেন রক্তের ঝণঝ বেরিয়ে এসেছে, মনে হয়েছে আর যোগেন? যাও__ঘুমাও ! হিতভ্রভাবে স্থুশীলা ফিরে এসেছে ঘরে 1: '*হঠীৎ কেমন একট] গন্ধ-_ধান ধরে এল বোধ হয়। স্থুশীলা অপ্রতিভ ভাবে আবার হাতা দিয়ে নাড়তে লাগল। আর ধলাইয়ের দৃষ্টি! ভোরের বছা আলোতেও সে তাঁর নিজের কথা বলে দিরেছে। স্থুশীলা বুঝতে পেরেছে তাঁকে । অত্যন্ত পিপাসার সময় যেন এক ঘটি ঠাণ্ডা জলের স্গিগ্ধ মধুর সম্তাবন! বয়ে এনেছে ধলাই । _কলিকাতায় লি যামুঃ রাণীর হাল্ত রাখিমু-_ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় যোগেন_কিন্ত এ তো তা নয়। আলকাপওল! বাড জেগে শুধু গানই লিখতে জানে, আর কিছু বোঝবার ক্ষমতা নেই তার ১৪১. কিন্ত বাঞ্সিওলা জানে । তার দৃষ্টি তার কথা সমস্ত যনের মধো বারে বারে ওঠাপড়া'করছে । সে জানে স্ুুশীলা কী চায়, স্থশীলা জানে তাকে তা দিতে পারবে বাশিওয়ালা | তা! ছাড় কলকাঁতা_-কত দরের দেশ! কত দেশ, কত নদী, কত জঙ্গল পার হয়ে সে কলকাতা! সেই বহুদুরের হাতছানি স্শীলার কানে এসে পৌছয়। বহুবার শোন] বাশিওয়ালার বাশির স্বর মনের কাছে নতুন করে বাজতে থাকে । নতুন করে বাঁজল বইকি। বাঁজল পরের দিন ভোর বেলায়। তখনে! ভোর হয়নি, মেটে মেটে কাকজ্যোত্স্না চারদিকে ৷ হাঁলক1 হয়ে আসা ঘুম চকিতে ট্রকরো টকরো হয়ে যেন ছি'ড়ে গেল স্থুশীলার। আকুল কান্নার মতো! মৃদু বাশির শব্ব। শেষ রাত্রির শান্ত হাওয়ায়, ভিজে মাটি আর শিশিরের গন্ধের সঙ্গে মিশে সে বাশির স্থর ছড়িয়ে যাচ্ছে । সে স্থুবে ধলাইয়ের উজ্জল তীব্র চোখের দৃষ্টি জড়িয়ে আছে, তার সঙ্গে ছড়িয়ে আছে বহুদূর কলকাতার মোহময় আহ্বান। যোগেনের মা অঘোরে ঘুমুচ্ছে। একবার তাঁর দিকে তাকিয়েই নিঃশবে উঠে পড়ল স্ুশীলা, অন্ধকারের মধ্যে প্রায় নিঃশবে ঝাঁপ খুলে বেরিয়ে এল বাইরে । এমন অনেক রাত্রিই তাঁর ব্যর্থ করে দিয়েছে ফোগেন, কিন্ত এই সকালটাকে সে নষ্ট হতে দেবেন] । কিন্তু অত কথ! কী করে জানবে যোগেন আল্কাঁপওয়াল? মহকুমা শহরে মেয়েদের যে রূপ দেখে সে ভয় পেয়েছে, যে রূপের কথ। ভাবলেও তার শরীর আতকে ওঠে, তারও যে একট! সহজ তাগিদ আছে সে তা জানেনা । তার ভুলের মিথ্যে বোঝা বইতে কেন রাজী হবে স্ুশীলা, কেন রাজী হবে তার স্বপ্ন লোকের সোনার কন্য।? .বক্ত মাংসকে ভূলে গিয়ে গাঁনের রডীন্‌ ফান্ঠটষ তৈরী করতে থাকুক যোগেন, কিন্তু ধলাই হিসেব বোঝে, মাটির কাছে তার যেটুকু স্াধ্য পাওনা, তা সে আদায় করে নিতে জানে কড়ায় গণ্ডায়। ১৪২ বংশী মাষ্টার চলে যাওয়ার পরে খানিকটা হাসাহাসি করেছিল চট্টরাজ। এই শীতের সকালেও পায়ে তেল ডলতে ডলতে ঘর্মাক্ত হয়ে যাচ্ছিল মহিন্দর আর চট্টরাজের ধারালো ধারালো! কথাগুলো ছুরির ফলার মতো এসে বিধছিল বুকের মধ্যে । কিন্তু জবাব দ্রেবার জো নেই--সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকোবাঁর মতো দুঃসাহস নেই তার। সামনে কীদড়ের' কাদ! মাখা এক হাটু জল। তিনঘর ডোম বাস করে গ্রামের প্রান্তে, তাদেরই গোটা কয়েক শৃয়োর হুটোপুটি করছিল কীাদড়ে। সেদিকে তাকিয়ে চট্টরাজ বললে, দেখেছিস মহিন্দর ? _দেখিছু। _তোরা ওই শুয়োর গুলোর মতো-কাঁদাই ঘেঁটে মরবি চিরটাকাঁল। --ই-গৌজ হয়ে জবাব দিলে মহিন্দর | -_-অ, বাবুর রাগ হয়েছে বুঝি? মানে ঘা লেগেছে মানী মানুষের ? _হাঁমাদের ফের মান কুন্ঠে বাবু? হামর! মুচি-ছোট নোক-_ _বাঁঃ, বাঃ বিনয়ের একেবারে অবতার-ত্ব্য।?-টানের চোটে হুকোটাকে প্রীয় কাটিয়ে ফেলবার উপক্রম করে চট্টরাজ বললে, আবার আত্মদর্শনও হচ্ছে দেখি । বেশ, ভালো ভালো । তা এই মাষ্টারটি জুটল কী করে? _ক্যামন করি কহিমু বাবু? কুন্ঠে থাকি আসোছে ওই জানে । ১৯৪৩ _-ভাঁ, মাষ্টারই বটে ! আরে ব্যাট! একে জাতে নাপিত, তারপর “মেঘনাদ বধই পড়েনি! লেখাপড়া শিখতে হলে আগে “মেঘনাদ বধ” পড়তে হয়_স্থ্য, বই বটে একখানা । কী ভাষা, আর কী তার জোর! হাতের হু'কোটা মাথার ওপর জয়োদ্ধত পতাকার মতো তুলে ধরে চট্টরাজ আবার ভৈরব স্বরে শুরু করলে £ “অধীর হইলা শূলী কৈলাস-আ'লয়ে, লড়িল মস্তক জটাঁ, ভীষণ গর্জনে গজিল ভূজঙ্গ বুন্দ | ধ্বক্‌ ধ্বক্‌ ধ্বকে জলিল অনল ভালে । ভৈরব কল্লোলে কল্লোলিল ভ্রিপথগ!-_-” বলি, বুঝলি কিছু? _ত্্যা? বন্তৃতার দাপটে পা টেপ! বন্ধ হয়ে গেছে মহিন্দবের, নির্বাক বিহ্বল দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে চট্টরাজের অপরূপ মুখ ভঙ্গির দিকে। অপূর্ব! একটা দেখবার জিনিসই বটে। কোথায় লাগে গাজনের সং? একবার পুতুল নাচ দেখেছিল মহিন্দর--রাম-রাঁবণের যুদ্ধ; তাঁরই ভম্মলোচনের মতো হাত-পা ছু'ড়ছে নায়েবমশাই আর আওয়াজ যা তুলছে তা শুনে মনে হয় যেন হামলা করছে একটা এড়ে বাছুর । -বলি বুঝলি কিছু? মহিন্দর সভয়ে বললে, আইজ্ঞা না। --তবু এসব উট্‌কেল-বিটকেল সখ চেগেছে, কেমন? পি'পড়ের পাখা ওঠে মরবার জন্তে । বলি ওরে ও মুচির পো, সেই হাতী আর কোলা ব্যাঙের গল্পটা জানা আছে? --আইজ্ঞা না। --ওরে শোন্‌। শুনেজ্ঞানলীভ কর। হাতী যাচ্ছিল রাস্তা! দিয়ে, তাই ১৪৪ ডোবার কোলা ব্যাংয়েরও সাব হল হাতীত মত মোটা হবে। সেই আনন্দে সে তো পেট ফোলাতে শুরু করল। তারপর কী হল জানিস? -_-ত মোটা হই গেইল্‌ নাকি? -ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলে মহিন্দর । 5 মোটা হই গেইল্‌?-দাঁত খিচিয্ে উঠল চট্টরাজ: ওরে ব্যাটা গাড়োলেরা, ও রকম মোট তোরাও হবি মনে হচ্ছে। ফুলতে ফুলতে শেষে ফট্টাস্‌--ফেটে একদম চৌ-চাঁকলা ! _ফাঁটি গেইল্‌? _ইঃ, গেইল্‌ তো ।-তেমূনি মুখভঙ্দি করে চট্টরাজ বললে, চাদ, তোমরাও একদিন যাবে। যা বাড়াবাড়ি আরম্ভ করেছ তোমাদের আর বেশি দেবী আছে বলে মনে হচ্ছে না আমার । স্থখে থাকতে ভূতের কিল পড়ছে পিঠে. যেদিন সতাকারের কিল পড়বে সেদিন ও ভূত ছেড়ে যাবে। বন্মো এখনো আছে, জমিদারের জমিদারী লাটে চড়েনি আজ পধন্থ। হতভাগ! গো-ভাগারা, ওসব বদবুদ্ধি এখনে! ছেড়ে দে _-ওই অলক্ষুণে মাস্টারট তোদের বরাতে ধূমকেতু হয়ে এসেছে বুঝলি ? -ই বুবিন্ু তো। চট্টরাজের মনে হল ঢের বোঝানে। হয়েছে, এতেই শিক্ষা হয়ে যাবে মুচিদের । কিন্তু সন্ধ্যের পর সেরটাক খাসির মাঁংদ আর সেরখানিক ক্ষীর খেয়ে নরম বিছানায় শুয়ে পড়বার পরেও ঘুম এল না। পেট গরম হয়ে উঠেছে, গরম হয়েছে মাথাটাও। চট্টরাজ উঠে বসে এক ছিলিম তামাক ধ্ধালেন নিজের হাতেই । কাদড়ের ধারে শেয়াল ডাকছে, বাইরে থেকে আসছে ঝি'ঝি'র কলধ্বনি । একা ঘরে কেমন ভয় ভয় করে উঠল শরীর | না-_-এত সহজেই ভোলা! যায়ন। ব্যাপারটাকে-_ধাম! চাপা দিয়ে দেওয়া যাঁয়না। এসব বড় খারাপ লক্ষণ। শনৈঃ পন্থাঃ খনৈঃ কম্থাঃ শনৈঃ পর্বত লজ্ঘনম্‌। এ চোখ মেলবার স্থচনা, এমনি করে আস্তে আস্তে চোখ দুটো যদি সম্পূর্ন খুলে বসে তাহলে হালে আর পানি ১৪৫ বৈতালিক -:১০ পাওয়া যাবে না শেষ পর্বস্ত। আক যেটাকে কেঁচো মনে করে তাচ্ছিলা ক হচ্ছে সেটা! যে ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা কেউটের বাচ্চ! নয় এমন প্রতিশ্রতিই বা জোর গলায় দিতে পারে কে? অভিজ্ঞত| অল্পে অল্পে হচ্ছে বই কি। দুহরফ পড়তে শিখেছে কি ব্যাটাদের মাতব্বরীর যন্ত্রণায় টেকা দায়। শহর থেকে আনিয়েছে চার পয়স: দামের নতুন প্রঙ্গান্বত্ব আইনের বই, কিছু বলতে গেলেই গড়গড় করে আউড়ে দেবে ঃ “চত্রবৃদ্ধি স্থুদ দিব না বসত-বাটি নীলাম হবে না, বিশ বছরের কিস্তিবন্দী--” ায়েব মশাই, এই হইল্‌ নতুন আইন । নতুন আইনই বটে। সবই নতুন্-_সারা ছুনিয়াটাই প্রায় নতুন হয়ে যাচ্ছে আজকাল! আগে দ্াখিলার চেকে পাঁচ ট'কা লিখে দিয়ে সাত টাকা আদায় করা প্রায় স্বাভাবিক নিয়ম ছিল, পাওন'-গণ্ড যে কত দিকে ছিল তার প্রায় হিসেবই নেই। আরে বেশিদুর যেতে হবে কেন, একট| কাঁছারীতে গেলে না হোক পনেরো! ষোলটা টাকা নছগর তো মিলতই। এখন নগর দুরস্থান_একটা পাঠা, ছুটে। লাউ বড় জোর। তাঁও দিতে কতরকমের গাইগুই-যেন ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে ব্যাটাদের | আর এর জন্ডে দায়ী এই ইন্কুলগুলে!। জেলা বোর্ডের খেয়ে দেয়ে আর কাজ জুটল না, এই রকম কতগুলো আজে বাজে ল্যাঠার স্ষ্টি করে বে আছে। মুখ ফুটিয়েছে, চোখও ফুটিয়েছে। প্রতিবাদ যেমন করে, তেমনি মাঝে মাঝে রসিকত্বাও করে £ ও তশিলদাঁর মশায়, ইটা কী হইল্‌্? হামি দি্থু পাচ টাকা, তুমি দাড়ে তিনটাকা নিখিলেন? ভুল হই গেইছে, ঠিক করি নেখেন। বলে মিটি মিটি হাসে । কিন্তু সে হাসি বিছুটির ঘায়ের চাইতেও মারাত্মক, ১৪৩৬ কারু চেয়েও অসহ্য জালা । একটু সাযান্ত রসিকতা, কিন্তু তার ধার যেন কেটে কেটে বসতে থাকে বুকের মধ্যে । বেশ বোঝা যাঁয় উপরি-পাওনার দুগ শেষ হয়ে গেছে, রস মরে গেছে অমন সোনার চাকরীর । /কাোখেকে এই মাষ্টারগুলোও যে আমদানী হচ্ছে ভগবান জানেন। এই বশী পরামীণিকের হাল-চাল দেখে তো দস্তরমত সন্দিপ্ধ হয়ে উঠেছে মন। আর একবার নাড়াচাড়া দিয়ে দেখতে হচ্ছে তাঁকে । কী উদ্দেশ্টে অমন গডগড় বরে অতগুলো মিথ্যে কথা আউড়ে গেল, আসল মতলব্ট] কী তার? কোনোরকম দাগী মাসামী-টাসামী নয় তো? ছু, আশ্চষয নয়। চট্ুরাজের কপালে কতগুলো কালো! কালো রেখা ফুটে উঠল। এই বয়েসে অনেক" দেখল সে, আর যাই হোক মানুষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতাটাঁও ঘটেছে প্রচুর। কোথায় একটা গণ্ডগোল আছে বংশী পরামাণিকের মধো । নাঃ কালই একবার-- খট-খুই-_ ইছুরের আওয়াজের মত একটা অ!ওয়াজ এল দরজার কড়ায়। -কে? _াপা। ডোমপাড়ার অন্গৃহীত মেয়েটা । দিনের বেল! অবশ্য ও পাড়ার ধার দিয়েও হাটেন না চট্টরাজ--যা নোংরা! আর তাছাড়া শুয়োর পোড়াবার গন্ধটা নাকে এলে যেন উঠে আসতে চায় অন্নপ্রাশনের অন্ন। কিন্তু রাত্রিতে যখন ডোমপাঁড়াট! কালো! অন্ধকারে মিলিয়ে যায় আর চট্টরাজের গলার শাদ। পৈতেটাকেও স্পষ্ট করে দেখতে পাওয়া যায়না, তখনকার ব্যাপার একেবারে আলাদা । এই বিদেশে-বিভুয়ে রাত্রিতে একজন কাছে না থাকলে একটু দেখাশোনাই বা করে কে, কেই বা একটুখানি সেবাযত্ব করতে পারে তাঁকে? উঠে দোর গুলে দিলেন চট্টরাজ। ১৪৭ কিন্তু পাত্রে মা স্থির করে রেখেছিলেন পরের দিন তা হয়ে উঠল ন!। সকালে উঠতে না উঠতেই একট] ব্রকন্দাজ খবর নিয়ে এল ভগ্রদূতের মতো । আলীচাকৃলায় গণ্ডগোল বেধেছে একটা বেয়াড়। প্রজাকে নিয়ে । ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। আদালতের পেয়াদা গিয়েছিল ঢোল-সহবত নিয়ে, কিন্তু গ্রামের লোকে দল বেঁধে এমন তাড়া করেছে তাদের যে তার' পালাতে পথ পায়নি। ঢুলীরও পান্তা নেই। কইমাই এমন ছুট মারল ঘে তাকে আর ফেরানো! গেলনা । _নীঠ আর পারা গেল না। যত সব ইয়ে-- চট্টরাঁজ টাটট,তে চেপে বসলেন । আলীচাক্লায় পৌছেও তার ল্যাটা কাটেনা । সরকারী লোক তে! আছেই, পঞ্চাণ জন লাঠি-সোটাধারী লোকও জুটেছে, দরকাঁর হলে খুন- খাঁরাগী করবে তারা, রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবে। সবই আছে, কিন্তু ঢুলী নেই । কৌৎক1 দেখে সেই যে দৌড় দিয়েছে, বৌধ হয় মাইল পনেরো রাস্তা সে পাপ হয়ে গেছে এতক্ষণ । চটে আগুন হয়ে গেছে চট্টরাজ। যা, যেখান থেকে পারিস ঢুলী যোগাড় করে আন। ঢোল-সমুরত না হলে সাব্যস্ত হবে কেমন করে! -_ আইক্গ ও ঢুলী তো ডর খাই পালালে, ফের ক্যাহোক তো_ _নইলে যেতে হবে চামারহাটি কিংবা সনাতনপুর-চট্টরাজ হুঙ্কার: ছাড়লেন :' এটুকু কীজ করতে পারোনা, খালি খাও-দাও আর নাকে তেল দিয়ে ঘুমোঁও, কেমন ? যা, দৌড়ে৷ সব। ঢোল না পাওয়া যায় তো তোদের পিঠের চামড়া দিয়েই ডুগড়ুগি বাজাব আমি--মনে থাকে যেন। | কিন্তু চামারহাটি পর্যস্ত আর ছুটতে হলনা, তার আগেই ঢুলী জুটে গেল একজন। লোকটা পড়েছিল মাইলখানেক দূরে রাস্তার পাশে একটা বটতলায়। ১৪৮ মাথার কাছে একটা ঢোল, পাশে একটা মদের বোতল, আর মুখের সামনে ভনভনে মাছি । পুরোপুরি নেশা করে সে পরম শান্তিতে যোগনিদ্রা উপভোগ করছিল। পাইক শিবু তাঁকে একটা খোঁগ দিয়ে বললে, এই, উঠ, উঠ, লোকটা উঠলনা, সাঁড়ীও দিলনা । শিবু হাতের লাঠি দিয়ে আবার শক্ত করে একটা খোঁচা দিলে তার পজরে। এবারে লোকটা! আড় আরক্ত চোখ ঘেলে তাকালো, তারপন বিরক্তিভরে কী একট। বিড় বিড় করে পাশ ফিরল। শিবুর ধৈর্যচুতি হল। হ্যাচকা টানে লোকটাকে তলে ফেলল, তারপর ঢোলট। কাঁধে ফেলে তেমনি হুড়মুড় করে টাঁনতে টানতে তাঁকে একেবারে ভজুরে এনে হাজির করে দিলে। ততক্ষণে নেশ! কেটে গেছে লোকটার। আতঙ্কে ও বিস্ময়ে মে সোজ। হয়ে দাড়াতে চেষ্টা করুল, টলমলে পায়ে আনতে চেষ্টা করল জোর, তারপরে আবার সটান হয়ে পড়ল চট্টরাজের পাঁয়ের সামনে । কিন্তু সেটা নেশায় না অদ্ধাতে ঠিক বোঝা গেলনা । জড়ানো গলায় বললে, দণ্ডবৎ। চট্টরাজ বললেন, ওঠরে বাটা ওঠ। ওঃ, ভক্তিতে যেন একেবারে যৃছিত হয়ে পড়ছে । তবু যদি মুখ দ্রিয়ে ভকভক করে ধেনোর গন্ধ না বেরুত। -_না হুজুর, দাঁরু খানি ভামি, পাঁচ কহোছি-- -_না, না, দারু খাবে কেন, দারুত্র্দের পাদোদক খেয়েছে! কিন্ত চট্টরাজ কপাল কুঁচকে তাকালেন £ মুখটা যেন চেন| চেনা ঠেকছে! ব্যাট তুই সনাতনপুরের স্থরেন মুচির ভাই ন1? | লোকট| বিনয়ে গলে গিয়ে বললে, হুজুর কিবা ন| জানেন । -হ'। তোর নাম হারান নয়? তেমনি গলিত-স্বরে উত্তর এল £ হ্‌। -আর তুই না একট! মেয়েমান্ুষের ব্যাপারে একবার আমার হাতে দশ ঘা জুতে! খেয়েছিলি চাঁমারহাটির কাঁছারিতে? ১৪৪৯ হাঁরাণ জিভ কাটল £ উসব কহি আর কানে রম দেছেন জবর | ভুল হই গেইছিল_হাঘি খাটি মানুষ _ _স্্যা, একেবারে হাড়ে হাঁড়ে খাটি ।-চট্রাঁজ জভঙ্গি করলেন £ সে সব যাঁক__রসালাঁপের সমর নেই এখন । শোন্‌। ঢোল বাজাতে পারিস? _নি পারি তো অস (রস) করি ইটা বহি বেড়াছি হুজুর? একবার কহেন তো একটা ঘাঁও মারি গোটা গাঁ৪ জড়ো করি দেছি এইঠে। ই-স্, কেষ্ট মুচির ব্যাটা হামি, ঢোল বাঁজাই হামার সাতপুরুষ নাম রাখি গেইল্‌ ভুজর-বংশ গৌরবে একেবারে বুক চিতিয়ে পাড়িয়ে গেল হারান। তাঁরপর টলমলে পায়ে একটা প্রচণ্ড পতনকে অতি কষ্টে সামলে নিলে সে। _বেশ, খুব ভালো কথ! । চল তাহলে--ঢোল কাধে কর। __কুন্ঠে যাব! হেবে হুজুর ? -অত জেনে কী হবে তোর । বকশিস পাবি, তা হলেই হল। _ ই বকৃশিস!- হারান দীত বের করলে, হুজুরের চরণধলো পোয়া গিলেই হামার বকৃশিস মিলিবে। _বাপরে ভক্তিরন একেবারে উলে পড়ছে । তবু যদি ইস্কুলে কখ পড়েই উচ জাতের মাথায় পা দেবার চেষ্ট/ না করতিস।-_চট্টরাজ তিক্তহাঁসি হাসলেন £ নে, চল এখন | -চলেক, চলেক--ঢোলটাকে কাঁধে করে হাঁরাঁণ বললে, এমন বাজাই দিমু যে হুজুরের সাবাস্‌ দিবা নাগিবে-_ইঃ ! কিন্ত যাত্রার আয়োজন দেখেই কেমন খটক| লাগছে হারাণের | নেশাটা1 যত ফিকে হয়ে আসছে, তত বেশি করে স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে মন। ঢোল বাজাতে যেতে হবে কিন্তু এসব কেন তার সঙ্গে? এই লাঠি-শোটা, এই লোক-লস্কর? হুজুর, হামি কিছু বুঝিবা পারোছিনা। _-বুঝি কুন্‌ কামটা হে তুমার? হুজুর কহিছেন, সিধা ঘণট। ধরি চল। ৯৫০ বকর বকর কইরছ ক্যানে1_-শিবু ধমকে উঠল, অভ্যাসবশে একট! লাঠির খোচ৷ বমিয়েও দিলে হারাণের পাজরে। _উঃ, বড় জব্বর খোঁচা মারিলা হে-_- বেশি বাত করিবা তো ফের মারিমু--শিবু শাসিয়ে দিলে। হুজুরের বরকন্দাজ, ধরে আনতে বললে বেধে আনে । _-থাঁউক দাদা, ঢের হই:হ-__ পোয়াটাক পথ ভাঙতেই সমস্ত ব্যাপী রট। ন্বচ্ছ হয়ে গেল হারাণের কাছে। দুরু ছুক করে উঠল বুক, শির শির করে একটা শিরহণ বয়ে গেল শরীরের রৌমকৃপগুলোর ভেতর দিয়ে। এ উচ্ছেদের ব্যাপার-কারুর সর্বনাশ হচ্ছে, ভেঙে দেওয়। হচ্ছে কারো স্থখের আশ্রয়, জমিদারের অত্যাচারে ছেলেপুলের হাত ধরে পথে দাড়াতে হবে আর একজন হতভাগ! মাজবকে। গ্রামের যে লব শত্যুৎ্সাহী পরোপকারীর দল লাঠি-ঠযাঙ্গা নিয়ে সরকারী লোককে তাড়িয়ে দিয়েছিল আর এতশগণ ধরে ঘাটি আগলাচ্ছিল বসে বসে, হাল-চাঁল দেখে তারা সব যে যেদিকে পারে সরে পড়েছে । বীবরসের পরিবেশে স্থষ্টি হয়েছে একটা মমভেদী দৃশ্যের, একট। বেদনা-করুণ আবহাওয়ার | লক্ষমীছাড়ার বাড়ি, লক্ষমীহীনের সংসার । কুঁড়ে ঘরটার দরিদ্রত। কাউকে ডেকে বলে দিতে হয়না]! । এক কাঠা জমির ওপরে ছোট একখানি পেয়াজের ক্ষেত-রাজবংশী উপান্থর ওইটুকুই উপজীবিকা। উপাস্থই বটে। তিন মাস চলে পরের ক্ষেতি-খামারে আরধধির কাঁজ করে, দুমাস চলে ছু পয়সা! সেরে পেয়াজ বিক্রী করে, কিছুদিন চলে বন থেকে তিত্‌ পোল আর বুনো কচু খেয়ে অথবা দুমুঠো কাওনের চাল খেয়ে। বাকীট। বিশুদ্ধ উপবাস- উপান্থ নামট। তাঁর সার্থক। দলব্লট। এগিয়ে আসতেই ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এল উপাস্থ। পরনে একটা লেংটি, কিন্তু তাতে লক্গ। নিবারণ হয়না । . ম্যালেরিয়ায় টিংটিংয়ে ১৫৯ শরীর, কট। বিবর্ণ রঙের চুল। সারা গায়ে খড়ি উড়ছে? উদ্ভ্রান্ত উন্মত্ত তার চোখের দৃষ্টি, হাড়ি-কাঠে ফেলা একটা বলির পশুর মতো কেমন বিচিত্র বীভৎস আতঙ্কে চোখদুটে। যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার। উপাস্থ ছুটে এল। দুহাতে ছুটো ন্যাংটো শিশুর নড়া ধরে টানতে টানতে আনছে । পোজ! এসে চট্টরাঁজের পায়ের তলায় ছেলে দুটোকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে, নিজে দুহাতে তার হাটু দুটো জড়িয়ে ধরল। বানে ডুবতে ডুবতে যেন আশ্রয় করেছে একটা কিছুকে, পেয়েছে কোনো একটা নিশ্চিত অবলম্বন । _-হামাক বাঁচান হুজুর-হামার ছেইলাপেইলার মুখ চাহি বাচান হুজুর__ পা ছাড় হারামজাদা_-উরব স্বরে গর্জে উঠলেন চট্টরাঁজ। _না হুজুর, পাও নি ছাঁড়িমু। এই জাড়ার দ্রিনে ঘরর থাকি বাহির করি দিলে ছোয়াপোয়া সব মরি যিবে হুজুর, হামীক ভিটা ছোড়া নি করেন-- _কেন, নিজের হাতেই না৷ আইন তুলে নিয়েছিলি ?--অশ্লীল গাল দিলেন চট্টরাজঃ গ্রামের সে সব লোক, তোর সেই বারো বাঁপেরা সব গেল কোথায় ? ডেকে আন তাদের, তারাই সব ব্যবস্থা! করে দেবে । __ওরা ভাগি গেইছে হুজুর-- _-তবে তুইও ভাগবসঙ্গোরে প1 ছাড়িয়ে নিয়ে টট্টরাজ একট! লাখি বসিয়ে দিলেন উপান্থুর বুকে। কৌ করে একটা শব্দ হল, সাঁত হাত দুরে ছিটকে চলে গেল উপান্থ । ছেলে ছুটে আর্তনাদ করে উঠল বকের ছানার মতো । হারানের নেশা এতক্ষণে সম্পূর্ণভাবে কেটে গেছে। গায়ের মধ্যে একটা তীব্র জালার মতো কী যেন চমূকে চমকে খেলে যাচ্ছে তার, রক্তের ভেতর শব্দ হচ্ছে ঝিন ঝিন্‌করে। ঠোঁটের পেশীগুলো থর থর করে কেঁপে উঠল হারানের, কী একটা বলতেও চাইল, কিন্তু বলতে পারল ন]। _-ভাঁঙ ভাঙ$ ঘর ভেঙে ফেল ব্যাটার। পরনে একফালি ন্যাকড়া ১৫২ জোটে না, পেটে ভাত নেই, তবু তেজ দেখো! একবার! সাতখানা গায়ের লোক এনে জড়ো করেছে, হাঙ্গাম। করবে জমিদারের সঙ্গে ! লোকগুলো তৈরীই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে দমাদম ঘা পড়তে শুরু করল মাটি- থস। পচা বাশের বেড়ায়, ছাউনিহীন ঘরের চালে । দেখতে দেখতে একদিকের বেড়া নেমে গেল মাটিতে । উপাস্থু চীৎকার করে উঠল। খাড়া পড়বার আগে পশুর শেষ আতম্বর বেন শুনল হাঁরাঁণ। তারপরেও শিবু ঝাপ দিযে পড়ল উপাস্থুর ওপর--। কী যে হল কে জানে, মাটিতে লঙ্কা হয়ে পড়ে রইল উপাস্থ, আর মাথা তুললনা, গ্রতিবাদও করলনা আর। শুধু ন্যাংটে। ছেলে ছুটে! তার পাঁশে বসে তারম্বরে টাকার জুড়ে দিলে । লাঠির ঘ। পড়ছে, ভেঙে পড়ছে বেড়া । * মানবের উন্মত্ত পায়ের চাঁপে "ল পিষে শেব হয়ে ষাচ্ছে উপাঙ্গুর পেরাজের শ্চেতির নরম সবুদ্দ কলিগুলো-_ তার জীবনের সঞ্চয় । হিংন্র আনন্দে জলজল করছে লোকগুলোর চোখ-- মস্ত মুখে ঝককঝক করছে আস্ুরিক আনন্দের দীপ্তি । _-বাজা, ওরে ব্যাট! বাঁজ!। ই করে দাড়িয়ে দেখছিস কী? বন্ধের মতো ঢোলে কাঠি দিতে যাচ্ছিল হারাণ, মন্তরমুগ্ধের মতো উদ্যত হয়ে উঠেন্ছল তার হাত ছুটো। কিন্ত সেই মুহতেই ব্যাপার ঘটে গেল একট|। হঠাঁৎ কাকের বাস। ভাঙবার মতো আওয়াজ করে ঘরের ভেতর থেকে ছুটে বেরিয়ে এল তিনটি নারী । একটি বছর ত্রিশেক--উপাস্র বৌ; আর একটি বছর আঠারো, উপাস্থর বৌন; তৃতীয়টির এগারো-বারো৷ বছর বয়েস, উপাস্থুর মেয়ে। ছেঁড়া ফতা-পরা মেয়ে তিনটি একবার বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকালে। এদের দ্রিকে ৷ সে দৃষ্টির তুলন1 নেই ! তারপর যেমন করে আঙম্বর তুলেছিল উপাস্ু, তেমনি বিশ্রী। খানিকটা আওয়াজ করে প্রাণপণে ছুটতে শুরু করে দিলে পেছনের একট আমবাগান লক্ষ্য করে। কিন্ত কয়েক প! এগোতেই একট। গর্তের মধ্যে পা দ্রিয়ে পড়ে গেল উপাস্থর ১৫৩ বৈতালিক -:১০।১ বোন। তারপর ধড়মড় করে যখন উঠে দাড়ালো, তখন ফাড়ালো সম্পূর্ণ বিবস্ হয়ে-_ একটা! কাট। গাছে আটকে আছে তার ফতাটা। পরম বিপদের মুখে প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তার সঙ্গে ৷ বাক্ষসের গর্জনের মতো কলরব উঠল প্রবলভাবে-_আকাশ-ফাট।নে। হাসির আওয়াজ মুখর করে তুলল চারদিক, একশো চোখের নির্লজ্জ, কুৎসিত ক্ুধিত দৃষ্টি গিয়ে পড়ল সেই অসহায় করুণ নগ্রতীর ওপরে । পাথরের মতো মুহূর্ত দাড়িয়ে রইল মেয়েটি, এক মুহর্ঠের জন্যে যেন নিজের সমস্ত আকুতি নিব্দেন করে দিলে নগ্ন আকাশ আর নিরাঁবরণ পৃথিবীকে, তাঁরপর তেমনি ভাবেই ছুটে চলে, গেল আমবাগানের দিকে । শুধু নতুন কালের নতুন দ্রৌপদীর অভিশাপ আকাশে বাতাসে সঞ্চারিত হয়ে রইল। একশো! চোখ তেমনি কু্সিতভাবে অনুসরণ করতে লাগল তাকে, আবার একটা প্রবল আর পৈশাচিক হাসির আওয়াজ ধ্বনিত হয়ে উঠল। চট্টরাজও হাসছেন সমানভাবে, লোভে চোথছুটো কুৎকুৎ করছে তার। শিবু বললে, ধরি লি আসিমু নাকি ছু'ড়িটাক? চট্টরাঁজ নেহভরে ধমক দিলেন একটা, কিন্তু আবার সেই উচ্ছুসিত হাসি? বন্যায় তার কথাটা তলিয়ে গেল। কিন্তু লজ্জায় বেদনায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে হারাঁণ; লম্পট, চরিত্রহীন হারাণ। ইচ্ছে করল হাতে ঢোলটা তুলে ধা করে বসিয়ে দেয় চট্টরাঁজের মাথায়, গুঁড়ে। গু'ড়ে। করে দেয় দেড়হাত টিকিসশ্তদ্ধ ওই নায়েবী মাথাটা । কিন্তু পারলনা! । তার বদলে টণ্যাক থেকে ছোট ছুরিট। বের করে সজোরে বসিয়ে দ্রিলে ঢোলের মধ্যে, চড় চড়াৎ করে ফেটে গেল চামড়া । --কইরে হাঁরাণ, বাজা, ঢোল বাজা-_ --কাঁর বা সড়কির খোঁচ লাগি ঢোল ফাটি গেল হামার--নি বাজিবে- --শুদ্ধ তিক্তত্বরে উত্তর দিলে হাঁরাণ, তাঁরপর ঢোল কাধে করে সোজা হাটতে শুরু করে দিলে। ১৫৪ তড়াং করে গালে একটা চড় পণ্ডল -শিবু বসিয়েছে । মাটিতে বসে পড়ল হারাণ, বসে পণ্ছল চোখ বুজে । _ইচ্ছা করি ঢোলটাঁক ফাসাই দিলু নাকিরে শালা? _থাক, ছেড়ে দে-_চট্টরাজ বললেন: আর ঢোল-শহরতের দরকার হবেনা। কাজ হয়ে গেছে। উপাস্থর বাস্ভিট! তখন গুড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে, পেয়াজ ক্ষেতে থানিকট] দলিত সবুজের পি ছাড়া কোথাও কিছু আর অবশিষ্ট নেই। কাল সকালেই লাল দিয়ে একে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে, বুনে দেওয়া হবে শর্ষে কলাই | বির্রোহী প্রজার চিহ্নটরকুকেও মুছে দিতে হবে চিরদিনের জন্যে । শুধু এতগুলো লোকের মধ্যে একজন চোখ বুজে নিথর হয়ে পড়ে রইল-_ সে উপাস্থ। আর একজন হাঁরাঁণ, লম্পট, চরিত্রহীন, মাতাল হাঁরাণ। জমিদারের লৌকের মতো ন্যায় আর ধর্মবোধ তার প্রথর নয় বলেই ফাটা ঢোলটা আঁকড়ে ধরে সে চোখ বন্ধ করে বসে রইল অন্ধের মতো । ১৫৫ সিরা রর রি 8. ছি 1০ পা রে রঃ রখ তক সপ এগার হাবিবপুর থানার বড় দারোগা সাহেব চা খাচ্ছিলেন। বেশ সৌথীন মেজাজের লৌক। ছুটি বিবি আর একটি বাদী-_-একুনে এই তিনটি পরিবার । এবং তিনজনের মনোহরণ করবার জন্য সব সময়েই তাকে সজাগ থাকতে হয়, ধারণ করতে হয় যথাপাঁধ্য কন্দর্পকান্তি। সিল্কের লুঙ্গি পরেন দারোগা, গোলাপী আতর দেন দাঁড়িতে, চোখে মাঝে মাঝে যে স্ুর্মা মাখেন না, এমনও নয়। গড়গড়ায় ভালো তামাক নইলে তার ঠিক মৌজট। জমে ওঠে না, তাই বিষ্ণপুরী তামীক চৌকিদার পাঠিয়ে নিয়ঘিত আনিয়ে নেন সহর থেকে । একটা স্ত্রী বন্ধ্যা, তার ক্ষতিপূরণ করেছেন আর একজন । ব্ছর বছর তিনি যমক্ সন্তানের জন্মদান করে থাকেন, তাই দারোগা সাহেব ছয় বছরের ) ভেতরেই ছয়টি. কন্তা আর. চারটি পের. সগৌরব পিতৃ লাভ করেছেন এহেন পুণ্যবাঁন এবং ভাগ্যবান লোক যে সব সম্য় হাসিতে এবং প্রসন্নতায় একেবারে সমুজ্জল হয়ে থাকবেন, এটা প্রশ্ন তথা সংশয়ের অতীত। স্থৃতরাং মহিন্দরের! তার দাড়ি-বিভাসিত পুলকিত মুখখানা দেখে চরিতার্থ বোধ করে থাকে, তীকে ভেট নিবেদন করে পিতৃপক্ষে পিগুদানের মতে! অক্ষয় পুণ্য অর্জন করে। | দারোগ। সাহের চা খাচ্ছিলেন এযং অবসর সময়ে দাঁড়িটাকে আদর করছিলেন পুত্রন্সেহে। সামনে একখান! সাপ্তাহিক “হিতবাদী” পত্রিকা খোলা আছে। এসব গ্রাম-মঘন্বল জায়গায় এই ধরণের পত্র-পত্রিকাতেই বিশ্বপৃথিবীর ৭৫৬ গবর আসে । প্রথম পাতাটা লাধারণত দারোগার ভালো লাগে নাবাঙ্গে কচকচিতে ভরা থাকে । ওগুলো উলটে গিয়ে তিনি অষ্টম পুঙ্গায় চলে আসেন--যেখানে আইন-আদালতের খবর মেলে । আইন-আদালত বড় ভালে! জিনিষ, মপ্যে মধ্য ও পাতায় অনেক রসালো ঘটনার সংবাদ পাওয়! যাঁয়। যেদিন তেমন কোনো খবর থাঁকে না, সেদিন নিরাশ হয়ে তিনি বিজ্ঞাপনে মনোনিবেশ করেন এবং বহু আশ্চর্য আশ্চর্য ওষুপের সন্ধান মেলে । হুর্বলের বল, হতাঁশের আশা” । ওই সব বিজ্ঞাপন পন্ডলে নিজেকে অতিরিক্ত পরিমাণে উত্তেজিত মনে হয়, মাঝে মাঝে ভাবতে চেইঈটা করেন ছুটির জায়গায় চারটি বিবির জন্যে একবার চেষ্টা করে দেখবেন কিনা । বাদশাহী ওষুধের গুণাগুণ একবার পরথ করতেই বা আপত্তি কী। একটু দূরেই একটা চৌকিদার খরপী ভাতে করে দারোগার ঘোড়ার জন্যে ঘাস কাটছে । কাগজ পড়তে পড়তে অন্যমনস্কভাঁবে দারোগা! তাকাচ্ছিলেন তার দিকে । চৌকিদারের নাম কদম আলী। ওর একট] দিব্যি চেহারার বোন আছে-মাসখানেক হল তার খসম তালাক দিয়েছে তাকে । একবার এক লহমাঁর জন্যে মেয়েটা তার চোঁখে পড়েছিল, সেই থেকে একটা নেশা জমে আছে। বাদশাহী বটিকাঁর বিজ্ঞাপন পড়ে মনে হচ্ছে একবার কদম আলীকে ডেকে নিকাঁর কথাট1 পাঁকা করে নেবেন কিনা । সংসারে একটু অশান্তি হয়তো! দেখা দেবে--বিশেষ করে ছোট বিবির তো দস্তরমতে। বাঁঘিনীর মতে! মেজাজ । তবে বাইরে যতই গ্রসন্নমুখ সদানন্দ হোঁন না কেন, অন্তঃপুরে দারোগ! অত্যন্ত হু'শিয়ার_একেবারে সিংভ অবতার | যতই ঘ্যান ঘ্যান করুক ন! কেন-__বেশী ওস্তাঁদী চলবে ন1- ঠাণ্ডা করে দেবেন। প্রথমে অন্তমনস্কভাবে কদম আলীকে দেখছিলেন দারোগা, লক্ষ্য করছিলেন কী করে সে ঘস্‌ ঘস্‌ করে নিপুণ হাতে ঘাস কেটে চলেছে । . তারপর ক্রমশ তিনি কাঁগজট। একেবারে নামিয়ে রাখলেন, ভুলে গেলেন চাঁয়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে । কাঁণের কাছে গুন গুন করে মৌমাছির গুপ্ুনের মতো! একটা ! ১৫৭ শব হতে লাঁগল--মন্দ কী, তা নেহাৎ মন্দ কী। ডেকে জিজেম করলে হয়। রাঙ্মী হবেই কদম আলী, না হলে এর বাপ হবে। কিন্তু গণ্ডগোল বাধছে সামাজিক মর্ধাদাট! নিয়ে । তিনি এই খানার দুর্দান্ত বড় দীরোগা, আব ও ব্যাট! নিতাস্তই চৌকিদার-_অতি ছোট, অতি নগণ্য! ওর বোনকে বিয়ে করলে লোকে ঠাট্টা করবে, আঙল বাড়িয়ে বলবে থানার দারোগা কদম চৌকিদারের বোনাউ। কাজেই মুস্কিল আছে। অথচ মেয়েটার কথাও ঠিক ভোলা যাচ্ছে না। দারোগা কদমের দিকে তাঁকিয়ে রইলেন, ভাইকে দেখেই বোনকে দেখার সাধ এবং স্বাদট1 মেটাঁনে। যাক যথাসাধ্য | বিশ্লী একট| চীতকারে বাঁদশাহী বটিকার স্বপ্নটা হঠাৎ ভেঙ্গে চুরে গেল দীরোগার। একটা লোক আতর্নাদ করছে হাজতে । চুরি সংক্রান্ত ব্যাপারে সন্দেহ করে ওকে পরে আন। হয়েছে, কাল রাত্রে জমাঁদার বাবু ওকে একটু পালিশ করেছেন, তাই গায়ের বাথায় আতন্াদ করছে। অবশ্য এখনো কিছুই হয়নি, আবে বিশ্তর দুঃখ কপাঁলে আছে ওর। চুরি করুক আর নাই করুক, যতক্ষণ না স্বীকার করছে সে চুরি করেছে ততক্ষণ এইরকম দলাই মলাই চালাতেই হবে। কী করা যাবে, উপায় নেই। সব চোরকে ধরতে পারে এমন ক্ষমত| খোদা কেন, সাক্ষাৎ ইবলিশেরও নেই | কিন্তু ইন্সপেক্টর ব্যাটা সেটা বোঝে না, কাজেই দায়ে পড়ে চাকরীটা! বজায় রাখবার জন্যই এসব করতে হয় । লোকটা টেঁচাচ্ছে প্রাণপণে £ হামাক ছাঁড়ি দাও, দৌহাই বাপ, ছাঁড়ি দাঁও হামাক। খোদার কসম, হাঁমি কিছু করি নাই। ঘরত হামার রোগা ব্যাটাটা মরি যাছে-_হামাক-_ ক্যাক। শট থেমে গেল। ভোজপুরী পুলিশ কর্তব্য পালন করেছে, রুলের খোঁচা পেটে বসিয়ে দিয়েছে ঠাণ্ডা করে। ভালোই করেছে। বড্ড চীৎকার করছিল, তিন নম্বর বিবির সম্ভাবনাময় স্থন্বপ্সে বিশ্রী রকমের ব্যাঘাত করছিল। লোকগুলোর যেন ফুলের শরীর হয়েছে আঙ্জকাঁল--ছু একটা ১৫৮ খোঁচাখাচি খেলেই একেবারে বাপরে মারে বলে ডাক-চীৎকার শুরু করে দেয়। একেবারে মিহি ফিনফিনে মাখনের মতো চামড়া হয়েছে বাবুদের । অথচ আগেকার ক্রিমিন্তালগুলে। ছিল আলাদা জাতের । মেরে আধমরা করে দিলেও টু শব্দ করত না, এমন কি বাশডল৷ দিয়ে যখন হাড়গোড় গুঁড়িয়ে দেওয়া হত তখনও না। আর এ ব্যাটাচ্ছেলেরা যেনু নবাব খাঞ্ধা খার.নাতি। নাঃ সব দিক দিয়েই দেশ উদ্ছন্নে যাচ্ছে! - শালার অস্ফুট স্বরে প্রায় স্বগতোক্তির মতো উচ্চারণ করলেন দারোগা | এইটেই তার প্রধান পণ, তার চরিত্রের প্রপান বৈশিষ্ট্য । গাঁলাগালিটাও তিনি এমন. আস্তে আন্তে করেন যে, লোকে বুঝতে পারে না-অন্ুমান করে তিনি মসনবি আগুড়াচ্ছেন। হুকুমটা তিনিই দেন বটে, কিন্তু হুকুম পালনকারী জমাঁদারবাৰু সেটাকে কেন্দ্র করে এমন তজজন-গক্জন শুরু করে দেন যে, লোকে বুঝে নিয়েছে দারোগার মতো মাটির মানুষ আর হয় না এবং ওই জমাঁদারটাই যত নষ্টের গোড়া । দোষ অবশ্য জমাদারের৪ আছে। পরের বারে এসআইয়ের নমিনেশন পাওয়ার আশার এখন থেকেই সে প্রাণপণে গলাবঝাজী আরম্ভ করেছে। যেন প্রমাণ করতে চায় সে কেমন কড়া মানুষ, ভবিষ্যতে কি রকম ছু'দে দারোগা হয়ে উঠবে । দ্ারোগ। হাসলেন, দাঁড়িটাকে আদর করলেন অ্েহভরে। ুল করছে জমাদার। আজকাল আর ও করে সুবিধে হয় না। দিন বদলাচ্ছে_-মানষ ব্দলে যাচ্ছে। গরম চোখ দেখিয়ে এখন আর কাউকে বশীভূত করতে পার! যাঁয় না । একটার পর একটা ঢেউ উঠছে। চারদিকের মানুষগুলো এখন আর মাথা নীচু করে সভয়ে মাটির দিকে তাকায় না, কেমন ঘাড় বাকিয়ে তাকায় বিদ্রোহীর মতো।। আজ এটা নিঃসন্দেহ যে, প্রতিবাদ ঘনিয়ে উঠছে দেশের মান্ষের মধ্যে । কোথায় যেন অস্কুরিত হচ্ছে আসন্ন একটা বিরোধের বীজ। শহরে, মহকুমায়, গঞ্জে মাঝে মাঝে মাথা তুলছে ১৫৪ মানব, -কিন্তু পন্ক্ষণেই তাদের সে বিদ্রোহ ঠাপ্তা হরে মাচ্ছে। গুড়িয়ে যাচ্ছে আইনের ধাতার নীচে, গলার জোরালো আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফাসির দড়িতে। কিন্তু কিন্তু মরে মরছে ন।। থেকে যাচ্ছে চাঁপা আগুনের মতো । শহর, মহকুমা, গঞ্জের বুকের ভেতর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তা সব জায়গায় শিঃশব্র সঞ্চারিত হয়ে যাচ্ছে । স্পঞ্ করে কেউ কিছু বলে না। কিন্তু বোঝ যায়| বোঝা যায় সব ঠিক আছে বটে, তবু কোথায় যেন সবই এলোমেলো হয়ে আছে। একদিন একট্রখানি ঘ। লেগেই হুড়মুড় করে ধ্বসে পড়তে পারে । আজকাল ভয় করে। কেমন একটা ছমছমানি এসেছে বুকের মধ্যে, এসেছে দুর্বলত।। আগে রাত-বিবেতে যেখান-সেখান দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে আসতেন, মাঁঠধাট বন-বাধাড় কোন কিছুতেই বিন্দুমাত্র পরোয়া ছিল ন। তার। দারোগ। জানতেন, তাদের প্রতাপ কত ভরঙ্কর_-কী নিদারুণ তাদের তেজ। সে তেজে শুধু মানুষ নয়, জন্ব-জানোয়ার পবন্ত পালাতে পথ পায়ন1। জিনের। লুকিয়ে যায় কবরের ভেতরে, ভয় পায় ধরতে পারলে হয়তে। আবার দারোগ। সাহেব তাঁদের হাঁজতে নিয়ে গিয়ে বাখডল। দেবেন । মরেও নে বিভীষিকা থেকে নিষ্কৃতি নেই। কিন্তু এখন ? এখন সব আলাদা । বাইরে খুব বেশি কিছু যে ঘটেছে তা নয়, ভর্লটা জেগেছে নিজের বুকের মধ্যেই । আজকাল অন্ধকারে আসতে ভয় করে, পথের পাশে পাশে কালো কালে ঝোপগুলোর দিকে তাকিয়ে কেমন একটা আশঙ্কা! শির শির করে যায় গায়ের মধ্যে । ভয় করতে থাকে, মনে হকার] যেন লুকিয়ে আছে ওদের ভেতরে, ক্ষুধার্ত বাঘের মতো হিংশ্র চোখে সন্ধানী আলো জ্বেলে যেন প্রতীক্ষা করে আছে। যে কোনে৷ সময় একটা বল্পম তুলে নিয়ে ছুঁড়ে দিতে পারে, একেবারে সোজা ফুড়ে দিতে পারে পেটটা । অথবা গলার ওপরে নেমে আসতে পারে কোনে। ধারালো রামদার অব্যর্থ লক্ষ্য। | ১৬০ তাই-_ তাই দারোগা! এই আপাত-অহিংসার পথটা গ্রহণ করাই সমীচীন বলে সিদ্ধান্ত করেছেন। যদি কিছু সুবিধে হয়, এতেই হবে। ভবিষ্যতে কোনোদিন ভবাড়ুবি যদি হয়, এবং হওয়ার আশঙ্কাট! যে একেবারে কল্পনা তাও নয়--সেদিন এই থেকেই হয়তো কিছুটা আত্মরক্ষা বা পিত্বরক্ষা করা সম্ভব। দারোঁগ! সাহেব বুদ্ধিমান লোক, তিনি আগে থেকেই বিবেচনা করে পথ চলাটা পছন্দ করেন। কাঁজট1 হাসিল করাই কথা, একটু মিষ্টি মুখ হলে ক্ষতি কী। ধ্যেদ। যত এলোমেলো! ভাবনা । দারোগা আবার হিতবাদীখান। হাতে তুলে নিলেন । কোথা থেকে মনটা কোথায় চলে গেছে । ছিল কদম আলীর বোন আর বাদশাহী বটিকা, সেখান থেকে এ সব ছুর্ভাবনার মধ্যে এসে ঝাপ দিয়ে পড়েছে। মনের ভেতরে শয়তানের আস্তানা আছে, খালি ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে চায় দুশ্চিন্তার ভেতরে । ঘোড়ার পায়ের শব্ধ পাওয়। গেল । দারোগা চোখ তুলে দেখলেন, একটা লাল বঙের বেড়ে টাট্ট, ঢুকছে কম্পাউণ্ডের মধ্যে । তার ওপরে রোগা কালো রঙের একজন সোয়ারী। মাথার আধপাক] চুলের ভেতরে একটি খাড়া টিকি আকাশকে খোঁচা দিচ্ছে। ট্টরাজ নায়েব । দারোগা হাসলেন । বাজাপাট যদি বজায় থাকে তা হলে ভবিষ্যতে এসব লোকের জন্তেই থাঁকবে। পৃথিবীটা] যখন দ্রিনের পর দিন মরুভূমি হতে চলেছে তখন চট্টবাজের মতন লোকের হচ্ছে পাস্থপাদপ ৷ ছায়! দেয়, আশ্বাস পাওয়া যায় অন্তত | পারস্পরিক স্বার্থের সোজ। সম্পর্ক । ঘোড়ার উপর থেকেই অভিবাদন জানালেন চট্টরাঁজ। দাত বের করলেন ₹তার্থভ(বে। . দারোগ!1ও হাসিমুখে উঠে দাড়ালেন, সেলাম করলেন অন্্রাগ ১৬১ বৈতালিক---১১ ভরে। বিগলিত স্বরে বললেন, হঠাৎ কী মনে করে পায়ের ধুলো পন্ডল আজকে? ব্যাপারখানা কী? ঘোঁড়া থেকে চট্টরাজ নামলেন, পুলিশ ব্যারাকের একটা লোহার খুঁটির সঙ্গে বেধে ফেললেন সেটাকে । তাঁরপর দারোগার দ্বিগুণ হাসিতে কালো মুখখানা আলো! করে বললেন, কেন, হুজুরের সঙ্গে একটু দেখা করতে এলেও কি ক্ষতি আছে নাকি? জিভ কেটে দারোগা বলললেন, তোবা, তোবা। চট্টরাজ থানার বারান্দায় উঠে এলেন, বসলেন দারোগার পাশের চেয়ারখানাতে । দারোগ! চোখ মিট মিট করে বললেন, তারপর কী মনে করে? -__-একটু উপকার করতে হবে । - কী উপকার ?-- দারোগা সাহেব তেমনি চোখ মিট করতে লাগলেন ঃ গরজ না হলে পায়ের ধুলো! যে পড়ে না সে তো জানাই আছে। চট্টরাজ মৃদু গলায় বললেন, একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে । আরো চাঁপ! গলায় দারোগ! বললেন, কী, খুনটুন নয়তো? তা হলে কিন্ সামাল দিতে পারব না । _না, না, সে সব নয়। ও সমস্ত করবার দিন নেই আর, সময় ব্ড খারাপ পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে একট! দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চট্টরাজ £ একটা লোককে একটু শায়েস্তা করতে হয়েছে। --বলে যান।-_দারোগা চোখ বুজলেন । _ লোকটাকে জুতো-পেটা কর! হয়েছে, ছুদিন না খেতে দিয়ে কাছারীতে আটকে রাখা হয়েছে। __খুব ভালো! হয়েছে ।__দারোগা তাচ্ছিল্যভরে বললেন, এ আর নতুন কথা কী--এতো৷ আপনারা হামেশাই করছেন। কিন্তূ এর জন্যে এত তয় পাওয়ার কী হল? ১৬২ _-কাঁরণ আছে। লোকটা মানী মানুষ প্রায় দেড়শো বিঘে জোত পাখে। বেশ শক্ত তেছী মন, টাকার জোরও আছে। বলছে মাঁমল। করবে। --করুক নী, ভয় কী। ফেঁসেযাবে। _ উহু, ল্যাঠ। আছে-_- ট্টরাজ ঠোঁট ওল্টালো £ সাক্ষী-সাবুদ জুটিয়ে আনতে অস্থবিধে হবে না গর । দেশের চাষা-মজুরগুলোকে তো৷ দেখতে পাচ্ছেন আজকাল; বড্ড হারামজাদা! হয়ে গেছে। জমিদারের পেছনে না হোক, অন্তত নীয়েবকে একটা খোচা দিতে পারলেও সে স্থযোগট! ছাঁড়তে চাইবে না। সময়টাই খারাপ। __বুঝলাম-- _-তা সদরে যাওয়ার আগেই একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে । আর- চট্টরাজ থামলেন । --আর?-_দাবোগ। হাসিভর] চোখে তাকালেন । কথা পাকা হয়ে গেল। টট্টরাজ উঠতে যাচ্ছেন, এমন সময় শোন1 গেল বাজনার শব । কোথায় বেশ সাড়া-শব্ধ করে ঢাক আর কাসর বাজছে । -কিসের আওয়াজ? দারোগ। বিন্মিত হয়ে বললেন, জানেন না? আপনাদেরই তো পরব। পরশু বোধ্জুয় সরস্বতী পূজা । ওদিকে কোথায় একটা পৃজে৷ হচ্ছে_-তারই আয়োজন । _-সরম্বতী পূজো? ও কথাটা বলেই ভূলে যাচ্ছিলেন চট্টরাজ--হঠাৎ আর একটা জিনিস মনে পড়ল। ক্ষুপ্নকঠে বললেন, ঠিক, ঠিক, আমারও তো! একট! কাজের কথা মনে পড়ে গেল। --কী কাজের কথা আবার? ১৬৩ --যত সব কাণ্ড !-_বি্রক্ত উত্তেজিত গলায় চট্টুরাজ বললেন, এই মুচি শীলারা আঞ্জকাঁল যেন মাথায় চড়ে বসেছে । না মানে দেবতাকে, না ভক্তি আছে ব্রাহ্ষণে। এমন আম্পর্দা যে, সরস্বতী পূজো! করতে চায়। ওই চামারহাটির হারামজাদাদের একটু শিক্ষ! দেওয়া দরকার । ভু ? চট্টরাঁজ চটে গিয়ে বললেন, যদি সত্যিই পুজোর ধাষ্টামো করে তা হলে এমন ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করব যে, কোনোদিন ভূলবে না । আর ওদেরও দোষ নেই, ওই ব্যাটা মাষ্টীরই যত কুবুদ্ধির গোঁড়া, ওই নাচাচ্ছে ওদের। নাপিত হয়ে দেবীর পূজে৷ করতে চায়, হাঁত খসে পড়বে না কুষ্ঠরোগে ? দারোগা! বললেন, হ্যা, হ্যা, ভালো কথা মনে পড়েছে । ওই মাষ্টারটা! কে বলুন তো? আমি ওর সম্পর্কে া রিপোর্ট পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে যে লোঁকটা ঠিক সোজা নয়। কিন্তু কোন প্রত্যক্ষ ব্যাপার নেই বলে নাড়াচাড়া করে দেখতে পারিনি । আপনি চেনেন মাস্টারকে ? চট্টরাঁজ মুখভঙ্গি করে বললেন, হাঁ, চেনবার সৌভাগ্য হয়েছে বই কি। কী চ্যাটাং চ্যাটাং কথা__আমাদের মানুষ বলেই শ্তিনি মনে করেন না বলে বোদ হল। তাছাড়া চট্টরাজ হঠাৎ থেমে গেলেন । দারোগা জিজ্ঞাসা করলেন, তাছাড়া কী? চট্টরাজ ভ্রকুটি করে দারোগার মুখের দিকে তাকালেন £ কথাট। আগে আমারই বলা উচিত ছিল দারোগ! সাহেব। লোকটাকে দ্্েখে আমার সন্দেহ হল। _-কী সন্দেহ? কী বলুন তো? : যখন জিজ্ঞেস করলুম, বাড়িটা কোথায়, তখন যাঁতা একটা পরিচয় দিলে । বললে, ফুলবাঁড়ির পরামাণিক বাঁড়ির লোৌক। কিন্ত আমার মামার বাড়ী তো৷ ওখানেই, সবই ভালো করে চিনি। ওখানে কোনো পরামাণিক বাড়ি আছে বলে আমি জানি না। তা! ছাঁড়া মুখ-চোখের ভাব দেখে বেশ ১৬৪ বুঝলুম মিথ্যে বলছে । কেন মিথো বলল, সেটাই আমি এ পর্যন্থ গাহর করতে পাধিনি। কিছু একট। গোলম।ল আছে ঝলে বোর হল মেন। অসীম আগ্রহ্ভরে দীবরোগা কথাগুলো শুনছিলেন। চোখ ছুটো! জলে উঠেছে। ব্ড় গোছের শিকার নয়তো কিছু? আযবসকগার? কোনো রাজনৈতিক আসামী? --সত্যি বলছেন? _-আপনাকে মিথ্যে বলে আমার লাভ কী? _-তবে আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। চামাঁরহাটির মুচিদের বিষদাত আমিই ভাঙউব। আপনি আমার সঙ্গে একবার ভেতবে চলুন, কয়েকখানা ছবি দেখাব আপনাকে । দেখবেন তো কাউকে চিনতে পারেন কি না। চে সং আজ ছুদিন থেকে দেখা পাওয়| যাচ্ছে ন৷ স্ুশীলার। এতকাল যাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো সচেতনার প্রয়োজনই ছিল না, আজ তার সম্পর্কে অতিরিক্ত মনোযোগী হয়ে উঠেছে সে। হ্ঠাৎ মনে হয়েছে, সত্যিই ভাবাস্তর ঘটেছে স্বশীলার, সত্যিই বদলে গেছে সে। চোখাচোখি দুএকবার দেখা হতে না হতেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেছে। প্রায় একমাস ধরে যে স্বপ্ন-কল্পনা মনের ভেতর একটা অপূর্ব রূপকথার জগৎ গড়ে তুলছিল, টলমল করে দুলে উঠেছে তার ভিত। যোগেন বুঝতে পেরেছে, যা হওয়া উচিত ছিল, তা হচ্ছে না। তাদের ছুজনের মাঝখানে আর কিছুর ছায়া পড়েছে। কীতা? কীহতে পারে? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পাওয়া গেল। বাহুর মতো! কে এসে সেখানে হাত বাঁড়িয়েছে তা আর মনের কাছে দুর্বোধ্য নয় । একটা হিং _অন্তজ্ঞালায় ঠোঁটটাকে কামড়াতে লাগল যোগেন। সে খবর পেয়েছে, এর পরও নাকি দুর্দিন এসেছিল ধলাই । তেমনি জল আর পান খেয়ে গেছে । ২৬৫ শুনে যৌগেন প্রায় চেঁচিয়ে উঠেছিল। _ আসিলেই উয়াক খ্যাদাই দিয়ো মা! _ক্যান, কী হৈল্‌? আ্যাতে দোস্তি আছিল--যোগেনের মা আশ্চর্য হয়ে গেল। ঠিক কী বললে ধলাইয়ের দোষটা স্পষ্ট করে বুবিয়ে দেওয়া যাবে ভেবে পেল না যোগেন। অথচ সোজা কথাতেই বলা চলত । বলা চলত, ওর সঙ্গে আর আমার বন্ধুত্ব নেই, ও আর আমার দলের লোক নয়-_ঝগড়া করে চলে গেছে। কিন্তু মনের ভেতরে অবস্থাট! এত সহজ নয় বলেই সহজ সত্যি কথাটা বলতে পারল না যোগেন। শুধু চুপ করে থেকে কোথাও একটা ক্ষুব্ধ ঝড়ের আকুতি ষেন সে অন্ছভব করতে লাগল । নাঃ, যা হোক কিছু করতেই হবে। আর সহা হচ্ছে না যোগেনের__ একটা অসহা যন্ত্রণায় সমস্ত স্নাযুগুলো পর্যন্ত তার জলে যাচ্ছে। এ অসম্ভব । সে তো বেশ ছিল। জীবনের এই যে একট। দিক আছে, এর কথা এতকাল তো! তার মনে হয়নি । মহকুমা সহরের সেই রাত্রি--সেই কুৎসিৎ অভিজ্ঞতার প্রতিক্রিয়া-একট| তিক্ত বিশ্বাদে দূরেই সরিয়ে রেখেছিল তাঁকে । কিন্ত এল স্থুশীলা। অন্ধকার নির্জন উঠোনে তার মুখে পড়ল প্রদীপের আলো, প্রথম ফোটা ফুলের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল যেন। অনেক মেয়ের ভেতরেও যে যোগেন হাসের পাখায় এক বিন্দু জলের মত ছিল নিরাসক্ত--মাতলামির মাতন জেগে গেল তার ভেতরে; রাঁতের পর রাত জেগে কবি লিখে যেতে লাগল একটা আশ্চর্য অনুভূতির কথ, রূপকথার বাঁজকন্তার কল্প-কাহিনী £ _-কাঁজল কালো চইখে তোমার ভমর্‌ উড়ি যায়-_ : যতদিন জানত না, ততদিন বেশ ছিল। যখন জানল তখন না পাওয়ার বাথাঁটা সমস্ত সহাশক্তিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সমস্ত বোধবৃত্তিকে ছুঃসহভাবে পীড়ন করছে তার। যোগেনের ইচ্ছে করতে লাগল, সে তার মাথার ১৬৩ চুলগুলো ছুহাতে উপড়ে উপড়ে শেষ করে দেয়, অসহায় স্বপদে একটা আর্তনাদ করে ওঠে। সরস্বতী পুজৌর রাত্রে চামীরহাটিতে আলকাঁপের গান গাইতে হবে তাকে । নতুন স্থরে, নতুন ভাবনায়, নতুন ভাষাতে । ছুটে! জলন্ত চোখে তাকে আচ্ছন্ন অভিভূত করে দিয়ে মাষ্টার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়ে গেছে । কিস্তু--কিন্ত-_ না, সে পারবে না ওসব। তাঁর দরকার নেই চারণ হরে, তার প্রয়োজন নেই দেশের যত মানুষকে ভালো ভালো কথ! শুনিয়ে জাগিয়ে দিয়ে। ওসব কাজ করবার অন্য লোক আছে, অন্য লোকের সাম্য আছে ও দায়িত্ব কাধে তুলে নেবার। সে নয়। তবে কী করবে! হিংল্র একটা আক্রোশে নিজের একটা গানকেই টুকরো টুকরো করে ছি'ড়ে ফেলতে লাগল যোগেন। সে শিল্পী হৃতে চায় না, গুণী হতেও চায় না। নিজের প্রাণটাকে ভরে রাখতে পারলেই তার সমস্ত প্রয়োজন মিটে যাবে । আজ যদি তার সবচেয়ে বড় কিছু চাইবার থাকে, তা হলে সে জ্শীলা। স্থশলাকে বাদ দিয়ে কোনো কিছুরই কোনে! অথ নেই তার কাছে। সোজা! পথ দিয়ে সুশীলাকে পাওয়ার উপায় নেই । ওব্যাপারের প্রায় নিষ্পত্তি হয়ে গেছে । স্ুশীলার বাপের টাকার খাই শুনে স্ুরেন চেচিয়ে বলেছে, কাম নাই হামার উয়ার সাথ বিহা দিয়া। হামার এমন ভাইয়ের জন্ত কি মেইয়ার অভাব হেবে? একট] ছাড়ি অর দশটা] বিহা দিমু--এই তুমাক কহি দিন্থু মা। মা শুধু ুখ করে বলেছে, হৈলে বড় ভালো৷ হৈত-_ _-তো! ফের কী করা যায়। হামার ভাইয়ের ঢের বিহা৷ জুটিবে। স্থতরাং আলোচনাটা! চাপা পড়ে গেছে। তাদের ছোটলোকের ঘরে এমন কথা অনেক ওঠে, অনেক ভাঙে । কেউ তার গুরুত্ব দেয় না। তাই ১৬৭ বিয়ের প্রন্তাবট! ভেঙে গেলেও কাঁরো মনে কোনো বিকার দেখা দেয়নি । সুশীল যেমন আছে, তেমনি আছে, তার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক আছে, এটাও বিশেষভাবে লক্ষ্য করবার বিষয় বলে মনে হয় না কারুর। মরণ হয়েছে শুধু যোগেনের। সকলের কাছে যা সহজ, তার কাছে তা তত ছুরূহ। মরণ ছাড়া কী আর বলা চলে একে? খেতে শোয়াস্তি নেই, শুয়ে ঘুম আসে না। বুকের মধো নিরবচ্ছিন্ন জালা । কদিন থেকে স্থুশীলা স্পষ্ট অবহেলা করছে তাকে । আর তা ছাড়া ভালো লাগে নি ধলাইয়ের সেদিন- কার সেই চোখের দৃষ্টি, একটা অস্বস্তিকর সম্ভাবনায় কেমন ছম ছঘ করছে মন। অথচ যদ্রি পাওয়ার আশাটা পাঁকা হয়ে থাকত তবে ভাবনার কিছু ছিল নাঁ_ বরং একটা অপূর্ব মধুরতাই এই প্রতীক্ষাকে আচ্ছন্ন করে রাখত। কিন্তু এ নিতান্তই গোপন-_-এ একান্তই তাঁর নিজন্ব ; তাই এ অসহা, তাই দুদিনের এ অবহেলাও একট। নিশ্চিত অঘটনের সংকেত । একট! মাত্র পথ আছে । চরম পথ-_আর উপায় নেই । এ ন] হলে পাগল হয়ে যাবে যোৌগেন, ক্ষেপে যাবে। তাঁর কিছুই দরকার নেই । আলকাপের গান সে গাইতে চায় না, প্রকাণ্ড একটা! কিছু হতেও চাঁয় না জীবনে ৷ চুলোয় যাক মাষ্টার, চুলোয় যাক তার গান। স্ৃশীলাকে নিয়ে সে পালিয়ে যাবে। যেখানে হোক--যতদূরে হোক । সেখানে সে একচ্ছত্র, সেখানে তার আর স্থুশীলার ভেতরে এতটুকু ছায়াসঞ্চার নেই কারো । বন্দী একট] জানোয়ারের মতো ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল যোগেন ।. বাইরে ঝ1 ঝা রাত। শুধু স্থরেনের নাক ডাকছে-_-বিশ্রীী একটা গা! গা! শব্দে মুখরিত হচ্ছে সমন্ত বাঁড়িটা-_-যোগেনের অসহা তীব্র বিরক্তির সঙ্গে স্থুর মিলিয়েছে যেন । ১৬৮ _বারো- কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত ব্যাপারটা সম্পর্কে যোগেনের মার দৃষ্টিটাও স্বচ্ছ হয়ে এল। বুড়ো মানুষ, শীতট। এমনিতেই বেশি । তা ছাড় কাল সাঝ রাতে অল্প বুষ্ট হওয়ায় আজ যেন আকাশ ভেঙে হিম নেমে এসেছে । শেষ রাত্রের দিকে প1 ছুটো একেবারে কালিয়ে আসতে লাগল, কাথার ভেতরটাও যেন জলে ভিজে গেছে বলে মনে হল । হাতে হাতে পায়ে পায়ে ঘষেও একটুখানি গরম হতে চাইছে না শরীর । এই রকম বিশ্রী শীতে ভোরের আগেই ঘুম ভেঙে গেল যোগেনের মার। ঠিক ঘুম ষে ভাঁঙল তা নয়, ঠাণ্ডায় ফিকে হয়ে এল স্থপ্টির ঘন গভীর আবেশট।। অর্ধচেতন ঘরের মধ্যে একটা ইচ্ছে সঞ্চারিত হচ্ছে, উঠে আগুনের তাওয়াটা জালিয়ে হাত পাগলে! একটু সেঁকে নিলে মন্দ হয় না একেবারে । কিন্তু আলম্য আর ঘুমের ঘোর চেষ্টাটায় বাঁধা দিচ্ছিল বার বার। এমন সময় হঠাৎ টের পাওয়া গেল পাশ থেকে উঠে যাচ্ছে স্থতীলা। তখন কিছু মনে হয়নি। তারও পরে শোনা গেল কোথা থেকে যেন অতি ক্ষীণ, অতি অস্পষ্ট একটা বাশির সুর শোনা যাচ্ছে । চমতকার লাগল সে স্থর। শেষ রাতের স্তব্ধতাঁয়, শীতের হিমাচ্ছন্ন জড়তার মধ্যে যেন চাঞ্চল্যের আলোড়ন একটা । ওই রকম বাঁশি শুনলে মন কেমন কেমন করে ওঠে, ঠাণ্ডা আড়ষ্ট রক্তের মধ্যে যেন একটা] উত্তপ্ত আচ্ছন্নতা বিকীর্ণ হয়ে পড়তে চায়। | ১৬৯ বৈতালিক --১১।১ কখন বাশি বেজেছে টের পায়নি যোগেনের মা । আবার যেন ঘন হয়ে ঘুম নামছিল তার চোখের পাঁতায়। কিন্তু কেমন যেন খেয়াল হল অনেকক্ষণ সময় পার হয়ে গেছে, পার হয়ে গেছে স্ুশীলার ফিরে আসবার সম্ভাব্য সময়। এতক্ষণ কোথায় কাটাচ্ছে স্ুশীলা, কী করছে? এই সাঁজ-সকাঁলে এমন কিছু কাজ তাকে করতে হয়না । অবশ্ঠ গেরস্তর বাড়ি, কাজের অন্তও নেই, কিন্ত তাই বলে কুটুমের মেয়েকে খাটিয়ে বদনাম করবাঁর ইচ্ছে নেই যৌগেনের মার। তা ছাড়া এমনিই একটু আহলাদে মেয়ে, কুঁড়েমিও আছে, যেচে সংসারের এট। ওট] খেটে দেবে এসব আশা যে তাঁর কাছ থেকে করা যাঁবে তাঁও নয়। তবে গেল কোথায় সুশীলা ? সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল ওই বাঁশির স্থরের কথ । যোগেনের মার সম্মুখ থেকে আচমকা যেন একটা পর্দা সরে গেল। তারও একদিন বয়েস ছিল স্থশীলার মতো । সেদিন বাঁশি বাজেনি বটে, কিন্তু বহু দুরদৃরান্ত থেকে এমনি করেই যেন গানের সুর ভেসে আসতো! | সেদিন সেও এরকম দরজা! খুলে-__ তড়াক করে উঠে বসল যোগেনের মা। আস্তে আস্তে উঠে এল বিছান। থেকে, স্বাভাবিক অনুমানবশেই বেড়ার ফাক দিয়ে উকি দিলে যোগেনের ঘরের দিকে । কিন্তু কী আশ্চর্য! এখানে তো নয়। ছেঁড়া লেপট। মুড়ি দিয়ে যোগেন পড়ে আছে, মাথার সামনে বুক জ্বলছে রেড়ীর তেলের প্রদ্দীপটার, খোলা রয়েছে তার গানের খাতাখানা, দোয়াতের মধ্যে ডুবোনো রয়েছে কলমটা। কাল অনেক রাত পধন্ত লিখেছে যৌগেন, অনেক রাত অবধি কানে এসেছে তার গুন্গুনানি। তার ঘরে তো! আসেনি স্থশীল । তবে? তবে কি স্থুরেনের এই কাজ? বাগে গায়ের ভেতর জ্বালা করে উঠল যোগেনের মার। সেই সঙ্গে বিস্মযনও বোধ হল। বিয়ের আগে অবশ্ঠ খুব খাঁটি ছিল ন। স্থুরেন, কিন্তু বিয়ে করবার পরে তো| সে সব বদলে গেছে একেবারেই । দিনরাত চোটে-পাটে থাকে, বিব্রত আর বিরক্ত মুখে সংসারের বোঝাট! কাধে করে টেনে বেড়ায়, এসব ব্যাপারে মনোষোগ দেবার মতে। ১৭০ সময় তো! তার আছে বলে বোধ হয় না। তবুও যদি নিজের শালীকে বাড়িতে এনে এ সমস্ত করবার দুরুদ্ধি তার হয়ে থাকে তা হলে তাকে ক্ষমা করা যাবে না। টেচিয়ে হাট বসিয়ে দেবে যোগেনের মা, ঝাটিয়ে বিষ ঝেটে দেবে স্বেনের। ভোক সে বড় ছেলে, থাকুক তার অমন জাদরেল মেজাজ, এ কেলেঙ্কীরীকে প্রশ্রয় দেওয়। যাবেন] । যৌগেনের মা মনঃস্থির করে ফেলল। দাওয়ার কোন থেকে সংগ্রহ করে নিলে উঠোন ঝাঁট দেবার মুড়ো ঝটাট1। তারপর সোজা এসে দীড়ালো স্বরেনের ঘরের সামনে । ঘরের ঝাপ খোলা । ভেতরে হালকা হালকা! অন্ধকার আর সে অন্ধকারে চামড়ার গন্ধ, জুতোর রঙের মিশ্র গন্ধ। বেড়ার ফাক দিয়ে আবছায়! ভোরের ছুটি চারটি আলোর আভাস লেগে চিক চিক করে উঠছে স্থরেনের ঘ্ত্রপাতিগুলো। কিন্তু সবরেনও যোগেনের মতো একাই ঘুমুচ্ছে, ঘুমুচ্ছে অঘোবে। তবে? আর তাঁও তো বটে। কম্মিনকালে গলায় গান নেই স্থরেনের, বীশি বাজানো তো দুরের কথা । ঝেৌঁকের মাথায় ব্যাপারটা খেয়াল হয়নি, অবিচার করা হয়েছে স্থুরেনের ওপর । কিন্তু গেল কোথায় স্ুশীলা ? নাঁকি সমন্তটাই ভূল বোঝা হয়েছে? ঘরে ফিরে এসে আবার বিছানার দিকে তাকালো যৌগেনের মা। না, স্ুশীলা ফেরেনি এখনো । তবে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি নিশ্চয় । এবং সে ব্ষিয়ে আর সন্দেহ নেই কণামাত্রও। কিন্তুকে সে? কে হতে পারে? পরের মেয়ে বাড়ীতে রেখে এ কেলেঙ্কারীকে কোনো! মতেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। শেষে একট কিছু গোলমাল হয়ে গেলে অপযশট। তারই ছেলেদের মাথার ওপর এসে পড়বে। স্থৃতরাং গোড়াতেই এর মুলোচ্ছেদ করা দরকার । বাড়ীর বাইরে এল যোগেনের মা । একটা স্বাভাবিক সংনারবশেই হাটতে ৯৭২ শুরু করল খিড়কির. দিকে । কুয়াশ।চ্ছন্ন ভোর ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে । শুধু এক আধটা মোরগের ডাক ছাড় পাখপাখালির সাড়া পর্যস্ত নেই কোনোখানে, শীতে যেন আচ্ছন্ন আর আড়ষ্ট হয়ে আছে। শুধু টুপটাঁপ করে শিশিরের ফট! ঝরছে এদিকে ওদিকে, বাতাসে আমের মুকুলের গন্ধ । এমন সময়ও নাকি ঘর থেকে বেরুতে পারে মানুষ! কিন্ত ওই বাঁশি। ও বাশির নেশা আলাদা । কিছুতে ঠেকাতে পারে না, কোনো কিছুই বাগ মানাতে পারে না মনকে । যোগেনের গান মনে পড়ল: হাতে লিয়ে মোহন বাশী, কুলমাঁন দ্রিল্যা হে নাশি”__ কিন্তু কুলমান গেলে সেটা স্থুশীলার যাবে না, যাবে যোগেনের মার। ভাবতেই চড়া করে মাথার ভেতরে ফুটে উঠল রক্ত । যোগেনের মা. আবার হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে আকড়ে ধরলে ঝাঁটাট।। হ্বশীলাকে একবার ঠিক মতে। ধরতে পারলে হয়। রেয়াত করা চলবেনা কুটুমের মেয়ে বলে। কড়া শাসন করতে হবে, নিজের ভাঁলো৷ ছেলেদের মাথায় অকাঁরণ অপযশের বোঝা সে কৌনোমতেই চাপতে দেবে না। প্রথর শীত। বিদায় নিয়ে যাচ্ছে বলেই যেন রাশি রাশি ধারালে দাতে শেষ কামড় দিয়ে যাচ্ছে তার। ঠক ঠক করে কীপতে লাগল যোগেনের মা। কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেয়েটাকে, পালালো কোথায়? অনর্থক আর শীতের মধ্যে কষ্ট করে খুঁজে লাভ নেই, ঘরেই ফিরে যাবে বরং। স্থুশীলা আস্থক, তারপর না হয় দেখা যাবে কতখানি বুকের পাটা বেড়েছে হারামজাদা মেয়েটার । ফিরে আনতে আসতে হ্ঠীৎ থেমে দাড়িয়ে গেল যৌগেনের মা। স্তব্ধ হয়ে কান খাড়া করল। বাতাসের শব্দ ? ঘাসের মধ্যে নড়াচড়া করল কোনো জানোয়ার ? না, মানুষই কথা কইছে, কথা কইছে ফিসফাস করে। কিন্তু কোথেকে আসছে শব্দটা? | একটু দূরেই ভাঙা একটা গোয়াল ঘর। কিছুদিন আগেও ছুটো গোর ২৭২ ছিল যৌগেনের মার, তারপর গো-মড়কে ছুটোই মনল একসঙ্গে । মেই থেকেই ফাকা] পড়ে আছে ঘরটা । গোরুর ঢের দাম আজকাল, কিছুদিন থেকে চেষ্টায়ও আছে স্থরেন, কিন্তু স্থববিধেমতো যোগাড় করতে পারেনি এখনো । সেই গোয়ালের ভেতর থেকেই কি আসছে না সন্দেহজনক শব্দট1? অনেক আগেই ঘরটাকে লক্ষ্য করা উচিত ছিল। যোগেনের ম! নিঃশব্দে এসে দাড়াল ভাঙা বেড়ার কোনে, তারপর তাকিয়ে দেখল ঘরের ভেতরে । চোখের দৃষ্টিতে সন্ধানী তীক্ষৃতা সঞ্চার করে পরিষ্কার দেখতে পেল সমস্ত। স্তপাকার পোয়ালের নরম বিছানার ওপরে কোনো অচেনা! পুরুষের আলিঙ্গনে নিশ্চিন্তে এলিয়ে আছে সুশীলা, কথা চলছে ফিসফাস শবে । দুহাতে স্থশীলার মুখখাঁনি তুলে ধরে পুরুষটি-_ এতক্ষণের ক্রুদ্ধ উত্তেজিত প্ররস্ততির পরে এবারে বিকট শব্দে ফেটে পড়ল যোগেনের মা। ধৈর্য এবং সহ্ের শেষ সীমা তার পার হয়ে গেছে। যৌগেনের ম! গর্জন করে উঠল ঃ হাঁরামজাদী ! যেন বাজ পড়ল। মুহূর্তের জন্তে নিথর হয়ে গেল আলিঙ্গনবদ্ধ যুগল মৃতি। তারপরেই পুরুষের স্বাভাবিক প্রেরণাট। চলে এল একেবারে বিদ্যুতের চমকের মতো। এবং এক্ষেত্রেও তাই করল সে-ধ1 করে লাফিয়ে উঠল, সোজা দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এল, আবৃশ্ঠ হয়ে গেল চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে । শুধু গ্রামের সগ্য-জাগা কুকুরগুলোর উত্তেজিত প্রতিবাদ তার পলায়নকে চিহ্নিত করতে লাগল। স্থশীলাঁও উঠে দাড়াল। ধীরে ধীরে এসে দীড়াল দরজার কাছে- চোখের দৃষ্টি তার মাটির দিকে । | যোগেনের মা আগুনভরা চোখে তাকাল তার সর্বাঙ্গে, আবার ব্ললে, হারামজাদী ! ১৭৩ স্থশীলা জবাব দিলনা । __কাঁক্‌ লিয়া মজা লুইটবা নাগিছিলু? সুশীল। উত্তর দিলনা । কথা ক ছিনালী,কথাক। কুন্‌ নাগরের কে'লত্‌ শুতি আছিলু? হঠাৎ চোখ তুলল স্থশীলা। এতক্ষণে তারও দৃষ্টি বিকিয়ে উঠেছে। বললে, কহিমু না। --কহিবু না? ছিনালপনা কইরবু, ফের চৌপা৷ দেখাছিস্‌ হামাঁক? ঝাটা মারি আজ তোর-- _-ক্যানে ?-ক্যানে মারিবা হামাক ?- স্থশীল! বঙ্কার দিয়ে উঠল £ হামার খুশি, হামি যামু হামার নাগরের ঠাই । তুমার গায়ে ক্যানে জালা ধরোছে? মুখ সামাল্‌, কহি দেছি তোক্‌।-রাঁগে আর শীতে যোগেনের মা যেন থর থর করে কাঁপতে লাগল £ মুখ সামাল্‌। হামার ঘরত থাকি তুই-- _-চলি যামু হামি তুষার ঘরত্‌ থাকি। হামি তুমার ব্যাটার বৌ নহো যে হামাক চোপা করিবা আসিছে!। _তো যা। যেইঠে মন চাহে চলি যা। হাঁরামজাদী, ছিনাল, শ্যাধকালে-__কদর্ধ ভাষায় একটা অবাঞ্ছিত লস্তাবনার উল্লেখ করে যোগেনের মা বললে,” তখন কী হেবে? -যা হেবে, সিট! হামার হেবে। তুমার আযাতে দরদ হৈল্‌ ক্যানে ?-- তীক্ষ চাঁপা গলায় স্ুশীলা বললে, আপনাক্‌ সামাল্‌ দ্রিই রাখ আগত্, পিছে কথা কহিয়ো । -_কি কহিলু?-যৌগেনের মা ঝাঁটা তুলে ধরলঃ আইজ তোক হামি_- দু পা সবে গেল স্থশীলা। উগ্র কে বললে, মারিয়োনা হামাক, হামি কহি দেহি, মারিয়োনা। ২৭৪ _ক্যানে? কিসের ভর্ত্‌? _কিসের ডরত্?-_স্থশীলা মুখভঙ্গি করলে, ওঃ ভারী সতী সাজোছেন আইজ । চ্যাংড়া বেলাত্‌ কত সতীপন। আছিল্‌ জানি হামর|। মুহূর্তে হাত নেমে এল যোগেনের মার। চোথে ক্রোধের আগুন নিবে গিয়ে এক মুহূর্তে রাশি রাশি ভয় এসে আচ্ছন্ন করে দিলে দৃষট্টি। দুর্বল স্ববে যোগেনের মা জবাব দিলে, কী জানোস্‌ তুই? _সকলই জানো। বেশি ভালোমান্ুধী করিব না নাগে। €ধবনের জালা ধরিলে নাগর সকলেরই 'আসে, নিজের বুকত্‌ আগে হাত দিয়া ফের কথা কহিয়ো। নিজের বুকে হাত দিয়ে কথা বলতে হবে! যোগেনের মা যেন মন্্মুখধ হয়ে গেছে । এক মুহতে পঁয়ত্রিশ বছর আগে চলে গেছে যন। চোখের সামনে ভেসে উঠেছে স্সি্ধ অন্ধকার ছায়া-বেষ্টনী, মধু মাদকতায় ভরা অপরূপ রাত্রি। শেষ চেষ্টা করে যোগেনের মা বললে, হামি কহিমু স্থরেনকে | _কহিয়ো, যাক খুশি কহিয়ো_ ঝটকা মেরে যোগেনের মার পাশ কাটিয়ে চলে গেল স্থশীলা । ৯ নর কিন্তু কাউকে বলতে পারলনা যোৌগেনের মা। স্থরেনকেও না, যোগেনকেও না আশ্চর্য আজকালকার মেয়েরা সব। লঙ্জা-সরমের বালাই যে তাদের আছে এমন মনে হয়না । অসংকোচে হেঁটে বেড়াচ্ছে স্থুশীলা, বুক ফুলিয়ে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে । সকালে এতবড় কাগ্ডটা যে হয়ে গেল বিন্দুমাত্র অপরাধ বোধ নেই সেজন্যে । অথচ তাদের দিন হলে-_ , তাদের দ্রিন। কত যত্বেট কত গোপনতার সঙ্গে পরম “অতনের' (রতনের ) মতো মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে হত। পাছে কেউ জানতে ১৭৫ পারে, কারো! চোখে পড়ে । আচল চাপা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়েছে প্রাণের মাঝখানকার ধিকি ধিকি আগুনকে। সারা দ্রিন কেটে গেছে তারই স্বপ্রে, সারাটা! রাত তার দোল! ঢেউয়ের মতো এসে ভেঙে ভেঙে পড়েছে বুকের মধ্যে । কিন্ত অনেকদিন পরে আজ কি আবার তেমনি করে দোলা লাগল তার? কেমন উড়, উড়, হয়ে উঠেছে মন, অনেকদিন পরে ঠাণ্ডা হয়ে আসা রক্তে ছড়িয়ে পড়েছে একটা নিবিড় আর গভীর উত্তাপ। একদিন ছিল যেদিন চোখের দৃষ্টি এমন ঝাপসা হয়ে যায়নি, তার ডাগর ডাগর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে মুচি-পাড়ার চ্যাংড়া আর জৌঁয়ানদের বেভুল লেগে যেত। কাঁধ ছাড়িয়ে, পিঠ ছাপিয়ে নেমে আসত ঘন চুলের বাঁশ-লোকে বলত “মেঘবন্' । রঙ ছিল কালোই, কিন্তু সে কালো রঙের ভেতর দিয়েও যেন তার রূপের জেলা ফুটে বেরুত। ভিন্‌ গায়ের কোন্‌ একট! ছোকরা তাকে দেখলেই গান ধরত £ “কাল-নাগিনী মাইল্লে ছোবল, পরাণ জলি যাঁয় হে-_; কাল-নাগিনীই বটে। নাগিনীর মতোই উজ্জল লতানে শরীর, সে শরীরে রূপের লহর বয়ে যেত তার। বাপের অবস্থা ছিল ভালো, হাট থেকে নানা রকম সখের শাড়ী কিনে আনত তার জন্তে। সেই শাড়ী পরে কোমর দুলিয়ে যখন সে চলত, তখন তার দ্রিকে তাকিয়ে ভিন্-গীয়ের অচেন। মানুষগুলোও থমকে থেমে যেতো! একবার, প্রশ্ন করত, ইট] কার বিটি হে? তারপরে বিয়ে হল তার । টাকাঁর জোরে সনাতনপুরের কেষ্ট মুচি বিগ্বে করল তাঁকে । হাঁবা ভালো মান্গষ লোক, তাড়ি খেত একটু বেশি পরিমাণে, আর নেশায় খানিক জোর ধরলেই তাকে জাপটে ধরে ভেউ ভেউ করে কাদতে শুরু করত। লোকটার. প্রতি করুণা আছে তার, একধরণের দয়াও আছে। কিন্তু মন সে নিতে পারেনি, তা কেড়ে নিয়েছিল আর একজন । দাওয়ায় বসে কলাই ঝাঁড়তে ঝাড়তে আজ মনে পড়ে যাচ্ছে । পঞ্চাশ বছর বয়েসট। হঠাৎ একটা পাক খেয়ে ফিরে গেল পনেরে। বছরে । এই স্বামীর ১৭৬ ভিটে, ছেলেরা আর ছেলেদের বৌরা, এই ভরপুর সংসার, হঠাৎ এর সব কিছু ছাঁড়িয়ে ভাবনাটা ফিরে চলে গেল পেছনে ! স্থশীলাকে শাসন করতে গিয়েছিল, কিন্তু পারল নাঁ। তাঁর একটি কথায় পঞ্চান্ন বছরের হিসেবী-বুদ্ধিটা চলে গেল পনেরো বছরের ভয়-ভাবনাহীন ছেলে-মানুষিতে, স্থশীলার মুখের আয়নায় যেন সে তার হারিয়ে যাওয়া মুখখানাকে আবার দেখতে পেল নতুন করে । বাড়ির পেছনের পুকুরটা। ওখানে ছুটি চারটি শাপলা পাতা, খানিকটা কলমী লতা লকলক করছে । এদিকের জল টলটলে নীল, ঝকঝকে পরিফার। তাঁতে নিজের মুখও যেন দেখতে পাওয়া যাঁয়। বিমঝিম করছিল ছুপুর। রোদ কাঁপছিল কাঠবাদাম গাছটার পাতায়, কাপছিল শাস্তজলে। পুকুরের ঘাটলায় দীড়িয়ে সেই রোদে ভরা জলের দিকে তাকালো সরলা, দেখতে পেল নিজেকে । আর সেদিন যেন দেখতে পেল তার সর্বাঙ্গে ঢল ঢল করছে প্রথম যৌবন, আশ্চব হ্থন্দর হয়ে উঠেছে তার দেহের গড়ন । ঘার্টলার নীচে, ঝিলমিলে জলের ভেতরে এই যার ছায়া পড়েছে সে ধেন সরল! নয়, আর কেউ; তার মতে। অমন রূপবতী কোনোদিন চোখে পড়েনি সরলার । কতক্ষণ নিজেকে দেখেছিল সে জাঁনেনা। রোদে আর বাতাসে মিলে যেন দিশেহার1 করে দিয়েছিল তাকে, ওই ছুলে ওঠা, ওই ঝিলমিল কর! জলের ভেতরে দৃষ্টি স্থির রেখে দীড়িয়েছিল বিহবলের মতো । তারপর হঠাৎ গানের স্থর এল কানে £ কালনাগিনী মাইল্লে ছে।বল, পরাণ জলি যায় হে'-_ ভিন্‌ গায়ের সেই রসিক ছেলেটি । কখন এসে দাড়িয়েছে ঘন-পাতার ছায়ায় ভর! বাদাম গাছটার নীচে । সরলা চোখ তুলে তাকাঁলে৷ তার দিকে । দিব্যি চেহাঁরা মানুষটার, দ্বিব্যি গানের গলা । ভারী মিষ্টি করে সে হাসল, হঠাৎ ফাগের গুঁড়োর মতো রক্তকণা ছড়িয়ে গেল মুখে । --কথা কও কইন্যা, তাকাও হামার মুখের দিকে । ১৭৭ বৈতালিক--১২ --ভাঁরী অসভ্য মাচ্ব--লজ্জারুণ মুখে জবাব দিলে সরল! । কিন্তু অসভ্য মানুষটি লজ্জা পেলনা, বরং এগিরে এল একটু একটু করে । ঝিমঝিম .ছুপুর, ঝিলমিলে রোদ । রোদে আর বাতাসে মিলে কী বেন হয়ে গিয়েছিল সেদিন, কী যেন একটা ঘটে গিয়েছিল জলের ভেতরে সেই মেয়েটির আশ্চর্য রূপের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে । মহিন্দর এল সবলীর জীবনে, নিয়ে এল গান আর নিয়ে এল ভালোবাসা । আজ সুশীল] যেন সেই দিনটি তার কাছে ফিরিয়ে এনে দিলে । _-মা, পাচট। টাক। দিব! হেবে, চামড়া কিনিব। নাগে। স্থরেন এসে দাড়িয়েছে । লজ্জিত অপ্রস্তত দৃষ্টিতে তাঁকালো যোগেনের মা, বয়েসের প্রভাবে শুকনে। শীর্ণমুখে কী একট! ঝকমক করে খেলে গেল শুধু মুহূর্তের জন্তে। কবি যোগেন হয়তো লক্ষ্য করত, কিন্তু গগ্যময় সংসারী মান্ঠিষ স্থুরেন লক্ষ্য কবলনা । সে কাঁজের লোক, অত সময় নেই তাঁর। --দেচ্ছে টাকা--একটু ইতস্তত করে যোগেনের মা বললে, একটা কথ৷ কহিমু তোক্‌? চি _ কী? _ জমি লিয়ে ওই হুজ্কুতট! মিটাউ ফ্যাল্‌ বাপ। একটা মানী মাইন্যের সাথ-- কথাটা শেষ করবার আগেই স্থরেন চেচিয়ে উঠল বিশ্রা গলায় -আ।? ইটা তুমি কী কহিলা মা, আ? যোৌগেনের মা ভীরু কে বললে, কহিছিন্ু-_ " __কিছু কহিবা হেবেনা তুমাক্‌। মানী লোক । ওঃ, অমন ঢের শাল। মানীলোক গ্যাথেছি হামি। বেআইনি করি হামার জমি কাটে লিবে আর আর সাথ হামি যামু মিটমাট করিবা। ত্যামন বাপের ছোয়। নহে। হামি। তো! হাইকোর্ট ধিব। নাগে তো যামু হামি-ঘরবাড়ি বিকৃকিপ্রি করি চালামু মামলা । ইট] সাফ সাফ কহিনু--ই 1 ৯৮ নতদৃষ্টিতে মাটির দিকে ভাকিদধে রইল যোগেনের ম!। বৃরেন বলে চলল, শাপানিবক ভাত করি বাখিছে। গেছ জে হামাক আমলই দিলেনা। আইচ্ভ, ভামি৭ কেষ্ট মুচির ব্যাটা । দেখি লিমু ভামিও। মিটুনাটি। মিটমাটের কথা কহিয়োনা, শাল! ভামার পায়ে পরি পর়িলেও না। | ঢপদাপ করে চলে গেল স্ববেন। উদ্ভেজনার বশে ভুলে গেল চামডডা কেনবাঁর জন্যে পাঁচট1 টাকা নিতে এসেছিল মায়ের কাছ থেকে । ভরেন বুঝবেনা, স্বরেন কেষ্ট মুচির সন্ভান। ধে বুঝত সে যোগেন। সেদিনের গান আর সেদিনের ভালোবাসা যেন রূপ পেয়েছে যৌগেনের , মধো। সরলার প্রীণের ভেতর থেকে, তার স্বপ্নের ভেতর থেকে জন্য নিয়েছে কবি যোগেন | কেষ্ট মুচির বাটা হয়েও সে মহিন্দরের সম্ভীন--মে মহিন্দারেধ গানে একদিন স্থশীলার মতোই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে চলে যেত মোগেনের মা । কিন্তু যোগেনও বুঝবেনা | কান পাতল ফযোগেনের মা। ঘরের ভেতর থেকে ছেলের গানের সর আসছে । কিন্তু কী এ গান? পাটের জালায় জলি জলি গেলরে দিনমান । কাদি কাদি জীবন যাবে, গরীবের নাই ভগমান | বড়লোক রসের ঠাকুর, মোরা হই পথের কুকুর লাখি-জুতাঁর বরাত করি সহি ক্যাতে অপমান, কাঁদি কানে ফুলাছ চোখ, গরীবৈর নাই ভগমান-- এ কোন্‌ গান? এর সঙ্গেও তে৷ সেদিনের স্থুর মিলছেন।। সব আলাদা, নব আরেক রকম। শুধু একটা অনিশ্চিত আশঙ্কায়, একটা অজানা সম্ভাবনায় মনের আকাশট। থমথম করছে। তবু সুশীলার কথাটা বললে হত স্থয়েনকে । নাঃ থাক। কী বলে বসবে ৯৭৯ কে জানে । তার চাইতে পরের মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারা যায় সেই ভালে! । --টাঁকা পাঁচটা দিবা কি নাই ?--সুরেনের উত্তেজিত ক কানে এল। _দেছে-- যোৌগেনের মা উঠে দীড়াল। আচমক। চোখে পড়ল উঠোনের ওপার থেকে কেমন অদ্ভূত কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে স্থশীল!। সে দৃষ্টির সঙ্গে মিল আছে স্থবেনের গুদ্ধত্যের, মিল আছে যৌগেনের এই ছুর্বোধা গানগুলোর । শুধু মিল নেই সেই বাদাম গাছটার ঘন ছায়ার আর মিল নেই রক্তে মাতলামি জাগানে! সেই সব গভীর রাত্রির | নতুন কাল এসেছে--সব নতুন । এদের সামনে দাড়ানো আর সম্ভব নয়, স্থশীলার নয়, স্থরেনের নয়, এমনকি যোগেনেরও নয় । ২০ _৫তরো- __মা, মাঁ একটা জোর হাঁক দিলে যোগেন £ মা, মা কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। অসীম বিরক্তি ভরে যোৌগেন আবার ডাকল ; কুন্ঠে গেইলা মা, মরিলা নাকি হে? _-ক্যান্টে এই সকালেই আত চেল্লাচিলি নাগাইলে ক্যানে নবাবের ছোয়া? মার বোখার ধরিছে ।--উত্তর এল স্ুরেনের। _-বোখাঁর ?যোৌগেনের চোখে মুখে ফুটে বেবল উৎকণ্ঠা £ ক্যানে, বোখার ধরিলে ক্যানে ? --কও কথা-বোখাঁর ধরিলে ক্যানে ?-স্থরেনের স্বরে বিস্মিত ক্রোধ প্রকাশ পেল ঃ ইঞ্কলে নিখি নিখি পাঠা হই গেলু নাকি তু? বোখার পরিছে -বোখার ধরিছে। ক্যানে ধরিছে উটা কি মান্তষ কভিব! পারে ? কিন্তু স্বরেনের মন্তব্যের কোনো জবাব দিলে না যোগেন, কথা বাড়ালেই স্বরেন গালাগালি আবস্ত করে দেবে । দ্রুত পায়ে ঘরে এসে ঢুকল সে। দাওয়ায় মগল! চটের বিছানা । তার ওপরে একটা ছেড়| কাথা মুড়ি দিয়ে হি হি কাপছে যোগেনের মা । কাপুনির সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে দীতে খট্‌ খট করে একট] শব্দ উঠছে, মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে একটা অস্পষ্ট আকৃতি । মাথার কাছে চুপ করে বসে আছে হ্থশীলা, কোনোরকম পরিচর্যা করছে বোধ হয়। : ১৮২ ঘধোগেন খানিকঙ্গণ দাড়িয়ে রইল । কদিন থেকেই কেমন বিধাদ-তিক্ত £71 আছে মনট|) মার এত জবা দেখে যেন আরো খার।প পাগতে লাগল । হোক নিজের আত্মীয়, হোক একেবারে আপনার জন, কাবে। আধি ব্যাধি দেখলে বড় বিশ্রী লাগে ফোগেনের । সহান্ভৃতি আসে না, করুণায় বিকল হয়ে ওঠে না মন। কেমন ভয় করে, কেমন ছমভমীনি জাগে শরীরে । কারো অন্তথ দেখলেই তার মনে হয়, কেন কে জানে মনে হয়, বাচবেনা। হঠাৎ ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে যোগেনের, যেন দেখতে পায় তারও চারদিক ঘিরে ঘিরে মুতার একট! অপচ্ছায়। আসছে ঘনিয়ে | --আইল বাঁপ /--কম্পিত ন্ববে মা বললে, ধস্‌ এইঠে। যোগেন বিন্বাদ মনে আসন নিলে । _-নাঁ, এইঠে আয়, ভামার পাশে আয় অনিচ্চ। সত্বে৪ মায়ের একেবারে কাছে গিয়ে বলল যোগেন_ স্বশীলার ত্রীচলের ডৌয়া লাগল তার গায়ে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই যেন কেমন সটক! মেরে উঠে দাঁড়ালো সুশীল, তারপর সোজা ঘর থেকে চলে গেল বেরিয়ে । কিছু একট! অন্তমাঁন যেন তীক্ষ খোঁচা লাগালো যোগেনকে । হঠাৎ তার চেচিয়ে উঠতে ইচ্ছে করল £ হামাক দেখি অমন করি পালাছিস্‌ ক্যানে ভারামজাদী? হামি কি খাই ফেলিমু তোক ?- কিন্তু যা বলতে ইচ্ছে করে তাই বলা যায় না। গলা দিয়ে অক্ফুট একটা শক বেরুল কি বেরুল না, ছুটে! ঝকঝকে চোখে যোগেন শুধু তাকিয়ে রইল সেদিকে । _বাপ? মা ডাকছে । আন্তে আন্তে, স্েহ ভর গলায় ডাকছে £ বাপ? _ কী কহিবা ?-একট। নিশ্বাস ছেড়ে যোগেন জবাব দিলে _ একটা কথা .কহিমু তোক--কাঁপা গলার আওয়াজটা ঘেন মিনতির মতে] শৌনালো । | --কহো! না ১৮২ মা একখান। হাত বার করল কাথার ভেতর থেকে, রাখল যোগেনের হাতে । জরের তীব্র উন্তাপে শরীরটা যেন ইটা করে উঠল যোগেনের। কী গরম, কী ভয়ানক গরম! যেন জলন্ছ আগুনের ছোয়াচ লেগেছে গায়ে | যোগেনের মনে হল মার হাতট| গায়ের থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত, ধেন ওই হাতের ছোয়ায় সেও অস্থস্থ হয়ে পড়বে । ম৷ আস্তে আস্তে ছেলের হাতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল । _হামি আর পারোছিন। যোগেন। বুঢ়া হই গেছি, শরীর ভাঙি গেইছে। কখন বা টপ করি মরি যাই। ইবার একট। বিহা দিমু তোর। আর ব্যাটাগুলানের বিহা৷ দিয়া তো খুব সুখ হইছে হামার, তোর বউ আসি হামাক দেখাশুনা করিবে। যোগেন উত্তর দিল নম | _তোর বউ হামি ঠিক করি ফোলছু। উবারে আর বাগড়া ন। দিস বাপ। যোগেনের মনে একটা নতুন চিন্ত। তরর্গিত হয়ে উঠেছে । ধলাইয়ের সেই হাসি আব ছায়ার মতো সশীলার সরে যাওয়া--এরপরে কি আগের মতো একেবারে একাণ্থ করে নিজেব ধলে ভাব! চলে স্ুশীলাকে ? কিন্ত ক্রোধ আন বিতৃষ্ণার আক্ষেপে সেট। মনে জাগতে পরক্ষণেই একটা যন্ত্রণাবোধ এসে তাকে আঙ্ছন্ন করে দিলে । না, না) এ ভাবা চলে না। এই পরম ছুঃখকর সম্ভাবনাকে কোনোমতেই স্থান করে নিতে দেওয়া যাবেন! নিজের চিন্তাতে। হয়তে। নিছক একট। যোগ।যোগ, একটা আকম্মসিক ব্যাপার মাত্র । তার মন সন্দিপ্ধ বলেই একটা স্বাভাবিক সহজ ঘটন। তার চিশ্তাটাকে বারে বারে ঘোল। কৰে তুলছে । মার উত্তরট। জেনেও ছুষ্টমি করলে বোগেন। লবুন্ববে বললে, কার বিটির কপাল ৮োড়াবা চাহোছ মা? জবের কীপ। গলার মধ্যেও মার ন্বরে রাগের আভা পাওয়। গেল £ কপাল ৯৮৩ পুড়িবে ক্যানেরে? হামার এমন সোনার চাদ ব্যাট।--কপাল খুলি ঘিবে, সোঁনা-কপাল হেবে। _তুমি সোনার চাদ কহিছ, আর মানুষে বান্দর কহে--কথীবার্তার স্বাভাবিকতাঁর মধ্যে. এসে মার অস্ুস্থতার কথাটা ভূলে বাচ্ছে যোগেন। গলায় তেমনি তরল কৌতুক সঞ্চারিত করে বললে, কিন্তু কার সোন। কপাল হছে সিট] তো৷ কহিলে-না । ম1 এক মুহ্ৃত চুপ করে রইল। তারপর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত উত্তর এল একটা । _হাঁজারুর বিটি। _ হাঁজারুর বিটি !--যোগেন চমকে উঠল । _-ই--ই 1-যোগেনের মা সন্ধানী একটা! দৃষ্টি ছেলের মুখের ওপর ফেলল : ক্যানে, চিনিস নাই উয়াক? ওই গোর! মেইয়াট1--পদ্ম, পদ্ম। খাশ। নাগিবে তোর পাশত, । যোগেন স্তস্তিতভাবে বসে রইল কিছুক্ষণ । __কিস্তকৃ- | জরের আবার একটা জোর ধমক এসেছে শরীরে । দাঁতে দাতে আবার শব্দ উঠেছে ঠকৃ ঠক করে । যোগেনের ভাতের ওপর মায়ের জরতপ্ত হাতখান৷ কাপতে লাগল, শিহরণট1 যেন বয়ে যেতে যেতে লাগল তার সববাঙ্গে । - হামি বুঝিছু, তোর মনের ৰথাটা হামি বুঝিছু বাপ। কিন্তু সিটা হবা নহে। যোগেন কথা বললে না। তাকিয়ে রইল । বেদনা, বিদ্রোহ আর বিস্মিত জিজ্ঞাসায় তার দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে এসেছে। __হবা নহে বাপ, হবা নহে। ওই পদ্মই ভালে! বউ হেবে হামার ঘরে। _হাঁমি কিছু বুবিবা না পাইন মা।-প্রায় অস্পষ্টন্বরে কথাটা বললে ঘ্লোগেন | | ১৮৪ ক্যামন করি বা কথাট1 কহিমু তোৌক?-ব্দেনাসিস্ত কম্পিত গলায় যোগেন মা বললে, হামি কিছু কহিবা পারিমু না। ভূলিযা বাপ, ভূলি যা। পন্মক্‌ লিয়াই তুই স্থুখী হবুং ইট1 কহি দিন্কু হামি। যোগেন আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না। মনের মধ্যে কুটিল সন্দেহের ছায়াভাসট। এবারে যেন স্পষ্ট প্রত্যক্ষ একট] অবয়ব গ্রহণ করছে । পাঁয়ের নীছে পৃথিবীতে দোলা লেগেছে হঠাৎ, মাথার মধ্যে সব ষেন কেমন ফাপা ফাপা ঠেকছে । যোগেন উঠে পড়ল, নিজেকে বড় অনুস্থ মনে হচ্ছে তার, মনে হচ্ছে তারও বৌধ হয় জর আসবে। নং সং সং নং বাড়ি থেকে ছু পা বাড়িয়েছে যোগেন, স্থবেন হীক দিলেন। _-আযাখেন ফের কুনঠে যাছু? তিক্ত স্বরে যৌগেন বললে, ক্যানে ? _-কী কামে ফের? গান গাহিব। যাছ নাকি ঠে আলকাপওয়াল ?-_ স্থরেনের ক্ুদ্ধ গলার আওয়াজে ্লেষের ইর্সিত পাওয়া গেল। যোগেন বললে, খালি চিল্লা যে, দেখিছন1? মার জ্বর ধরিছে। ডাক্তারর ঠাই যান! নাগে। | স্থরেনের স্বর নরম হয়ে এল _-তা সিট! তো ধিবা নাগেঠিক। তো ম্যালোরিয়৷ হইছে, আপনি সাবি যিবে। ডাক্তারের ঠাই গেলেই ফের পাইস|! আর পাইসা। বোয়াল মাছের মতন ই! করে বসি আছে সব শালা, দিনভর গিলিবা চাহোছে। --তো মা-ট] জ্বর হই মরি যাউক? পাইসা লিই বউক গহন! করি দিয়ো তুমি-_ গস্গন্‌ করতে করতে বেরিয়ে এল যোগেন। ডাক্তারের কাছেই যেতে হবে। কিন্তু ডাক্তার নেই গ্রামে, আছে এক মুচি কবিরাজ_সোনারাম। একট] ঝুলি আছে সোনারামের, আর ভার ১৮৫ বৈতালিক--১২।১ ভেতরে আছে বিশ্বাদ কতগুলো ছাতাপড়া কালে। কালো বড়ি। জ্বর হোক, আমাশা হোক, এমনকি ওলাউঠা হোক, ওই এক বড়িই সোনারামের সম্বল । লাগে তুক, না লাগে তাক। তবু মাত্র দুগণ্ডা পয়সার বিনিময়েই তাকে পাঁওয়। যায় বলে তার ওপরে গ্রামের লোকের অথণ্ড বিশ্বাস । কিন্তু যোগেনের কিছুমাত্র আস্থা নেই সোনারাম সম্পর্কে। খানিকটা লেখাপড়া করেছে, ভূয়োদর্নী হয়েছে সহরে বেড়িয়ে, স্থতরাৎ সে সৌজাস্থজিই বলে £ উটা তো কবিরার্জ নহে, যমের দূত।--রস দিয়ে ব্যাখা! করে বলেঃ সোনারাঁমের কামই হইল্‌, রুগীগুলার আত্মারাঁম সাবাড় কর! । অতএব যেতে হবে বামুনঘাঁটায়। সেট! ভদ্রলোকের গ্রাম। বড় গঞ্জ আছে, বাজার আছে, আর আছে সরকারী ভাক্তারখানী। সেখানে চারপয়সা দিয়ে টিকেট কিনলে ভালো৷ বিলিতী ওষুধ মেলে। মাইল তিনেক রাস্ত৷ অবশ্ঠ হাটতে হবে,_ত1 হোক । যোগেন সরকারী ভাক্তারথানার উদ্দেস্ত্েই দিলে পা চালিয়ে। মার অস্তুখ একট] উপলক্ষ্য বটে, কিন্তু আদত কারণট1] তাও নয়। আসল কথা, নিজের সমস্ত চিন্তার মৃধ্যে যেন একটা বিপর্যয় ব্যাপার ঘটে চলেছে যোৌগেনের। অমন করে কেন কথাটা বলল ম1, কী এমন একটা ঘটেছে যার জন্তে কারণটা মা তাকে খুলে বলতে পারলনা? একটা তীব্র অস্থিরতায় যেন ছুটে বেরিয়ে পড়েছে যৌগেন। মনে হয়েছে বাড়ির মধ্যে কোথাও এতটুকু বাতাস নেই, যেন তার দম আটকে আসছে, যেন কে তার গলাটা টিপে টিপে ধরতে চাইছে । স্থশীল!, স্থশীলা! যাঁর রূপে সে বিভোর হয়ে মজে গেছে, যাকে নিয়ে সে বেধেছে তাঁর সেই আকুল-করা গান £ “কইন্তা, ভমর জিনি লয়ন তোমার উড়ি উড়ি যায় হে, হামার বুকের ভিতর ফুল ফুটিলে তাহার মধু খায় হে--” ১৮৬ সেই কলা নিশ্বাসঘাতকত। করবে! তার সেই সোনার বরনী কেশবতী, যাঁর মেঘের মতো! চুলের মধ্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে যোগেনের, ইচ্ছে করে নিশ্চিন্ধ, নিঃসত্ত। হয়ে মিশে যেতে ! অসম্ভব, এ হয়না । একথা ভাবতে গেলে যেন বুকের ভেতর থেকে শিকড়শুদ্ধ কী একটা উপড়ে আসতে চায়, মনে হয় সব কিছু ছিড়ে খুড়ে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে? আসল ঘটনাঁট! তা হলে কী? মার মত হঠাৎ ব্দলাল কেন? বেশি টাকা চেয়েছে স্থুশীলার বাঁপ? কিন্তু এমন কী বেশি টাকা? তিনরাত যদি ভালো করে আলকাঁপের আসর জমাতে পারে যৌগেন, তবে কতক্ষণ সময় লাগবে ওই কটা টাকা সংগ্রহ করতে? কিন্তু মার কথার ভঙ্গিতে তা তো মনে হয়না । কোন একটা আলাদা ব্যাপার আছে, আছে কোনে! একটা নিগুঢ় অর্থ । পথ চলতে চলতে যোগেন সজোরে একবার নিজের মাখায় একটা ঝখকুনি দিলে। থাকুক এর যা খুশি অর্থ, এর পেছনে নিহিত থাক একট অজান! আশ্চর্য রহস্ত 1 সে রৃহম্তকে উদঘাটিত করবার জন্যে কোনো! কৌতৃহলই নেই যোগেনের । আজ এই সংশয়ের মেঘটা এসে মনের মধ্যে ছায়া ফেলেছে বলে এইটেই কি সত্য? স্থুশীলার কি আর কোন পরিচয় পায়নি সে কখনো? কত মুহূর্তে, কত অবসর-নির্জন মুহূর্তে কাছে এসেছে তার, লতিয়ে পড়েছে বুকের মধ্যে, সমস্ত চেতনা যেন আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে যোগেনের। এমন একান্ত করে যে স্থুশীলা তার বুকের মধ্যে নিজেকে ধরে দিয়েছে, সে কি কখনো মিথ্যাচার করতে পারে, সেকি কখনে! বঞ্চনা করতে পারে? তা যদি হয়, তা হলে ছুনিয়াটাই যে একেবারে মিথ্যে হয়ে যাঁয়। _যোগেন নাকি হে? কুন্ঠে চলিলা ? ঢোল কাধে একটা রাক্ষুসে চেহারার লোক। মন্ত মাথাটায় ঝাকড়া ঝাকড়া চুল, মাঠের মতো চওড়া বুকে 'ইকৃড়ি' ঘামের মতো কাঁচাপাকা রোমাবলীর সমারোহ । ঠোঁট দুটো পানের রসে টকটকে লাল। রসিক ঢোলওয়ালা । ১৮৭ পুসিক নললে, কুন্গে চলিল। ? _-যামু বামুন্ঘাট]। -অঃ।- রসিক পাশ কাঁটিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ কী: মনে করে থেমে দাড়ালো শ্ুইন্চ আলকাঁপের দল করিছ তুমি? যোগেনের বিরক্তি লাগছিল । রসিককে ছেলেবেল! থেকে দেখে আসছে, কাকা বলে ডাকে । স্থতরাং এডিয়ে যাও গেলনা | অপ্রসন্ন মুখে বললে, ই, কইন্ন, তো। রসিক বললে, বেশ, বেশ। হ্ামাদের মুচির ঘরের ছুট! একটা ছোয়া ছেইল্যা গ্ুনী হইলে তো সিটা ভালোই হয়। তো ফের শুইন্ন দামড়ি গাঁয়ের ধলাই মুচিক দলে লিছ তুমি? _ ই, লিছি_যোগেন জবাব দিলে । কিন্তু ধলাইয়ের নামটা শোনবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন পায়ের থেকে মাথা পর্যন্ত জলে উঠল তার। পরক্ষণেই বললে, তো ছোড়ি দিলু উয়াক। রূসিক বললে, বেশ করিছ, বড় ভালো কাম করিছ। উই কথাটা ভামিও তুমহাক্‌ কহিমু মন করিছিন্থ । বড় বদমাস উশালা। _ব্দমাস? _না তো! কী?__উত্তেজিত হয়ে রসিক বললে, হাঁমার দলে তার ওই-- একটা অশ্লীল বিশেষণ জুড়ে রসিক বলে চলল ঃ বীশিটা লিই বাজাব। আসিছিল। তো ফের শালার ত্যাজ কত! রোজ আড়াই টাক। করি দ্রিবার নাগিবে, তার মতন বাশি ছুনিয়াত ক্যাহো কুনোদিন দেখে নাই! হাঁমি শালাক্‌;খ্যাদাই'দিলু । _-ভাঁলোই:-করিলে-_সমস্ত মনগ্রাণ দিয়ে সমর্থন জানালো যোগেন। - অমন ছয্যাঁচোড় লিয়ে কাম করিব হয়না, ফ্যাঁসাদে পড়িবা হয় ঝুটামুট। __বিরক্তিভবে মন্তব্য করে এগিয়ে গেল রসিক । কিন্তু শুধুই কি ছাচোড় লোক ধলাই-? . রসিক জানেনা, কিন্তু যোগেন জানে । মর্মে মর্মে সে টের ২৮৮ পাচ্ছে কতনঢ শমুতান পলাই | শুধু পধসার জনো নয়, ছল এখন ভাপ বুকে ছোবল মারবার চেষ্টা করছে । এই মুহৃতে, এই মাঠের মণ্যে ধলাইকে পেলে যোগেন এখন তাঁর দক্ত-দর্শন করে ছাডত। কিন্তু থাকুক ধলাই, থাকুক তাঁর কুট চক্রান্ত নিয়ে। মা নিষেদ করুক, তাড়ি খেয়ে প্রাণপণে ট্যাচাতে থাকুক সথরেন, কিন্তু যোগেন কোনোমতে ভুলতে পারবেন। স্থুশীলাকে, কোনোমতেই তার প্রত্যাশ1 ছাড়তে পারবেনা । পৃথিবী একদিকে থাকুক, আর একদিকে থাকবে সুশীলা। বংশী মাষ্টারের গান তার চাইনা, কবি-ষশে৪ তার দরকার নেই, স্ুশীলীকে পেলেই জীবনের সব পাওনা তার মিটে যাবে। নতুন গান আসবে, নতুন স্থর আসবে, যদি কিছু ভেঙে চুরেই থায়, ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে তার চাইতে অনেক গুণে বেশি । তার সমস্ত মন-প্রাণ ভবে নতুন গানের উৎসব শুরু হয়ে যাঁবে। অনুস্থ পা আর অন্থস্থ মন নিয়ে যোগেন পৌঁছুল বাগুনঘাটায়। বেশ বেলা বেড়েছে তখন, শীতের শীতলতা কেটে গিয়ে পায়ের নীচে গরম হয়ে উঠেছে বালি। ডাক্তারখানা তখন জমজমাট । ডাক্তার প্রিয়তোষ 'সেন নিশ্বাস ফেলবার সময় পাচ্ছেন না। ঘস্‌ ঘস্‌ করে লিখছেন প্রেস্ক্রীপশন আর এ* একজন করে রোগীর আগ্শ্রান্ধ চলছে । _-কাঁল কবার ওষুধ খেয়েছিস? -আজ্ঞে তিনবার । -তা হলে আরো তিনদাগ তো আছে। -_আইজ্ঞা না ।_রোগী বিনীতভাবে হাসল £ সব ফুরাই গেইল্ছে। সব ফুরাই গেইল্ছে?--ডাক্তার প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন £ বলিস্‌ কিরে ব্যাটা! অতগুলো ওষুধ একসঙ্গে ! _--হেহেআমি ভাবিস্ক-_ -ভীবলে, একসঙ্গে খেলেই রোগ মুক্তি? আরে হতভাগা, ওতে করে ১৮৪ দেহমুক্তি ঘটে মানে যে! ন্সচ্ছা ইডিয়টু নিয়ে পড়া গেছে সব। দীড়া, দা, এখন সরে দাড়া ।-স্ঠযা, রিম বিশ্বাস? _জী। _-কদিন জ্বর তোর বিবির? _জী তা হৈল্‌ পাচ সাতদিন । _ পাঁচ সাতদিন !_ভাতের কলমটা নামিয়ে ডাক্তার গর্জে উঠলেন £ এতদিন তবে করছিলে কী? হা করে বসেছিলে? এখন আর কী করা যাঁবে, যাঁও ঠ্যাং ধরে ভাগাড়ে ফেলে দাও গে। চিকিৎসার নমুনা! দেখে যোগেনের যেমন অস্বস্তি, তেমনি বিশ্রী লাগতে লাগল। দ্বণা আর বিরক্তিতে কালো ডাক্তারের মুখ, অত্যন্ত অনিচ্ছা আর অত্যন্ত বিরক্তি সহকারে রোগী দেখছেন আর "টিকিট লিখছেন । না আছে সহাচুভৃতি, না আছে যত্ব । অনুগ্রহের দান ছুড়ে ছু'ড়ে দিচ্ছেন, হাজার গালাগালি খেয়েও কৃতার্থমুখে মেনে নিচ্ছে মান্ষগুলো | হঠাৎ মনে হল এর চাইতে তাদের সোনারাম কবিরাজ ভালো । তাদের সে আপনার মাষ, তাদের জীবনের সঙ্গে তার যৌগ আছে। বংশী মাষ্টারের কথাই ঠিক। এই যে মানুষগুলো! এখানে এক ফোটা ওষুধের প্রার্থী হয়ে দাড়িয়েছে-এরাই যোগেনের দেশের লোক, তার জাতি- গোজ্র। ব্রাঙ্ষণ, জমিদার আর নায়েবের কাছ থেকে তারা যা পায়, এখানেও ঠিক তাইই পাচ্ছে। কোনো পার্থক্য নেই, কোনো! ব্যতিক্রম নেই । সরকারী ভাক্তারখানা, গরীবকে ওষুধ দেবার জন্যেই খোলা হয়েছে । গরীব কতটুকু ওষুধ পাঁয় কে জানে, কিন্তু যা পায় তা অপমান, তা লাঞ্ছনা । ঠিক কথা। ভদ্রলোকেরা আলাদা জাতের। তেলেজলে যেমন মিশ খায় না তেমনি ভদ্রলোকের সঙ্গেও তাদের মিল ঘটবে না কোনোদিন । | একপাশে চুপ করে বসে থাকতে থাকতে যোগেনের ইচ্ছে করতে লাগল উঠে চলে যায়। এর চেয়ে তাদের সোনারাম কবিরাজই ভালো। কিন্তু উঠতে ১৪৪ পারল না। তিন মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়ে এসেছে আর মায়ের অস্ুখটাও কেমন বাকা ধরণের । বিরক্ত বিব্রত মুখে যোগেন বসে রইল। হঠাৎ ডাক্তারের চোখ গেল সেদিকে । __ওহে, ওহে, শোনো তো। ডাকের মধ্যে একটা! সাগ্রহ অভ্যর্থনা আছে । যোগেনের বিম্ময় বোদ হল। এতক্ষণ ধরে ডাক্তারের যে কথম্বর সে শুনছিল আর দেখছিল যে বিকট মুখভঙ্গি, তার সঙ্গে কুস্প& একট! পার্থক্য আছে এর। হঠাৎ তাকে এমন সমাদর করবার অর্থট। কী? _হামাক ডাকোছেন? _হী, তোমাকেই তো। যোগেন সভয়ে এগিয়ে গেল। _-সর সর, ওকে আসতে দে--ডাক্তার আশপাশের লোৌকগুলোকে ধমক দিলেন। ভীত বিস্ময়ে ছুপাশে সরে গেল মানুষগুলো, যোগেনকে পথ করে দিলে, তাকালো ঈর্যাক্ষুব দৃষ্টিতে । তুমি সনাতনপুরের যোগেন কবিওয়াল! না? -ই। হামাক আপনি চিনেন? __কেন চিনব না, তুমি যে স্বনামধন্ত লোক । রায়হাটের মেলায় তোমার গান শুনেছি আমি ।-_ডাক্তীর যেন যৌগেনকে বাধিত করবার চেষ্টী করলেন £ খাসা গলা তোমার। তারপর, কী মনে করে ? __হাঁমীর মার জর ধরিছে কাঁইল থাকি, তাই-_ _কী রকম জ্বর? কম্প দিয়ে? ই । _ ম্যালেরিয়া _কিচ্ছু ভাবনা নেই। চারটে পয়সা দাঁও-_ডাক্তীর খস্‌ খস্‌ করে একটা টিকেট লিখে ফেললেন ২ এইটে নিয়ে একবার কম্পাউগ্ডারবাবুর কাছে যাও, ওষুধ দিয়ে দেবে । শিশি আছে তো? ১৯১ ই) আছে। --তবে ওষুধ নিয়ে এসো । আর শোনো, যাবার আগে একবার আমার সঙ্গে দেখা করে যাঁবে। তোমাকে দিয়ে একট! দরকাঁর আছে আমার বুঝলে? _বুঝিম্র_ টিকেট নিয়ে যোগেন ওষুধের সন্ধানে এসে দাড়ীলো কম্পীউষ্ডিং রুমের সামনে । কিন্তু খটকা ধরেছে মনে । ব্যাপাবট1 বী? তাকে দিয়ে কোঁন প্রয়োজন মিটতে পারে ডাক্তারের? এই ভদ্রবাবুর কী দরকারে সে লাগবে? কেমন সন্দেহ হয়। বংশী মাষ্টার বিশ্রী রকমের খটকা বাঁধিয়ে দিয়েছে একট। । ভদ্রলোকদের অত্যাঁচারট1 চেনা, সেট ধাতস্থ হয়ে গেছে । কিন্তু তাদের মিঠে কথা আরে মারাত্মক-_মনে হয় যেন ফাদ পাতছে কিছু একটা মতলবে। কিন্ত গ্রশ্থের উত্তর মিলতে বেশি দেরী হল না। বেল এগারোটা বাজতে কলম ফেলে ডাক্তার উঠলেন। রোগীর ভিড় তখনো আছে। ডাক্তার বিরক্তিভরে বলেন, সময় হয়ে গেছে, এখন আর নয়। আবার বিকেলে । ঢের দূর ঘাটা (রাস্তা) ভাঙি আইন বাবু_মিনতি করলে একজন । _-তুমি ঢের ঘটা ভেঞ্ডে এসেছ বললেই চলবে ন। বাপু, সরকারী আইন তো! আছে । যাও. যাও, এখন আর গণ্ডগোল পাকিয়ো না। এসে! যোগেন, এসো আমার সঙ্গে । __কুন্গে যামু ডাক্তার বাবু? _আমার বাঁড়িত্‌। _বাড়িতে? _হ্যা, আমার মেয়ে জামাই এসেছে । জামাই আবার কল্কাতার মানুষ, খুব পণ্ডিত লোক । সে এদ্রিককার গানটান শুনতে চায়, বই লিখবে। তাকেই তোমার গান শোনা, বুঝলে? ১৯২ _কিন্ত--যোগেন বিব্রত স্বরে বললে, বাড়িত্‌ হামার মায়ের ব্যারাম বাবুঃ দেরী করিলে-_ _কিছু না, ম্যালেরিয়৷ জ্বর, ওই ওষুধেই ঠিক হয়ে যাবে। এসো ডাক্তার ডাকলেন । : একান্ত অনিচ্ছা আর মনের মধ্যে প্রবল প্রতিবাদ নিয়ে ডাক্তারকে অন্ুনরণ করলে যোগেন। আর যাই হোক, গান গাইবার মতো এখন মানপিক প্রস্ততি নেই তার। স্তুশীলা, ধলাই, মা, বংশী মাস্টার--সকলে মিলে যেন তার চিন্তাকে তোলাপাড়া করছে। তাছাড়া ডাক্তার তার গানের যতই প্রশংসা করুক না কেন, মনের দিক থেকে বিন্দুমাত্র উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেনি যোৌগেন। চোখের সামনেই সে ভাক্তীরের আর একটা চেহারা! দেখতে পেয়েছে, অনুভব করেছে ডাক্তীরের সঙ্গে তাদের সীমারেখাট। কত স্পষ্ট! যোগেন বলতে যাচ্ছিল, তুমার জামাইক্‌ গাঁন শুনাইবার জন্য হামি গাহি না-_কিস্তু কথাটা আটকে গেল। ভদ্রবাবুদের ওপর যত প্রতিবাদই জেগে উঠুক মনের ভেতর, তাকে ঘোষণ! করবার মতো! জৌর এখনো৷ তাদের আয়ত্ত হয়নি। ডাক্তারের কোয়ার্টার ডাঁক্তারখানার কাছেই। একতল! বাড়ি, সামনে চওড়া বারান্দা । সেই বারান্দায় একখানা ইজিচেয়ারে শুয়ে বই পড়ছেন ডাক্তারের জামাই । ফস ছিপছিপে চেহারা, চোখে সোনার চশম]। ডাক্তার বললেন, রামেন্দু, এই হল এদ্দেশের একজন কবি । এর নাম যোগেন, বড় ভালো গান গায়। -তাই নাঁকি ?-রামেন্দু অন্গ্রহের হাঁসি হাসল । শহরের হাসি, ভদ্রলোকদের হাসি। কিন্তু সে হাসিতে যোৌগেন চরিতার্থ বোধ করল না, গ৷ জালা করে উঠল । রামেন্দু বললে, আমি ঘীসিস্‌ দেব, লোক-সঙ্গীত সংগ্রহ করছি। বুঝেছে? যোগেন বললে, আইজ্ঞা না। ১৪৯৩ বৈতালিক--১৩ ডাক্তার একটা চেয়ারে আসন নিয়েছেন ততক্ষণে । জামাইস্সের অনুকরণে তিনিও হাসলেন এইবারে ২ ওসব ওরা বুঝবে না। বুঝলে যোগেন, তোমার গান নিয়ে ও বই লিখবে, তোমার গান ছাপা হবে বইতে । বুঝলে এইবার ? _ই-মুখ গৌজ কবে জবাব দিলে যোগেন। অপমান বোধ হচ্ছে, কাঁন জালা করছে। এর ভেতরেও একটা দয়ার ইঙ্গিত, একট! অন্ুকম্পার ব্যগ্রনা। তার গান নিয়ে বই লিখবে শহরের এই ফিন্ফিনে বাবু রামেন্দু। কিন্তু রামেন্দু কি বুঝবে এ গান শুধু গানই নয়? এ তাদের প্রাণের জালা, এ তাদের বুকের যন্ত্রণা? - কই, শোনাও দেখি এক আধট। গান-_-রামেন্দু সাগ্রহে বললে । -কী গান গাহিমু?-বিশ্বাদ মুখে প্রশ্ন করলে যৌগেন। -আঁলকাঁপের গান, রসের গান ।-_ডাক্তার জবাব দিলেন। -রসের গান আর গাহি না বাবুং রস মরি গেইছে।- শু প্রত্যুত্তর দিলে যোগেন । --তবে কী গান গাও? -+যে গান গাই সি আপনাদের ভালে নাগিবেনা বাবু । আইজ ঢের বেলা চটি গেইছে, হামি যাছ-- রামেন্দু ব্যস্ত হয়ে বললে, আরে না» না, ভালো লাগবে না কেন! সবই ভালে লাগবে । গান ধরে! তুমি । _যস্তরপাঁতি কিছু নাই-_ --দরকার নেই, ওতেই হবে। যোগেন একটা আগ্েয় দৃষ্টি বুলিয়ে নিলে চারদিকে । আশ্চর্য! তিন মাইল পথ ভেঙে সে এসেছে । এত বেলা হয়েছে, এখনো৷ এক ফোটা জলও তার পেটে পড়েনি। বাড়িতে তার মায়ের অন্থখ, এখন কেমন আছে কে জানে ।. অথচ এতটুকু বিচার নেই এদের, একবিন্দু বিবেচনা নেই । ১৯৪ কৌতুক-প্রফুল্প মুখে, ভরা পেটে আরাম করে গ! এলিয়ে দিয়ে বসেছে চেয়ারে, তার গান শুনবে, আমোদ করবে রসের গান নিয়ে। যোগেনের গলা চিরে একট তীব্র স্থুর বেরুল। বোধ হল যেন আর্তনাদ! ক্ষীর সন্দেশ খাও বাবুরাঁ_ মোগা মিঠাই খাও, হাঁমর! পুড়ি প্যাটের জালা তুমরা মজা পাও! রামেন্দু চেয়ারের ওপর চমকে উঠল, নড়েচড়ে বসলেন ডাক্তার । ছুজনের মুখে যেন শ্রাবণের মেঘ এল থমথমে হয়ে । আর যোগেন গেয়ে চলল তেমনি একটা অসহা আর্তনাদের সুরে : কাহারো হইলে পৌষ মাস, অন্যের হয় সর্বনাশ, স্থখের পাখি নি জানে হায় পোড়া ছ্ভাশের ভাও, ক্ষীর সন্দেশ খাও বাবুরা_ নিঃশব্দে ঘরের মধ্যে উঠে চলে গেল রামেন্দু। ডাক্তার বললেন, থাক। আর গাইতে হবে না যেগেন। হিংস্র একটা হাঁসির সঙ্গে যৌগেন বললে, গান ভালে! নাগিলে বাবু? মৌজ নাগিলে তো? ডাক্তার বললেন, হুঁ । __জামাই বাবুর বইয়ে ত হামার গাঁন ছাপা হেবে বাবু! --জানি না। এখন তুমি এসে যোগেন। যোৌগেন ডাক্তাবের দিকে তাকালো, ডাক্তার তার দিকে তাকালেন। মাত্র মুহুর্তের জন্যে । তারপর আশ্চর্য শাস্ত স্বরে যোগেন বললে, একটু জল খিলাইবা বাবু? বড় তিয়াস নাগিছে। ১৯৫ _ আচ্ছা, আনাচ্ছি। ওরে, কেউ জল নিয়ে আয়তো৷ এক ঘটি_- জল এল। নিয়ে এল আঠারো উনিশ ব্ছরের একটি স্তদর্শনা তর্ণী। ডাক্তারের মেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে সেদিকে চলে গেল যোগেনের চোখ, মেয়েটির মুখের ওপর গিয়ে আটকে রইল রূপমুগ্ধ দৃষ্টি । স্িগ্ধ স্বরে মেয়েটি বললে, জল নাও। জল নাও । কথাটা ঘেন গানের মতো সুন্দর লাগল কানে । হঠাৎ যেন চটকা ভেঙে গেল যৌগেনের। মনে হল তার এতক্ষণের উত্তাপটা ওই কঠম্বরে যেন শান্ত হয়ে গেল, মিটে গেল এতক্ষণে বুকের মধ্যে ত্রুদ্ধ তৃষ্ণার দুঃসহ জালাটা। যোগেন তাকিয়েই বইল। এখানে এই মেয়েটি যেন অপ্রত্যাশিত--ষেন অস্বাভাবিক ৰ ডাক্তার হঠাৎ গর্জে উঠলেন । ভেঙে পড়লেন বাজের আওয়ীজের মতো । _হাঁতে জল ঢেলে দে ওর। ও ব্যাটা মুচি, ঘটি ছৌবে কেমন করে? _ মুচি ?__মেয়েটি এগিয়ে আসছিল, সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে গেল তিন পা। আর পিছিয়ে গেল যোগেনও। তীব্র গলায় বললে, ভদ্দবর নৌকের ছোঁয়া জল হাঁমরা খাইনা ৰাবু, জাতি যায়-_তার পরেই সোজা উলটে! দিকে মুখ ঘুরিয়ে ভ্রুত হাটতে শুরু করলে । পেছন থেকে ডাক্তারের একটা শাসানি ভেসে এল সীঁপের তর্জনের মতো। £ বড় বাড় বেড়েছে এই ছোট লোকগুলোর, হাঁরামজাদারা মরবে এইবারে_- ১৭৯৬ _চৌদ্দ_ ট্যাং ট্যাং করে কাসর বাজছে, ডুম ডুম করে বাজছে ঢোল। স্ুবলের গড়া সরস্বতী শোভা পাচ্ছেন সগৌরবে। মুভির যা চেহারা হয়েছে, তাতে সরস্বতী বলে ঠাওর করা শক্ত। একটা জিনিষ স্থুবল বর্মণ খুব নিাভরেই করেছে-_সেটা হচ্ছে দেবীকে মেমসাহেব বানিয়ে তৌলা। তাঁর সঙ্গে নাকে একটি নথ জুড়ে দিয়ে মেমসাহেবকে খানিকটা ঘরোয়া করে তোলার চেষ্টাও হয়েছে। হাতের বীণাটি দেখে মনে হচ্ছে দেবী একটি গদা নিয়ে বসে আছেন, প্রতিপক্ষ কেউ সামনে এলেই গদাযুদ্ধ আরস্ত করে দেবেন | ত| হোক, তাতে ভক্তির কমতি হয় না লোৌকের। ধুপের ধোঁয়াতে চারদিক প্রায় অন্ধকার করে তুলেছে । প্রাইমারী ইন্কুলের পোড়োরা সাজিয়ে দিয়েছে তাদের শিশুপাঠ আর নব ধারাপাঁত, গলায় দড়ি বাঁধা দৌয়াতে দোয়াতে খাগের কলম আর দুর্ধ। রাশি রাশি পলাশ ফুলে প্রতিমীর, প্রায় আধখান। ঢাকা পড়ে গেছে। দুদিন থেকে প্রচুর পরিশ্রমের ফলে পূজো নিধিক্বে শেষ করেছে বশী মাষ্টার। পুজো করেছে সে নিজেই-_মন্ত্রতন্ত্র কী যে পড়েছে ভগবানই তা জানেন। কিন্তু পূজো! হয়েছে_ প্রসাদ বণ্টনও শেষ হয়ে গেছে। তার সবজী বাগানে অবশিষ্ট কপি মূলো৷ য। কিছু ছিল তাই দিয়ে তরকারী রান্৷! হয়েছে, রান্না হয়েছে খিচুড়ি। ৯৯৭ দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভক্তিভরে পুজে। দেখেছে মহিন্দর মার তার দলবল। রসিকতাও করেছে নিজেদের মধ্যে । --ইটা ক্যামন দেবতা হে, মাছ মাংস খায় না! --বৈষ্টম দেবতা। -_ই সব দেব্তার পর্সাঁদ খাই হামাদের প্যাট নি ভরে। -হামাদের ভীলো দেবতা হৈল্‌ কালী আর বিষহরী। পাঠা মারো, তাঁড়ি লি আইস, তো পূজা । ফুরতি না হেবে তো ক্যামন পৃজ। সিট! ! -ইসব চ্যাংড়া প্যাংড়ার পৃজা-ইস্কলের ছোয়া পোয়ার। হাঁমাদের ভক্তি হয় না। _হেবে, হেবে-_তৃমহাঁদেরও ভক্তি হেবে--কথাবার্তার গতিক লক্ষ্য করে আশ্বীস দিয়েছে মহিন্দর £ বড় একট] খাসি কাটিছু, তাড়িও আসোছে। -তো সিটা আগে কহিবা হয়। আতক্ষণ প্যাটে চাপি রাঁখিছিলা ক্যানে? হাঁসির রোল উঠল একটা, দ্বস্তির নিশ্বীসও পড়ল। সত্যি কথা, এসব নিরামিষাশী উচুদরের দেবতা সম্পর্কে কোনো মোহ নেই ওদের । ওদের কাছে ধারা প্রত্যক্ষ-__তাদের প্রকাশ অতি বাস্তব এবং অতি উদগ্র। শিক্ষার মূল্য ওদের কাছে যেমন নগণ্য, শিক্ষার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর শুভ্র জ্ঞানপদ্ে কিরণোজ্জল আবির্ভীবের অলৌকিক আনন্দটাও তেমনিই অবান্তব। ওদের দেবতারা আসেন কলেরার সর্বগ্রাসিনী কোপনা মৃত্তিতে, দ্রেখা দেন বসস্ভের নিশ্চিত নিষ্ঠুর মহামারীতে। ওদের দেবতা পথে-ঘাটে বনে-বাঁদাড়ে লুকিয়ে থাকেন উদ্যত ফণ! তুলে ছোবল মারবার জন্যে । আর ওদের দেবতা আছেন ক্ষেত্রপাল, যিনি মঙ্গল হস্ত বুলিয়ে ক্ষেতে ক্ষেতে ফলিয়ে তোলেন সোনার ফসল,--ধার কুপিত দৃষ্টি পড়লে বৌন্রদগ্ধ প্রাস্তরের ওপর আকালের মৃত্যুছায়! বিকীর্ণ হয়ে পড়ে। | এইসব উগ্র দেবতার্দের উগ্রভাবেই প্রসন্ন করবার ব্যবস্থা । মদ, মাংস ১৪৮ মাতামাতি । ৈষ্ণবী ব্রাক্ষণী দেবীর আতপ চাল আর নিরামিষ ভোজন ভষ্টাচার্ধ-পাড়ার মতোই ওদের দৃষ্টি আর স্পর্শসীমার বাইরে, বৈদেশিক এবং অপরিচিত । স্থতরাং খাসি আর তাড়ির নামে রসনাগুলো সরস হয়ে উঠেছে, প্রসন্ন হয়ে গেছে মন। সেই নৃত্য-পরীয়ণ রাস্্র আনন্দে নেচে নিয়েছে একবার ; জয় ম! সরস্সতী ! চিরাচরিতভাবে একট। ধমক দিয়েছে মহিন্দর ঃ থামো হে, বুট। বয়সে অমন নাচিবা ন হয়। কোমরত, বাত ধরি যিবে। রাস্থ চটে গিয়ে বলেছে, তুমহার মতো অমন বুঢ়া হই নাই, মনে এখনও ফুরতি আছে হে, বুঝিলা? পুজা পরবে নাচিমু না তো৷ ফের নাচিমু কথন? --তো নাচো। কিন্তু মাজ! ভাঁডিলে মজাট। টের পিব|। ভারী প্রসন্ন মহিন্দরের মন। মানী লোক মহিন্দর--তারই উদ্যোগে এই পূজো । কিন্তু শুধু মানী লোক বলেই নয়-_-আর একটা নিবিড় অগ্তনিহিত গর্বের অন্ুভূতিও তাদের মনে সধ্ারিত হয়ে বেড়াচ্ছে । তাদের সরস্বতী পূজোর কথা শুনে চট্টরাজ কুকুরের মতো কতকগুলো উঁচু উচু দাত বের করে হেসেছে বিশ্রাভীবে, বলেছে, ত্্যা_চামারে করবে সরব্বতী পূজো ! একেবারে বি্যের ভাগার লুঠ করে নিয়ে মন্ু-পরাঁশর-বেদব্যাস কয়ে উঠবে। ওরে শালারা, যার কর্ম তারে সালে, অন্য লোকে লাঠি বাজে । ও সব বুদ্ধি ছাড়। ছোটলোক, জুতোর তলায় থাকিস্‌, জুতো! সেলাই করে খাস। এসব ন। করে এক পাঁটি জুতোকে পূজো কর, ওতেই তোদের ধর্মঅর্থ-কাম-মোক্ষের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বলে সে কি হাঁসি টট্টরাজের। জীবনে এই প্রথম, নিষ্ঠুর অপমানের বিষাক্ত খোচার মত সে হাসিটা! এসে বেজেছে মহিন্দরের বুকে । এই প্রথম প্রশ্ন জেগেছে_-এ অপমান কি একান্তই প্রাপ্য, এর কোনো প্রতীকার নেই ? ওখানেই থামেনি চট্টরাজ। তেমনি হাসতে হাতে বলেছে, আবার ১৪৯৯ জুটেছে একট] নাপিত মাষ্টার, সে ব্যাটা করবে পৃঙ্গো ! ব্যাটা নর্মাল পর্যস্ত পড়েনি, সে উচ্চারণ করবে সংস্কৃতের মন্তর! দম ফেটে যাবে যে। কালে কালে কতই দেখব। ওরে শালার1, ওসব না করে অক্ষয় পুণ্য অর্জন কর, বেশ করে বামুনের পা টেপ নেখি-বলে ক্যাকলাশের মত সরু সরু ঠ্যাং দুটে। বাড়িয়ে দিয়েছে ওদের দ্রিকে। কেন কেজানে জল এসেছে মহিন্দরের চোখে, মনে হয়েছে জুতে। মেবে একটা টাকা দিলেই অপমানের উপশম হয় না। তারা পা টিপে দিচ্ছে, টেপাট1 শেষ হয়ে গেলে নদীতে স্নান করে চামীবরের স্পর্শ-দৌষ থেকে মুক্ত হবে চট্টরাজ। আর রাত্তিরে তার ঘরে যে ডোমের মেয়েটা আসে, তার খবরই বাকে না জানে? এই হল ত্রাঙ্মণত্ব। তাই রোখের মাথায় পূজো! করেছে মহিন্দর, মানী লোক শ্রীমহিন্দর রুইদাস এই প্রথম জানাতে চেয়েছে অপমানিত মন্থস্াত্বর একটা মৃদু প্রতিবাদ । জলজলে চোখে মহিন্দর স্থির-দৃষ্টিতে ব্রাক্ষণী দেবীর দিকে তাকিয়ে বইল। রাস্থু সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলে, বাত্তিরে গান হেবে কহিলা না? -সিতে। হেবে। কী গান হেবে? সমস্বরে প্রশ্ন হল। মহিন্দর বললে, আলকাপ। _-কে গাহিবে? -_সিটা কহিব! পারি না। বংশী মাষ্টার যাচ্ছিল স্থুমুখ দিয়ে, ওরা গিয়ে ধরল তাকে £ মাষ্টার হে, ও মুষ্টার? --কী বলছ? -গান কে গাহিবে? কার দল? কখন আসিবে? রাত্রে দেখতে পাবে-__রহস্তময়ভাবে হেসে বংশী মাষ্টার চলে গেল । বেলা পড়ে এসেছে, বিকেলের ছায়া নামছে চারদিকে । অত্যন্ত ক্লাস্তভাবে নিজের ঘরের বাশের মাচাটায় এসে বসল বংশী। নাঃ--এ নয়। কী হবে এসব করে? যেখানে সমস্ত দেখ ব্যাধিতে আর অসম্মানে জর্জরিত, ২৩৩ সেখানে কী এর দাম? আরো বড় কিছু করতে হবে। কিন্তু সে ভাষা জাঁনা নেই বংশী মাষ্টারের, সে ভাষা তাকে শেখায়নি অতুল মজুমদার | একমাত্র ভরসা যোগেন। তাঁর একটুকরো! সবজী ক্ষেতের মতো তার ভাবনার প্রথম ফসল যাঁর প্রাণের যধ্যে সে ফলিয়ে তুলতে পেরেছে । অতুল মজুমদারবা য] পারল না, তা পারবে যোগেনরাই। তারা কবি, তারা শিল্পী, তারা চারণ, তাঁরা বৈতালিক। কিন্ত তার নিজের? নিজের দিক থেক্ষে কতটুকু সে করতে পারল? এই কি শান্তির কাছে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা? এইখানেই কি দায়িত্ব শেষ, কর্তব্যের পরিসমাপ্তি ? বাইরে আনন্দিত কোলাহল, ঢোল আর কাপর বাজছে । কিন্তু এখনে! কেন এল না যোগেনের দল? সন্ধ্যার পরেই গান আরম্ভ হওয়ার কথা__ একট] খবরও তো পাওয়া গেল না । বংশ চিন্তিত অন্যমনস্কভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। বেলা ডুবে আসছে, টকটকে লাল আকাশ যেন রক্ত দিয়ে মাখানো । "বাইরে মহিন্দরের দল বসেছে তাড়ি আর মাংস নিয়ে। এমন সময় খবর দিলে একটা লোক এসে । চোখে তার আতঙ্ক আর কৌতূহলের ছায়া। | _কে, মহিন্দর ? _-ক্যানে ডাকোছ? _-কাছারীতে নায়েব আর দারোগা পুলিশ লিই আসোছে। _ত্যা! ্‌ _হ্যা। $এই আসিলে। তুমহাক ডাকি পাঠাছে। _কী কহিছ তুমি? মহিন্দরের জিভ শুকিয়ে উঠেছে--চোখ উঠেছে কপালে £ ক্যানে? -কেজানে। বৈতালিক--১৩।১ মহিন্দরের মাংল গলায় গিয়ে আটকালো, নাক দিয়ে ঝ1 ঝা করে বেরিয়ে আসতে চাইল তাড়ির ঝাঝ। উঠে পড়ে বললে, চলো । কানাঘুষোয় কথাটা বংশী মাষ্টারেরও কানে গেল। ক সং যোৌগেন আসত ন1। শিল্পী চেয়েছিল নিজেকে নিয়েই পরিপূর্ণ হতে-__নিজের মৃতো করে ঘর বাধতে । জীবনের বড় বড় সমস্যার চাইতে অনেক সত্য বলে মনে হয়েছিল তার মনের দাবী । ভেবেছিল পালিয়ে যাবে স্থুশীলাকে নিয়ে, দুর গ্রামে কোথাও ঘর বাধবে। আর কিছু তার প্রয়োজন নেই-__ রূপকথার রাঁজকন্তার ভোমবরা-গড়া চোখের রহস্তের মাঝখানে সে হারিয়ে যাবে একটা নিঃশেষ সম্পূর্ণতায়, ডুবে যাবে তার ঘন নিবিড় কালো! চুলের অভুলে, তার কোমল বুকের গভীরে আশ্রয় নিয়ে নতুন গান রচনা করে যাবে। কিন্তু ত। হয়নি_-জীবনে নিষ্ঠরতম আঘাত তাকে দিয়েছে সুশীল । ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে যোগেন, স্থশীলা পালিয়ে গেছে। কিন্তু তার সঙ্গে নয়_-ধলাইরের সঙ্গে । গানের সর তার কিশোরী মনকে ছুলিয়েছিল, কিন্তু যা ভূলিয়েছে তা বাঁশির ডাক । স্থরেন চীৎকার করেছে, দিয়েছে অশ্লীলতম ভাষায় গালাগালি। জরের ধমকে কাপতে কাপতে যোগেনের মা কপালে হাত দিয়ে কেদেছে, পরের মেইয়াক ঘরত, রাখি ক্যামন বদ্নামের ভাগী হৈন্ধু হে হামি? আখন তোর শ্বশুরুক্‌ মুখ দ্যাখামু ক্যামন করি? স্থরেন বলেছে, ধলাই হারামজাদাক্‌ পাইলে হামি উয়াক্‌ খুন করি ফেলিমু! হারাণ-_বাড়ীর সব চাইতে অপদার্থ ছেলেটা--ফিরেছে কাল রাত্রে। সে হোঁহো কুরে হেসে উঠেছে নিবিকার মুখে : পালাছে তো কী হছে! জোয়ান মেইয়! জোয়ান পুরুষের সাথ পালাই যিবে ইয়াত, এমন চিল্লাছ ক্যানে? স্থরেন চেচিয়ে বলেছে, তু থাম না শালা। ২৩২ শুধু যোগেন কোনো কথা বলেনি । কী বলবে বুঝতে পারেনি সে। শুধু মনে হয়েছে, বুকের ভেতবে তার আর কিছুই নেই, সব ফাকা । তার নিশ্বাস আটকে এসেছে, দম আটকে এসেছে । তারপর-- ভপ্পর নিশ্চিত দ্র পায়ে উঠে ঈীডিয়েছে যোগেন, বংশী মাষ্টারের জলজলে ছুটে! চোখ একটা জলন্ত সর্ষের মত তার মনের ভেতরে এসে পড়েছে । ভালোই হল-_-এ ভালোই হল। নিজের জীবনের কথা ভাববার আর কিছুই নেই । তার রাজকন্যার স্বপ্ন ভেঙে গেছে-এবার সম্মুখে পৃথিবী । বংশী মাষ্টারের কথাই সত্যি । সে কবি, সে শিল্পী, সে চারণ। আজ সে তার প্রতিবাদ জানাবে সকলের বিরুদ্ধে, সমস্ত অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে। মে আঘাত করবে জমিদীর, মহাজন, দারোগাকে ; সে ক্ষমা করবে না মহিন্দর রুইদাসকে_ষে অকারণে জাত-জ্ঞাতিদের মাঝখানে তাকে অপমান করেছে, ক্ষমা করবে না ধলা ইয়ের মতো শয়তানকে-__যে তার বুক থেকে সমস্ত স্থুখ, সমস্ত ভবিষ্ঠতের স্বপ্রকে হরণ করে নিয়ে গেল। এখনি দলটাকে খবর দেওয়া দরকার । সন্ধ্যার মধ্যে গিয়ে পৌছুতে হবে। মাষ্টারকে কথা দেওয়া হয়েছে, খেলাপ কর। চলবে না। জীবন যদি নাইই রইল যোগেনের, পৃথিবীর দাবী তে তার হারাবে না কোনোদিন । সে কবি, সে গুণী, সে চারণ । ক এ নং দারোগার দলটার সঙ্গে প্রায় ছুইঘণ্টা পরে ফিরল মহিন্দর। নাকে খত দিয়ে উড়ে গেছে নাকের ছাল, পিঠে জুতোর দাগ লাল টকটকে হয়ে আছে। সাময়িক উৎসাহে যতখানি ফেঁপে উঠেছিল, ঠিক সেই পরিমাণেই ফেঁসে গেছে অবলীলাক্রমে । সত্যি কথাই বলেছিল চট্টরাজ-_মুচির উপযুক্ত যায়গ! হচ্ছে জুতোর তলা, বাড়াবাড়ি করলে যাঁ হয় সেটা সুখের অবস্থা নয় । চর্মে এবং মর্মে কথাটা এখন ভালো ভাবেই অন্থুভব করেছে মহিন্দর | অতুল মজুমদারকে তিনজন ভোজপুরিয় নিয়ে ধরতে ভরস! হয়নি দারোগা সাহেবের । সাংঘাতিক ২৬৩ লোক এই বিপ্লবীর| | ছুহাতে ছুটে! রিভলভার তৈরী থাকে তাঁদের। তিনটি বিবির অধিকারী এবং কদম আলীর সুন্দরী বোনটির সম্ভাব্য অধিপতি দারোগ! সাহেব এত সহজেই তিনটি মেয়েকে অনাথা করতে ছিধা বোধ করেছেন । তাই মহকুমা সহর থেকে সশস্ত্র পুলিশ আসা পর্বস্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এবং সেইখানেই হয়েছে ভুল। পৃজামণ্ডপের কাছে আসতেই সেটা অনুধাবন করা গেল। | বংশী মাষ্টার নেই। নেই তার সেই ছোট স্থটকেশটা-_যার ওপরে অনেকগুলো গোলাপ ফুলের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত ছিল। পাখি পাঁলিয়েছে। অতুল মজুমদার যাত্রা করেছে আবার কোনে নতুন পরিচয়ের পথে। চারদিকে লোক ছুটল। আর সেই ফাকে বাঁকী সব এসে দীড়াল আলকাপের আসরটা যেখানে পুরোদমে জমাট হয়ে উঠেছে, সেইখানে । স্তম্ভিত বিবর্ণ মুখে মান্ুষ- গুলে! ফিরে তাকাল-_যোগেনের দ্রিকে নয়, পুলিশ আর চট্টরাজের দিকে । মহিন্দর চীৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল £ সরলার ব্যাটা! সরলার ব্যাঁটা কোন্‌ বুকের পাটায় এইঠে গান গাহিবা আঁসিলে ! কে ডাকিলে উয়াক? কিন্ত সে কিছু বলবার আগেই দারোগা-সাহেব গর্জন করে উঠলেন । গর্জে উঠলেন এতদিনের মুখোসটা খুলে ফেলে বীভৎস হিংস্র ভঙ্গিতে । একী গান ধরেছে যৌগেন-_-এ কী সর্বনেশে গান! এতক্ষণ যে রসের পাল। চলছিল তার সঙ্গে এর তো কোনো সাদৃশ্য নেই ! শ্রোতাদের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে উঠল। আঁর পুলিশের দলটার দিকে একবার বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে যোগেন স্থর ধরল £ মহাজন রক্ত চোষা জমিদার ফোস মনসা দারোগা সে লাঁটের ছাঁওয়াল মোদের হৈল কাল। ২০৭ চট্টরাঁজ বললেন, শুনুন, দারোগ। সাহেব, শুনুন । নিরাশা-ক্ষিপ্ত দারোগা চীৎকার কবে উঠলেন, থাম্‌ হারামজাদা, ভাবী যে বুকের পাট বেড়েছে শীলাদের ? যোগেনের বাঁজনদাবের! বাগ্যযন্ত্র ফেলে পালিয়েছে আসর থেকে | গড়াগড়ি যাচ্ছে হারমোনিয়াম, তবলা, করতাল। কিন্তু ত্রক্ষেপ নেই যোগেনের । সে চারণ, সে কবি, সেগুণী। তার তো থামলে চলবে নাঁ। স্বশীলা তাঁর ওপর যে অন্যায় করেছে সমন্ত পৃথিবীর ওপরেই সে তার প্রতিশোধ নেবে। একা আত্ম-বিস্থৃতের মতো! গান গেয়ে চলেছে যোগেন £ বাচার নামে বিষম জালা, পরাণ হেল ঝালাপালা, ওই তিনটা শালাক মারি খেদাও ঘুচুক এ জণ্জীল-__ দীরোগ! বললেন, ধর, ধর শালাকে। এ ব্যাটাও নির্ধাৎ অতুল মজুমদারের লোক । হাতে হাতকড়া পড়ল যোগেনের। আসর তখন একেবারে খালি, উব শ্বাসে পালিয়েছে সব। কিন্তু যোগেনের গান বন্ধ হয়নি । তেমনি তারম্বরে গেয়ে চলেছে £ হায় হায়রে, গ্াাশের এ কী হাল! যোগেনের মুখের ওপর প্রকাণ্ড একটা খুসি পড়ল, আর্তনাদ করে বসে পড়ল যোগেন। কিন্ত ও গান তে] থামতে দেওয়া চলে না। মানী মানুষ মহিন্দর রুইদাসকে ছাড়িয়ে আজ যোগেন ব্ড় হয়ে যাবে, বড় হয়ে যাবে সরলার ব্যাটা! নাকে খতের জালাটা তখনো! জলছে, পিঠে টনটন করছে জুতোর দ্াগ। মহিন্দরের চোখ ছুটে৷ ধক ধক করে উঠল, মনে পড়ল এক কালে তার.গানও ছিল বিখ্যাত, যোগেনের চাইতে ঢের মিঠা, গল! ছিল, তাঁর গানের সুরে সরলার মতে মেয়েও ধর! দিয়েছিল তার বুকের ভেতরে । ৩৫ না, ভারলে চলবে না। হাঁর মানলে চলবে না যৌবনের কাছে। ভূষণের বাড়ীতে যে অপমানের লজ্জা তাকে বহন করে আসতে হয়েছিল, আজ সে তার জবাঁব দেবে। সরলার ব্যাটার কাছে ছোট হওয়া চলবে না তাকে, থামতে দেওয়া যাবে না এই গান । যোগেনের মুখের ওপর হিম ক্ষিপ্র দারোৌগার কিল চড় পড়ছে, সর্বাঙ্গে পন্ডছে চট্টরাজের লাথির পর লাখি। যোগেন তখন আর গান গাইতে পারছে না, মুখ নিয়ে গো গে করে যন্ত্রণার কাতর গোঙানির মতো অদ্ভুত আওয়াজ বেরুচ্ছে একট1। নাঁক আর গালের পাশ দিয়ে তার গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ধারা । ষোগেন তবু থামতে চায় না_-পাগল হয়ে গেল নাকি? | এক মুহুর্তে নিনিমেষ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল মহিন্দর । আার ংশয় নেই,' সমস্ত মন তার প্রস্তত হয়ে গেছে । মানী লোক প্রীমহিন্দর রুইদ্াস- সকলের আগে তার সব চাইতে বড় সম্মান প্রাপ্য । যোগেনের মতো সেদিনকার ছেলেকে, সেই সরলার ব্যাটাকে এ গৌরবের অধিকার দেওয়া যাবে না। কোনো মতেই না। হঠাৎ বাঘের মতো শৃন্ত আসরে ঝাপ দিয়ে পড়ল মহিন্দর। যোগেনের গানটাকে তুলে নিলে নিজের তীক্ষ দরাঁজ গলায় £ হাঁয় হায়, গ্যাশের একি হাল, এই তিনটা শালাক মারি খেদাও ঘুচুক এ জঞ্জাল! একটা লাঠির ঘা যেন আকাঁশ ভেঙে পড়ল মহিন্দরের মাথায়। আর চড়া করে ফেটে গেল খুলিটা, খানিকটা রক্ত ছুটে গিয়ে দেবী প্রতিমার শুভ্রতার ওপরে লালের ছোপ ধরিয়ে দিলে। রি ন নী নং ১ আর একজন লোক দূরে পাথবের মতো দীড়িয়ে দেখছিল সমস্ত কাণ্ডটা। ৩৬ ওয় পেয়ে পালায়নি, নড়েনি এক পাও । সেহারাণ। তার গলায় গান নেই, 'স শুধু ঢোল বাজাতে পারে। সে ঢোলের ছাউনি সে নিজের হাতে ফাসিয়েছে। এবার নতুন করে ঢালে ছাউনি দেবে সে। যে গান গাইতে পারেনি, ঢোলের বুলিতে তাকে “স মুখরিত করে তুলবে । উপাস্থদের ঘর ভেঙে দেবার জন্যে নয়, নতুন করে আবার তাদের ঘর গড়ে তোলবার জন্ে ॥ বাবুপাড়। জলপাইগুড়ি সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ এই লেখকের অন্যান্য বই 2 উপনিবেশ (তিন পর্ব ) তিমির-তীর্থ বীতংস ভুঃশাসন স্বর্ণসীতা সূর্য-সারথি ভার বন্দর মন্দ্র-মুখর ট ও শ্রেষঠী বনজ্যোৎস্বা জন্মান্তর রোমান্স, ভোগবতী